প্রমত্তা
আমাদের বাসকে সাইড দিচ্ছে না যে বাস
ওরে আপাতত ভালো নজরে দেখতেছি
আছে সুনজর ওর প্রতি, দেখতেছি কতক্ষণ তোমারে ধরে
থাকা যায়
স্কোয়াশের গন্ধের মতো বিড়বিড় কোলাহল
একটা কথার সাথে আরেকটা কথার কোলাজ
ভেঙে দেয়
কোলাজ ভেঙে গেলে কি আর কথা বলা হয়—
কথা বলা না গেলে দীর্ঘ দিন আরো দিন হতে
থাকে
বিস্তীর্ণ রাস্তা
কতশত বাড়ি
বিড়বিড় কোলাহলে জ্যাম পড়ে থাকে—
অতটুকুই যেন পাই কাছে
তোমাকে
ধীর গোসলের পর
লম্বা বারান্দায়—
তোমার সামনে বসে
বাইরে রাস্তায় জ্যাম পড়ে থাকলে
পড়ে আছে উপেক্ষিত রেখে
যে সন্ধ্যা নামবে এসে
আলেয়ার নীচে
ঘাসের ওপরে
নৃত্যরত থেকে আবছা অট্টখুশে
মানুষের তরে মায়া আলগোছে ঢেলে
বুকপিঞ্জর খালিখালি ক’রে
কী তরিকায় আমার সমস্ত কথা
শুরু করব
— কে জানে!
উষ্মা
বহুদিন
বহুবছর পর
একবেলা স্নান বাদ গেল
বেলা-বেলা পট্টির তৎপর জল কপাল থেকে গড়ায়ে যাইতেছে কান-কান থেকে ঘাড়-ঘাড় থেকে চিবুকের দেশে
টুপটাপ ঘোর ছোঁয়াচের জল পায় না আস্তিন, জেগে থাকা ক্লিটোরিস
শরীরের প্রতি তার মায়া নাই আর
বিনিদ্র দুপুরে সে আত্মাকে নিয়া গহ্বরেষ্ঠে চলতেছে
এত ক্লেশ জন্মান্তরের—
আর কিছুদিন আমাকে ফিরাও
আর কিছুদিন প্রবাহমান সিসিলির সিকোয়েন্স দেখতে দাও
দীর্ঘমেয়াদি জ্বরে পরাবাস্তবতার তরে
যা কিছু ভীষণ ঠোঁট চেপে গেছি বলে—
সংসর্গ ত্যাগে আমি তা পাইয়াছি সব
রোদাক্রান্ত পাহাড়েও মর্মর ধ্বনি যায় না শোনা
আগামী কিছুদিনের সোনালি জ্বলজ্বলে ভাব
বিগত তিনদিনের বৃষ্টিতে ম্রিয়মাণ হইয়া গেছে
একবুক শালবন
রোঁয়া পড়া সময় আঁকাবাঁকা হইয়া উঠতেছে—
এক শুষে নেওয়া লাইন ধইরা
এক প্রতিসাম্য চক্রকেন্দ্রে
এই শরীরের কোথায় আজ অন্তিম সন্ধ্যায় তুমি ভিটা খুঁইজা নিবা?
স্বেদ কপালে
না এই জন্মের সব প্রভাময়-অপ্রমেয় প্রেম জমায়ে রাখা স্তনে?
খোয়াবনামা
মনজঙ্গলের পথে
সহজে গুঁড়ায়ে যাইতেছি
অনাবাদী বাতাসের সাথে
তারপর
কত-পর
আমাদের ছোট ডিঙি
তার বিস্তৃত জীবন
চলতেছে
আমাদের বাঁকে বাঁকে
ছোট জীবন— আরও জড়ায়ে
আরও-আরও জড়ায়ে একা হইয়া থাকলে
বহু বীথি সে পার হইয়া যাবে
আমরা
শুধু আমরা থাকব
নিরন্তর মাছেদের সাথে
ডাঙায় উজায়ে ঘাসেদের সাথে
মাছের আঁশটে গন্ধ মুখে নিয়া শরীর বাইয়া বাইয়া ক্লিভেজে জমা থাকবা তুমি
আর
কিছু তুমি গড়ায়ে নাভি উপকূলে
স্নানেরও আগে
আরও একবার
সকালে উইঠা এক উদ্দাম ঘাড়
সৌষ্ঠবহীন আঁচল সরায়ে পাহাড়ের মত ঢেউঢেউ কম্প্র—
তোমার জন্য লাগাতার সমান্তরাল
হইতে থাকলে—
বুকে আইসা
যেন দরিয়া
তার কলকল শব্দের মধ্যে
মাথা রাইখা ঘুমায়ে পইড়ো তুমি
এইসব শান্তির ঘুমের
খেইহারা দিনে
উত্তাল উপকূল থেকে
ডিঙি কি চইলা যাবে সাদা বকের গ্রামে?
তোমাকে আগন্তুক ধরে নিয়ে
দেখা হলে দেখে যাব
ধরে নেব, হৃদয়গ্রাহী আগন্তুক ইনি
যে আমার শরীর খসে যাওয়া
অ্যালগরিদম জানে
ধরে নেব—
কার্তিকের ভোরে পা ডুবাইনি আমি কোনো
হিম রক্তের পায়ে
যেন আমি ঘুমজেগে শ্মশানের নদীঘাটে একলাই; বড়জোর হাতে নিয়ে আগন্তুক এক সুবাস—
ছুটে গেছি বারেবারে
ধরে নেব
শেষতক
আমার অতীত—
জাহাজের ভেঁপু শুনে প্রেম থেকে সরে কিঞ্চিত সতর্ক হয়ে জেগে থাকা ভোর
আমার ভিড়ের রাস্তায়
মেটাফোর হয়ে আছে অবিরাম
ডুবছি ঝিলাম নদী
বিবাহ করিতে পারতাম
ব্যাগ কাঁধে আপিসে ছোটা লম্বা দেখতে লোকটারে
যাইতাম বৈদেশ
দেখতাম স্বপ্ন
আমি আমাদের সন্তানের মা হইতেছি
বৈদেশের হাসপাতালে
পরম যত্নে
কিনিয়া দিয়াছো শাড়ি আর সীতাহার
যেহেতু আমরা দেশে ফিরব।
আমি ফিরতে চাই আরও ওপরে
বা ভূতলে যাইতে চাই।
যাইতে চাই,
যাইতে হইলে সমন্ধ আসা সেই চাকরীওয়ালার বউ হইতে হইবে না
ওইযে সে
কবিতা লেখে
আর রাস্তায় হাঁটে দিকভ্রান্তের মত
আমি ওরে ভালোবাইসা যাব
ঘর থেকে অল্প দূরে
মানুষ কিছু কম
ব্রিজ হইছে নতুন
নদীর বুকের ওপর ভার হইয়া আছে সে
লম্বা সাইডওয়াক দুইপাশে
হাঁটতেছি
আমি ঠিকমত পা ফেলতে পারি না
দুঃখে বা ঘুমে।
নদীর শরীর আমারে জানে না
জানবে
এইত কিছুক্ষণ
তার আগে দীর্ঘ পথ
কে জানি বলছিল আমারে
“মাথায় নদী নিয়া কেউ নদীতে ডোবে না”
আমার মাথার চুলরে তার নদী মনে হইত
ঝিলাম নদী
আমি মরতে চাইছিলাম একটা দীর্ঘ বারান্দায়;
সাদা শাড়ির লাল পাড় জড়াইয়া
কপালে লাল টিপ
আর ইউকুলেলে শুনতে শুনতে
মৃত্যু কত সহজ
তবে বাঁচতে কেন কঠিন লাগে?
যে কবিতা লেখে আমার জন্য
তারজন্য বাঁচাও কেন কঠিন?
ঈশ্বর
তুমি এক এবং অদ্বিতীয় বইলা আমি বিশ্বাস আনলাম মৃত্যুর আগে
আমি জলস্পর্শ পাওয়ার আগে
ভাইসা থাকার এই মুহূর্তে
তুমি নির্বিষ করো
পৃথিবী
প্রেমের জন্য পৃথিবী মৃত্যুকূপ।
বিতিকিচ্ছি প্রেমহীনতা ছাড়ছি
আমি ডুবলাম
সূর্য মলিন
মাঝিরা নাই
আমি ডুবছি।
সানজিদা আমীর ইনিসী
পরিচিতি: জন্ম নব্বই দশকের শেষে বরিশালে। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে পড়াশোনা করছেন। প্রকাশিত বই : ডুবছি ঝিলাম নদী (কবিতা), কয়েকশ নটিক্যাল মাইল (গল্প)