একটি খসড়া কবিতা
ঘটনা দিগন্তে আনমনা রঙের ঘুড়ি উড়ছে
ঘুড়ি,— ইচ্ছের অপূর্ব!
অনন্তর একটি সন্ধ্যা;— সন্ধ্যানীল
সবুজ, প্রগাঢ় সবুজ হয়ে বিপন্ন সবুজের দিকে…
একগুচ্ছ শুক্লপাখি তোমার বক্ষবন্ধনীর থেকে
নিঃশব্দে মেলছে ডানা…
এইসবের ইশারাদূরত্বে বয়ে চলেছে—
একটি নদী সরিসৃপ— জলে বিষণ্ণ স্রোত
সবুজ
চিরদিকের সূর্যের
নিচে—
নিগুঢ় জলপাই বন। সবুজ। সবুজ, একটি পোয়াতি রঙ। সবুজের ভেতর সবুজ হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ে। বেড়ে ওঠে, বেড়ে ওঠে চিরদিকের দিকে। আর বাতাস— উজ্জ্বল ত্বকঘেঁষা শব্দ; জলপাই বনে নিঃশব্দ আলোড়ন তুলে…
চারদিকে নরোম বন ছড়িয়ে আছে
আমি পেরিয়ে এসেছি বিজন ঘুমের উপত্যকা
আমার মাতৃতান্ত্রিক আদিবাসী হৃদয়ের
গাঢ়তর সবুজ— গড়িয়ে যাচ্ছে নরোম বনের দিকে
শ্রী সবুজের দিকে দু’চোখ হাসতে বেরিয়েছি
পরিপূর্ণ দুপুরালোয়, আসবুজ জ্বাজ্বল্যমান
বৃক্ষের শরীর,
চিরহরিৎ পত্রালি—
ঋজু ডালপালাগুলো; ছায়াটুক ঝোঁকের উপর সন্ধ্যা যেনো। শংকায় গা গুমরে উঠলে— কতকটা পাখি এসে দম ধরে বসলো। গাঢ় মেশানো চোখে তাদের সবুজ বাড়ছে…
ভালো উদ্ভাসিত সূর্যের
নিচে—
নিগুঢ় জলপাই বন। সবুজ। সবুজ, একটি আততায়ী রঙ। আহা নিরলস সর্বাঙ্গ, দয়া দেখাবার মতন পূর্ণ স্বাস্থ্যবতী, তাদের সুখী ঈশ্বরী দেখাচ্ছে— নিয়ত কম্পমান; ছড়ে যাওয়া, সংকোচিত হওয়া অনাবিল জলপাই বন। নকশা আঁকা প্রচুর পাখি উড়ছে…
অপার আয়তনে তাদের
বুদ্ধ দিনের হাসি
চিরভরা ষড়যন্ত্র, চিরভরা ষড়যন্ত্রে—
হতোদ্যম হয়ে আছি
তলানীতে জমছি
নিংড়ানো সবুজের
নিচে—
মানুষের গুটিয়ে যাচ্ছি…
সহজ
তুমি এসেছিলে সহজ। তোমার পায়ের নখগুলো ছিলো অযত্নে বেড়ে ওঠা। যেমন আমাদের বুকের ভেতর বেড়ে উঠে পরাবাস্তব শহর। দালির ঘড়ি।
তুমি হাসছিলে তোমার হাসি। বাতাসে তোমার চুলগুলো ভিজে যাচ্ছিলো…
“আমাকেও বহন করো।”
— এই ছিলো আমার মনের দশা। সূর্যগ্রস্থ, চন্দ্রগ্রস্থ…
এবং তুমি বহন করেছিলে, “আমাকেও বহন করো।” আমি আঁকড়ে ধরেছিলাম তোমার হাত। তুমি হয়ে উঠেছিলে সন্তানসম্ভবা…
তোমার ঘুমের শিশুকে আমার সেকুইয়া বৃক্ষ মনে হচ্ছিলো। যখন সে জেগে উঠলো, জেগে উঠলো একজন— শিশু
সপ্রাণ শিশুটি
পৃথিবীর পাত্রে রাখা হলো
নাবিক হয়ে লাফিয়ে পড়লো সে
রাত্রির ভেতর কুণ্ডলী পাঁকিয়ে শুয়ে থাকলো
বর্তুলাকার আবেশের কেন্দ্রে
তার সকল প্রান্তে
হৃৎ-কুণ্ডলীর কুণ্ডলীতর ভাঁজে
পৃথিবীর শিশির টুপটাপ করে ঝরতে ঝরতে
সৌরস্মৃতিতে সে ম্লান হলো
পুঞ্জিভূত হওয়া সকল ফেনার ভেতর
প্রসস্থ হলো দিন
অশেষ দিনদৈর্ঘ্য
শুক্লপ্রস্থ একটি নিরাকার
সকল অ-বিন্দু
ও আ-রেখা
যৌনবৎ কাৎরাতে লাগলো
নাচের মুদ্রায়
ঢেউ সঙ্কুল এক
দাবানল শীর্ষে
অচিরাৎ
বাষ্পিভূত হলো তার আবিষ্ট চোখ
বাদ্যযন্ত্রগুলোর সুষম গড়নের দিকে তাকিয়ে
যে মূর্ছা গিয়েছিলো
হাঁস
কোনো গোপন হাঁস নেই, হাঁসেরা—
মেলে ধরে লোমশ বুক। মুখ গুঁজে দিই— অতি-বৃষ্টির গন্ধ উঠে আসে। এক ঢালু ভারী বর্ষণের ভেতর নতজানু আমি, আজ্ঞাধীন। আর আমাকে দেয়— অন্ধবেদনা, অতি-বেদনা।
আসে নিঃশব্দে! এক পশলা আমাদের পথের উপরে, চারপাশে। অনেক রঙের ছাওয়া, ইতস্তত… হাট করে খোলা। নিচ্ছিদ্র জলের ছায়ায়, তলে, সেবন করে তাদের মুহূর্তগুলো— বিপন্ন কণ্ঠে ডেকে ওঠে, ঝরে যায়…
ঘোরে
স্বপ্নে
অবসাদে
আমি তাদের মরতে দেখি। তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিকে যেতে যেতে আকাশে ভীড় করে মেঘের শব্দরাজি। অনূঢ়া ঐ আকাশ, মেঘেরা আকাশে অদম্য জড়ো হচ্ছে। গোপন হাঁস, হাঁসগুলো—
রাজোচিত, রূপমুগ্ধ তথাপি ওঁম ভালোবেসে…
শিশুরা
অই ঘর থেকে শিশুরা হাসছে। দুটি অগুন্তি শিশু; একটি মুখরা সবুজ ও একটি বুদ্ধিমতি সবুজ—
কেউ গোপনে গাছ ফলিয়ে গেছে?
অরণ্যানী…?
বাড়িতে ক’জন এর ভেতরেই আছে…
…
শিশুরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বনের ধারে চড়ুইভাতি করছে। তারা রান্না খেলছে দেখে তুমি ও তোমরা নদীর কাছে গেলে। নদীর ভাটির দিকের স্বভাব…
বনে, ততক্ষণে হিরণ্ময় আগুন ধরে গেছে…
…
বুদ্ধিমতী সবুজ মায়ের কাছে গেছে। উত্তর-দক্ষিণ প্রসারী একটি ছোট্ট গ্রাম। আশি ঘর মানুষের বাস। উত্তরের দিকে একটি প্রাইমারি স্কুল ও একটি মক্তব আছে। ভোর-ভোর থেকেই শিশুদের আনাগোনা, দিনমান চলছে। বুদ্ধিমতি সবুজ সন্ধ্যা না হলে ঘরে ফিরছে না। ঘরে ফিরেও সে ঘরে ফিরছে না। আকাশ পাতে, বাতাস পাতে অবাক খেতে বসছে…
…
মুখরা সবুজ পৃথিবীতে এলো, তার গা’য়ের থেকে অদ্ভুত ছড়িয়ে ঘ্রাণ। জন্মঘ্রাণ? মনে পড়ছে আমরা কেউই এই ঘাণদূরত্ব পেরিয়ে কোথাও যেতে পারছিলাম না। আর মা তখন হাসছিলো…
মুখরা সবুজ হাসে, অবিকল মায়ের হাসি…
…
গঙ্গাফড়িঙ উড়ে এলো
গাছের পাতায় দুললো হাওয়া, একটি শালিখ উঠোনে
এখন দুপুর নাগাদ। অবুঝ ঘরে শুয়ে আছি। আর অই ঘর থেকে অগুন্তি শিশু হাসছে। তাদের কচি-কচি হাত-পা-নাক-মুখ-চোখ, শিশুসব ঠিকরে বেরুচ্ছে। মুখরা ও বুদ্ধিমতি সবুজ—
… … …
কবি পরিচিতি:
শাহ মাইদুল ইসলাম
জন্ম: ২০ জুন, ১৯৮৬ইং, হবিগঞ্জ
e-mail: shahmydulislam@gmail.com
‘ঘোড়া ও প্রাচীর বিষয়ক’ শাহ মাইদুলের প্রকাশিত একমাত্র কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশ করেছে তিউড়ি প্রকাশন।