আমরা কোথায়?
ভিয়েতনামে না ইন্দোনেশিয়ায়।
জেরুজালেমে না সাইপ্রাসে।
ভারতে না পাকিস্তানে।
কোথায় আমরা?
জানো ওরা আমার ছেলেটাকে হত্যা করেছে হিরোশিমায়।
ওরা আমার মাকে খুন করেছে জেরুজালেমের রাস্তায়।
আমার বাবাকে মেরেছে বুখেনওয়াল্ডে গুলি করে।
আর আমার ভাই। তাঁকে ওরা ফাঁসে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। কারণ সে মানুষকে ভীষণ ভালোবাসতো।
– জহির রায়হান
১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান মিরপুরে তাঁর বড়দাকে – আরেক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সার – খুজতে গিয়ে আর ফিরে আসেন নি। তাঁর এই ফিরে না আসা তখন থেকেই জন্ম দেয় বিভিন্ন রহস্য ও তর্ক-বিতর্কের। তাই, দেখা যায় জহির রায়হান ‘নিহত’ হয়েছেন না বলে আমরা বলতে থাকি তিনি ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন। যেহেতু তিনি নিহত হয়েছেন, কারো কারো মতে হারিয়ে গেছেন, বাহাত্তরের জানুয়ারিতে তাই কেউ কেউ তাঁর মৃত্যুকে মুক্তিযুদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখাতে থাকেন এবং এর কারণে, এরশাদ সরকার ফতোয়া দেন, তাকে মুক্তিযুদ্ধের শহিদও বলা যাবে না। তবে মূল রহস্যের ডালপালা ছড়ায় অন্য কারণে। সেটা হচ্ছে, জহির রায়হানকে কারা মারলো, কিংবা কাদের হাতে জহির রায়হান মারা গেলেন, কিংবা কারা জহির রায়হানকে গুম করলো। এই প্রশ্নগুলোর জবাবে তখন অধিকাংশই তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলেন। সেটারও যথেষ্ট কারণ ছিল।
জহির রায়হান, তাঁর বড়দার সংস্পর্শেই, জীবনের শুরু থেকে কমিউনিস্ট রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনেও জড়িত ছিলেন সক্রিয়ভাবে, পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে তাঁর হাতে তৈরি হয়েছে অসাধারণ কিছু উপন্যাস ও ছোটগল্প। এমনকি এই প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্র বানানোর পরিকল্পনাও করেছিলেন। একসময় আর্থিক কারণে বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণ করেন, কিন্তু, ‘আপন বিবেকের কাছে আমি প্রতারক সাব্যস্ত হব’ এমন চিন্তা থেকে সত্তরের জানুয়ারিতে তিনি বলেন, ‘এক সময় আমার আর্থিক সংকট ছিল বলে সৃজনশীল ছবির বদলে বাণিজ্যিক ছবির ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। এখন সে সামর্থ্য এসেছে। তাই আমার স্বপ্নসাধ নিয়ে ছবি তুলবার সময় উপস্থিত।’[1] সে সময়ে নির্মিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ তাঁর এই স্বপ্ন-সাধের একটি।
একাত্তরে জহির রায়হান যখন স্টপ জেনোসাইড নির্মাণ করেন, তখন এর প্রচার নিয়ে অনেকেই বিরোধিতা করেন। বিরোধিতার কারণ ছিল, সেখানে লেনিনের ছবি ব্যবহার করা, শেখ মুজিবের কথা উল্লেখ না করা, ছয় দফার কথা উল্লেখ না করা ইত্যাদি। আওয়ামীলীগের একাংশ যেখানে তখন মার্কিন সাহায্য পেতে উন্মুখ ছিল তখন কারা এমন বিরোধিতা করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তিনি যখন বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যার তথ্য অনুসন্ধান ও ঘাতকদের ধরার জন্যে কমিটি গঠন করে কাজ শুর্য করেন তখন অনেক গোপন তথ্যই তাঁর হাতে পৌঁছায়। এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমাদের কাছে, এমন অনেক তথ্য ও প্রমাণ আছে যা প্রকাশ করলে অনেকের মুখোশ খুলে যাবে। সময় বুঝে আমি এক এক করে সব প্রকাশ করব।’[2] তাই, জহির রায়হান যখন মিরপুর থেকে ফিরে আসেন নি, এবং তাঁর ‘নিখোঁজ হবার পর সরকারী বা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কোন কমিটি হয় নি’, তখন স্বাভাবিক ভাবেই সকলে প্রশ্ন তুলেন তখনকার সরকারী বাহিনীর উপর। এমনকি, জামায়াতে ইসলামির নেতা ও একাত্তরে পাকিস্তানী সরকারের সহযোগী মতিউর রহমান নিজামীও এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিল জহির রায়হানের নেতৃত্বে; সেই তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান জহির রায়হানকে কারা উধাও করল? কেন উধাও করল? সেই তদন্তটাও কেন হল না? এই প্রশ্নের উত্তর যদি আপনারা বের করতে পারেন, তাহলে আসল রহস্য আমাদের সামনে বের হবে!’[3]
১৯৯৯ সালের পূর্বে প্রায় সকলেই জহির রায়হানের মৃত্যুকে ‘নিখোঁজ’ হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন, এবং প্রশ্নগুলো সেদিকেই ঘুরপাক খেয়েছে। তবে, ১৯৯৯ সালে কিছু ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর রহস্যের কিছু কিছু সমাধান আমরা পেতে থাকি। জহির রায়হানের পুত্র অনল রায়হানের প্রতিবেদন ১৯৯৯ সালের ১৩ আগস্ট প্রকাশিত হয় ‘সাপ্তাহিক ২০০০’-তে। শিরোনাম ছিল, ‘পিতার অস্থির সন্ধানে’। সে সময় ‘ভোরের কাগজ’ পত্রিকায় জহির রায়হানকে নিয়ে কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়। এগুলোকে ভিত্তি করেই এই আলোচনা।
২
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এপ্রিলের দিকে জহির রায়হান দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। সেখানেও সক্রিয় থাকেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। বিভিন্ন সভা-সমিতি করে পাকিস্তানিদের বর্বরতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেই সাথে চলে চলচ্চিত্র নির্মাণ। বিজয়ের পর দেশে আসার পথে বাঙালির বিজয়োল্লাস রুপালি ফিতার মধ্যে বন্দি করছিলেন। ঢাকাতে নেমেই চলে যান ক্যান্টনমেন্টে; পাকিস্তানিদের আত্নসমর্পনের দৃশ্য ক্যামেরায় তুলে রাখতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। হঠাৎ তখন কে একজন তাঁকে জানাল, ‘বাড়ির খবর কিছু জানেন, আপনার বড়দা ১৪ তারিখ থেকে নিখোঁজ। রাজাকার আলবদররা ওঁকে ধরে নিয়ে গেছে।’ ক্যামেরাটা সহকারীর হাতে দিয়ে তখনই রওয়ানা দেন বাড়ির দিকে। শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সারের বয়ানে এই এই বিবরণ পাওয়া যায়।[4]
আমরা জানি যে, পরাজয় আসন্ন দেখে পাকিস্তানিরা বাঙালিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা তৈরি করে। সেই নকশা অনুযায়ীই শহীদুল্লাহ কায়সার, ডা. আলীম চৌধুরীর মতো আরও বহু বুদ্ধিজীবীকে আলবদরেরা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পরবর্তীতে অনেকেরই লাশ পাওয়া গেলেও শহীদুল্লাহ কায়সারের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে বড়দা জহির রায়হানের ‘প্রেরণার মূল শক্তি’ সেই বড়দার জন্য তিনি পাগলপ্রায় হয়ে গেলেন।
দৈনিক বাংলা, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২
এসেই তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যার তথ্য অনুসন্ধান ও ঘাতকদের ধরার জন্যে ‘বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি’ নামে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন। এশতেহাম হায়দার চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদ, ড. সিরাজুল ইসলামসহ আরও অনেক বুদ্ধিজীবী এর সদস্য ছিলেন। এই কমিটিতে কাজ করতে গিয়ে জহির রায়হান আলবদর ও রাজাকারদের অনেক গোপন তথ্যও উদ্ধার করেছিলেন। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পেছনে কারা জড়িত ছিলেন এবং হত্যাকারীদের অনেকেরই গোপন আড্ডাখানা সম্পর্কেও তথ্য উদ্ঘাটন করেছিলেন জহির রায়হান। শহীদুল্লাহ কায়সারকে যে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, সেই খালেক মজুমদারকে ধরিয়েও দিয়েছিলেন।
বড়দাকে খুঁজতে একজন জাপানি রেডক্রস কর্মীর সাহায্যে মিরপুরের কয়জন বিহারি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেন। রেডক্রস কর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী, এই ডাক্তাররা ছিলেন নিরপেক্ষ এবং ভালো। তারা আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ব্যাপারটা দেখবেন এবং ১৬ ডিসেম্বরের পরে এ রকম আরও অনেক অনুরোধ তাদের কাছে আসছে।[5]
এখানে উল্লেখ্য, জহির রায়হান পীর-ফকির-মাজার এ ধরনের কুসংস্কারে কখনও বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু শুধুমাত্র তাঁর প্রিয় বড়দার জন্য পীর–ফকিরদের কাছে যাতায়াতও শুরু করেছিলেন। এমনকি আজমীর শরীফেও গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। রফিকউদ্দীন নামক এক লোকের দ্বারা তখন বেশ প্রভাবিত হয়েছিলেন। সে হয়ে উঠেছিল তাঁর নিত্যদিনের সহচর।
১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি সকালে টেলিফোনে তিনি খবর পান যে মিরপুরের ১২ নম্বরে শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
এই পর্যায়ে মিরপুরের তখনকার অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। মিরপুর এবং মোহাম্মদপুর ছিল মূলত বিহারি অধ্যুষিত এলাকা। এদের মধ্যে শিক্ষিত ও বড় ব্যবসায়ীয়রা থাকত মোহাম্মদপুরের দিকে এবং মূলত শ্রমিক শ্রেণিরাই থাকত মিরপুরে। ১৯৬৯ সালের দিকে এখানে বিহারি-বাঙালি দাঙ্গাও হয়। ২৫শে মার্চে রাতের পর বিহারিরা নির্মম ও নৃশংসভাবে সে এলাকার অনেক বাঙালিকে হত্যা করে। পরবর্তীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রায় ২০ হাজার বিহারিকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘সিভিল আর্মড ফোর্সেস’ (সিএএফ) নামে নতুন আরেকটা বাহিনী গড়ে তোলে। কেউ কেউ রাজাকার আলবদর বাহিনীতে যোগদান করে। ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তানিরা আত্নসমর্পন করলেও এই সিএএফের সদস্যরা আত্নসমর্পণ করেনি। বরং এসব বিহারি, আলবদর অস্ত্রশস্ত্রসহ আশ্রয় নিয়েছিল মিরপুরে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হলেও মিরপুর তখনও অবাঙালি, আলবদর ও রাজাকারদের দখলে ছিল।[6]
এখানে একটা প্রশ্ন আসে, কে তাঁকে সেদিন ফোন দিয়েছিল। তা নিয়ে অনেকগুলো বয়ান পাওয়া যায়। অনল রায়হান তাঁর প্রতিবেদনে এমন তিনজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন। প্রথমত আসে আজগর আলী নামে এক বিহারীর নাম। ঢাকার চলচ্চিত্রে নৃত্যপরিচালক হিসেবে নাকি কাজ করতেন। অনেকে ধারণা করেছিলেন, তার সাথে হয়তোবা জহির রায়হান কোন ছবিতে কাজ করে থাকতে পারেন এবং হয়তোবা তার ফোন পেয়েই তিনি ছুটে এসেছিলেন। অনল রায়হান পরে জানতে পারেন যে আজগর আলী বিহারী ছিল ঠিকই, কিন্তু নৃত্য পরিচালক নয়। সে ছিল ছোটখাট এজেন্টের মত; অল্প পুঁজির প্রডিউসারদের সাথে আরেক অল্প পুঁজির প্রডিউসারের যোগাযোগ করিয়ে দিত। এমন কোন লোককে জহির রায়হান চিনতে পারেন, তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। তবে, পরিচালক শিবলী সাদিকের বরাত দিয়ে অনল রায়হান উল্লেখ করেন, ‘এমন একটি লোকের কথায় জহির রায়হান মিরপুরে শহীদুল্লাহ স্যারকে উদ্ধার করতে যাবেন এটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। অবশ্য সে সময় তিনি অত্যন্ত ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলেন।’[7]
দৈনিক বাংলা, ৩০ জানুয়ারি ১৯৭৩
সেই সাথে আরেক বিহারীর নাম আসে; মাস্তানা। চলচ্চিত্রে সে ছোটখাটো চরিত্রে অভিময় করত। যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যাও করেছে সে। মিরপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান সহযোগীদের একজন এই মাস্তানা মিরপুর মুক্ত হওয়ার সময় মারা যায়। এছাড়াও, বিহারিদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে সিনেমার সঙ্গে জড়িত ছিল, যার ফলে জহির রায়হানের সঙ্গে টুকটাক পরিচিতি থাকার কথা। তাই, অনল রায়হান বলেন, ‘জহির রায়হানকে মাস্তানা, আজগর আলীদের জন্য বিহারিদের থেকে অনেক ভালো ভাবেই জানার কথা। জহির রায়হান যখন জীবন থেকে নেয়া বানান তখন তো এরা এফ ডি সির ভেতরেই লোকই। জহিরকে হত্যার সুযোগের সদ্ব্যবহার তাদের করাই স্বাভাবিক।’[8
তৃতীয়ত আসে ‘রহস্যজনক’ সেই রফিকের নাম, যার প্রভাবে ‘জহির রায়হানের স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তির ওপর ধর্মীয় নির্ভরতা ও অধ্যাত্মিকতা চেপে বসে’। এই লোকটাকে শাহরিয়ার কবিরের কাছে ‘ভণ্ড’ বলে মনে হয়। কিন্তু, রফিকের প্রভাব জহির রায়হানের ওপর এত বেশি ছিল যে, তার নামে কোন নেতিবাচক মন্তব্য শুনলেই জহির রায়হান রেগে যেতেন। সুমিতা দেবীর ভাষ্যমতে, ৩০ জানুয়ারি সকালে রফিকই ফোন দিয়েছিলেন। ফোন ধরেছিলেন জহির রায়হানের মেজ বোন। তিনিই পরবর্তীতে সুমিতা দেবীকে ফোনালাপের কথা বলেন।[9]
আবার পান্না কায়সার, তাঁর বইতে বলেন, ফোনটা তিনিই ধরেছেন। ফোনটা কে করেছিল তা নিয়ে পান্না কায়সার কোন মন্তব্য করেন নাই। কে ফোন করেছে এই প্রশ্নের উত্তরে জহির রায়হান শুধু বলেন, ‘ভাবী, বড়দার খোঁজ পাওয়া গেছে। মীরপুরে বার নাম্বার সেকশনে একটা বাড়িতে বন্দী হয়ে আছে। আমি এখনই বের হব। বিকালের মধ্যে নিয়ে আসব।’[10]
জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়ার পর কেউ কেউ নাকি মন্তব্য করেছিলেন, এই ‘রফিক সি আই এর এজেন্ট’। অনল রায়হানের প্রতিবেদন অনুসারে, এই রফিক পরবর্তীতে আমেরিকায় চলে যান। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, ‘বিশেষ ব্যবস্থায় আমেরিকায় চলে যান’। এমনকি তাকে তেজগাঁও বিমান বন্দরে প্লেন থেকে নামিয়ে আনাও হয়েছিল। তবে, কেন নামিয়ে আনা হয়েছিল, তা কেউ জানে না।[11]
তাই, জহির রায়হানকে সেদিন আসলে কে ফোন করেছিল, এই প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর বোধহয় কখনই পাওয়া যাবে না! উপরে কতকগুলো সন্দেহের কথাই উল্লেখ করা হল।
যাই হোক, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কাছ থেকে টেলিফোনে খবর পাওয়ার পরই জহির রায়হান পরিচিত কয়েকজনকে সঙ্গে করে মিরপুরের দিকে রওয়ানা দেন। পরনে ছিল ছাই রঙয়ের প্যান্ট আর গাঢ় ঘিয়ে রঙের কার্ডিগান। সাদা রঙের শার্টের সঙ্গে পায়ে ছিল স্যান্ডেল। শাহরিয়ার কবিরও সেদিন সঙ্গে ছিলেন। তাঁর ভাষায়,
‘সেদিন আমরা যখন টেকনিক্যালের মোড় ঘুরে বাংলা কলেজের কাছে গিয়েছি তখনই উত্তর দিক থেকে আমাদের গাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষিত হয়েছিল। জহির রায়হান প্রচণ্ড বেগে গাড়ি চালিয়ে ছয় নম্বর সেকশনে এসেছিলেন। মিরপুরে তখন কারফিউ। টেকনিক্যালের মোড়ে গাড়ি আটকানো হয়েছিল। গাড়িভর্তি মুক্তিযোদ্ধা দেখেই হোক কিংবা জহির রায়হানের কথা শুনেই হোক পুলিশ আমাদের গাড়ি আটকায়নি। আটকেছিলেন ছয় নম্বর সেকশনের পুলিশ ক্যাম্পে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।’[12]
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনি তখন ১২ নম্বর সেকশনের রেইড করার জন্যে যাচ্ছিল, তারা কোনো সিভিলিয়ান সঙ্গে রাখতে চায়নি। অনেক অনুরোধের পর জহির রায়হানকে নিতে রাজি হয়েছিল। শহীদুল্লাহ কায়সারের শ্যালক ড ওসমান হায়দার চৌধুরী (নিজাম) এর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জুলফিকার আলী মানিক যে প্রতিবেদন তৈরি করেন সেখানেও একই কথার উল্লেখ পাওয়া যায়। কমান্ডিং অফিসার যে কোন একজনকে যেতে বলছেন।[13]
জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী তাঁর আত্মজীবনীতে জানান, আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে বিহারিরা আশেপাশের বাড়িঘর থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্রসহ হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। কেউ এই হামলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, তাই পাল্টা আক্রমণের কোনো সুযোগ পাননি তাঁরা। ওই দিন বিকালে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনাবাহিনী মিরপুরে ১২ নং সেকশনের ওপর আবারও আক্রমণ চালায়। পরদিন সকালে পুরো একটা ব্যাটালিয়ন ১২ নং সেকশনে প্রবেশ করে, কিন্তু কোনো পুরুষ মানুষকে খুঁজে পায়নি। রাতেই সবাই পালিয়ে গিয়েছিল।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন দৈনিকে জহির রায়হানের মৃত্যু সংবাদ
অন্যদিকে, সেদিন সকালের বিহারিদের অতর্কিত হামলায় ৪২ জন সেনাসদস্য নিহত হন। ক্যাপ্টেন মোর্শেদ ও নায়েক আমিরসহ কয়েকজন আহত হন। নিহতদের মাত্র ৩-৪ জন ব্যতীত আর কারও লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি মিরপুর পুরো জনশূন্য করার পরও। খুব সম্ভব, জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর মতে, ৩০ জানুয়ারি রাতেই সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। রাতের অন্ধকারে বিহারিদের সরিয়ে ফেলা সেই লাশগুলোর সঙ্গে হারিয়ে যান আমাদের জহির রায়হান।[14]
জহির রায়হানের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর বাসায় পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট আবু সাইদ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘স্বাধীন দেশে এমন একজন ব্যক্তিকে হারালাম, যাঁকে এখন আমাদের বেশি করে প্রয়োজন। যা ঘটল– এ আমাদের সকলের ব্যর্থতা।’[15] পত্রপত্রিকায় জহির রায়হানের হারিয়ে যাওয়ার খবর বেরোতে লাগল। অনেকগুলো নতুন সিনেমা বানানোর কথা ছিল তাঁর। ভাষা আন্দোলন নিয়েও একটা সিনেমা বানানোর কথা ছিল। নামও দিয়েছিলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। কিছুই করা হল না। হারিয়ে গেলেন তিনি।
জহির রায়হানের এই ‘ফিরে না আসা’কে কেন্দ্র করে চলতে থাকে নানা তর্ক-বিতর্ক, পূর্বেই তা উল্লেখ করেছি। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে মিরপুর ১২ নং সেকশনের মুসলিম বাজারের নূরী মসজিদের নির্মাণকাজের জন্য খননকালে বের হয়ে আসে মানুষের দেহাবশেষ, গুলিবিদ্ধ হাড়, করোটি; আবিষ্কৃত হয় বাংলার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বধ্যভূমির একটি। ১২ নং সেকশনের এই বধ্যভূমি আবারও ৩০ জানুয়ারির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, আবারও সামনে চলে আসেন হারিয়ে যাওয়া জহির রায়হান।
যুদ্ধের ২৮ বছর পর সেদিনের আহত নায়েক আমির হোসেনের সন্ধান পাওয়া যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। উল্লেখ্য, এই নায়েক আমিরের কথা জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীও তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন। তাঁর মুখ থেকেই বেরিয়ে পড়ে ঘটনা। তিনি স্বচক্ষে জহির রায়হানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখেছিলেন। আমির হোসেন জহির রায়হানকে চিনতেন না। উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ‘সাংবাদিক’ হিসেবে। তার প্রতি নির্দেশ ছিল ওই সাংবাদিকসহ অন্যদের পাহারায় থাকা। যেহেতু সবাই সামরিক বাহিনীর লোক ছিলেন, তাই একমাত্র সেই সাংবাদিকই ছিলেন সিভিল পোশাকে। তিনি বলেন,
‘বেলা ১১টার দিকে ঢং ঢং পাগলা ঘণ্টা শুনতে পাই। গুলি ছুটে আসতে থাকে দক্ষিণ দিক থেকে। সঙ্গে সঙ্গে বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই অনেক পুলিশ সদস্য মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে এবং সেখানেই একটি ইটের স্তূপের পিছনে আমি অবস্থান নিই। তখন তাকিয়ে দেখি, পুলিশের পাশাপাশি সাংবাদিক সাহেবও যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, তাঁর পাশেই পানির ট্যাংকের দেয়ালের পাশে তাঁর দেহ পড়ে আছে।’[16]
আমির হোসেনের কথা থেকেই আরও জানা যায়, ‘পুলিশের সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ দিক থেকে গোলাগুলি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তখনই ‘সিভিল পোশাকে’ একশ জনের মতো বিহারি দা-ছুরিসহ নানা ধরনের অস্ত্রপাতি নিয়ে দক্ষিণ দিক থেকে ছুটে আসতে থাকে। তারা উর্দুতে গালিগালাজ করাসহ ‘কাউকেই ছাড়া হবে না’ বলে চিৎকার করছিল। অবাঙালিরা দক্ষিণ দিক থেকে এদিয়ে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো শুরু করে এবং টেনেহিঁচড়ে পানির ট্যাংকের পশ্চিম দিকে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় পড়ে থাকা সাংবাদিককেও (জহির রায়হান) ৬-৭ জন অবাঙালি হাত-ঘাড়-কোমর ধরে টেনে নিয়ে যায় পানির ট্যাংকের পশ্চিম দিকে।’
আমির হোসেনের বর্ণনানুসারে মিরপুরের যে স্থানটিতে শহীদ হয়েছিলেন জহির রায়হান
[ভোরের কাগজ, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯]
আমির হোসেনের জবানবন্দি নিয়ে দৈনিক ভোরের কাগজ ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘নিখোঁজ নন, গুলিতে নিহত হয়েছিলেন জহির রায়হান’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘জহির রায়হান যে পোশাক পরে বেরিয়েছিলেন বলে তাঁর চাচাতো ভাই শাহরিয়ার কবির জানিয়েছেন, আমির হোসেনের দেয়া বর্ণনা তার সঙ্গে হুবুহু মিলে যায়।’[17]
এছাড়াও ‘ভোরের কাগজ’ পত্রিকায় হেলাল মোর্শেদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সে সময় আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তিনিও মিরপুর যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জানান যে, জহির রায়হান যে মিরপুর যুদ্ধেই মারা গিয়েছিলেন সে বিষয়ে তিনি প্রায় নিশ্চিত ছিলেন। সে কথা তিনি জহির রায়হানের স্ত্রী সুচন্দাকে জানিয়েছিলেন বলেও মন্তব্য করেন।[18] জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীও বলেন, ‘অবশ্য এর আগে থেকেই আমরা যখন নিজেদের সদস্যদের হতাহতের খোজখবর তথা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করি, তখনই সৈন্যদের সঙ্গে একজন বাঙালি বেসামরিক লোক নিহত হয় বলে তথ্য বেরিয়ে আসে। ঘটনা বিশ্লেষণে বোঝা যায় যেম, তিনিই ছিলেন জহির রায়হান’।[19]
৩
জহির রায়হানের মৃত্যু নিয়ে উপর্যুক্ত আলাপের সারকথা টানা যেতে পারে। জহির রায়হান যে ৩০ জানুয়ারি মিরপুর গিয়েছিলেন, তার বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে শাহরিয়ার কবিরের কাছ থেকে। সেদিন মিরপুরে এম্বুশে তাঁর মারা যাওয়ার তিনটা সাক্ষ্য পাওয়া যায়। যে তিনজনের ভাষ্য/সাক্ষ্য পাওয়া যায় তাঁরা সেদিনের অপারেশনের সাথে যুক্ত ছিলেন নানাভাবে এবং তাদের সাক্ষ্যের মধ্যে সঙ্গতিও আছে। অন্যদিকে, জহির রায়হান মিরপুর গিয়েছিলেন একটি রহস্যজনক ফোনকল আসার পর। ফোনকলের ব্যাপারে প্রাপ্ত সাক্ষ্য অনুসারে কোনো ধরনের ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফোনকলের ব্যাপারে রহস্য আজতক রয়ে গিয়েছে; যতদিন না কোনো গোপন আর্কাইভাল নথি আমাদের হাতে এসে পৌছাচ্ছে, ততদিন এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
জহির রায়হানের মৃত্যু নিয়ে আজতক আলাপ-আলোচনা কম হয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডান/বাম/মধ্য সবমহলই কোনো না কোনো সময় তার মৃত্যুকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করেছেন। আসলে কী ঘটেছে তা নিয়ে যতটা কথা হয়, তার চাইতে বেশি হয় ঘটনার কোন অংশ কার রাজনীতির প্রপাগান্ডার লগে যুতসই তা নিয়ে। ফলে, ঘটনার বিবরণীর চাইতে ঘটনা সম্পর্কে তৎকালের বিভিন্ন মতামত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে/উঠেছে। বিশেষত তৎকালে মুজিব সরকারের সাথে জহিরের কিছু টানাপোড়নের দিকে ইঙ্গিত করে বুদ্ধিজীবী ও বিখ্যাত লোকেরা জহির রায়হানের মৃত্যু নিয়ে বেশ কিছু ধরনের মতামত/সন্দেহ/আফসোস-মূলক মন্তব্য করেছিলেন। আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, জহিরের মৃত্যু সংক্রান্ত আলাপে এই মন্তব্যগুলোর গুরুত্বই বেশি পায়। ইতিহাসের আখ্যান তৈরিতে এই ধরনের মতামতের গুরুত্বকে স্বীকার করেও বলা যায়, প্রত্যক্ষদর্শী বা ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সাক্ষ্যের ক্রসচেক করার চেয়ে ঘটনা সম্পর্কে অন্যান্যদের মতামত ‘সত্য’ যাচাইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হওয়াটা সামগ্রিকভাবে ইতিহাসচর্চার জন্য দুঃখজনকই বটে। এই প্রবন্ধে আমি যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, আরও আর্কাইভাল নথি, তথ্য, উপাত্ত পেলে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেও আমার কোনো সমস্যা নাই।
তথ্যসূত্রঃ
[1] অনুপম হায়াৎ, জহির রায়হানের চলচ্চিত্র পটভূমি বিষয় ও বৈশিষ্ট্য, দিব্য প্রকাশ, ২০০৭
[2] পান্না কায়সার,মুক্তিযুদ্ধ – আগে ও পরে, আগামী প্রকাশনী, ২০১৪
[3] শাহরিয়ার কবির, যুদ্ধাপরাধ ৭১ (ডকুমেন্টারি)
[4] পান্না কায়সার, ২০১৪
[5] তাদামাসা হুকিউরা, রক্ত ও কাঁদা ১৯৭১, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৩
[6] জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী, এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য, মাওলা ব্রাদার্স, ২০০০
[7] অনল রায়হান, ‘পিতার অস্থি’র সন্ধানে’, সাপ্তাহিক ২০০০, ১৩ আগস্ট, ১৯৯৯
[8] অনল রায়হান, ১৯৯৯
[9] প্রাগুক্ত
[10] পান্না কায়সার, ২০১৪
[11] অনল রায়হান, ১৯৯৯
[12] শাহরিয়ার কবির, ‘মিরপুরের সদ্য আবিষ্কৃত বধ্যভূমি ও জহির রায়হানের অন্তর্ধান প্রসঙ্গ’, একাত্তরের গণহত্যা, নির্যাতন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সময় প্রকাশন, ২০১৮ (চতুর্থ মুদ্রণ)
[13] অনুপম হায়াৎ, ২০০৭
[14] জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী, ২০০০
[15] পান্না কায়সার, ২০১৪
[16] ‘নিখোঁজ নন, গুলিতে নিহত হয়েছিলেন জহির রায়হান’, ভোরের কাগজ, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯
[17] ভোরের কাগজ, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯
[18] অনুপম হায়াৎ, ২০০৭
[19] জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী, ২০০০
♥♥♥♥♥♥
সহুল আহমদ
লেখক, অনুবাদক ও অ্যক্টিভিস্ট। পড়াশোনা শাবিপ্রবিতে; বর্তমানে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ জার্নাল ও ‘অরাজ’ এর সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। আগ্রহের বিষয় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, জেনোসাইড, সহিংসতা, রাজনীতি, বিউপনিবেশায়ন ও ধর্ম। প্রকাশিত বই: মুক্তিযুদ্ধে ধর্মের অপব্যবহার; জহির রায়হান: মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক ভাবনা; সময়ের ব্যবচ্ছেদ (সহ-লেখক সারোয়ার তুষার)। অনুবাদ: ইবনে খালদুন: জীবন চিন্তা ও সৃজন; শ্বাস নেয়ার লড়াই : রাষ্ট্র, স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার; সাম্প্রদায়িকতা (সহ-লেখক সারোয়ার তুষার), মারণ-রাজনীতি (সহ-লেখক সারোয়ার তুষার)