নতুন কবিতার সন্ধানে | মুহিন তপু

অর্থ নিরর্থ

কোথাও ভাষা লীন হইতেছে অর্থের প্রয়োজনে। শব্দ যত দূ রে মিলিয়ে যায়

তত দূ রে মন পেতে রাখতেছে প্রতীক্ষা।

কোথাও হাঁটাপথে বহুদিন পর পার হইতেছে জমিনের আইল।

আইল পার হলেই

লীন হতে থাকা ভাষা ঝিলমিল করে উঠতেছে কোথাও সগৌরবে।

আইল পার হলে

কোথাও শীতকাল, পাটি বিছানো দুপুরে-

গরম ভাতে ভর্তা। রকমারি সবজিতে উপছে পড়া স্বাদ। ভাত খাইতেছে একান্নবর্তী পরিবার।

মনে করলেই, কোথাও ভাষার ভেতরে ঢুকে যাইতেছে সীমা রেখা।

কোথাও ভাষা লীন হচ্ছে নিরর্থের অপ্রয়োজনে।

কোথাও ভরা জলে খাবি খেতে খেতে মাছ শ্বাস নেয় পাখনায়। নিরর্থকের অর্থের প্রয়োজনে।

কল্পনা করো, আমি তোমারে কল্পনা করতেছি

কল্পনা করো আমি তোমারে কল্পনা করতেছি

তোমারে লইয়া সাঁতার কাটতেছি। সমুদ্রে।

তুমি মুচকি মুচকি হাসতেছ…

তোমারে লইয়া শুইয়া আছি সাগরের কিনারে। বালুচরে।

তুমি শুধু মুচকি মুচকি হাসতেছ

তোমার লগে সারারাত আমি খেলতেছি ভালোবাসার খেলা,

তুমি শুধু মুচকি মুচকি হাসতেছ।

কল্পনা করো আমি তোমারে কল্পনা করতেছি

তোমারে লইয়া পাহাড়ে ঘুরতাছি।

তুমি বারবার লুকাই যাইতেছ জঙ্গলে

আমি খুঁইজা খুঁইজা বাহির করতাছি তোমারে আর তুমি খালি হাসতেছ….

তোমারে লইয়া ঘুরতেছি আন্ধার রাইতে

হাত ধইরা, তুমি ঘামতেছ আর মুচকি মুচকি হাসতেছ।

বাতাস আইছে, বহুত জোরে বাতাস আইছে।

তুমি আমারে ঝাপড়াই ধরছো আর খালি হাসতেছ

আমার ভেতরে বৃষ্টি হইতেছে, তুমি চুপিচুপি আইসা ভিজতেছ।

কল্পনা করো আমি তোমারে কল্পনা করতেছি

তোমার ভেতরে আমি ডুইব্বা যাইতেছি

তুমি আমার উপর ভাসতেছ আর খালি হাসতেছ…

কল্পনা করো আমি কল্পনা করতেছি আমি মইরা গেছি,

তোমারে ছাইড়া যাইতেছি আর আমি কানতেছি।

তবুও তুমি মুচকি মুচকি হাসতেছ!

জ্বর

যেন পৃথিবী ঘুরছে না, আমি ঘুরছি

তোমাকে কেন্দ্র করে।

যেন আমি হেঁটে যাচ্ছি মাঠের পর মাঠ

শব্দহীন।

তুমি ডাকছো ইশারায়, আমি প্রদক্ষিণ করছি চোখ

বারবার একই রাস্তা

একই মাঠ, তুমি –

ভেতরে ঢুকতে গেলেই জলের দেয়াল।

ভিজে একাকার আমি।

শরীর কাঁপছে

চোখ লাল, খুব শীত।

কোথায় আমার লাল সোয়েটার?

কাছে আসা পথ কেন পথিক হয়ে যায়

কাছে আসা পথ কেন পথিক হয়ে যায়!

হাঁটাপথে তারা কেন দৌড়ে দৌড়ে যায়! ভাবনাটি গাছের।

দূরের অথবা কাছের। ক্লান্তির কাছে সঁপে দেয়া ছায়া আশ্রয় হয়ে

কোন সে মাথা! আকুল হয়ে কাছে এসে ফুলের মুগ্ধতায়

কেন আবার দৌড়ে দৌড়ে যায়! হাওয়ার ঠোঁটে রাখে যে ফল,

কে নিয়ে যায়? তাদের!

দৃশ্যের স্থিরচিত্রে খানিক দাঁড়ালে পাশাপাশি

একা একা পথ, দীর্ঘ বেদনার পর এক হয়।

একাকার হয়ে প্রশান্তির মোড়ে, ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলে।

ফুলেফলে ভেঙে গেলে ঘুম, কদমের ছাপ ফেলে শুয়ে পড়ে যেন,

মাছেভরা জলে। কুয়াশা শীতশীত, উন্মাদনার কাঁটা

ধীরে রাখে হাতে। ঘন নিশ্বাসে মুখোমুখি হরিণের মুখ,

আনন্দ বিছিয়ে দেয় ভালোবাসা, ঘাসে।

স্বস্তির পায়ে পায়ে পা ফেলে এগোলো কাছে, তবু কেন হাঁটাপথ

দৌড়ে দৌড়ে যায়! চলে যাওয়া ভ্রম কেন হুল ফুটিয়ে ফিরে ফিরে

আসে!

গোপন একা

একজনের চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগেই, বৃষ্টিতে ভিজে

নরোম হয়ে যেত অন্যজন। উড়ানে কারো যদি ফসকে যেত পা,

মাটিতে পড়ার আগেই ভেঙে খানখান হয়ে যেত অন্যজনের স্বাদের

ঘুম। সাদাকালো দুনিয়ায় ইশারাতেই চলে যেত আনন্দবাগানের

ধারণায়। কদমে কদমে মৌন ছোঁয়ায় ফোটাতো ফুল যৌনতার।

এখন আম্মার বিলাপঘরের পাশেই আব্বার বিলাপঘর। ইতিহাস

হয়ে গেছে বিসমিল্লার পাড়া। আমি হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে

আলাদা হয়ে প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে তাদের দুনিয়া। নিবুনিবু জ্বলছে

কেবল কেরোসিনের শেষ ফোঁটাটুকু।

যেন আমি মাঝখানে গজিয়ে উঠেছি দেয়াল, বিচ্ছেদের চারাগাছ।

আমার বেড়ে উঠার সাথে তাদের ভুবনে অন্ধকার নেমে এসেছে।

আজকাল বউ নাকি প্রায় স্বপ্ন দেখে, লাল লাল দুনিয়ায় রুয়ে দিচ্ছে

বীজধান। ফসলের খেত। কী ফসল বলতে পারে না। আমি তো

বুঝি, খেতে সে বুনে দিতে চায় আমাদের বিচ্ছেদ। মনের ভুলে

আমিও মাঝে মাঝে বলে ফেলি মনের গোপন—

“ফসলের খেত, আমারও ভারি ভালো লাগে, কিন্তু তারচেয়েও

তোমাকে ভালোবাসি খুব।”

শেয়ার