ফুলের সংশয় | শুভ্র সরকার

বৃষ্টি থেমে আসে—
দু’টি ফুলের ঝরে পড়া দেখে
চিত্রময় মন আমার, শস্যময়—
সেখানে হেঁটেছি যে কিছুদূর…
সেই ছায়া এসে আমাকে বলছে যেন
আমিতো শ্রাবণ।
সূর্যাতীত বিদায়ে আমি কেন দেখব না
সূর্যমুখীর বংশধর।
ছায়ার ভেতর জল—
জলের যাদুকরী ক্ষমতায় সমুদ্রের ইঙ্গিত
কচুপাতার উপর জলেরই চক্ষু হায়!
আমি একটু থমকে যাই
মাছেদের চক্ষু আমি জীবনে খেয়ে দেখি নাই
পূর্ণ চাঁদের মায়া নিয়ে যে মাছ
আর কোত্থাও বেঁচে নেই।
ব্যথার পোশাক বদল করেও
আমি আমার পূর্বপুরুষদের ব্যথা জানতে পারি নাই।
অথচ স্বপ্ন ভিন্ন গতি নিয়ে আছে
ভবিষ্যতের গুণিতক—
ধারালো বাতাস আজ ক্রন্দন নাও
মনে করো আমিই তোমার উপাসক
কারণ আমিতো জেনেছি—
দশমহাবিদ্যা নামে দেবীর দশটি ভয়ঙ্কর রূপ
জন্ম ও চিতার মাঝামাঝি
মূলত: ঋতুচক্রহীন।
ব্রহ্মার মানসকন্যা অহল্যা কী জানে
আদিম সমুদ্রের কথা,
সন্ধ্যার আকাশে ভেসে বেড়ানো
একখানি চাবুকের মেঘ
তারও যে আছে ঝুঁটিবাঁধা—
মেঘের আলো ফুটবে না
পূন্যবান ভেবে আংরা হয়ে আছে
বাতাসের বীণ।
কী তবে রাত্রিপতন—
ঈশ্বর, রাতকে আমি ভীষণ ব্যস্ত বলতে পারছি না কেন?
কেন আরেকটু কাছাকাছি
ভাবতে পারছি না তোমাকেও
তুমি কি খুব বেশি দূরে চলে গেছ?
ভালোবাসা, কেবলই উপেক্ষা—
যা বলার মাঝেই হারিয়ে ফেলছি
আরেকটু বিস্মৃতির মতো।
মাটি খুলে অন্ধকার—
চিনতে পেরেছি মড়ক মন্বন্তর।
মাটি মানে সমাধিস্থ কোন
ফুলের প্রসূত শঙ্কা।
খোদা, মানুষের মৃত্যুজুড়ে পোকাদের দশদিক
কখন বুক বরাবর বলে ওঠের আমেন…
‘কী করবো বলো, আমি হেমন্তে’
হেমন্ত আমার প্রিয় ঋতু—
ঋতু প্রকাশিত হতে থাকে
জীবনের মানে নাই জেনেও
সূর্যের দিকে সূর্যমুখী ফুলের
এমন দেশের কথা।

সূর্যমুখী ফুল—
সূর্যের সাথে তাদের মাথা দোলায়ে
বলতে পেরেছে কি?
এই সন্ধ্যায়—
মানুষ মানুষ বেদনাচাষী
অন্ধকারও সুর সাধছে বাদুড়ের!
সূর্য ডুবার সময়—
যেন সন্ধ্যার বিষণ্ণতা পড়ে আছে অপার
পাখিদের উচ্চতায় ফুরিয়ে ফেলা
আনন্দবোধ থেকে মনে পড়ছে।
ভিনসেন্ট কোন এক দেবদূত—
বহুদূর ছড়ানো উড়োখুড়ো পথ
ফিরে আসে না আর।
অথচ আমি ‘বসন্তে দেখা মানুষ’
ঠিকঠাক গেয়ে উঠতে পারলাম না—
ভোর হলো হলো
সার্কাডিয়ান ঘড়ি আর পাখির হৈম ডাক
যেমন শোনা গেল
তেমন করেই অন্ধ দ্যোতনা থেকে
জানতে পারলাম—
সবাইতো বিভক্ত আজ।
মা, কল্পনায় আমার পাশ ফিরে শোও—
আমার গায়ে ভীষণ জ্বর।
তোমার হাতের ছোঁয়ায় না হয় আরো কিছু দূর
লিখে যাই জন্মক্লান্ত এই গান—
যখন বিমর্ষতা কাঁপায় মৃত্যুর উদ্যম।
পাখির পালক ভেঙে এনে
যে ছায়াটি পুষি—
তাতে রোদের আয়নার জোড়াতালি,
সেখানে আমার মুখ নেই—
মুখ কী বিস্ময়?
বড় হতে হতে যা ছোট হওয়া না শেখায়—
সেই বিচরণ, চালতা গাছটার!
সাদাফুলে আমি দেখেছি—
বুঝেছি, প্রেমের অধীক বহন করতে সক্ষম নয়
পতঙ্গ আত্মহারার দল।
কাকতাড়ুয়া জেগে ওঠো মৌনাক
সূর্য মাথার উপর—
একটি ঘুড়ি!
সুতোয় বাঁধা অন্যপ্রান্তে—
কেবল বাতাসকে বলতে পারছি না
হারাতে হারাতে এতদূর এলাম!

কিন্তু শূন্যতা কত না অচিন—
যেন লিখি মৃত্যুর পর,
হরিজন পল্লীর চাঁদ কত বড়
যেন রৌপ্যর খোদাই করা রহস্যময়
জোছনা চারিধার…

 

[ ‘ফুলের সংশয়’ দীর্ঘকবিতার অংশবিশেষ]



 

শুভ্র সরকার
জন্ম: ০৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৯ মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ
সম্পাদিত ছোট কাগজ: মেরুদণ্ড

প্রকাশিত বই: বিষণ্ণ স্নায়ুবন (২০২০) দূরে, হে হাওয়াগান (২০২১) বাবা ও দৃষ্টিঘোড়া (২০২২) সূর্যঘরের টারবাইনে (২০২৩) রামায়ণ থেকে ‘যাদুর সন্ধ্যা’ (২০২৩) রোদের অলিভিয়া (২০২৪) ইহকাল (২০২৪) অরণ্যে এক কাঠের শতাব্দী (২০২৫)

শেয়ার