সো লঙ, গেওর্গে
(দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু’কে)
উজ্জ্বল গাছগুলো জানাচ্ছে ছুটির মৌসুম। উলেন টুপির ভেতর
গজিয়ে উঠছে পরামানুষের মাথা। তারা কথা বলে, ছিটকে আসে
শাদা ধোঁয়াটে শব্দগুলো, উৎপন্ন করে কুয়াশা । খৃষ্টগাছ বয়ে নিয়ে
তারা ঢুকে যায় স্ব স্ব গুহাতে পরস্পর। কিংবা চাঁদ উঠে আর মিনারের
ছায়ায় বেড়ে ওঠা গেওর্গে আব্বাসেরা বের হয়ে আসে রাস্তায়। দীর্ঘ
ওভারকোট আর হ্যাট পরা অসংখ্য গেওর্গে, ডিসটোপিয়ার ঘোরলাগা
এই শহরের রাস্তায় রাস্তায় নিশাচর তারা, শ্বাস নেয় পরামানুষের জানালায়,
দ্যাখে রক্ত আর বর্ণহীন একেকজন শুষে খাচ্ছে অপরের দেহ। অথবা আচম্বিতে
ফ
লা
দ্যায় শূন্যে, চাঁদ’কে খামচে দিতে চায় ।
ফুসফুসে টার
এ ফুসফুসে টার জমে জমে বিপুল ক্ষরণ
হল, দহনের পর পড়ে থাকা কালো দেহ
কালো পিচের রাস্তায়, কারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
দেখতেছে, কাশির দমকে কেঁপে কেঁপে ওঠা
মৃতদেহ, মৃতদেহ খুবি স্বাভাবিকভাবে
নড়ে ওঠে, ছায়াঘেরা যেনবা সিংহল গ্রামে
মৃদু নড়তেছে পাতা, গেরিলা বাহিনি কোনো
লুকাইয়া নাই, যেন নিকটবর্তী জঙ্গলে
ফলত ফুসফুসে টার, স্নায়ুগাছে বানরেরা
বসিয়া বানানা, হলুদাভ, আয়েশে চিবায়
কৃষিশুমারির লোক হয়েছে নিখোঁজ
মিথজাত, সুখি কৃষকের পিছু পিছু
অন্ত্রের দহন দেহে বয়ে নিয়ে যার
যার ঘরে ফিরে যাচ্ছে পরামানুষেরা
বাতাস আমাদের বয়ে নিয়ে যাবে
(আব্বাস কিয়ারোস্তামি’কে)
বাতাস আমাদের বয়ে নিয়ে যাবে
দীর্ঘ মরুপথে, তারাদের রাতে
গড়িয়ে নামবার মতো ঢালু যতো
পাহাড়ি পরিখার খোঁজে অবিরত
দেখেছি লোকটাকে দিন থেকে রাত
দুচোখে মৃত্যুর তীব্র চাহাৎ
তবুও চেরিফল শুভ্র বাটিতে
সাজিয়ে বসে আছে তার পথ চেয়ে
কেউ তো বসে থাকে জানালায় একা
তাকেই ভাবি আমি অজানা অদেখা
তাকেই দিবো লিখে এই গান জেনো
বিশাল প্রান্তর জ্যোৎস্না মাখানো
ঝরছে নীরবতা, সন্ধ্যা, খোয়াবে
বাতাস আমাদের বয়ে নিয়ে যাবে
জংলি ফুলেদের ঘ্রাণ আর আলো
দুচোখে সারারাত শ্রান্তি বুলালো
হঠাৎ জেগে দেখি পাখিদের গানে
ফুটেছে চেরিফুল কিয়ারো-বাগানে
পরিবেশকর্মীর প্রতি
কল্পনা কর ড্রাগন
কল্পনা কর অতীত থেকে উঠে আসা
অতীতায়িত মানুষেরা
হাঁটাচলা করে
মস্তিস্কের ভেতরে
মস্তিকের ভেতরে
লালশাঁক
বিটুমিন
র্যাবিটের দাঁত
একটা কাঠির ছোঁয়ায়
পড়ে যাচ্ছে অজস্র কাঠি
সারিবদ্ধ ভবনরাশি
কল্পনা কর ড্রাগনেরা
ভস্ম করে দিচ্ছে মুহূর্তেই
একটা স্বাভাবিক ঘটনা
মূলধারা থেকে মূলাধার পর্যন্ত
হেঁটে আসতে আসতে
পৃথিবী ঘুরলো আরো কিছুদূর
খুবি স্বাভাবিক ঘটনা যে
কৃষিসভ্যতা থেকে উঠে আসা
পায়ের গভীর দাগ
গভীর ক্ষত, পায়ের
ঘোরাফেরা করে গোরস্থানের পাশে
এখানে হাতের ছায়া
ক্রমশ হয়ে উঠছে ছায়ার হাত
কর্তিত মুণ্ডু
খুলির চারপাশে গজিয়ে উঠা ফার্ণ
খুবি স্বাভাবিক ঘটনা যে
রেডিয়োকে ঘিরে এখনো
জড়ো হচ্ছে পরামানুষের মাথা
নীরবতা
কেউ জানে না তার কি হয়েছিল
বলক্যাপ পরা লোকগুলো বেরিয়ে আসছে সিনেমা হল থেকে
পাখিদের দল ভেঙে দিচ্ছে একটা রেখাকে বার বার
যেভাবে বাতাস বার বার ভেঙে দিচ্ছে সেতুটাকে
যেরকম জীবনের নিয়ত বিকৃতি
ক্রোধ
দীর্ঘ রাত কার্বনের চক দিয়ে
ক্লান্তিহীন মগ্নতায় আঁকছে কেউ
কার ঘুমের টারকোয়াজ স্তব্ধতায়
লালবালির সৈকতে ভাঙছে ঢেউ
বিদ্রোহের গানগুলো নিঃস্ব আজ
হাসছে খুব সিম্ফোনিক অস্ত্রবাজ
চন্দ্রহীন এই জোয়ার এই ভাটায়
ফুটছে লাশ-ফুল শিশুর তারকাঁটায়
নির্বাসন
অনেক অনেক দূরে ইয়াঙ্গুন
বহুদূর স্কুনারের রঙিন পাল
যতোটা দূরে গেলে
আর ফিরে আসা যায় না
যতোটা দূরে আমার বন্ধু
ল্যুটেনেন্ট “এ”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেছে
ভাসমান তারাদের
তারচেয়েও দূরে
শীতল পানি দিয়ে ঘেরা
এক শাদা জগতে এসে পড়েছি আমি
আমার ভাষা নেই
আমার মাথাজুড়ে গজিয়ে উঠেছে ফার্ণ
জঙ্গলের ভেতর ঘুরে ঘুরে
খুঁজে বেড়াচ্ছি কফিন বানানোর উপযুক্ত
কাঠের গাছগুলো