আহমেদ নকীবের নির্বাচিত ২৫ কবিতা

তোমার বিষে
 

রাতে গাছের শরীরে হাত দিতে নেই
তবুও ইচ্ছে করে লতাটিকে স্পর্শ করতে
সে যে রমণীয় হয়ে বিছিয়ে রেখেছে চুল
ধরবো তার চুলের মুঠি শক্ত ক’রে
ও লতা ও চুল আমাকে পেঁচিয়ে ধরো
তোমার তীব্র বিষে

 

||

মেরী ও আম্মা 


আমার আম্মার জন্য এক প্যাকেট
মেরী বিস্কুট হাতে তুলে নিলাম

৫০ টাকা'র প্যাকেটের বিস্কুট
আনন্দের সাথে ক্রয় করে
মনে হচ্ছিলো বেশ সাশ্রয়ী মূল্য

তবুও কম দাম নিয়ে মনের
মধ্যে খচখচ করছিলো

তবে হঠাৎ প্রভু যীশুর আম্মা
মেরীর কথা মনে পড়লো

আর হাতের মধ্যে বিস্কুটগুলি
নীল জ্যোতি ছড়াতে লাগলো

ময়দা আর দুধ মিশানো
পলকা বিস্কুটগুলি দিয়ে আম্মা
যখন চা খাবেন তখন আম্মার মুখে
হাসির ফোয়ারা ছুটবে

মাতা মেরী আম্মার পেটের
মধ্যে বিরাজিত হবেন

মেরী আমার আম্মা
আর আমি আম্মার যীশু




||
আত্মার আত্মাকে

আব্বা, আমার
আব্বা, তোমার মাথা
টিপে দিবো,
তোমার চুল
আস্তে আস্তে টেনে
দিবো, তোমাকে
চুমু দিবো,
জাপটে ধরবো,
তোমাকে ডলবো

তুমি একটা মাছ,
তুমি পাখির ছানা,
তুমি চড়ুই,
তুমি বুলবুলি,
তুমি কাঠবিড়ালি,
তুমি চিনু-বিড়াল,
তুমি খরগোশ,
তুমি টিয়া,
তুমি টুনটুনি,
তুমি কাছিম,
তুমি হাঁস,
তুমি বাছুর

আমার আব্বা,
তুমি তুলতুলে,
তুমি নরম,
তুমি কোমল,
তুমি সুগন্ধি
রাবার, তুমি ফুল

তুমি পিনোকীও

তুমি ময়দার কাই,
একবার গোল,
আবার হটডগের
বনের মতো লম্বা,
পরোটার মতো
পাতলা, তবে দিবো না
আগুনে, দিবো না
তাওয়ায় ছেড়ে
আমার আব্বাকে

তোমাকে
এয়ারকুলারের
ঠাণ্ডা বাতাস দিবো,
তোমাকে মেঝেতে
শোয়াবো, তোমাকে
কোলে তুলে
নিবো আর শূন্যে
পাঠিয়ে দিবো
ঘুরতে, বেশিদূর
যেয়ো না, বেশি
লাফ দিয়ো না,
যদি তোমার পিচ্চি
মাথা আকাশে
বাড়ি খায়, আমি
ব্যথা পাবো

বালিহাঁসের দল
তোমাকে পেয়ে
পিঠে করে যদি
নিয়ে যায় দূরদেশে,
কোথায় পাবো তখন
আত্মার আত্মাকে?
আমার ভয়, ভয় লাগে
আব্বা, আমার আব্বা





|| রুহু পারলে তোমাকে দুমড়েমুচড়ে ফেলতাম তবে করতাম না খুন নখের মাথা থেকে চুল পর্যন্ত তোমাকে শুষে নিতাম, নাকের ভেতর দিয়ে তুমি রুহু হয়ে প্রবেশ করতে এমনভাবে তোমার পোশাকগুলিকে ছাড়িয়ে নিতাম যেনো শরীরের একটা পশমও বিরক্ত না হয় তোমাকে খেয়ে ফেলতাম তবে করতাম না গ্রাস আমার নখের চূড়ায় এসে বসো, স্থির হও, দিয়ো না লাফ অন্য কোনো হাতের তালুতে পাগলামি কোরো না, হতবিহ্বল না হয়ে থুতনিতে হাত রেখে তাকাও, দেখতে দাও তোমার চোখের পাপড়ি কিভাবে এতোটা মিলিত-নিমিলিত পারলে তোমাকে দুমড়েমুচড়ে ফেলতাম তবে করতাম না খুন
|| তোমাকে লুফে নিবো তোমাকে ছুঁড়ে মারলাম শূন্যে লুফে নিবো ব'লে যতক্ষণ না পড়ো দূরের আকাশ থেকে— হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো ভরা রোদে আর গলে যাওয়া রাস্তার পিচে ডুবে যাবে এই প্রেমিক পা হয়তো দুপুর গড়িয়ে যাবে চাঁদ একবার গোলাকার হবে আরবার হবে কাটা নখের মতো নক্ষত্রের বাচ্চারা ফিটফাট হয়ে যে যার মতো দাঁড়িয়ে পড়বে তুমি পড়ছো আর পড়ছো কোন আসমান থেকে, কার সাথে প্রেম হলো আকাশ দরিয়ায়? পার্থিব প্রেম ছেড়ে কার অলৌকিক ডাকে তুমি বিভোর হয়ে থাকলে? যদি একদিন নেমে আসো আলোকবর্ষ পেরিয়ে, পাবো কি অবিকল তোমাকে? তোমাকে ছুঁড়ে মারলাম শূন্যে লুফে নিবো ব'লে
|| চোর আমার ভাই দেখেছি গ্রীনরোডে অনেক বুড়ো বুড়ো চোররা গাদাগাদি করছে সিঁড়িরুমে ফাটল যেরকম দেয়াল জুড়ে থাকে তেমন বলিরেখা ওদের সারা মুখে ক্লাসিক চোর ওরা, যখন ধরা পড়ে বোতলে বালু ভরে পিটাই গিটেগিটে চোররা বোকাসোকা, চুলের ঝুটি ধরে উপড়ে ফেললেও আবার চুরি করে একটা চোর যদি এবার পাই আমি করবো সদ্ভাব করবো মোলাকাত বলবো, আপনি কি এখনো কাতরান, হঠাৎ মিশে যান রাতের ফাঁক গ'লে? আসেন ধুয়ে দেই ডেটল পানি দিয়ে যেখানে জখমেরা জ্বলছে থেকে থেকে!
|| হান্টার প্রজাতি মুরগীওয়ালা মহসীন সত্যি কথাই বলে— সে মুরগী দেয় সত্য, মোরগ দেয় না তবে একবার মুরগীর বড় সিনা দেখিয়ে হাতের কারসাজিতে একদম শুকনা মুরগী গছিয়ে দিয়েছে বুঝে ওঠার আগেই জবাই সম্পন্ন হলো আমি যতবার বলি, পাকিস্তানি মুরগী নিব না, সে ততবার খাঁচায় মিশানো মুরগীর ঠোঁট হা কি বন্ধ এসব লক্ষণ নেড়েচেড়ে প্রমাণ দেখায় সবগুলি দেশি মুরগীর জাত মামা যখন সকালে নাস্তার টেবিলে খাচ্ছি, দেখলাম সব রান চড়ুই পাখির সমান আমরা এতোটা মাংসাশী কবে থেকে মহসীন জানবে না এসব, জানবে সোহেল সোহেল পাখির দিকে গুলি মারতে মারতে বুক টানটান করে বলছিলো— আমরা হান্টার প্রজাতির লোক
|| গান গাবো বিজয়নগরে ঝিঁঝিঁ পোকা তোমাকে কি যে রহস্যময় লাগে ঝোপে বাজছে ঝুমঝুম ছরতা দিয়ে ছ্যাতর ছ্যাত শব্দ করলে তুমি ভাবো যে তোমার জোড়া এসে দাঁড়ালো লক্ষ্মীপুরের ছাদে আর যদি প্রিয় সুপারি গাছ থেকে নেমে কাছে আসো আমিও একটা ঝিঁঝিঁ'র মেয়ে হবো, আমার হাত বাড়িয়ে দিবো তোমার ঝিঁঝিঁ পাখার ঐকতানে আমরা বাজাবো শিখা'পার জার্মান রিডের হারমোনিয়াম, যদিও ছিঁড়া তানপুরা, একটা তারের, সেও একসাথে সংগত করতে এসে ঝিঁঝিঁ'র এক প্রেমিক পুরুষ হবার লোভ সামলাতে না পেরে আমাদের গায়ে গা ঘেঁষে বসে পড়বে ঝিঁঝিঁ তুমি কিন্তু লাজুক হয়ে আবার উড়ে যেয়ো না সবাই মিলে আমরা ঝোপে ঝোপে তারস্বরে গান গাবো বিজয়নগরে || আব্বা, আব্বা আব্বা, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? একটা পাইপ আমি খুঁজছি দিনরাত, গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে জলিল মিস্তিরি সেই যে নামলেন, আর তো দেখা নাই— বন্ধু হয়েছেন ওপাশে আপনার; আপনি জানতেন কোথায় থাকে রেঞ্চ, কোথায় থাকে সেই ছোট্ট হাতুড়িটা! নূতন মিস্ত্রীর জানি না তল্লাট, আব্বা আপনাকে জাগিয়ে দেবো আজ! অনেক উঁচু থেকে মাটির তলদেশে একটা পাইপের দিয়েছি সংযোগ, কতোটা বড় হলে পাইপটা তল পাবে, পাইপটা কানে নিলে বেঘোর কথা হবে? আমি তো রাস্তায় ঘুরছি একা-একা! পাইপ কি লোহা নাকি তন্ত্রী হৃদয়ের? একটা দুটো করে পাইপে জোড়া দিয়ে, তবুও তল নাই, নামছে পাইপটা, কানের কাছে গিয়ে নাগাল পায় নাই, কে আছে দিবে আজ কর্য কিছু পাইপ? বাড়িটা লিখে দিবো, তবুও কথা হবে, মাটিতে কানে পেতে আব্বা শুনবেন! পাইপটা বিজ্ঞান, আব্বা অজ্ঞান, পাইপটা শরীরের ধমনী ও রক্ত; পাইপে কান রেখে ডাকছি বারবার: আব্বা জাগ্রত, মিস্ত্রী দৌড়রত? দেখছি দু'জনের যৌথ কারবার! মাথাটা আব্বার মাটিতে ফলছিলো: আব্বা ফল-রূপে শাখায় দুলছিলো! || তোমার কাছে যাবো তোমার কাছে যাবো গ্রীনরোড তার আগে যাবো হলিফ্যামিলিতে; ডাইরী'র ভাজে দশ টাকা পাবো ওখানে, ছাদের সেই মিথ্যা-কান্না লালবাগের আকাশ থেকে চুপচাপ ঝরতে থাকবে টেবিলের নিচে আমাদের পায়ে চাপ দেয়া দত্ত স্যার দেখে ফেললো একদিন; তিতুমীর কলেজের বন্ধুরা তখন ভিজাবিড়াল নামে ক্ষ্যাপাতে থাকলো তোমাকে বারবার তবে ছাতা ফেলে গেলে পনেরো নাম্বারে, গুস্তাভ ইয়ুং আসলেন তার মিমাংসা করতে; তোমার আরো হাসতে ইচ্ছা করছিলো— তোমার হাত আর চোখগুলি খুলে রেখে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো, কেনো তবে বসলে না কিছুক্ষণ , পারলে না কেনো বিছানায় জাপটাজাপটি করে লম্বা সময় ধরে শুয়ে থাকতে? অথচ সবুজ ছাতাটা ঠিক-ই তোমাকে ফাঁকি দিয়ে রয়ে গেলো; ছাতাটার একরত্তি কাপড়ের ভাজে একটা হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠছে বারবার আর চমকে চমকে উঠছে এই পাঁচকোণা রুম, দরোজা-জানালাগুলি উড়ে যেতে চাচ্ছে, শীত-শীত লাগছে সেল্ফে রাখা বইগুলির সেই ছোট্ট-ছাতা এখন হাত-পা ছড়িয়ে বসেছে গল্প করতে, আমি যাবো না বাইরে, তবু হাত ধরে টানতে টানতে নামাবে বৃষ্টিতে তোমার কাছে যাবো গ্রীনরোড তবে তার আগে যাবো হলিফ্যামিলিতে ||
প্রেম তোমরা একটু অস্পষ্ট থাকতে চাও লাইটপোস্টে'র নিভু নিভু লাইটের নিচে আর হাত নাই তোমাদের পা ছাড়াই আসো সিঁড়ি বেয়ে এমনকি মুখ ছাড়াই আসো— চোখ-ছাড়া, ভ্রু-পল্লবহীন শুধু একটা পাঁচকোনা তারকাকৃতির টেবিল ভেসে এলো আর এলো দু'টো ধোঁয়া ধোঁয়া চেয়ার জামা-কাপড়ের খোলস এসে দুলতে দুলতে চলে গেলো এরকম প্রেম, নিভু নিভু লাইটের নিচে ||

ডামি বৃষ্টি
বৃষ্টি যে রিমঝিম এটা কবিরাই বলে কবিরাই দলবেঁধে বৃষ্টির দিকে বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকে আর বৃষ্টিকে ন্যাংটা ক'রে ফেলে কান খাড়া করে রাখে– বৃষ্টি কি টিপটিপ ক'রে পড়ে, নাকি ঝিরঝির, নাকি তেড়চা বৃষ্টি নিয়ে বেশ কানাঘুষা চলে পারলে তো কবি নিজেই বৃষ্টি হয়ে তেড়ে যায় বৃষ্টির দিকে খপ করে ধরার জন্য তার ফোঁটা কি এক কাণ্ড, বৃষ্টিকে হ্যান্ডেল করতে গিয়ে তার জামা-কাপড় ভিজে জবজবে এখন যে বৃষ্টি ঝরছে সে হচ্ছে ডামি বৃষ্টি, বৃষ্টির মতোই কিন্তু বৃষ্টি না কবি তাই নকল এক বৃষ্টির বন্দনা করে ||
বিদ্যুতের ছেঁড়া তার তুমি আমার চোখের দিকে যেভাবে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারো সেভাবে আর কেউ পারে না চাকুর চেয়ে ধারালো তোমার একজোড়া দীপ্ত চোখ এতো অতল তোমার চাহনি লাফ দিলে ডুবে মরতে হয় সেই চোখ অন্যদের চোখের চেয়ে একদম আলাদা আর কাচের মতো স্বচ্ছ চোখে আমার সব দোষ-ত্রুটি ধরা পড়ে যায় নিমিলিত সেই চোখে ধীরেধীরে প্রবিষ্ট হলাম তখন চোখের তন্ময়তা আর ধরে রাখতে পারো না তীব্র কাঁপুনিতে একবার বুঁজে যাচ্ছে কামাচ্ছন্ন চোখ আবার খুলে যাচ্ছে, যেনো এক অমোঘ-যোনি সে-নগ্ন চোখ কখনো কখনো চোখ আর দাঁতের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না, দাঁতের মতো তীক্ষ্ণ চোখ দিয়ে সব কুটিকুটি করো তুমি ইলেক্ট্রিসিটি আর আমি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একবার বেঁকে যাচ্ছি আর একবার লাফিয়ে উঠছি শূন্যে ছিঁড়ে যাচ্ছি ছিঁড়ে যাচ্ছি তুমি তীব্র বিচ্ছুরিত বিদ্যুত আর আমি বিদ্যুতের ছেঁড়া তার
||
৩৪ বছর পর আলমডাঙার একটা মেয়ে ভেসে এলো ৩৪ বছর পর এবার মুখোমুখি বসলাম মেয়েটার আর বললাম আপনি বাবলার ডালে হলুদ পুষ্প হয়ে ফুটেছিলেন আর কেউ কি চেয়েছিলো কাঁটা হয়ে জন্ম নিতে ঢেউ ঢেউ সেই আলমডাঙায় আপনাদের বাজারে ইন্ডিয়ান কেওকারপিন তেল উপুড় হয়ে বোতল থেকে ঢকঢক ক'রে পড়ে গেলো আর আপনি মনেই করতে পারলেন না সেই ঘটনাটা মেয়ে আমার দিকে খুব অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকালো, দেখলাম চোখ তার পানির বুদবুদ হয়ে একবার ভেসে উঠছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে আর তার চুলগুলি একঝটকায় দমকা বাতাসে উড়ে গেলো চাইলাম চুল ধরে আমিও তার সাথে উড়তে থাকি যদি আবার আলমডাঙায় অবতরণ করা যায় আর যদি আম্মাকে লেখা চিঠিটা গোলাকার বাংলোর ড্র‍য়ারে খুঁজে পাই ছিলো নাকি কোনো এয়ারপোর্ট স্বপ্নের সেই বাবলার বনে তবে মেয়ে আজ আর পুষ্পরূপে নাই এখন সে নিষিক্ত হয়েছে নূতন এক থোকা ফল জন্ম দেয়ার জন্য যতই বলি ঘোড়ার গাড়িগুলি কই? সে এবার হা করে তাকিয়ে থাকে আমি তো এরকম রাস্তা দেখি-ই নি এই কথা বলতে বলতে মেয়েটা হাওয়ায় উড়ে চলে যেতে থাকে শুনেন, শুনেন, আপনাদের ওখানে কাঠবিড়ালিগুলি দু-পেয়ে মানুষ ছিলো আর একটা পুরানো বাড়ির সিনেমা হলে আমি আর আপনি সিনেমা দেখেছিলাম ভাসমান কেদারায় বসে আর সেখানে কোনো দর্শকই ছিলো না আর একটা ঘোড়ার গাড়ি ভুল করে ঢুকে পড়েছিলো সিনেমার পর্দা ভেদ করে আলমডাঙার একটা মেয়ে ভেসে এলো ৩৪ বছর পর
|| আমাদের হারানো যৌনাকাঙ্ক্ষা আমাকে নাহিদা বানু লুনা হনুমান নামে ডাকে আর মনে পড়ে ঝিনাইদহের কথা যেখানে হনুমানেরা একবার থানা ঘেরাও করেছিলো আমিও কি সেই হনুমানদের একজন ছিলাম আর লুনাও কি ছিলো হনুমানি বউ আমার আর গোসল করতে গেলে প্রায়ই আমার মনে পড়ে ভুলে পানি খাওয়া হয় নাই এবার যখন আধা-নগ্ন হয়ে আমি পানি পান করি নাহিদা বানু আমাকে পানি দিতে পেরে বেশ মজা পায় আর বলে, ওরে আমার হনুমান ব্যাটা আর এই হনুমান ডাকার ভিতর দিয়ে কি আমাদের হারানো যৌনাকাঙ্ক্ষা আবার ঝাপ দিয়ে আসে শীতল রক্তের বীজে তবে সেই পানি আর গতরে থাকে না ব্যাংকের লোকেরা সমস্ত পানি গা থেকে বের করে নিয়ে যায় আমার হনুমানগিরি তবে আবার কবে উদয় হবে বলো তো মিসেস নাহিদা বানু লুনা
|| গোসল করবো গোসল করবো তুমি আমি জামা, প্যান্ট, জুতা, চশমা তোমরা আমাদের ছাড়ো, বোতাম আর ব্রা, ইলাস্টিকের কামড় তোমরা ছাড়ো আমাদের তুমি আমি গোসল করবো গোসল, তোমাকে একটা আকার দিতে চাই, তোমাকে বন্ধু করতে চাই, তুমি পাইপে আছো পানির আদলে, কবে আসবে হিসহিস করে, একটা ছোবলের জন্য অপেক্ষমাণ শরীরের জ্বর নগ্ন হবো, বজলু ভাই, পানির কলটা ঠিক করে দেন, প্লিজ, পানির বীর্য জমা হয়ে আছে পাইপগুলিতে, ওরা সব উত্তেজিত, ওদের রতিক্রিয়ার বন্দোবস্ত হোক, ওদের সাজাও সীসার যৌবনে, লোহার পৌরুষে, পানির কামিনীরা খিলখিল করতে করতে ছুটে আসছে ওগো গোসল, ওগো শান্তির স্নান, আমাদের গর্ভে তোমাকে ওম দিবো, পাইপটাকে লাইগেশন ভ্যাসেকটমী করাবেন না প্লিজ, পৃথবীর তাবৎ পাইপ, সজাগ থাকো, পাইপগুলিকে জন্মনিরোধক পিল খাওয়াবেন না ছাড়ো, কল-সকল, চিকন, মোটা, লম্বা, আঁকাবাঁকা, মাইল মাইল সরিসৃপ পাইপ সব রেডি থাকো, বজলু ভাই, পাইপের থ্রেডগুলি টাইট দেন, ওই শাদা ফকফকা টেপগুলি নিয়ে আসেন, জংধরা পাইপগুলিকে তিতা করলা খাওয়ান, বছরের সব বর্জ্য ওরা বমি করে উগরে দিক ঘুরিয়ে দেন ঘড়ির কাঁটা বরাবর সব চাবি, স্টার্ট দেন পানির মেশিন বাড়িতে অফিসে, পাকঘরের গোসলখানার, বেসিনের সব কলগুলি একসাথে ছাড়ো, ছাড়ো গোসল করবো গোসল করবো
|| ফুটেছে নবীন ফুল চলো তুমি আর আমি উন্মাদ হই এই সন্ধ্যায় বিছানায় ধরে যাওয়া আগুন থেকে ছিটকে পড়েছি আমরা প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে আর দমকল দমকল ব'লে চিৎকার জুড়ে দিলো সব পড়শিরা বালিশ ফেটে আমরা বেরিয়ে এসেছি আর নূতন তুলার জন্ম হয়েছে শিমুলের ডালে তোমার খুলে যাওয়া পাপড়িতে আমার ঢেলে দেওয়া বীজ থেকে ফুটেছে নবীন ফুল তুমি আমার জ্বলন্ত শিমুল
|| কাঁপে শিরা-উপশিরা আমাদের মাঝখানে ভেদরেখা আছে তবু তড়িঘড়ি করে যখন ছুটছি একটু দেখার জন্য একফালি মুখ, অথচ বাসার আসবাব এমন আকারে সাজানো রয়েছে তাতে বেঁধে যায় পা, আর আটকা পড়ে যাই এতোসব বেড়াজালে সেই ঘন রাতে তোমার মুখের মতো ওঠে চাঁদ এসব উপমা বহুকাল আগে হয়েছে অচল কারো সাথে তোমার মুখের তুলনা চলে না আর একমাত্র জ্বলজ্বলে জ্বলজ্যান্ত হাস্যরত তুমি : এতো দূর থেকে সেই ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে আমাদের দরোজা-জানালা আঁটা দালানের কাছে ভূত ভূত বলে চমকে উঠেছে দালানবাসিরা শুধু বুঝি কে হাসে এমন, কাঁপে শিরা-উপশিরা
||
বাজার কৃষ্ণের মাছ নিয়া কাড়াকাড়ি চলে, নকুল শ্যালক চালায় দা-বটি গলে! মিন্টু মাছুয়া হিংসায় জ্বলজ্বলে, জ্যান্ত মাছের আঁশ রেগেমেগে মলে! কাতল রোহিত কাঁদে দুখী দুখী চোখে— বিঁধিয়ে দিলে যে পেটি টংকার নোখে! লেঞ্জা দিয়েই দিবে থাপ্পড় গালে, যে ব্যাটা নাসিকা চোখা করে হাল-চালে!
|| বৃষ্টির ফোঁটা দেখো কতো ছত্রখান লম্বমান পা আর ছিটকে উঠেছে ধুলোর পৃথিবী যোজন যোজন গর্তে কলাপাতা-হাত মাথার উপরে তোমার বিপরীতে গরুর গাড়ির ওকি গাড়িয়াল চাকার পন্থে তোমার ফোঁটা ফোঁটা আপামর দান তুমি একাগ্র সব জলাধারে তুমি ট্রমার কেন্দ্রে আচানক আসবে কি আরো বড় বড় ফোঁটায় জুড়াতে ট্রমার লক্ষ্মণ? যেন স্মৃতি'র কোরকে জমা পানীয় কার ক্ষুন্নিবৃত্তি উদ্ভিদ সংরক্ষণে, পানি আর শিকড়ের পচন বাড়ন্ত বেদনা মৃত পত্রের সমাপনে রৌদ্রই ত্রাতা তোমার, জেল্লার কারিগর এই সূর্য-বিম্ব আর তুমি রৌদ্রেরই গ্রাসে নিদেন-খাদ্য বৃষ্টির ফোঁটা
|| নাথিংনেস আলম, আলম, আছে কি পর্যাপ্ত মলম? এই দাগা নিরাকার, এই দাগা শূন্য-অশূন্য একটা নাথিংনেস থেকে এই দাগা যখন বেরুলো, একবার পা, আরবার চুল, সেবার চোখ, এবার নখরূপে রবিবার সকালে মোটরকারে চড়ে সেই দাগা আসলো আর ব্রেক কষলো জোরে; পিছনে চাকায় দাগানো আছে, তবে এই দাগা রেজরে কাটা নয়, দরজার ছেঁচা লাগা? তাও নয়! নখে জমা রক্তের দাগ হলে তোমাকে দেখাতাম বারবার দাগা আছে, তবু তাকে দেখাতে পারি না আলম, হে আলম, মহাখালির সাততলা থেকে যদি আসে কৌটার মলম, এই দাগা যাবে না জানি চিরতরে উপশম হয়ে, শুধু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব তার কয়েক মিনিটের! রড দিয়ে পিটাও, হকিস্টিক দিয়ে নলি ভেঙে দিলে দাও কিংবা শিঙাড়া'র ভিতর আমার কলিজা কুচিকুচি করে ভরে খাও যদি, এই দাগা বিষের মতন নেমে যাবে মৃত্যুর আগে ড্রাগ ডিলারদের একে একে শুট করা হচ্ছে, তাদের ধুতরার বিষ গুপ্তধনের মতো কোনো ইটের চিপায় পেলে সেই দাগা যদি মিশে যেতো, আগেভাগেই তার মিমাংসা হতো তবে, এতো এতো গুলি করার আগে?
|| দীর্ঘ দীর্ঘ ঘুম ঝড় আসলে উটপাখি বালির মধ্যে মুখ গুঁজে রাখে যেমন আমরাও বালিশে মুখ গুঁজি আর ভাবি কোথাও হয় না তো তেমন উপদ্রব, তেমন ক্রাইসিস নাই আমাদের নেয় না তো উড়িয়ে ছাদ সেরকম ঝড় মুখ তুলি আর পরক্ষণেই ঘুমিয়ে পড়ি আমরা এরকম দীর্ঘ দীর্ঘ ঘুম আমজনতার
|| সাদা শার্ট আমার আছে জীবন্ত ধবধবে একটা সাদা শার্ট সেই শার্ট পরলেই নিজেকে আবার জীবিত মনে হয় আর শরীরের মৃত কোষগুলি তখন টগবগ করে ওঠে এখন বৃষ্টির শার্ট পরে মরিচের চারারা মাথা তুলে লাফাতে শুরু করেছে আর রোদের বোতামগুলো আকাশের পথ বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ছুটে আসছে আত্মহারা হয়ে বৃষ্টির শার্টে সেলাই করা হবে রৌদ্রখচিত বোতামগুলিকে সাদা শার্ট, আমার প্রাণপ্রিয় সাদা শার্ট, তোমাকে যতোবার পরিধান করি, ততোবার আমি জীবিত হয়ে উঠি
|| নরকগুলজার নরকগুলজার, নরকগুলজার, কলিজা খোল তার; যাদের একদিন আগুনে পুড়িয়েছো তারাই ফিরে এলো, প্রাচীন ভস্মের নিকষ গহবরে ওরাই চাপা ছিলো; তোমার লকলকে জিহবা বের ক'রে আগুন খেয়ে ফেলো, যতোই পুড়ছিলো, লোকটা হাসছিলো, আগুন কাঁদছিলো– মাথায় গজিয়েছে বহ্নি তেজ নিয়ে নূতন চুলগুলো; যতোই মরছিলো ততোই বাঁচছিলো, লোকটা হাসছিলো, এমন পোড়া এক মানুষ দেখে আজ নরক কাঁপছিলো?

|| জোয়ার এসেছে পাইপে পাইপে পানির পাইপগুলো কে কোথায়, কেমন আছে তারা সরল স্বভাবে, মিস্ত্রিরা কি পাইপগুলো জোড়া দিয়ে প্যাঁচ কাটতে কাটতে ঘুমিয়ে পড়েছে? যুদ্ধের সেই কামানের মতো একবার একটা পাইপ তাক করেছিলাম, গোলার বদলে পানির ফুৎকার এসেছিলো আর ভিজেছিলো সব বন্ধুরা‌! পাইপের অলিন্দে কতো স্রোত-ধারা, তাহার ধাতব শিরায় কতো কলকল, যদি এই বর্তুল হিমে বসে থাকা যেতো, যদি ছড়িয়ে পড়া পাইপগুলোর অজস্র জলীয় কণার সাথে মিশে কোনো মুখের দহনে ঝরতে পারতাম, আর যারা বারবার চুল ছিঁড়ে প্রলাপ বকতে বকতে মূর্ছা যায়, তাদের ঠোঁটে কে দেবে এই চোয়ানো বিন্দু? ঝরে যাবার আগে কতো শান্তি ঝুলছে পাইপে পাইপে, অচেতন তুমি হঠাৎ-ই ধড়ফড় ক'রে উঠে বসলে, তখন বিন্দু বিন্দু পানি জ্বলছিলো তোমার চোখের পাপড়িতে! ঠান্ডা পাইপের গায়ে হাতটা ছোঁয়াও, তার সরীসৃপ মনের নিদ্রা ভাঙবে, তার ভেজা শরীর ভরাবে তোমার বিশুষ্ক কণ্ঠ, যে গালে সমস্ত বিষ জমে আছে, তাকে রাখো পাইপের শীতল চিবুকে, শোনো কান পেতে ভূ-গর্ভের তাবৎ পানি ছুটে আসছে, জোয়ার এসেছে পাইপে পাইপে! যখন জ্বলন্ত মাথা নিয়ে সারা শহরে ছুটতে ছুটতে দোর্দণ্ড কোনো মানুষীর কঠিন হৃদয়ে ঝাঁপ দিয়ে নেভাতে চাইছো আগুন— ঝরে যায়, ঝরে যায় পানি, পাইপের ভরা বুক থেকে


আহমেদ নকীব
জন্ম: ২৭ শে জুন ১৯৬৫, ঢাকা।
পেশা: এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, সাপ্লাই চেইন, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ঢাকা।

প্রকাশিত বই:
শিশু ও হারানো বিড়ালের কথা(কাব্যগ্রন্থ:১৯৯৬, ধানসিঁড়ি),মহাপুরুষের জোব্বা(কাব্যগ্রন্থ:১৯৯৯, ধানসিঁড়ি),ওরা আমাকে ঘিরিয়া ঘিরিয়া নাচে আর গুলি করে(কাব্যগ্রন্থ:২০০২,ধানসিঁড়ি),
ঘষা খাইতে খাইতে চলে নয়া চক্রের খেইল (গদ্যগ্রন্থ:২০০২, দুয়েন্দে),আ মরি ক্ষুদ্রত্ব (কাব্যগ্রন্থ:২০০৫,গাণ্ডীব),
শুরু থেকে সম্প্রতি (কাব্য-সংগ্রহ:২০০৯,উলুখড়) শব্দ-দ্বন্দ্ব-ভেদ (কাব্য-গ্রন্থ:২০১১,শিরদাঁড়া),
নখের টুকরা (কাব্য-গ্রন্থ:২০১১,প্রতিশিল্প),
ট্যাক্সট ম্যাসেজের মৃত্যু (গল্পগ্রন্থ:২০১২,উলুখড়),
কালো কাচের বাইরে কিছু আর ঘটে না (কাব্য-গ্রন্থ: ২০১৬,উলুখড়),তোমার নেচে নেচে চলা (কাব্য-গ্রন্থ: ২০১৬,শিরদাঁড়া),মিসেস নিতিয়ার সাথে বৃষ্টি আসলো যেদিন (কাব্য-গ্রন্থ:২০১৮,উড়কি),
গান গাবো বিজয়নগরে (কাব্য-গ্রন্থ:২০১৯,উড়কি),
যে ব্রিজ দৃশ্যত নাই (কাব্য-গ্রন্থ:২০২০, উড়কি)
তাল তাল মেঘ ভেঙে পড়ছে (কাব্য-গ্রন্থ:২০২১, উড়কি)

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading