এখানে, বনে
বনের পাশে এক শুকনো শীর্ণ নদী
সেই নদীর পাড়ে ক্ষাণিক বসে দেখি
কেমন শান্ত চারপাশ, হালকা শীতে
রোদ পোহাচ্ছে বক, জনশূন্যে ঘেরা
একটু দূরে মরা পাতার স্তুপ, যেন
বহু আগের দৃশ্য তৈরি করে রাখা।
কে আঁকল, মুছবে কে, সবই অজানা
কেবল জানি, একটি ঘোড়া এখনই
এসে বন ভেদ করে দাঁড়াবে সমূখে
শীর্ণ নদীর জলে চুমুক দিয়ে আবার
উড়াল দেবে রাজকুমারের খোঁজে।
আমারই না হয় কোথাও যাওয়ার নেই
নেই কিচ্ছু করার তাড়া, এখানে বসে
একা একা পারি শুধু দৃশ্য তৈরি করা।
শিকারের দিন
বসন্ত এক হলুদ দাগ—
এইটুকু লেখার পর চলে এলো
শিকারে যাওয়ার দিন।
শিষ বাজাতে বাজাতে কোনো
ভোরে আচমকা ঢুকে যাবো জঙ্গলে
পাতায় বাজবে মর্মর।
আবেগশূন্য এমন একদিন—
হরিণের দিকে র’বো চোখ তাক্ করে
ভুলে যাবো অস্ত্রচালনা।
মধুপুর জঙ্গলে
মধুপুরের জঙ্গলে যেতে ইচ্ছে করে
ভয়ে আচ্ছন্ন হওয়ার ঘটনার মতো
একদিন হুট করে চলে যাব মধুপুর
তত কাছে নয়, যতটা ভাবি বহুদূর।
বহুদূরের দেশ শালপাতার বেশে
দাঁড়িয়ে আছে, কতকালের পাশে
নতমূখে হয়তো একদিন আমিও
দাঁড়িয়ে চেয়ে নেবো কিছু ছায়া।
মধুপুরে আমি যাই নাই কোনোদিন
যেমন যাইনি কুড়িগ্রাম, লাউয়াছড়া
কত কত না যাওয়ার দেশ, গভীর
বন হাতছানি দিয়ে ডাকে, সবুজের
লোভ দেখায়, পাখির গানের লোভ
দেখায়, বুনো বৃষ্টির দিনে মাচাং ঘর
হরিণ দৌড়ের বাজি ধরতে বলে।
আবার মধুপুরে
আবার কি আমার
যাওয়া হবে মধুপুর
পাতায় তোলে মর্মর
বনের ভেতর পথ
হারিয়ে হাঁটব
সারাটা দুপুর!
বাঘ আছে শুনেছি
হরিণ ও হাতি হাত
ধরে হাঁটে, যেন বন্ধু
তারা কতকালের।
এমন এক বনে এসে
আচমকা অকষ্মাতে
তোমায় পড়ল মনে।
তোমার চোখ ও চিবুক
সে এতোই তীব্র ঘন
ডাকলে ডাহুক ভয়ে
ভীষণ কাঁপত অরণ্য।
এখন সেসব, সেই
কবেকার কথা, বনের
মায়া ভুলে তুমি
নিজেই হলে
নির্জনতা।
পাখি ও গাছ
ডানাই কি তবে পাখি হওয়ার পূর্বশর্ত?
পাতাবিহীন এক গাছকে আমরা কি বলব না গাছ, পাতাঝরা গাছ
পাখিদের সঙ্গে কেন ও কেবল গাছের সম্পর্ক হয়
সংসার হয়, শ্রম হয়, কথাও হয়
অথচ গাছ মরে গেলে পাখি উড়ে যায় অন্যত্র
পাখি মরে গেলে গাছ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে
অন্য পাখির আশায়।
কবি পরিচিতি
![]()
জন্ম ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৮ সালে, কক্সবাজারের রামুতে। পড়াশোনা: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। বর্তমান পেশা সাংবাদিকতা।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:
কানা রাজার সুড়ঙ্গ [২০১৫], উইডের তালে তালে কয়েকজন সন্ধ্যা [২০১৮], তুমুল সাইকেডেলিক দুপুরে [২০২০] ও যেখানে জঙ্গলের শুরু [২০২৫]।
ছোটগল্প সংকলন ডিনারের জন্য কয়েকটি কাটা আঙুল [২০২০] ও উপন্যাস মহাথের [২০২২]।