দুখী আমরা
আমরা দুজন দুইটা ভিন্ন দ্বীপের মধ্যে আটকা আছি
চিরস্থায়ী দুখের সঙ্গে সকাল সন্ধ্যা টাটকা আছি
পৃথক পৃথক অপ্রাপ্তিযোগ এই জীবনকে ব্যাকুল করে
রাখলো যেন একটা ফেরি একুল থেকে সেকুল করে
পুত্রহারা পিতার মতো—মায়ের মতো অবিশ্বাসে
এদিক থেকে সেদিক ঘুরে দিচ্ছে বাড়ি বুকের শ্বাসে
আমরা দুজন ব্যস্ত আছি ভিন্ন দ্বীপের কাঁকড়া খোঁজায়
না জেনেও টের পাওয়া আর কাকতালীয় দুচোখ বোজায়
কিন্তু ছিলাম পৃথক, আছি, থাকব পৃথক সম্ভবত
শাশ্বত দূর, অদূর হতে, হাত বাড়াবে বংশগত
জন্মান্ধ
দেড়টা থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা, টানা চারঘণ্টা কথা হলো তোমার সাথে। তবে এক টাকাও কলচার্জ কাটে নি, ভাগ্যিস তোমার ফোনটা অফ ছিলো আর এপাশ থেকে আমি একলাই কথা বলে গেছি… রেকর্ডার অবশ্য অন ছিলো, আমার কথাগুলো রেকর্ড করা থাকলো। মরার আগে যদি কখনও নাম্বারটা ওপেন পাওয়া যায়, সব কথা শুনিয়ে দেয়া যাবে। তুমি কি জানো, কান্ট্রিকোডসহ পুরো নাম্বারটার যোগফল এখন ৪৮ হয়েছে? তাহলে ৪৮ বছর বয়েসে বোধহয় নাম্বারটা খোলা পাওয়া যাবে। ৪৮ বছর বয়স হতে আর মাত্র ২৫ বছর বাকি। ২৫ বছর দেখতে দেখতেই কেটে যাওয়ার কথা। কিন্তু কিভাবে দেখবো? তুমি নাই হওয়ার পর আমি তো ক’বছর ধরেই জন্ম থেকে অন্ধ।
তুমি শর্মি, আমি তোমাকে, এই বৃষ্টির, কিছু
গুণাগুণ নিয়ে বলব
তুমি শর্মি, আমি তোমাকে, এই বৃষ্টির, কিছু
গুণাগুণ নিয়ে বলব
বৃষ্টি পড়ার দিনটায়, শর্মি তোমাকে ডাকলাম
বললাম, তুমি শর্মি, তুমি বৃষ্টি পড়ার দিনটা
চলো ভৈরব, চলো তিনদিন, তুমি মেঘনার
ঘাটে থাকবা। আরো বললাম, তুমি চাইলে
টানা বৃষ্টির, এই মৌসুম, আশুগঞ্জের উঁচু
প্লাটফর্ম, ধরে হাঁটবা, খালি হাঁটবা। তুমি শর্মি
তুমি পুরনো, কোনো বৃষ্টিতে ভেজা ওয়াগন
ধরে দেখবা। ভিজে পিচ্ছিল, কালো পাটাতন
নিজে বসবার, করে ঘষবা। চারিপার্শ্বে
চির চারপাশ, বসবাসহীন, করে তুলবা, তুমি
আই থিংক, তুমি পারবা। পোষা কচ্ছপটাকে
সঙ্গেই, নিয়ে নিচ্ছো? ব্যাগে থাকল—সেটা
সুন্দর। তাকে রেইনকোট, কিনে দিচ্ছো?
দিও দিও তো! প্রতিনিয়ত, দেখো বৃষ্টি, টানা
বৃষ্টি—ফাঁকে ফোকরে তারই ছাঁটেরা, উড়ে
যাচ্ছে। ঘোলা বাষ্পে, চলো মিশ খাই, চলো
শর্মি, ভেজা রেলব্রিজ, হাতে আমব্রেলা, পায়ে
ফস্কাই
মা ও শিশু হাসপাতাল
হাসপাতালে পেশেন্ট রেখে ঘুরতে বেরোয় লোক
মনভরা তার শোক তবুও পরিব্রাজক মন
পোস্ট অফিসের সামনে বসে থাকবে কিছুক্ষণ;
এই প্রকারে গড়া
চায়ের কড়া লিকার এবং বিড়ির সজীব টানে
ভাববে সে লোক পেশেন্ট তো তার বাস করে নিজপ্রাণে
তবুও নিকট সবচে নিকট সে লোকটি ফুরফুরে
বাতাস পাবে, ভাববে খানিক সামান্য আর দূরে
ঘুরেই আসা খুব প্রয়োজন অল্প শীতে হাঁটা
হাঁটতে হাঁটতে পড়ছে মনে, ভালোই ছিল চা-টা
দুয়ারের মরা রোদ
এখন আর ওই রূপ মালিকানা নাই
তুমিও তোমার হয়ে উঠছো আবার আর
আমিও আমার মতো হয়ে গেছি প্রায়
বাড়ছে একাই শত বুদবুদ, গরিমার
নিশ্বাসে নিশ্বাসে আত্মপরিচয়ের ঝড়
হু হু শীত, বিদেশি হাইওয়ের মতো
কালো আর ভেজা
জীপের জানলা দিয়ে অর্ধেক বের করা পায়ে
জেগে উঠি নিজ নিজ মরু উদ্যানে
পায়ের তালুতে প্রতিদিন
জিভ ঘষে চলে যায় বালুহীন উট
উটটিকে মনে হয় তোমার কিশোরীরূপ
তোমার কিশোরীরূপ আমি দেখি নাই
আমার কিশোররূপও তুমি দেখো নাই হেতু
তুমিও কি বালুহীন উট দেখো নাকি?
আমরা দুজনে মিলে হুবহু একাকী
কবি পরিচিতি
![]()
জন্ম ২৫ মার্চ, ফেনী।
প্রকাশিত বই :
ওই অর্থে [কবিতা, শুদ্ধস্বর, ২০১৪], সকলই সকল [কবিতা, শুদ্ধস্বর, ২০১৫], মাই আমব্রেলা [কবিতা, আদর্শ, ২০১৬], ইয়োলো ক্যাব [গল্প, ঐতিহ্য, ২০১৬], ঘরপলায়নসমূহ [আত্মজীবনী, ঐতিহ্য, ২০১৭], কেটে যাচ্ছে মালিহা জেরিন [কবিতা, ২০১৯, ঐতিহ্য], অদ্বিতীয় [সম্পাদনা, দ্বিতীয় দশকের কবিতা সংকলন, ২০২৩, বৈতরণী], বধূ শুয়ে ছিলো পাশে [গল্প, ২০২৩, বৈতরণী]।
ই-মেইল : tanimkabir@gmail.com