আরো কিছু গাছ এবং অপ্রকাশিত টোস্ট বিস্কুট সমগ্র । হাসনাত শোয়েব

এখানে আরো কিছু গাছ ছিল। তাদের গায়ে ছিল হালকা সবুজ রঙের জামা। গাছকে জামা পরানো সহজ না। তাও খুঁজে খুঁজে সবুজ রঙের জামা। শেফালি ও মিরন সেই কঠিন কাজটাই গত তিন বছর যাবৎ করছে। গত তিন বছরে আড়াই হাজার গাছকে জামা পরিয়েছে তারা। গাঢ় সবুজ জামা। বনের ভেতর দিয়ে তারা মাঝেমাঝে হলুদ বাস যেতে দেখে। গত তিন বছরে সবুজের বাইরে হলুদ রঙটিই কেবল তারা দেখেছে। হলুদ এবং সবুজের বাইরে অন্য কোন রঙের ধারণা এখন শেফালি এবং ইসাবেল মিরনের মনে অবশিষ্ট নেই।

 

যাই হোক, সবুজ রঙের শুয়রের খামারে এই মুহূর্তে পা ছড়িয়ে বসে আছে মিরন। একটু নিজের পাড়া ডিমে তা দিচ্ছে শেফালি।দুজনের চোখে ভাসছে গত সন্ধ্যায় দেখা দৃশ্যটি। ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছে ইসাবেল মিরনের পেট। কি হচ্ছে প্রথমে তারা কেউ বুঝতে পারেনি। মাঝ রাতের দিকে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ঘুম ভেঙে যায় মিরনের। শেষ রাতে তার পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে একটি সুদর্শন শুয়োর বৎস। পরম যত্নে এই বাচ্চা জন্মের সমস্ত দায়িত্ব পালন করে শেফালি। তবে এই কাণ্ডে প্রচণ্ড হতবাক হয়ে পড়ে দুজন। এখনো শারীরিকভাবে সেই ধকল থেকে বেরুতে পারেনি মিরন। একটু পরপর তার ঘাম দিচ্ছে। দুপুরের দিকে জ্বর এসেছিল। এখন জ্বর নেই। তবে মিরনের চোখে ভর করে আছে ঘোরতর শুন্যতা। শেফালি বেশ কিছুক্ষণ মুখের মধ্যে বিস্ময় চিহ্ন ধরে রাখলেও এখন বিষয়টাতে সে যথেষ্ট মজা পাচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, মিরনের পেট থেকে বেরিয়ে আসা শুয়র বৎস একটু দূরে একা একা খেলছে এবং তার গায়ের রঙ হলুদ।

 

এরপর কি?

 

এরপর আর কিছু নেই। বিস্কুটের গুঁড়ো, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং কার্ল মার্ক্স- কোনটাই তারা ঠিকঠাক বুঝতে পারে না। তারা মূক কিংবা বধির কোনটাই নয়। তাদের কেবল ঘুম আসে। অনেকটা রিপভ্যান উইংকেল কিংবা আসহাবে কাহাফের সদস্যদের মতো। বেশি ঘুম আসলে তারা বিস্কুট খেতে শুরু করে। সারারাত ধরে বিস্কুট খেতে থাকে। সকাল হওয়া পর্যন্ত তারা বিস্কুট খেতে থাকে। বিস্কুট শেষ হয়ে গেলে, তারা মিথ্যা মিথ্যা বিস্কুট খুঁজতে থাকে। এসময় সকাল হলে দোকান থেকে বিস্কুট কিনে আনে। আবার বিস্কুট খেতে থাকে। আবার বিস্কুট শেষ হয়ে গেলে তারা বিস্কুট খোঁজার ভান করে। আবার সকাল হলে তারা দোকান থেকে বিস্কুট কিনে আনে। তারা জানে পৃথিবীতে তারা কেবল বিস্কুট খেতে এসেছে। ঘুম পেলেই তারা বিস্কুট খেতে শুরু করে আর হলুদ শুয়র বৎসের স্বপ্ন দেখে।

শেয়ার