দ্বিতীয়র অদ্বিতীয় প্রেমের কবিতা

বলছি না, দ্বিতীয় দশকের সেরা প্রেমের কবিতাগুলোই এখানে প্রকাশ হয়েছে। এটাও বলছি না, দ্বিতীয় দশকই সেরা বা এখানে এই সময়ের সেরা কবিদের লেখা এখানে জায়গা পেয়েছে। ‘সেরা’ শব্দটি সবসময়ই আপেক্ষিক এবং বিতর্কিত। একেকজনের কাছে সেরার নিক্তি এবং সংজ্ঞা একেকরকম। আমার মনে হয় প্রতিটি মানুষ তার নিজের জায়গায় সেরা এবং অদ্বিতীয়। সেকারণেই এই আয়োজনকে বলছি ‘দ্বিতীয়র অদ্বিতীয় প্রেমের কবিতা’। ইদানিং অনেকেই বলছেন, প্রেমের কবিতা লেখা হচ্ছে না। মানুষের আবেগ কমে গেছে। আবেগ কমে গেলে বা প্রেম না থাকলে বোধহয় কোন কবির জন্ম হতো না। দ্বিতীয় দশকের কবিদের নিয়ে অনেক আয়োজনই হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। তবে এ সময়ে লিখতে আসা কবিদের প্রেমের কবিতা নিয়ে আয়োজন সম্ভবত এই প্রথম। ৩৭ জন কবির ৩৭টি প্রেমের কবিতা নিয়ে এই আয়োজন। এই ৩৭ জনের বাইরে অনেকেই এ সময়ে কবিতা লিখছেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, কয়েকজন সাড়া দেননি। এর বাইরে যারা থেকে গেছেন, তাদের সঙ্গে শিরিষের ডালপালার শত্রুতা নেই। কখনো নিশ্চয় তাদের লেখাও শিরিষে প্রকাশ হবে। সবাইকে অভিনন্দন। আসুন, প্রেমে ডুব দেই।

                                                                                  -রুহুল মাহফুজ জয়



অনুপম মণ্ডল

আশ্রমমৃগ

 

আজ কোথায় শুয়ে আছ; সে ধরাতল বায়ুতে আন্দোলিত
বস্ত্রার্ধ ছিন্ন করে, অধোমুখে ঝুলছে
 
 
বৃক্ষ হতে ভূমিতে পতিত যত পত্র, পল্লবরাশি
মৃত্তিকার আরো নিকটে নেমে আসে
 
 
জল ও তীরভূমির মধ্য দিয়ে গড়িয়ে নামে সূর্যাস্ত;
দু’একটি পাখির ডাক, কদাচিৎ, আকাশপথের পানে উড়ে যায়

 


আল ইমরান সিদ্দিকী
ভেসপারের স্মৃতি 

 

হালকা সন্ধ্যায় আমি তার ভারী চোখ দেখতে পেলাম—

 

বললাম, ‘তোমার মুখেও একদিন গোধূলি নামবে,
লাল টিপ ডুবে যাবে।’

 

তারপর, তাকিয়ে দেখি অ্যকোয়ারিয়ামের জলে ভেসে থাকা
সাদা বিকিনির তলে ঘোরাফেরা করছে রঙিন মাছের দল

 

সে বললো, ‘জীবনে এমন সন্ধ্যা খুব একটা আসে না, তাই না?’

 


আসাদ জামান

প্রেম

 

ধরতে না পারা পূর্ণতা, তোমাকে স্মৃতির ভাগাড়ে
ফেলে আসি।
তুমি সত্য হলে-
আমাকে  ডিঙ্গোতে  হয় আরও রক্ত -ক্ষরণ -জল
আরও বিবর্ণ স্রোত,
ঋতুর খলবলে স্ফুর্তির দিকে চেয়ে ঘন -বিষণ্ণতায়—
ঝিমন্ত আলোর মতো তোমাকে স্পর্শ করি অন্ধকারে;
অধিকার করি ভিন্ন ভিন্ন প্রকারে।
শুক্রকীট  হয়ে আরও গভীরে যাই,
আরও গভীরে অহম ও স্ফুর্তির দিকে।
চোখের সমুখেও যা সত্য নয়, বহু দূরের সেই বিষণ্ণতা,
মায়া ও প্রতিমা
স্মৃতির বিকার থেকে —
আমার ভেতর থেকে তুমি বিপুল জন্ম নাও প্রেম।

 


ইলিয়াস কমল

ইনস্ট্যাবিলিটি

 

একটা হাওয়াবাড়ির কথা ভাবি,
যেন করতলে বেড়ে উঠছে ঘোড়া-
অনেক দূরে শিস বাজালে আলপথ
তোমার কাছে যাওয়া যেন
এক একটি মিথ্যা সমুদ্রস্নান
ওভারব্রিজ জুড়ে যদিও কেবল মাংসাশী কান্না
তবুও আমরা পরস্পর বিপরীতার্থক একটি প্রজাপতি।

উপল বড়ুয়া

হুমায়রা 

 

কোথাও চলে যাব ভাবতে ভাবতে তোমার দিকে হুমায়রা
নির্ঘুম চোখ নিয়ে মাতাল ড্রাইভার আমি থামিয়েছি চাকা।
রোদ ছিল আমাদের কাঁধে; দীর্ঘশ্বাসেরও ছিল প্রাচীন বদনাম
জানি না ঢের কিছু শুধু ঠোঁট খুলতেই উঠে আসে তোর নাম।
কোথাও আমি গিয়েছিলাম কোথাও চলে যাব পুনর্বার এই ভেবে
হুমায়রা— আমাদের স্মৃতি আজ ব্যস্ত রাস্তায় নিঃশব্দে গেছে দেবে।
 
 
জেনেছি প্রেম প্রভূত বিষাদময়; কাছাকাছি থেকে ফিরে যাওয়ার ভয়
কেমন আজ চুপচাপ গ্রাস করে জিমি পেজের গীটারের মতো গোঙায়।
আমার কেবল ফিরে যাওয়া; গলা ছেঁড়া গান আর আটাশের শরীর
ভেঙে যায় ত্রাস ও লজ্জায় তোমার লতানো দেহে কিশমিশ ও ক্ষীর।
 
 
আমাদের কথার ভাঁজে কেন আজ উঠে আসে ব্যারেট ও কিথ মুন
আমরা বন্ধু-প্রেমিকা না তুমুল রকার আমাদের নিয়ে আজ ভাবুন।
 

 


কুশল ইশতিয়াক

নন্দনতত্ত্ব

 

বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে বুকের ডালপালা
শুয়ে বসে জব্দ করি প্রেমিকার মুখ
আর তার মুখখানি আলগা হয়ে যায়
প্রেমিকারে রাজকন্যা বানাই, রাজকন্যারে সহজিয়া ফুল —
তারে পরিয়ে দেই একখান পাতার মুকুট
 
পাতার মুকুটে দোল খাওয়া গাছ; কাক-দুপুরে
প্রেমিকা ঐ দোল খাচ্ছে পেয়ারার ডালে; আর বাতাস
সরিয়ে দিলো মেঘ; বৃষ্টির ফোঁটা

সচক্ষে রোদ, আলো-ছায়ায় যথেষ্ট অমনোযোগী
চাহনি, মনে থাকে —
প্রেমিকার ছায়া আরও দীর্ঘ হলে, আরও দীর্ঘ হয়
প্রেমিকার ছায়া আরও শীর্ণ হলে আমি তার অত্যাধিক প্রেমে
পড়ি

তার প্রেমে আমি ততক্ষণ, যখন সে অত্যধিক দূরে
আমি তার প্রেমে ততক্ষণ, যখন সে থাকে অধিক মলিন

প্রেমিকারে রাজকন্যা বানাই, নিজেরে হতদরিদ্র রাখি—
ধূর্ত আমি, পোষা পঙ্খিরাজ আটক করি সবার অলক্ষ্যে
শুয়ে বসে জব্দ করি তার মুখ

বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে রোদের ডালপালা ………

 


জব্বার আল নাঈম

গুলবদন

 

গুলবদন
তোমার রূপে অন্ধ হয়ে পথ হারায়
একবিংশ শতাব্দী
 
এশিয়া-মেরিকায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
পুড়ে গেছে জাপান ধ্বংস বোমে
ফিলিস্তিন উদ্বাস্তু শিবির
বিশ্বাসের খরায়
বিপথে আফ্রিকা
মুমূর্ষু আদিবাসী অস্ট্রেলিয়া
ভেঙে পড়ে মানুষের শির
 
আজও পত্রপল্লবে গুলবদন গুলবদন জিকির

 


জয়ন্ত জিল্লু

সাকিয়া সিরিজ ১

 

সাকিয়া, আপনার বিরহ স্বভাব। আপনাকে কদমবুচি করি। পৃথিবীর সব শ্রদ্ধা আপনার সামনে নুয়ে পড়ে। আমি বিবিধ প্রণালীর ভেতর দিয়ে মায়াপথে যাই। মানচিত্রে কোথাও নদী নেই, অদ্ভুত চোখের নদীতে নৌকা ভাসিয়ে আমি চাঁদ ধরি। আপনার মুখস্থ মুখ জানালায় এসে হাসে। আমি কুর্ণিশ করি। একটি স্পষ্ট জ্যোতি বুকের দিকে ফেরে। একদা মৃত্যুর সমান সত্য এসে দাঁড়ায়, আমি আপনাকে ভাবি। আপনার তসবিহ হাতের আঙ্গুল ছুঁয়ে আরশে আজিমে পৌঁছায়। মেঘ হয়। বৃষ্টি হয়। জলের গান থেকে ডাক দিই, সাকিয়া। পৃথিবীতে সাকিয়া এক, অদ্বিতীয় সত্তা; যাকে ভালোবাসি বসে পা ছুঁয়ে সালাম করা যায়, শ্রদ্ধা করা যায় নৈর্ব্যক্তিক ইশারায়। আর, আমি তো বোধের গভীর থেকে তুলে আনি ইশারা। আমার ইশারা স্কুলের নাম সাকিয়া কাউসার!

 


ডাল্টন সৌভাত হীরা

ঊড়ন

 

ওড়ার ইচ্ছা হলে পুড়ে মরে যাই
আমি আগুনের হল্কা, ক্ষুদ্র পাতাই
নিভে যাই,উড়ে যাই একদলা ছাই;
উড়ে গেলে মরে যাবে, তোমারে বুঝাই।

তারচেয়ে ভাল এই শিকড়ের গাছ
শিকড় ছিন্ন হয়ে বাছল প্রবাস!

জড়াইয়ো না, শেকড় আর বেভুলা আগুন
শেকড় জড়ালে কাঁদে বৃক্ষ-সেগুন!
সেগুন বৃক্ষ তুমি পাতা ঝরা-গাছ।
পাতা এক উত্তাপ, গনগনে আঁচ।

পাতা ছাড়া ভাল আছো। নাকি ভালো নাই।
শুধু;উড়ে গেলে মরে যাবে; তোমারে জানাই।

উড়ে গেলে ভুলে যাবে, তোমারে বুঝাই।
উড়ে গেলে পুড়ে যাবে; তোমারে বুঝাই।

 


তানভীর আকন্দ

নামহীন প্রেমের কবিতা

 

জেগে আছি
শুধু এইটুকু জেনে।
মৃত্যুকে ছুঁয়ে দেখে অলীক পরশে,
হা হা শূন্যতায়!

 

যে মুখে দেখেছি আমি নিজেরই মুখের ছায়া,
তাতেও ভ্রান্তি ছিল যতটুকু,
কতটুকু ছিল নীড়-নির্জনতা?

ছুটছে সমস্ত কিছু, ছুটে যাচ্ছে ঢেউ
জল—বাষ্পফেনা, মেঘ আর মেঘের সকাশে এসে
পাখিগুলি! এমন সহাস্য বেদনায় তুমিও আমার দিকে
ছুটে এসেছিলে। কাল-কর্তব্য বিস্মৃত,
চোখের উপরে শুধু চোখ পড়েছিল,
বেজেছিল আলস্য সংগীত!

শুধু এইটুকু জেনে
জেগে আছি,
মৃত্যুকে ছুঁয়ে দেখে অলীক পরশে,
হা হা শূন্যতায়!

 


তানিম কবির

তুমি শর্মি, আমি তোমাকে, এই বৃষ্টির, কিছু গুণাগুণ, নিয়ে বলব

 

বৃষ্টি পড়ার দিনটায়, শর্মি তোমাকে ডাকলাম
বললাম, তুমি শর্মি, তুমি বৃষ্টি পড়ার দিনটা
চলো ভৈরব, চলো তিনদিন, তুমি মেঘনার
ঘাটে থাকবা। আরো বললাম, তুমি চাইলে
টানা বৃষ্টির, এই মৌসুম, আশুগঞ্জের উঁচু
প্লাটফর্ম, ধরে হাঁটবা, খালি হাঁটবা। তুমি শর্মি
তুমি পুরনো, কোনো বৃষ্টিতে ভেজা ওয়াগন
ধরে দেখবা। ভিজে পিচ্ছিল, কালো পাটাতন
নিজে বসবার, করে ঘষবা। চারিপার্শ্বে
চির চারপাশ, বসবাসহীন, করে তুলবা, তুমি
আই থিংক, তুমি পারবা। পোষা কচ্ছপটাকে
সঙ্গেই, নিয়ে নিচ্ছো? ব্যাগে থাকল—সেটা
সুন্দর। তাকে রেইনকোট, কিনে দিচ্ছো?
দিও দিও তো! প্রতিনিয়ত, দেখো বৃষ্টি, টানা
বৃষ্টি—ফাঁকে ফোকরে তারই ছাঁটেরা, উড়ে
যাচ্ছে। ঘোলা বাষ্পে, চলো মিশ খাই, চলো
শর্মি, ভেজা রেলব্রিজ, হাতে আমব্রেলা, পায়ে
ফস্কাই।

 


তাসনুভা অরিন

পাশাপাশি নদী ও নগর

 

অচেনা জায়গা আছে কোথাও
সব জায়গা পরিচিত চড়ুইয়ের কিচির মিচির

আমি প্রতিদিন  তাই  বাড়ি ভুলে যাই
আমি ভুলে গিয়ে নিজের হাত তোমার আঙ্গুল চুষি
তুমি তো অন্য মানুষ , অন্য বাড়ি

কিছুক্ষণ আমরা শুয়েছিলাম বিপ্রতীপ কোনের মতন সমানে সমানে ঠিক কার যেন ছাদে

মেজাজি বৃষ্টির মতন আদ্র আর রুক্ষ ছিল তোমার আদর

তারপর কোন ভেঙ্গে দুইটা সরলরেখা দুই দিকে চলে গেল নদী নদী মনসহ

আমাদের নদী আর নগর কি এখনো পাশাপাশি মিথোজীবীদের মতো
অলৌকিক মুদ্রাদোষ জানে, শন্দ ফাঁদ দিয়ে পূরণ করি শরীর সর্বনাম

 


ফয়সাল আদনান

রাত এমনি আরো গভীর হবে

 

তোমার ঘ্রাণের নিচে আমি যে ডুবে আছি

তবুও তো তোমার সাথে ছিলাম না কখনো

অলস পাতার মতো বাতাসেরই বেগে ধেয়ে

যেখানে যাই, যাওয়ার কথা না তবুও

 

 

হাওয়ার বুক থেকে খসে পড়ো রাত,

নেমে আসো কমলার খোসার মতো রোদ,

কুমন্ত্রণা—তোমার ঘুমের শরীর জড়িয়ে।

হাড়-মাংসের নিগড়ে তুমিও তোমার ছায়া—

                                                 অন্ধকারের মতো একা

 

এইসব শোক-প্রস্তাবের খসড়া

                                                  থেকে

উঠে আসুক এলিজির সম্ভাবনা

বাগানে তিন ফুলে তিন রেণু

বিষাদে ছড়াক বিষের শ্বাস

হরিণীর চিরে ফালাফালা পেট—

                                                ঝুলে থাক

তোমার শাবকের প্রথম নিশ্বাস

 

অলস পাতার মতো বাতাসেরই বেগে ধেয়ে

সেখানে যাও, যাওয়ার কথা না তবুও

 


ফারাহ্ সাঈদ 

পৃথিবীর নিচুছাদ প্রেম

 

মৃদু আঁচে জন্মদাগ বাঁচিয়ে রেখেছি
পুড়ছে সবজি বাগান, দুরারোগ্য ফল
রিখটার স্কেলে ঘামের তীব্রতা দেখি
পৃথিবীর নিচুছাদ প্রেম

 

আরোহীর গায়কি অঙ্গ সেতার
কি এক ঢঙে গানটি অবতীর্ণ হচ্ছে!
সুর তাল লয়ে ফুলকির ছাই
শিখে নেই ভাঙ্গনের মাপজোখ

 

যেভাবে বৃক্ষটি রোপিত হচ্ছে
আলোর দ্রুতির কাছাকাছি
আর তাঁদের আগুনমুখো পুর্বপুরুষেরা
অপরিমিত উদ্যান রেখে গেছে।

 


বিধান সাহা

যে গেছে ভুলের দেশে

 

যে ভাবে নীরব আছো—পাথরের মতো—বহুদিন—
উদাসীন একইভাবে—বদরাগে—রাত্রি জাগরণে—
স্রেফ হয়ে গেছি একা। জানি— পুরনো মলিন বড়!
আপন ঠিকানা ভুলে—ফুলে ফুলে নতুন আবাস
গড়ে তুমি নিয়েছো সঠিক। বেঠিক পথের পাড়ে—
এখনো যে— আড়ে-ঠারে চাই। আর সেই পথ জুড়ে
শোকের নীলচে রঙে আমাকে আঁকাই। … সুখী হও।

পুজো শেষ হয়ে গেছে— কুয়াশা পড়ছে রোজ মাঠে
তুমি কি এমন দিনে— চিনচিনে ব্যথা পাও টের?
অথবা, আদা-চা খেতে খেতে— সিনে-ম্যাগাজিনে রাখো
চোখ? পুলক পুলক কোনো আভা ভেসে ওঠে চোখে?
সহস্র স্মৃতির পথে মনে মনে হেঁটে যাই রোজ
তোমারও কি পথ হলো? এখনও কি আঁকো ফুল পাখি?

যে গেছে ভুলের দেশে—যাক—আমি প্রাণ খুলে রাখি!

 


মাজহার সরকার

প্রিয়তমো, সুন্দর সময় চলিয়া যায় 

 

কে তবে হনন করে আকাঙ্খার গোপন থেকে
প্রিয়তমো,ধূসর অপেক্ষা থেকে নেমে আসো এই ক্ষমা
মাটির বর্ণের মতো এই মুখ
আগুনের ঋণ থেকে আলাদা করা খড়ের ভেতর
স্রোত, প্রসবে একাকী তোমার গাভী।
অনাদ্র পাথর থেকে মাছের প্রতিভা হয়ে একা
মৃত্যুচিহ্ন থেকে ফিরে গেছো বীজে।
কখনও সংকেত কখনও বিস্তার থেকে এসে
ছাই থেকে ফেরাও তুষের মগ্নতা
চাদর থেকে ফেরাও শীতের রক্ত।
আজ আমাদের রোপিত ছায়া উড়ে যায় আলোর কৃষিতে
প্রিয়তমো, সুন্দর সময় চলিয়া যায়
কাঁচ ছুঁয়ে শুধু হাত কেটে যায়, ঠোঁটের কিরিচে ঝরে যায়
প্রজ্বলিত সেঁজুতি। প্রিয়তমো, রাত তো যায় না
যা মিষ্টি লাগছে, এমন রোজ কেনো হয় না!
হেসে হেসে হাওয়া ভরে খেলাও তোমার খেলনা।

 


মারুফ আদনান

কামহীন যে ঘুম

 

কামহীন যে ঘুম তার বেশির ভাগই আসে জানালার পাশে আধ-খাওয়া নাশপাতি থেকে অথবা ট্রেন যেখানে কখনো থামে না।
ভাবনার সমান হাত আর ছলনা নিয়ে যে সব দুপুর আমাদের, এখনো আছে বিছানায় এখানে সেখানে-
‘তবুও কবরে আমার জানালার লোভ’
প্রাত্যহিক নিষ্ঠুরতা নিয়ে ঘুমাতে যায় যারা,  সন্দহ শর্তেও বিকেলের ছায়া সাথে নিয়ে ঘুরতে যায় যারা
অন্তত তাদের এ বোধ থাকুক।
তোমার জানালায় বাইরের দিকে মুখ করে একটা আয়না রেখো,
তোমায় নয়তো আমায় যেনো দেখে আসা যায় যেহেতু তোমার পরেও এই কামহীন ঘুমে ডুবে রই।

 


মোস্তফা হামেদী

সেতুদি

 

নদীকে না বলে দিদির পাড়ে স্থাপন করি সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর

নদী দেখার আগে দিদিকে দেখি বাজারের হাটখোলা দরজায়

সেতুদি—আমার প্রথম নদী—অথৈ ইশকুল

হাবুডুবু পাঠে হাতেখড়ি জীবনের ভোর বিহানে

 

আগুনের সাথে পরিচয় পাথরের। সভ্যতার পায়ে

লেগে গেল দৌড়, গতি, লোহার চাক। চাকা আবিষ্কার

চক্রাকারে ঘোরা সেই থেকে শুরু—পরিভ্রমণ

ফুল, মধু ও ঘ্রাণে

 


রাজীব দত্ত

একটি প্রেমের কবিতা

 

যেভাবে লিখতেছি তোমাকে, যে ভাষায়; তার জন্য তুমি একটা গাজর বাগান রেখো। সাথে দুয়েকটা ছদ্মবেশী খরগোশ; যারা আমারই প্রেরিত ভাষা ভিন ভাষায় রিফ্লেক্ট করবে আমার বসার ঘরের আয়নায়; যেটার  দুরু দুরু ফ্রেম, যেটার বিম্বরা শতছিন্ন; অথচ গেঁথে গেঁথে রাখা। দূরে গেলেও যাতে দূরে না যায়,যেন মনে মনে পড়ে, এমত নতুন হরবোলার নগরে, তুমি ও তোমাদের অদৃশ্য ভাসা, ভাষার কবরে

 


রাসেল রায়হান
পুলসিরাত

 

এই সেই পুলসিরাত, যার এপারে আছে জান্নাত। উলটো হয়ে ঝুলে থাকা আঙুর ও আমলকি গাছে ঝুলছে নীল কাচের মধ্য দিয়ে দেখা নক্ষত্ররঙা আঙুর ও সুমিষ্ট আমলকি। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর স্তন্যপানের ভঙ্গিতে তাদের শেকড় শুষে নিচ্ছে মদিরা—টান টান অর্ধবৃত্তাকার প্রস্রবণ থেকে; শেকড় বেয়ে চলা মেজেন্টা বর্ণের মদিরার স্বচ্ছ পরিচলন দেখা যাচ্ছে। আর ক্রমশ নিচ থেকে উপরে, এবং উপর থেকে নিচে সাঁতার কাটছে অনাঘ্রাতা রমণীগণ—স্পষ্ট মজ্জাসমেত। সাঁতার শেষে প্রদক্ষিণরত কস্তুরিগন্ধী বাতাস ও বহুবর্ণিল আলোসমেত তারা ফিরে যাবে মরকতের তাঁবুতে—যেখানে ক্ষীরের দেয়ালে ঝুলে আছে রেশম ও পালকের মসৃণ পরিচ্ছদ। আর উপর থেকে উড়ন্ত হিরের ঘুঘু নেমে আসছে কমনীয় ভঙ্গিতে, চাইলেই তারা কাঁধে বসতে প্রস্তুত। প্রস্তুত ধীরলয়ে গাইতে অশ্রুতপূর্ব সঙ্গীত…
আর ওপারে বসে আছ তুমি।

—ভাবছি, পুলসিরাত পার হয়ে আমার শরীরের শেষ মাংসের টুকরোটা তোমার কাছে পৌঁছুতে পারবে কি না…

 


রুদ্র হক

তোমার পায়ের অসুখ

 

তোমার পায়ের অসুখ
এদিকে কিছুতেই জোড়া লাগছে না ভাঙ্গা খেলনা
দিনভর প্যাঁচানো তার স্কু ড্রাইভার নিয়ে
সূর্য চলে গেল অন্য দেশে
সে এখন অগ্নিদীপ জ্বলা নৌকা
নাকি ফানুস?
সূর্যকে কি নামে ডাকো তুমি?
 
রুদ্রকে কি নামে ডাকো?
খেলনার মতো হাসি?
মিথ্যা কথার বাঁশি?
হা হা
হাসির শব্দে খান খান ওই জাহাজভাঙ্গার শব্দ

 

রুহুল মাহফুজ জয়

নির্বাণ

 

মৃত্যুর মতো হঠাৎ না বলে চলে আসব একদিন—একটা অপ্রস্তুত খরগোশ তোমার অধিস্থান থেকে মুখ তুলে তাকাবে; চোখের বয়সকে বলব আগের সব দেখা ভুলে যাও, শেষ দৃশ্যে রাখো দীর্ঘ চুম্বন—আমি ঠিক মৃত্যুর মোহ নিয়ে তোমার ঠোঁটের কাছে এসে দাঁড়াব—বাতাসে কম্পন তুলতে তুলতে স্বাতীদেশে চলে যাবে একটা ট্রেন—

ঘোরগ্রস্ত তিতির—হৃদয়ে প্রবল ভীড়—

                                                         মৃত্যুর মতো তোমাকে নীরবে ছুঁয়ে দেব একদিন!

 


শাফিনূর শাফিন

যা কিছু স্বাভাবিক

Untitled


শামশাম তাজিল

অভ্যাসবশত

 

প্রতি রাতেই ঘুমাতে হয় জেনেও বলি, ঘুমিয়ে যাও

 

তুমিও জানো, আমি না খেয়ে ঘুমাই না। তবু খেয়েছি কিনা সেইকথা আমার মুখ থেকে শোনা চাই

এইসব অভ্যাসের দাসত্বকে প্রেম জেনে মুগ্ধ হই, সান্ত্বনা খুঁজে ফিরি

এর ব্যত্যয় ঘটলে ভুল বুঝে মন খারাপ হয়, তুমিও সারারাত কেঁদে একাকার করো

আর কে না জানে, মিথ্যার রঙে ঝলমলিয়ে উঠে ঘরও!

অথচ তুমি ঘরে থাকো না, আমিও থাকি দূরে—

কিছু কান্না কেঁদেই চলেছে বাতাস—অশ্বের ক্ষুরে ক্ষুরে

 


শাহ মাইদুল ইসলাম

দুপুরগাছে বাহ ৮

 

সুলভচিহ্নে পৃথিবীর দিনগুলো ঘাঘড়া ছড়িয়ে

অশেষ রিকশায় চেপে তুমি হররসন্ধ্যা ঘনিয়ে আসো

ঘষে-মেজে সুন্দর মুখ

তারপর অদ্ভূৎ গায়কী হয়

ঝড়ের কাছাকাছি এইসব, নিরাপদ

তুমি ঠায় জেগে আছো

উচাটন দুখে আমি ডুবে গেলে আমিই ডুবে যাই

অজ্ঞাত সব কুশীলব ধুম করে মরে-টরে যায়

মানুষ কী করে হাসছে

একখন্ড ডুবন্ত মানুষের একখন্ড মৃত মানুষের আতংকে

আমাদের হৃৎপিন্ড লাফিয়ে ওঠে

ওহ শিউলি সরকার, শিউলি সরকারের জন্য তীব্র ঘৃণা ও

শক্তিশেল

হৃদয়কূপের গহীনে হৃদয়কূপ; বিবিধ সুঘ্রাণ উঠে আসে

আসাধারণ ছবি

এর জন্য সুমত্ত হওয়া গেছে

তোমার শারীকিপনা দেখে পাগল পাগল

আত্মার শতখন্ড মাংস বিছিয়ে দিই— অবাক ভূরিভোজে সব সত্য

বাক্যালাপ বন্ধ

হায় শিউলি সরকার ব্যতিত শিউলি সরকারের

কোন বিকল্প নাই, আমার

 


শিমন রায়হান

কেতকীর মুখ

 

আলো ধুয়ে দেয়
         কেতকীর মুখ
         আলো হয়ে যায়
কেতকীর মুখ

.. আলো তাই ধন্বন্তরি ওর মুখের আড়ালে

 

দুই.

যতবার মুছে ফেলি বিস্মিত হবার স্বভাব
ততোধিকবার ফুঁটে যাস আশ্চর্য আফিম উড়িয়ে
তু্ই কী মোমরঙা নদী এক
রুপকথার কার্ণিশে ঝুলে থাকা রুপোলি নিনাদ
কথাকে ফড়িঙ      ফড়িঙকে কথা
এসব কারিগরি বুনে নিচ্ছে পাখিদেশের ভিসা
ঈশ্বরীপ্রতিম স্বরচিত চুম্বক

 

তিন.

জ্বরগ্রস্ত পেয়ালায় ভাসে কার কপট মুখ
বিকেলের জন্মান্ধ কৌশলে ওড়ে প্রেমিকার বিষণ্ন ধারণা

 


শিমুল জাবালি

ওডালিসকিউ

 

সখি, ঈষ্টপক্ষের ঘোর তুলে সওদা বিলি করার খানিক অভ্যাসটুকু ঢেলে স্নান করে নাও। কালোমনের দুলুনি শরতের পাতায়। চাদর টেনে কাঁধের বসন রাখার নয়নি দেহে নরম তৃষ্ণা মেটে যাক। বাঘ্রফলি তোমার আঙুল চুষতে জানে না। বুড়ো আঙুল বড্ড তেজী! ঘুমের ঘোরে মুছড়ে যাক সখিবিদ্যা। অরণ্যের বাসনে পিতলের শরীর কে’বা মানে মানত! ভাঁজে ভাঁজে কৃষ্ণনগর, ভাসা ভাসা শুভ্রবিলাস। সখি জলের পিপাসা ম্লান করো। রাজপুত্র হবো।

সখি, পালঙ্কের আলিশান চাদরে বালিশ রেখো না। রক্তকেশর দোল খাবে দুলতে দাও। রুপোর শরীরে কে-বা পারে বস্ত্র তুলিতে। বক্ষে তোমার উদাম বুদাম হাওয়া। স্নানের জলে বুনোঁহাস ডুবায়। পায়ের খাড়ু আঁচল ঢাকা। বাদ্য বাজে সখি। সিথানে বাঘ্রফলি। জ্বালিয়ে রাখো পিতলের প্রদীপ। সখি, সখি শরোদ বাজাও, একটি সুরে প্রজাপতির নট্যনাচ।

পেখম নাড়াও পেখম নাড়াও। ক্ষেপে আছে প্রেমিক এক।

 


শুভ্রনীল সাগর

কান্না, ছুঁয়ে এসো কেতকী

 

মৃত্যু কদাচ কথার অবসর আনে। অবসর? আমি অবশ্য অবচ্ছেদ লিখতে চাইব। নারকেল পাতার ভেতর চাঁদ — রাত্রির আগে…

কিছু কথা চিরকাল গলা বেয়ে চোখ, উজানী। বৃষ্টি পুড়ছে বেঘোর। পাখিরা বট গাছে গিয়ে থামে। ‘তুমি-আমি’ শব্দেই শুধু কাছে —স্বাভাবিক?

 


সাজ্জাদ সাইফ

দিলখোলা

 

কাঁচিতে চুল ছাঁটানোর শব্দ আড়ি পেতে শুনি, ভালো লাগে, আজ সেলুনের ধারে কাছে আড্ডা বসাই—
কাকে যেন বলে বসি ঘুম ভাঙা স্বপ্নের কথা,
দপ্তরির লোহার মতো আয়েশী সুরে ঝননের কথা,
পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানো ছোট খালার কথা!
আজ বড় দিলখোলা আমি
–আকাশ ছুড়েছে মেঘের বাবল;
আর, গেরস্থালির অবসরে, গৃহে, বৃষ্টির গল্প ওঠামাত্র ছাতা হাতে উঠানের ধারে এসে দাঁড়াও তুমি, যেনো কেউ এখুনি ফিরবে বাড়ি!

 


সাদী কাউকাব

সন্ধ্যা

 

সূর্য দেবে গেলে আমরা বেরুবো। আমি তুমি; এবং আমরা। সংঘব্যর্থ লোকেদের, যারা খণ্ডকালীন প্রেম ভুলে উদ্বেলিত হতে চায়, তাদের জড়ো করবো নগরীর উপকণ্ঠে; হিলট্র্যাকের নিচে অন্ধকার বার’এ। তাদের মাঝে জাগাতে বোধ, নিরুৎকণ্ঠায় ঘোষিবো, হারানো প্রেমিকার শোক দীর্ঘ করো। আর এ লক্ষ্যে, তাদের বিবিধ গল্প শোনাবো।

যারা আঁকতে চেয়েছিলো তাদের শোনাবো উরসুলার গল্প। যারা লিখতে চেয়েছে তাদের বিয়াত্রিচ। আর মুদ্রা ভুল করা প্রেমিকা যাদের, তাদের শোনাবো ডানকানের গল্প। আমরা অপেক্ষা করবো নীরবতার। আমরা অপেক্ষা করবো নিবিড়তার। ক্ষীণ আলো নিয়ে উড়ে যাবার পরেও দেখবো জোনাক।

আমরা অপেক্ষা করবো মাহেন্দ্রক্ষণের। লাস্যময়ীসহ প্রাডো উড়ে গেলে বাংলোর দিকে,  ফ্লাড আলোয় ধাঁধিয়ে যাওয়া মুখ দেখবো। আর্দ্র চোখ দৃশ্যত হলেই কেবল, আমরা নড়েচড়ে বসবো। সুউচ্চকিত কণ্ঠে লাফিয়ে উঠবো। উল্লাসে ফেটে পড়বো; বলবো, চিয়ার্স! জিতেছে প্রেম!

 


সারাজাত সৌম

এই হেম

 

জগৎ যতোবার দেখি—ফুরিয়ে যায় প্রেম, এই হেম! বিস্ময়ে জ্বলে উঠে আমারই চোখ। আমি অন্ধ হই—তুমি উজ্জ্বল—সীমোরগের খসে যাওয়া একটি পালকের মতো পৃথিবীময়।

অথচ আমার হৃদয়—বাজনা তুলে তোমারই কানে। যেন একই গান ত্রিশটি পাখির হৃদয় নিয়ে কুহে কাফে এসে মিলে! তারা একই দেহ। হে আলো—আমার নষ্ট চোখ, ফুরিয়ে যায় প্রেম।এই হেম সমূহ !

কী আছে আর—হ্রদে—পাহাড়ে—গাছের কিনারে? এই যাতনা তো ভয়াবহ।আলো—ফিরে এসো। আমি ফিরে যাই—তুমি আমি একই তো, প্রেমের সন্ধানে নেচে বেড়াই।

 


সালেহীন শিপ্রা

হিমকণা

 

পৃথিবীর গভীরতর সন্ধ্যার কাছে গোপনে ঝরে পড়ছি,
ভুলে যাওয়া বারান্দার পাশে, যার নাম
কখনোই বিষাদ ছিল না।

যে মুদ্রা ভাঙনের তা যদি শেখাও কেবল
         শীতের তীব্রতা বাড়ে, ডাকনাম বদলে বদলে যায়,
         পুরোনো সুখের নামে বুনো পাখি পাখনা মেলে।

যে সকল উচ্ছিষ্টের গন্তব্য থাকে না তারা বিভ্রান্ত বিকেল খুঁজে
ফেরে আর সম্পর্কেরা এ রকম সন্ধ্যার কাছে হিমকণা রেখে
যায়, বলে-
          ‘ঝরে যাও, ঘুমসংক্রান্তির রাত জেগে আছে।’


সুবর্ণা গোস্বামী

কোলাজ

 

সমুদ্রের খুব জোছনা সংসার। ঘ্রাণরাত্রির হালকা বেগুনি ঘর। তুমি শুয়েছিলে প্রবাল বধূর সাথে, নিয়ন অন্ধকার জ্বেলে। নেপথ্যে বেজে উঠলো ডাগর ফড়িঙের গান।
চাঁদের তুমুল টানে তখন তুমিও জোয়ার। লবণস্নাত মারমেইড। ভেসে গেল পৃথিবীর পাড়।
আমার হিংসে হচ্ছিল। রক্তের সিম্ফনি থেকে নির্মোহ নিসর্গ হতে হতে আমি আগুনপাতায় লিখে গেলাম-
আমি জ্বালিয়ে দেব নব, তোমাদের চুমুর কোলাজ!

 


হাসনাত শোয়েব

দ্য রেইনি সিজন ১৬ 

 

বুক

আমার ফিলিস্তিনি গার্লফ্রেন্ডকে তুমি দেখো নাই। সে দাঁত দিয়ে নখ কাটে, আর নাকের ভেতর আঙুল ঢুকায় রাখে। রোববার সন্ধ্যায় সে আমার নামে চার্চে ক্যান্ডেল জ্বালাত আর চিবুক থেকে উড়িয়ে দিত দুর্লভ কিছু যুদ্ধবিমান। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সে খেতে চেয়েছিল গাঁজা ও আফিমের কোলাজ। আসো, তার কবরে গোলাপ এবং কিছু নখ রেখে আসি।

চিবুক

তুমি পাতার আড়ালে দাঁড়িয়ে মাস্টারবেট করো। পাতা ভিজে যাবে তোমার ভালোবাসায়। তুমি বসে বসে ভাবো ফিলিস্তিন। আহা ভালোবাসা, তুমি আমার প্রেমিকা। আমার স্বপ্নের জেরুজালেম।

নখ

তোমার বুকের ওপর গঁজিয়ে উঠছে গাঁজার গাছ। আমি তোমার কবর দেখি, বুক দেখি না। তুমি তোমার বুক দেখাও। ভাঙা নখের আড়ালে সন্ধ্যা নামুক

 


হাসান রোবায়েত

কাঁটা

 

আজো কি সেই মহুয়া ফোটা দূর
ফিরিয়ে দেবে অপয়া কৌশলে
ছাউনি ভরা বিপুল হাওয়া-শোরে

কোথায় তুমি, খোঁপায় কাঁটা পোড়ে—!

কেন যে কাঠ আত্মসুখে লীন
চোখের ফাঁকা মহিষ-ঘন হাওয়া
দুপুরে ঘাম তুলার পাশে ওড়ে—

কোথায় তুমি, খোঁপায় কাঁটা পোড়ে—!

সিঁথানে ছায়া দারুণ অপেরায়
ভুলিয়ে দেবে হঠাৎ কোনো মুখ
দাঁড়িয়ে থেকে এসেছি যেই সরে

কোথায় তুমি, খোঁপায় কাঁটা পোড়ে—!

 


হিজল জোবায়ের

পদার্থ বল বেয়ারিং

 

পাথর উড়বে হেনা,
পাথরের শাঁস পড়ে বেআব্রু শরীরের ক্বাথে পিচ্ছিলতায়;
তোমার রক্তাক্ত উরুর ভিতর—
জিরাফের জিভ ক্রমে লীন— তুমি প্রেরণ করো হেনা
নেমে যাক বন্যার জল,
রেলের স্লিপার যেন ভেসে ওঠে রিফিউজিদের গ্রামে

মিঠাফল ফসলের অভাব অনটনের ভিতর
তুমি চিনে নিলে উদ্দিষ্ট যান
সুলভ মূল্যে কেনা এইসব ফল
এইসব মাতৃগর্ভের মতো নদী, পদার্থ,বল বেয়ারিং প্রভু
চরাচর ব্যাপ্ত হলো

কৌটাজাত মাংসের শরীর নেড়েঘেটে ভ্রান্তি বিহ্বলতা—
স্মৃতিধূলিমাখা যাতনাই ফের চাগা দিয়ে ওঠে;
পাতার ভিতর নিরাময় ছিল অসুখের,
নিয়মিতি-অনিয়মিতির ভিতর ছিল ক্ষয়,
অরণ্য আর মরুভূর মিলনস্হলে হেনা,
তোমার রক্তাক্ত ঊরুর দিনে জিরাফের জিভ রক্তাক্ত—
তুমি প্রেরণ করো হেনা

 


হুজাইফা মাহমুদ

জাদুর বেড়াল

 

যেন উল্টানো তাসের নিচে এক অচিন উদ্যান

যেখানে জৈষ্ঠের রোদ গায়ে মেখে খেলা করে জাদুর বেড়াল,

আধো নিদ্রার ছায়ায় বেড়ে উঠছে বাদাম বৃক্ষ

আর উইন্ডমিলের পাখা চূর্ণ করে অমৌসুমি ফুলের ঘ্রান।

দেখ, এমত উতাল বাতাসে আমাদের হৃদয় বিকল হয়ে পড়ে,

খসেপড়া চোখ উড়ে যায় ঘ্রাণের উৎসের দিকে,

আমি পুনরায় আত্মার অভিমানের কথা বলি।,

পুনরায় কান পেতে থাকি,

প্রতিধ্বনিত বাতাসে তোমার কোন উচ্চারণ খুঁজে পাইনি

কেবল ইন্দ্রিয়জুড়ে গজিয়েছে লাইলাক লতা।

শেয়ার