দেখতে যাব তোমারে একদিন
বর্ষায় কোন নদীতীরে খোলা চুলের সন্তরণ
দেখেছি তোমার: করি কেবল ব্যর্থ স্মৃতিচারণ—
তোমার বাড়ি থেকে দূরে পথ দেয় কাঁটার ঋণ
সেই ঋণ নিয়ে দেখতে যাবো তোমারে একদিন—
তোমারে দেখতে যাবো, সখি, মনে গেও রবীন্দ্রগান
ঘোমটায় সাজায়ো মুখ; রেখো উঁচু তাকে কোরান
ভিটায় লাল কলসি, পাশে দলা সরোজিনী ফুল
উঠানে রবে থোকা থোকা হলদে পাখি আর বকুল
সাজায়ো বাড়ি পাশে নদী: তাতে কাজলি মাছের খেলা
দূর থেকে মনে হবে তোমার চোখে ভাসানো ভেলা—
তোমারে দেখতে যাবো, সখি, নিজেরে রেখো গো আড়াল
পর্দার ওপাশে তুমি, ধীরে পড়ো সূরা যিলযাল
উঠানের মিঠা বন ছেড়ে দাঁড়াব দুয়ার ফাঁকে
তুমি মুখ বাড়ায়ে বোলো, ‘বাবা ঘরে নেই— এলো কে!’
আড় থেকে সালাম দিও, গেলাসে দিও নদীজল
স্বেদজল শুকায়ে যাবে, তোমার ঘর রূপানল
বলব শেষে, বল মেয়ে, এইবার বলো কবুল
তারপরে ক্রমে ছুঁবো শ’ মিষ্টান্ন, মিষ্ট জামরুল
ছুঁবো তোমার বাবার পা আর পূব-হাওয়ার লাজ
বিছানার দলা আর তোমার কাঁপা শরীরী ভাঁজ—
পূবালী মেয়ে, বল, সখি, — যাঃ! পাপী চিন্তাদের আড়ি—
বলো, সখি, কোন নদী পাড় হয়ে তুমি যাও বাড়ি?
দুইজনত্ব
কোথায় কোন বাঁশি বাজে
তুমি চলে যাও: চলে যাও আঁকাবাঁকা ক্রোম্যাটিক পথে
চলে যাও পূবের ট্রেনে—
তুমি চলে গেলে দুইটা পাতা, উল্টানো বই, মাদরাসা, চায়ের কাপ, নীল নীল ফুল, ভেজা ফুল, ভেজা নারীমুখ এসব আগের মতোই
কোথায় কোন বাঁশি বাজে
তাই তুমি চলে গেলে পূবের ট্রেনে: পূবের হাওয়ায় হাওয়ায় দূরপথ ধরে—
তবুও কি আমি আর কোনোদিনও একা হতে পারব না?
সবকিছুর পরে
দরজা নড়ার শব্দ হয়।
তারপর নিস্তব্ধতা।
কেউ আসে না। কেউ না।
আষ্টেপৃষ্ঠে
একটু হাওয়া.. শিল্প নড়ে.. মিস করি গো তোমায়;
একটু হাওয়া.. আমারে জড়ায়ে ধরো কল্পনায়।
ফুল পাখি আর তলোয়ার সব-ই দিয়েছি ফেলে
কই ফেলেছি, তা জানি না: কই যে গেলো অবহেলে!
সত্যি বলি: চোখ মেলিনি— চোখ রেখেছি অন্ধ করে;
দ্বার খুলিনি; তবু ফুল-পাখি হারালো বন্ধ ঘরে
কই যে গেলো, তা জানি না: কই যে গেলো অবহেলে
সত্যি বলি: আমি ফেলিনি— ফুল-পাখি গিয়েছে চলে..
জান, খুব ভয় করি গো: আমার থেকে হারায়ো না
মন আমারে চিনে, জানি, তারে কখনো তাড়ায়ো না
কাঁপছে হাওয়া.. ভুলছে সবে.. সবকিছুই হচ্ছে নরোম
এই হাওয়ায় কাঁপবে কেন, কাঁপবে আমার মরিয়ম?
জড়ায়ে ধরো মায়ের মতো— কেবলই যে ভয় করে
সখি, তোমার হেলা আমারে না, খোদারে ক্ষয় করে—
কী যে ভীষণ মরিয়ম
ভিনদেশী পাখি দেশি নামে উড়ে চিমনির উপরে
মনে হয় তবু দেশি পাখি উড়ে চিমনির উপরে
ফের মনে হয় পাখি নাই কেবল আকাশ ওড়ে!
সহসা আকাশ যেন নিভে যায়: কিছু নাই আর
ডলফিন ম্যাচে পোড়াদিন সব কাটে নির্বিকার
নিরবে অনেক পাখি যেন উড়ে চিমনির উপরে
পাখি সব চলে যায়— আকাশ যে নাই তারপরে;
ম্যাটাডোর-পেনে-লেখা অক্ষরে ছেয়ে আছে আকাশ
ম্যাটাডোর-পেন অক্ষরে লিখে মানব ইতিহাস
ম্যাটাডোর-পেন ভাবে এইসব লেখা অবিনাশ
অথচ সুধীরে লেখা সব মুছে মলিন বাতাস;
ফের অন্ধকার সব সরে যায়, তীব্র আলো আসে
সবে লেখে ইতিহাস সবখানে— আকাশে, কার্পাসে..
আমি বসে বসে মরা পথ দেখি; আর নিভুনিভু
সব জীবনের আলো জ্বলে দেখি সবখানে: তবু
অন্ধ চোখ জানে মায়া: মনে হয় এই তো নিয়ম;
দিনমান দু’চোখে ঝরে কী যে ভীষণ মরিয়ম!