পারফিউম
যে-কোনো সময় রিক্সায় উঠতে ভালো লাগে খুব,
পৃথিবীর
সবচে’ আরামদায়ক বাহন বলে মনে হয়।
ট্রেনও প্রিয়।
জরুরি প্রয়োজন হলেও
বাসে চড়তে পারি না আমি,
উঠলেই বমি আসে
মাথা ঘুরতে থাকে পৃথিবীর মতোই
তবে তোমাকে যখন
লক্কর-ঝক্কর বাসে চড়ে
দুপুরের নির্জনতা ভেঙে
স্টপেজে নামতে দেখি,
আবার
উড়তে উড়তে যেতেও দেখি—
গন্তব্যের দিকে,
তখন কী যে ভালো লাগে আমার
রঙচটা বাস
তার দূষিত-প্রবণ কালো ধোঁয়া,
এই প্রথম ধোঁয়াকে মনে হয় ফ্রান্সের
পারফিউম,
ঠিক যেন উড়ন্ত—
ছুটে আসছে তোমার গা থেকে
সেতু
দোদুল্যমান কাঠের সেতুটা পার হয়ে
তবেই যেতে হয় বিশেষ পাড়ায়,
এছাড়া আর বিকল্প নাই কোনো
আবহাওয়া খারাপ থাকা সত্ত্বেও একদিন
তড়িঘড়ি ঢুকতে যাচ্ছি আমি
আর
ছাতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে
ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন আমার ক্লান্ত পিতা;
ঠিক সেই মুহূর্তে- সেতুটার ওপর
আমাদের মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল
সিগন্যাল অমান্য করে দুই দিকের দু’টো ট্রেন
একই লাইনে হঠাৎ ঢুকে গেলে
আমরা বীভৎস রকমের দুমড়ে-মুচড়ে গেলাম—
দোদুল্যমান সেই সেতুটার ওপর
কুমারী মাতা
হাত ও পা একটুও না-কাঁপিয়ে
যে কুমারী মাতা
তার সদ্য প্রসব হওয়া বাচ্চাটাকে
লোকলজ্জার ভয়ে অনেক উঁচু
লাল ব্রীজ থেকে নিচে ফেলে দিলো
সেই মেয়েটিই পেছনে সূর্যাস্ত রেখে
রেলপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে
দেখলো—আত্মহত্যাপ্রবণ একটা পাগল
দ্রুতগতির ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একা
মুহূর্তেই খুব বিশ্রী রকমের কিছু একটা ঘটবে—
এই আশঙ্কায়
মেয়েটির চোখ বন্ধ হয়ে গেলো,
পা কেঁপে উঠলো থরথর
জুতো
নতুন স্যান্ডেল কিনে দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ছিঁড়ে ফেলতাম ছোটবেলায়।
বাবা কিছুটা হতাশাব্যঞ্জক, চীন-জাপানের শিশুদের উদাহরণ টেনে লোহার জুতো কিনে দেয়ার কথা বলতেন। যদিও এরকম জুতো কোনোদিন কিনে দেননি তিনি।
আমার মেয়েটা এখন ফাইভে পড়ে। আমার মতোই তাকেও স্যান্ডেল ছিঁড়ে ফেলতে দেখি যখন-তখন। আমিও বাবার মতো লোহার কথা বলি, জুতোর কথা বলি, কিন্তু কখনোই কিনে দেই না তাকে
তারপরও মেয়েটির পা ভারি হয়ে ওঠে। জড়তা নিয়ে সে হাঁটাহাঁটি করে, বাজারে যায়। ধীরে ধীরে তার পা ছোট হয়ে আসে
আমি আর সে
এখন আর দেখা হয় না মুখোমুখি
কথা হয় না কখনো।
তবু এক ঘরে থাকতে হয় বলে
নিরন্তর থাকি
আমি আর সে।
সে মানে অনেককিছু
ধরো,
একটা বিষধর সাপের সাথে আছি,
দেখা হয়ে গেল আমাদের
তেড়ে যাচ্ছি লাঠি হাতে আমি,
ফুঁসে উঠছে সে
বাঁচা ও মরার প্রশ্নে দু’জনেই
ভয়ে ভীতু
তারপর,
দু’জন দু’দিকে
জীবন থেকে পালিয়ে গিয়ে বাঁচি
সিদ্দিক প্রামাণিক
কবি। জন্ম : ২১ আগস্ট ১৯৭৯; কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। বাংলায় স্নাতকোত্তর। বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ :
হাঙরের সমুদ্রে মননশীল মাছ, বাতিল বেশ্যার ডায়েরি, উন্মাদের কনসার্ট, শরীরেও হারমোনিয়াম থাকে, সতর্ক ছুরির দুপুর, মাতাল মিউজিকে বেসুরো নাচের মুদ্রা, সহজ কবিতার ভেতর কয়েকটি ক্ষুধা ইত্যাদি।