হৃদয়ের বোনেরা
বোনেরা শাড়ি পরে এখানটায় দাঁড়ালো, তারা
স্থির ছবি পেতে চায়। বড় ভালো মৃদু-মন্দ হাওয়ার
ব্যবহার, মূহুর্তের পাতাগুলো সহজ উড়ছে
সদর দরোজা থেকে আমাদের মা, হাসিমুখ পত্রালি
জড়ো করছেন। বাড়িতে আছে এক কাগজি
লেবুর ঘ্রাণ, মগজ খুশির ভাব টেনে নিচ্ছে মগজে
অত্যুজ্জ্বল হৃদয়ের বোনেরা পরপর সব ছবি
মূহুর্তগুলো শনাক্ত করে মূহুর্ত করে তুলছে, ভাড়ারে
বুবু
বুবু, ধরো লোকটা। তার
আমি খেয়েছি—
দোষ দেবার কি আছে! কবুল করেছি,
তাই খাইয়েছে। ঢের হিসেবি এর চাল-চলন,
খুব ভুল করে না। তার আমি কি দোষ দেব!
এই করে সে খায়, করে-টরে খেয়ে থাকে।
বুবু, তোমার ছিল হাত ছিল তাতে
হৃদয় ধুসর হাসি।
লোকটা প্রায় নাকের উপর। তার
আমি খেয়েছি—
যেমন আমি আমার হতাশা থেকে
দুটো-একটা খাই—হররোজ খেয়ে থাকি,
যেমন আমি আমার ধৈর্য্য থেকে
দুটো-একটা খাই— হররোজ খেয়ে থাকি।
ঘোড়া ও প্রাচীর বিষয়ক
একটা ঘোড়া ও একটা প্রাচীরে ততটুকু ব্যবধান ঘোড়া ও প্রাচীরের
ব্যবধান যতটুকু
এছাড়া তারা একই বস্তুবিশ্বে দৃশ্যমান
যেন—
একটা ঘোড়া একটা প্রাচীর ডিঙ্গায় না
একটা প্রাচীর একটা ঘোড়া ডিঙ্গায় না
ঘোড়া ও প্রাচীরেরে কেন বেছে নেয়া এই প্রশ্ন জোয়াড়ের তোড়ে পাড়ে উড়ে আসতেছে
নিকষ সবুজের বন থেকে কত কি এমনি এড়ায়ে যেতে শিখে গেছি
শিশুসুলভ মন লয়ে
যত ঘুম হয়েছে যত আরো হবে কেউ কেন তা জিজ্ঞেস করবে
কত পেরিয়ে গেছি কাকে কাকে আটকে দিয়েছি সে হিসেবে কিবা যায় আসে
মাকড়সা থেকে মানুষ কে না ফাঁদের চর্চা করে থাকে
মাকড়সা থেকে মানুষ কে না ফাঁদ কেটে শিকারের পলায়ন দেখে মর্মাহত হয়
মাকড়সা থেকে মানুষ সকলেই নিজের নিজের পলায়নে তবু গর্ববোধ করে থাকে
বড় দুই প্রাচীর ঊষা আর সন্ধ্যা এক অপরকে না হনন করেই গ্রাস করে
ঊষা আর সন্ধ্যায়
অথচ একটা কমলা একটা মানুষ একটা ঈগল শুকিয়ে একশেষ হয়
অথচ একটা প্রাচীর একটা প্রাচীর একটা প্রাচীর দাঁড়িয়ে ঠায় ঘোড়াচল দৃশ্য উপভোগ করে
থাকে
না করে হনন ঊষা আর সন্ধ্যা—
ঊষা আর সন্ধ্যা পার করে
জানোয়ার জন্মে বেড়ে ওঠে জাগরণে জাগে ঘুমে ঘুমায় মরে যায়
মরে যায়
যার তার নিবিষ্ঠ কুঠুরীতে থেকে
ফাঁকতালে অনেকে দৌড়োয় যখন
ঘোড়দৌড় ঈষৎ বিশিষ্ট বলে আলাদা করে চেনা হয়
ঘোড়া এর বেশি কিছু নয়-কম কিছু নয়
আমাদের বাড়ি
মা-ভর্তি বাড়ি। বাবা-ভর্তি বাড়ি।
এর থেকে বেরুতেই পারছি না।
আমরা এক হালি ভাই-বোন। বলতে বলতে এগুই।
যখন কেউ কোন কথা বলছি না,
এর সীমানা প্রাচীর নিঃশব্দে লুপ্ত হয়ে যায়। সকল
অনন্তকাল ভ’রে সদর বারান্দা ধরে এগুতে থাকলে দূরে একটা সাইনবোর্ড ঝুলে—
থাকতে দেখি। স্পষ্টাক্ষরে লেখা: ‘প্রবেশ উন্মুক্ত। এখানে কেউ বসবাস করছে না।’
বিস্ময়ে বোবা হয়ে যাই,
ভাবি, ইতোমধ্যেই আমাদের হজম করে ফেলা হয়েছে!
কবির নিকৃষ্টতা ঘোষণা করছি
একভীড় রাত্রির হাওয়ায় আমার ঘোরতর সন্দেহ হলো:
কবিরা স্বভাব চামার।
মনুষ্যেরা যখন হাওয়ার মধ্য দিয়ে ভেসে এসে
হাওয়াই ভক্তি ও বিষাদে পশু বলি দেয়—
ইচ্ছুক কবিরা এসে চামড়া ছাড়িয়ে নেন
এবং জুতো তৈয়ারীতে মগ্ন হোন
প্রায়শই জুতোগুলো মাপমতো হয় না
চামারের মধ্যেও কবিরা নিকৃষ্ট চামার
দারুণ অর্থকষ্টে তাদের মৃত্যু হলে, হোক
বন্ধুর নামেও কেউ কেউ গাছ লাগায়
বন্ধুর নামে কেউ কেউ গাছ লাগায়। এই যে বাড়ছে, নড়ছে-চড়ছে,— দেখে চোখের আরাম হচ্ছে। প্রাণাধিক কেউ জল ঢালছে এর আগায়-গোড়ায়, শাখায়-প্রশাখায়। দেখে চোখের আরাম হচ্ছে …
বন্ধুর বন্ধুর নামেও কেউ কেউ গাছ লাগায়। সমূহ বৃক্ষ,— গুল্ম বা তৃণ জাতীয় নয়। প্রাণাধিক কেউ জল ঢালে এর আগায়-গোড়ায়, শাখায়-প্রশাখায়। দেখে চোখের আরাম হয়। গাছে হামেশা পক্ষি (বানানে ভুল) হয়। হয়ে, দূর ভেসে-টেসে যায়; ভাল লাগে— লাগে না, ভাল লাগে— লাগে না
সক্রিয় পাখির দিকে
সক্রিয় পাখির দিকে রাত্রির ছিপি খুলে গেল
খুলে গেল বেহায় ছিপি
ফেনা
লালায়িত
দেখে, মরে যাওয়ার যোগ্যতাগুলো পাখিরও
ছিল
হেই পাখি
বেপরোয়া বোতল
ভয়
হয়,
ভয়
কেন, না শিখো
বাতিগুলো উবে গেলে পর
বোতল সব
উগরে গেল
পালক ভিজে চুপ হলো, পালক ও কোমল
পালক
পালক জীবিত কেউ হয়, মৃত কেউ
সক্রিয় পাখি
ঐ
ছিপি
খুলে গেল
খুলে গেল
ভাষা
দু’চোখের
মধ্যবর্তী
চোখ—
যোনিজাত-সমৃদ্ধযোনি— ঈশ্বরাকৃতির
নারীশ্বর
ফিক করে হেসে এগিয়ে গেলে
তার নিতম্বের দিকে—
তাকিয়ে আছি
দেখি দলঘোড়া হয়ে
বাঘজোড় হয়ে আসে
দেখি গোলাপবংশ…
এই যে সুখীহাঁটা
বৃষ্টি এড়ানো অসম্ভব এমন
সিক্ত যোনি:
দয়াদ্র পিচ্ছিল
আকূল পুরুষের জন্য
—সর্বৈবঃ সুন্দর!
অন্ধের জন্য এটি দৃষ্টিগ্রাহ্য, বধিরের জন্য শ্রবণযোগ্য
পবিত্র ঘণ্টা ও ঘণ্টাধ্বনি
এহেন স্বর্গীয় তালিমের ফাঁকে, সকলেরই
শহীদি মরণ
কামিয়াব হলো
উন্মুক্ত চোখে লালের আধিক্য, চাই কিছু?
মদ- গাঁজা-বেশ্যার খামার…
ঝিলমিল ঝিলমিল
করে
দিই এক লাফ: সারি করে নরকংকাল
দিই এক লাফ: নানা রোদ্দুরে
দিই এক লাফ: সে পান্না
দিই এক লাফ, দিই এক লাফ…
প্রভূত শ্রম, ভাটিয়ালি
অনেক গলা বাড়ানো—
শ্বাসমূল
রাতের টনসিল
রোমহর্ষ! খুব সম্ভব চেহারা—
নাই
দিই এক লাফ, দিই এক লাফ
ঝিলমিল ঝিলমিল
করে
টানা এক কবরের পাশে, সেই—
একপারা গুমখুন
একপারা গুমখুন
দরদর করে টাটকা লহুর আদলে, ঘোর
ঝরছে
ঝিলমিল ঝিলমিল
করে
মাস ১২ এই বাড়িতে মচ্ছব, হুল্লোড়—
রসের
না-দিনে হাস্নাহেনা, দিনে বেগানা ফুলের
সৌরভ
আচানক দেখে
পড়ি-মরি রূপ
খিচে দৌড়—
লাগালে;
যথোচিত রেখে গুলির শব্দ, ঘটে
ত্রাসে ধাই করে কোথাও সেঁধিয়ে
গেলে;
দেখি সম্মানিত পিতাগণ
কবেই, মরে হেজে গেছেন
দূর-এন্ড্রামিডায়
নক্ষত্রপুঞ্জের ঝিকমিক—
ঝিকিমিকি
পবিত্র রাত্রিগুলোতে, যে যার শিশুরা
দেখতে এলে;
পিতাদের পক্ষে—
বর্ণনাতিত, এমনসব
আমার মা
তোমার খিদে পেলে মা, আমি এলাম— আর তুমি বিস্ময়ে
চুরমার হতে হতে আমাকে নিলে
বৃষ্টির দিকে
বৃষ্টির দিকে মুখ
করে আছি। সহজ
বৃষ্টির—
বৃষ্টির দিকে মুখ করে ঘনআনন্দে আছি। আষাঢ়ে বৃষ্টি অজস্র ধারায়। বৃষ্টি নিত্য-নিত্য। একদিন এখান থেকে ক্রমশ বৃষ্টির দিকে হেলে যাবো। উজ্জ্বল আমার প্রেমিকার দিকে। হৃদয়ের বোনেদের দিকে।
বৃষ্টি হচ্ছে,
বহু হুবহু পতনের ভাষায়
বহু হুবহু ক্ষোভের ভাষায়; আসমান
ফেঁড়ে ফেলা হচ্ছে,
বিগলিত—
চিৎকার!
বৃষ্টি, হচ্ছে
ঝ-ম-ঝ-ম
ঝ-ম-ঝ-ম
ঝ-ম-ঝ-ম
মগজের কুঠুরীতে ডাকাবুকোদের দরাজ হাসি। হেসে কুটিকুটি। কুটিকুটি হয়ে ছত্রখান। গড়াগড়ি যাচ্ছে। আষাঢ়ে বৃষ্টি অজস্র ধারায়। বৃষ্টির দিকে মুখ। বৃষ্টি হয়, হচ্ছে—
মন থেকে এর হাসি,
হাসছে —
যন্ত্রণারা। ফুটছে, পটাশ।
কোথাও কেউ মরে সেঁধিয়ে যাচ্ছে।
কোথাও কেউ বেচে দিচ্ছে জলজ্যান্ত আকাশ।
কবি পরিচিতি:
শাহ মাইদুল ইসলাম
জন্ম: ২০ জুন, ১৯৮৬ইং, হবিগঞ্জ
e-mail: shahmydulislam@gmail.com
‘ঘোড়া ও প্রাচীর বিষয়ক’ কবির প্রথম বই। প্রকাশ করেছে তিউড়ি প্রকাশন।