অন্যান্য গ্রাফিতি থিকা টয়লেট গ্রাফিতি ব্যাসিক্যালি ডিফরেন্ট হইলো স্পেস নিয়া। ওপেন জায়গায় নিজের প্রাইভেট কাজ করার ভিতরে একটা প্যারা আছে। আগের দিনে লোকেরা যে মাঠে বা খালের পাড়ে এই কাজ সারতো তার মত তাড়াহুড়া নাই এখন আর। লুকায়া একটা জায়গার ভিতরে আরামছে নিজের কাজটা সারতে সারতে অনেক চিন্তাই তো মাথায় আসে। আর যেকোন সৃজনশীল কাজের অনুপ্রেরণা কিন্তু মানুষ ওই তার আশপাশ থিকাই নেয়, সে একটা ছোট রুমে তার পেনিস, নাভি, যৌনকেশ, এনাস এসব থিকাই ইন্সপায়ারেশন নেয়। তাই তার লিটারেচারে এই জিনিসগুলাই ঘুইরা ফিরা আসতে থাকে। আর ধরা পড়ার বা নাম ফাঁস হইয়া যাওয়ার ইনসিকিউরিটি তো থাকে না তার, সে আরামসেই লেখে।
পাবলিক বাথরুমগুলা কিন্তু জেন্ডার স্পেসিফিক। মহিলা টয়লেট, পুরুষ টয়লেট এরকম ভাগ করা। এভাবে একাডেমিগুলা বা কোন প্রতিষ্ঠান কিন্তু আলাদা একটা স্পেস ক্রিয়েট করে। শুধু যে পুরুষ-মহিলার ক্ষেত্রে আলাদা করে তা না, ফিলোসফি অ্যান্ড গ্রুপিং এগুলা তো আমরা দেখিই। তো, টয়লেট গ্রাফিতি কিন্তু একাডেমিতেই পাওয়া যায়। এজন্যে এটারে ইনফর্মালি একাডেমিক লিটারেচার নামেই ডাকে লোকে। এইরকম আলাদা স্পেস ক্রিয়েট করার আর কি কি আমরা দেখি? টিকেটের লাইন, বিউটি পার্লার, ইদানিং বিয়ার খাওয়ার ব্যবস্থাও আলাদা করার বিষয়টা দেখা যায়।
ছেলেরাই বেশি লেখে টয়লেট গ্রাফিতি। আর ব্যাসিক্যালি যৌনতা বা যৌনাঙ্গ নিয়াই লেখে তারা। মেয়েরা ব্যাসিক্যালি প্রেম ভালোবাসা নিয়াই লেখে। যৌনতা নিয়া না লেখার কারণ কিন্তু সেক্স ফিলিংসের অভাব না। সমাজ তাদের ভিতর যে নৈতিকতা বা সামাজিক ট্র্যাডিশন তৈয়ার কইরা দেয় সেখান থেইকাই এইটা আসে ব্যাসিক্যালি। আর পোলারা পেনিস আঁকবে আর মাইয়া হার্ট আঁকবে ব্যাপারটা তেমনও না।
সেলফ প্রেজেন্সের দিকে তাকাইলে নিজের নাম লেখার টেন্ডেন্সি ছেলেদের বেশি। ‘রিয়াদ দ্য ফ্লেম’ বা ‘বডি বিল্ডার রনি’ এরকম কিছু দেখা যায়। নিজেরে বড় কইরা তোলার ব্যাপারটাই সে করার ট্রাই করে। এভারেজের চাইতে বড় পেনিসের স্কেচ আঁকার মাধ্যমে সে মেইল বিহেভটা শো করে। ছেলেরা জেনারেলি অন্য আরেকটা ছেলেরে অ্যাটাক কম করে, কাউরে অপমান কইরা কিছু কম লেখে, বরং নিজেরেই বড় করার টেনডেন্সি দেখা যায় ওয়ালে। কিন্তু মেয়েরা অন্য আরেকজনকে ইনসাল্ট কইরা লেখতে দেখা যায় টয়লেট ওয়ালে। ‘সোমা খারাপ চরিত্র’ বা ‘আনিকা দুইঞ্জা’ বা ‘রাইসার অন্তর খারাপ’ এরকম লেখাই ব্যাসিক্যালি চোখে পড়ে। তো, পোলারা নিজেরে জাহির কইরা মেটিং করতে চায়। যারে বলে মেইল মেইটিং স্ট্র্যাটেজি। আর মাইয়ারা আরেকটা মাইয়াকে নিচে নামায়া সে মেইটিংয়ে হাজির থাকতে চায়। এইটা আবার ইভোলিউশন থিউরিরে সাপোর্ট করে।
কারে অডিয়েন্স ভাইবা লেখে। বা আদৌ অডিয়েন্স টারগেট কইরা লেখে কিনা তাও ভাবার বিষয়। এমনে অডিয়েন্স যদি থাইকা থাকে সেটা কিন্তু বেশ ওয়াইড ভ্যারাইটির। ইয়াং থেইকা শুরু কইরা বুড়া লোকেরও তো টয়লেটে যাওয়ার দরকার পড়ে। তবে জেন্ডার তো একটাই থাকে। স্পেসিফিক। আরেকটা বিষয় যারা টয়লেট গ্রাফিতি করে তারা তো জানেই অডিয়েন্স কিন্তু আটকা। তারে তার কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত ওয়েট করতেই হবে। আর বইসা থাকলে সে তো ওয়ালেই তাকায় থাকতে হবে। আর ওয়ালে তাকায়া না পইড়া কই যাবে! আর এভাবেই কিন্তু টয়লেট গ্রাফিতি আর্টিস্টের সাথে কনজিউমারের কমিউনিকেশন হয়।
তো এমনে পিছনের দিকে তাকাইলে আমরা টয়লেট গ্রাফিতির টেনডেন্সির একটা থিওরি পাই। অবুঝ বাচ্চা-কাচ্চা দেখবেন হাগার পর মা একটু এদিক ওইদিক গেলে অগুলা হাতে ধইরা গা হাতে মাখে। মানে সুন্দররে তছনছ করাই তো বাচ্চাদের কারবার! তার মানে এগুলা সে কাট কইরা পেস্টই করে। তো বাচ্চাদের হাগাগুলা নিয়া ওয়ালে পেস্ট করার টেনডেন্সি সে তো বইয়া বেড়ায়। বড় হইলেও সে এই টেনডেন্সি ডিনাই করতে পারে না। তখন হাগা তো আর সে ওয়ালে লাগাইতে পারে না, কায়দা কইরা ডার্টি লেখতে হয় তারে। অ্যান্ড সে সেইম প্লেজারই কি পায়! তো এসব থিউরি-মিউরি তো আসলে সাইকো-এনালাইসিস দেয়। এর বাইরে আর কোন কাজ নাই আসলে থিওরির। তো প্রশ্ন হইলো এরপরেও টয়লেট ওয়ালরে আপনারা নন্দনতত্ত্বে জায়গা দিবেন! ও আচ্ছা, আরেকটা থিওরি আছে। পোলাদের ভিতর মাইয়াদের প্রতি একটা জেলাসি কাজ করে, সেইটা হইল, মাইয়ারা বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। পোলারা এই জিনিস পারে না। তো কাউন্টার হিসাবে পোলারা হাগার ভিতরে এই আফসোসটা কিছুটা মিটাইতে পারে। হাগার ঘটনাটা খেয়াল করলে দেখবেন এইটা বাচ্চা জন্ম দেয়ার দৃশ্যের কাছাকাছি। সো, পোলাদের কাছে বাচ্চা জন্ম দেয়াটা ক্রিয়েটিভিটি হিসাবে আসে, সে এইটাকে হাগা দিয়াই রিপ্লেস করে সাইকোলজিক্যালি। তো বাচ্চাদের হাগা হাত দিয়া ধইরা খেলার আর তা দেয়ালে লাগানোর টেনডেন্সির ব্যাপারে বলতে গিয়াই এত সব বলতে হইল।
পেনিস আর ভ্যাজাইনার স্কেচগুলা দেইখা আর্টিস্টের সেক্সুয়াল কালচার আর বিলিফের জায়গাটাও টের পাওয়া যায়। পেনিট্রেটিভ সেক্সুয়াল ডিজায়ারই বেশি। হয়ত দেখা যায় খাপছাড়াভাবেই একটা ভ্যাজাইনার ভিতরে একটা পেনিস ঢুইকা যাওয়ার স্কেচ। আর্টিস্ট কিন্তু তার নাম-ধাম এড্রেস চেহারা লুকাইতে পারলেও ধর্মরে লুকাইতে পারে না। পেনিসের কাটা আর আকাটা দেইখা আপনি বাইর কইরা ফেলতে পারবেন। এরকম একটা স্কেচের নিচে আইসা আবার আরেকজন কমেন্ট করে, ‘এইটা তোর মায়ের ভোদা।’ তো প্রত্যেকটা টয়লেট ইউজার যখন পুরা ঘটনাটা দেখে ক্রনোলজিটা সে বুঝে ঠিক, কিন্তু যখন ‘তোর মা’ পড়ে তখন সে নিজের দিকে আসায় বিব্রত হয়। এই রকম নন-সিলেক্টিভ সর্বনাম দিয়া আর্টিস্ট বা কমেন্টার ব্যাসিক্যালি ইনসাল্টের গেমই খেলে। আবার ঘুরে সে-ই যখন টয়লেট করতে আইসা এইটা পড়ে, ‘তোর মা’ দেইখা সেও বিব্রতই হয়। সেইমভাবে, ধর্মরে অ্যাটাক করার ঘটনাও দেখবেন ওয়ালে। আর এসবে মেইল গেজটা তো প্রমিনেন্ট হয়ই। ‘মালাউন মাগিরে চুদি’ বা ‘হিজাবি সুমাইয়া তোরে চুদি’ ইত্যাদি দিয়া আসলে মেল গেজটাই আগে আসে। জেন্ডার স্পেসিফিক জায়গায় এই গেজটা আসলে একটা ছোটখাট রাষ্ট্রই, ওই রকম এক তরফাই।
মেইল টয়লেটে সেক্সুয়াল যে স্কেচ আর টেক্সট গুলা দেখা যায় তার মধ্যে আরো যে কয়েকটা ইস্যু আছে তা হইলো গিয়া ব্রেস্ট আর ফিগার। ক্লাসমেট কোন মেয়ের নামেই হয়ত লিখা দিল হট অমুক বা সেক্স বোম অমুক বা অমুকের দুধ এত বড়। আর ওই যে বলতেছিলাম যে সেক্সুয়াল ইস্যু যেহেতু ট্যাবু ইস্যু আর এইটা নিয়া সাপ্রেসড থিংকিং এন্ড বিলিফ ফ্যানটাসি আকারে আউট বার্স্ট হয় টয়লেট ওয়ালে। বড় স্তনের প্রতি পারভার্শনটাও আপনি এইভাবে টের পাবেন। আর সেক্সুয়াল স্টার্ভিং থেইকা রাইটারের যে টেক্সট বাইর হয় ওইটাও আলগের উপর বুঝাই যায়। সেক্স করার অভিজ্ঞতা নাই এমন কেউ ‘অমুকের ভোদা টাইট’ বা ‘অমুকের দুধ একেকটা এক কেজি’ টাইপ ফ্যানটাসি টেক্সট লিখবে এটাই স্বাভাবিক।
আরেকটা হইল, পাওয়ারের ইস্যু। আমি একটা সরকারি বড় কটন মিলের টয়লেটে এইটা দেখি। ওই কটন মিলটার অনেক শ্রমিকের বেতন বকেয়া রইয়া গেছিল কয়েক মাস ধইরা। তো শ্রমিকদের টয়লেটের দেয়াল জুড়ে বড় অফিসারদের নামে সব স্ল্যাং লেখা। বড় অফিসারদের থাকার কলোনি মিলের ভিতরেই আছিল, পরিবারসহ থাকতো উনারা। ফলে শ্রমিকরা পরিবারের নামেই, মানে অফিসারের বউ আর মেয়েদের নামেই সেক্সুয়াল সব স্ল্যাং লেইখা রাখছিল। তো তারা আসলে বার্স্ট আউট হওয়ার জায়গা হিসাবে টয়লেটের ওয়াল বা স্ল্যাং কেন বাইছা নিল তা তো আমরা বুঝিই। বকেয়া বেতন না পাওয়া পাটকল শ্রমিকরা টয়লেটের ওয়ালে কি লেখতে পারে তা-ই ভাবতেছেন নাকি?
ফিমেইল টয়লেটে বেশির ভাগই নন-সেক্সুয়াল গ্রাফিতি দেখা যায়। ফুল পাখি কবিতা আর লাভ আঁইকা তার ভিতরে ইংরেজিতে অমুক বর্ণ প্লাস অমুক বর্ণ এরকম। প্লাস চিহ্ন দিয়া নাম জেনারেলি দেখা যায় না। নাম দেখলে ধইরা নেয়া যায় যে যার নাম লেখা হইছে তারে ফাঁসানোর জন্য আরেকজন লেইখা থাকবে হয়ত। এইটারে বলা হয় ট্যাগিং তরিকা। কাউরে জড়ায়া কিছু লেইখা দেয়া হয়। তো প্রেমের কলংক তো ভালো জিনিসই, আর লাইন মারা বা প্রেম থাকার যে কুৎসা এগুলা রটার ব্যাপার তো কিছুটা বটেও। তবে ‘শারিকা’ লিখে নিচে মোবাইল নাম্বার দিয়া দেয়ার ভিতরে আরেকটা পলিসি থাকে সেইটাও টের পাওয়া যায়। তো, ট্যাগিং তরিকার কথা যেহেতু বললাম, টয়লেট গ্রাফিতির আরেকটা তরিকার কথা বলি, সেইটা হল ট্যুরিস্ট তরিকা। একটা মহিলা কলেজে ভর্তি পরীক্ষার সীট পড়ল পোলাদের বা ভোট কেন্দ্রে পোলারা আসলো একদিন দুইদিনের জন্য। পরের দিন টয়লেটে গিয়া মেয়েরা দেখলো ওয়াল জুড়ে ভালগার কথাবার্তা। তো, এগুলা তো মাইয়ারা লেখে নাই। কিন্তু অডিয়েন্স হইতে হইল তাদের।
ফিমেল গ্রাফিতিতে রোমান্টিক কবিতার একটা ব্যাপার থাকে। বিরহজনিত কবিতাই বেশি দেখা যায়। কাউরে না পাওয়ার কষ্ট আর ক্রাশের সাথে অন্য কারো সম্পর্ক দেইখা জেলাসি থেইকাই এসব লেখা উইঠা আসতে পারে। তো ওইসব কবিতায় রিপন ভিডিওর যে ফানি ভাবটা থাকে, ওইটা মে বি থাকে না। অডিয়েন্স এইটা নিয়া হাসাহাসি করে না। তার নিজের কাজ সারতে সারতে রাইটারের প্রেমের বিষয়টা আর তার কষ্টের ভ্যালিডেশনের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল হয় কেবল। হয়ত নিজের সেইম একটা কষ্টের মেমোরি রিকল করে। একটু নিরিবিলিতে ভাবে। পেশাব কইরা ফ্লাশ করার ভিতর দিয়া ভুইলা যাওয়ার ভাব নিয়া বাইর হইয়া আসে।
আর্টিস্ট কী আগের থিকাই প্রিপারেশন নিয়া যায় নাকি সাডেনলি যা মনে আসে তাই লেখে এইটাও ভাবনার বিষয়। সাধারণত এবড়া-থেবড়া লাল ইটের টুকরা বা পেন্সিল বা চক দিয়া ওয়ালে লেখা হয়। কাঠের দরজা বা প্লাস্টিকের ফ্লাশের উপর কলম দিয়াই লেখে। লম্বা টেক্সট লেখতে হয় বইলা চিঠির ফরম্যাট জেনারেলি কলম পেন্সিল দিয়াই দেখা যায়। যদি কালার পেন, মার্কার বা স্প্রে দেখা যায় তাইলে ধইরা নেয়া যায় আর্টিস্ট প্লান কইরাই আসছিল। জেনারেলি টিনেজ গ্রুপ, ব্যান্ড দল বা কোন ব্যান্ডের ফ্যানরা এইটা কইরা থাকে।