লীলাকৃষ্ণ এক
পিরিতির এ কেমন ধর্মদায়
আমি রাঁধে না দেখি উপায়
জীব ও পরমাত্মার মাঝে
ছল ছল করে যে নদী-
তাকে স্থাপত্য কী করে বলি
কী করে বলি জলের সংসার।
তুমি এখন ওইপাড়-
অন্য ভাষার জনপদ তোমার
আমি নিঠুর এই পাড়ে
ভাঁটির রুজি ও প্রগতি ধরে
পরের ঘরে রসে নাই বন্ধুরে।
তুমি আসবার যদি নাই পারো-
তবে লীলা ক্যানো রচিলা অন্তরে?
সুরের বিষে প্রাণো যে খাই খাই করে
বাঁশিতে আর টান দিও না গো হরি
তুমি ঘাটে আসবে আসবে ধরি
মহাকাল আমি বিনাশে পার করি।
লীলাকৃষ্ণ দুই
ঝিনুকের সাথে পালা দিয়ে
বুকে নিঃসঙ্গ রত্ন কষে,
যারা শস্য আনে ঘরে
তাদের মাথা লুট করে
কী ধর্ম স্থাপন করছো শেষে?
সন্তানের অপসংস্কার দেখে-
এত ক্যানো আশ্চর্য হও তুমি?
তোমার হৃদয় তো পাষাণাভূমি।
ঝরে যাও বাউলা বাতাসে
হোঁচট খাও দূর্বাঘাসে।
সময় আছে, খোঁজ নিয়ে দ্যাখো
আজও কূলমাতা যশোদার ঘরে
তোমার ভগবান না খেয়ে মরে।।
লীলাকৃষ্ণ তিন
পিরিতে এমন কলঙ্কিনী হইলা গো সখী
জল তুলতে গেলে খালি হইয়া যায় দীঘি
কী ব্যথা প্রাণে উন্মোচন করো যদি-
বুঝবে কাঞ্চন ছলছল, তুমি যে কাজল
চোখের অশ্রু পাহারা দিতে গিয়ে
কাঁদতে পারোনি নিজের কান্নাটা,
তবে ক্যান আগাইয়া দাও পানের বাটা?
আঁচলের খুঁট খুলে জাগাও তারে
বোঝাও হাত খালি, হৃদয় খালি
নদীর নামটি কাটাখালি-
কাল স্রোতে তুমি সতী,তুমিই ধর্মকালী।
তারপরেও যদি সে দুশ্চরিত্র না ছাড়ে
পত্মী ও সতী ধর্ম ত্যাগ করে
রূপালি বিছা পরে ছুটে যাও সাগরে
তবুও-
পিরিতে এমন কলঙ্কিনী হইও না সখী-
জল তুলতে গেলে খালি হইয়া যায় দীঘি
স্বয়ং তুমিই বিচার করো তো দেখি;
ভক্তিতে যদি হৃদয়ের সমর্পণই না থাকে
দেবতারও সাধ্য কই যে সে পাথরে জাগে?
লীলাকৃষ্ণ চার
অধর্মের গর্ভ হতে উৎসারিত করো কারে
ও তো কেবলি লালসা, শস্য দানার ভূত
তোমার শিরায় শিরায় ছোটে বিদ্যুৎ
ছুটে চলো তুমি, আজব লীলাভূমি-
থেমে ভাবতে তো চাও, সাহস করো নি।
হৃদয়ের বিশেষ পরাজয়কে ঘিরে
এত বেশি উৎসারিত করো কারে?
ও তো দম্ভ, অহংকার বলে তারে
আর তুমি দম্ভের দাস হয়ে
বিষ ঢালো সম্পর্কের আড়ালে
নিজ কলঙ্ক ঢাকতে গিয়ে
কালি মাখাও সারাটা জগতে
ওরা তোমাকে নিয়ে যাবে
বিনয়ের গর্ভ থেকে লুট হবে চিরতরে;
ফিরে যাও বন্ধু, ফিরে যাও ধর্ম শিকড়ে
ফুলেই জন্ম তোমার, ফুল ভালবাসো
পাথরের সঙ্গদোষে হাসতে ভুলে গ্যাছো
তুমি তো মোমের সুতো
একবার স্পর্ধা করো সাধ্যমতো
হাসো হৃদয়ের খিলখিল হাসি
দিয়াশলাই কাঠিকে জড়িয়ে বলো
আমিও প্রেমের সংঘাত ভালবাসি।।
লীলাকৃষ্ণ পাঁচ
না শত্রু, না কোনো মিত্র
হৃদয়টা আস্ত কুরুক্ষেত্র
যা কিছু বলার ছিল
ক্যানো বলিনি
যে গভীরে দেখার ছিল
প্রাণ খুলে কেন দেখি নি
তা শুধু যুদ্ধের করুণ শুনানি
দৃষ্টি সীমানায় যে স্বজন মরে
সে আত্মীয় আমারই
যে পরাজিত হয়
সে বন্ধু আমারই
যে বিজয়ী হয়
সেই শত্রুও আমারই
আমি যে কৃষ্ণ, হরে হরে
অস্ত্রের আনন্দ ও দুঃখ
সরাসরি এক বুকে লাগে
বেদনার জ্বলন্ত অশ্রু গড়িয়ে
ঠোঁটের কাছে আসার আগেই
হেসে উঠি প্রাণ খুলে
আমিই কৃষ্ণ, বেদনানন্দ হরে হরে
মনে করো মাহেন্দ্র অর্জুন
ধর্মকে জিতিয়ে যে একান্তে হারে
ধরো মহারথি কর্ণ
ভগবানকেও যে অসীমে দয়া করে
ধরো আমিই নিয়তি
কর্মের নিমিত্ত স্বভাব
আমিই জীবনের আশীর্বাদ
জননী গান্ধারির অভিশাপ
আমাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না তুমি
আমাকে নিয়েও যেতে পারবে না তুমি
আমাকে ধারণ করো, ধীর শান্ত করো
নই শত্রু, নই বিষ্ণুর অবতারমাত্র
আমি তোমার চলমান হৃদয়
আস্ত দ্বন্দ্বের কুরুক্ষেত্র-
আমি বৃষ্টি অভিমুখে চেয়ে আছি
ঘাসের নাচ দেখিয়ে শান্ত করো।।
ইয়ার খান
কবি ও নাট্যকর্মী
জন্ম ১৯৯৭ সালে যশোরের মনিরামপুর থানার হানুয়ারপাড়া গ্রামে। কৈশোর থেকে বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জে।
প্রকাশিত কবিতার বই : আকণ্ঠ পিয়া মর্সিয়া (২০২৩)