লোহার বৃন্দাবনে
ঘোড়ার চামড়ায় ঘোড়া লিখি রে
ততদূর হ্রেষায় পোড়া
যখন আর যমুনা তীরে
নাইরে আমার
দুঃখের দোসর
জলের তলে পুড়ি
জলের অতলে পুড়ি
জলের পাতলেও বাজবে
লোহার খঞ্জনানি
যখন আর বৃন্দাবনে
নাইরে দোসরা
ঘোড়ার চামড়ায়, ঘোড়া লিখি রে
লিখি, যতদূর হ্রেষায় পোড়া
পদ্মা
ঈশ্বরচূড়া স্পর্শের নেশায়
মাতাল হয়েছি গর্জিনী হে
তুমিই বহন কর
আমার টগবগ
টগবগে ঘোড়া
যার চোখে রোদের ভঙিমা
মধ্যেরাতে
-নিরবে ঝরবে ফুল
অশ্রু
আলেয়া
বকুল
কাঁচাহলুদে বিভোর সে
-প্রথম সওয়ারি
প্রেম ছিলো চাবুকে
শপাং
শপাং সুখ
আহ্ ঐ দেখ জবারঙে ঝাপটায়
বারোমাস বকুলের রঙে ঘোলা
বিশ্বসংবাদ
হেই মহামান্য, যুদ্ধবাণিজ্য, অস্ত্র মুনাফায় আর গনিমতে আপনারা কি আকাশে বীজতলা বানাবেন, শস্য বুনবেন মঙ্গলে? আমরা তৃতীয় পৃথিবীর মানুষেরা বেশ কর্মঠ, ইদানিং আরো দক্ষ হয়ে উঠেছি নিজেদের লাশ সরাতে সরাতে, দক্ষ হয়েছি ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে করতে । আমাদেরকে কি নিয়োগ দিবেন তারার জঙ্গল সাফ করার কাজে?
আপনাদের ড্রোন, যুদ্ধবিমান আর নভযানগুলি মাংসবহুল পাখির মত লাগে, যেহেতু ক্ষুধা, যেহেতু কাজ নাই, আমিসহ আরো কয়েকজন বোকাচোদা এবং আমরা, বুক পেষা তৈলে জ্বালিয়ে লণ্ঠন, আমাদের গুলতিগুলি জড়ো করি (সাহেব হাসবেন না যেন) । বাঞ্ছা করি, সুস্বাদু ঐসব পাখিগুলি মেরে পাঠিয়ে দেই হাঁড়ঝিরঝির মাঠে, নিভু নিভু রসুই ঘরে, ঘুমন্ত তল্লাটে আর আমার উচ্চাভিলাসী প্রেমিকার রন্ধনশালায়
যেহেতু ক্ষুধার্ত, আমরা নিয়োজিত তারার জঙ্গল সাফ করার কাজে । কে জানে কবে, কত আলোকবর্ষ পরে মহাশূন্যে খুঁজে পাবো আপনাদের ফেলে দেওয়া শস্যের বস্তাগুলি ?
আসুন ভায়েরা বোনেরা লাল বন্ধু নীল বন্ধু, সবুজ বন্ধুরা, গেরুয়া বন্ধুরাও আসুন, নিয়োজিত হই তারার জঙ্গল সাফ করার কাজে!
সমাবেশ
দরাজ ধুতরার বনে জড়ো হই
সন্ত
শাক্ত
যত ডোমনী কাপালিক
আর মেঘে ধোয়া ঘোড়া
জড়ো করি জোস্নায় বার্নিশ করা পিস্তল
ঈশ্বর তুমি পান কর
যত প্রার্থনালয়ে
খুলি ভরা মানুষ রক্ত, অশ্রু
ঈশ্বর তুমি পান কর
চিঁহিঁহিঁ চিঁহিঁহিঁ উঠছে মাতম
দরাজ ধুতরার বনে
জড়ো করি জোস্নায় বার্নিশ করা পিস্তল
আর আমাদের মেঘে ধোয়া ঘোড়া
বিভীষিকা
(হে মানুষেরা প্রাণ প্রকৃতি এবং নিজেদের ধ্বংসলীলা থেকে, কে তোমাদের রক্ষা করবে, কে ?)
ঘুম ধরে না, চোখ নিভে না
চতুর্পাশে লক্ষ তীরন্দাজ
গর্ত হচ্ছে, গর্ত হচ্ছে বুক বরাবর
সিন্ধু ছিঁড়ে যাচ্ছে রে নাভিশ্বাস
জগৎময় ছিটকে পড়ছে ফেনা
সমুদ্র না, কাৎরাচ্ছে
লবণ মাখা ছাল-ছড়ানো লাশ
( ঘুম ধরে না
চোখ নিভে না
মগজ তামা তামা )
ঘুম ধরে না
চতুর্পাশে লক্ষ গোলন্দাজ
দগ্ধ শিশুর বুকের ক্ষতে
ভষ্ম মানুষের আংরাতে
আংরাতে
আমি উত্তেজিত
চতুর্পাশে উত্তেজিত রাত
অশ্রু তো নয়
তারা যেন চক্ষুচূড়া থেকে
নামিয়ে দিচ্ছে তীরবিদ্ধ হরিণের প্রপাত
সিজোফ্রেনিক
(মহান শিল্পী ভ্যান গগ’কে)
মাথার ভিতর ভীষণ ঘুর ঘুর করে
সেই কানকাটা লোকটা
আর একজন রগচটা কবি
চোখ মেল্লেই দেখি,
বিধ্বস্ত প্রজাপতি
পা ফেলা যায় না
ঘাস ফড়িংয়ের এমন মাংস ছড়ানো
মাথার ভিতর ভীষণ ঘুর-ঘুর করে
সেই কানকাটা লোকটা
আর একজন রগচটা কবি
ধারালো ছুরি, তোমরা ছুঁড়ে ফেলো পাহাড়চূড়া থেকে
দিগন্তের সূর্যমুখী খেতে
হারিয়ে ফেলতে চাই আমার গোপন রিভালবার
কর্পূর
আহ্ হাওয়া,ভবঘুরে হাওয়া
-আমায় তুমি শীতল কর
চাঁদ ছাওয়া রাতে
একচোখ কানা, মস্তবড় পাখি
তার – গুটিয়ে নিয়েছে ডানা
যেখানে সমুদ্রমন্দির-
ভাসে শাম্পান আকাশ ঘেঁষে
তারায় তারায় জল,
আর যেখানে আছড়ে পড়ে
আমার নোনাজারি
সমুদ্রকুন্তল
-সেইখানে তার বাড়ি
সে আমায় দেখতে পায় না
দু-চোখ মেল্লে গয়নাগাঁটি
পরিপাটি বিছানা
মুখের উপর ধরে আছে – আয়না
না-জুড়ানো তাঁর কলিজার পাশে
রুধিরে রাঙা
বাদবাকি টুকরায়
ভুলবসত আমার সুরত ভাসে
আহ্ হাওয়া, ভবঘুরে হাওয়া
ঐ-রূপ তুমি নিভিয়ে দিও
চাঁদ উঠবার আগে-
সেদিন আমার মরণ হবে
গোলাপ ফুলের মত
তিন-টুকরা কাপড়ের
গিঁটগুলি সব খোলো
যে আমার জন্য একটুও কাঁদবে না
দেখুক সে তাঁর মুখের মতন
– অশ্রুদানা, জ্বলছে সারা গায়
আগরবাতির ধোঁয়ায় ধোঁয়ায়
যদি আবার আদল জাগে
আহ্ হাওয়া ভবঘুরে হাওয়া
সে-চোখ থেকে সরিয়ে নিও
এমন প্রহসন
ততক্ষণে মিলিয়ে যাবো
-কর্পূরে
আর
ঘ্রাণে
যেখানে সমাধিমন্দির
সেদিন আমার মরণ হবে গোলাপ ফুলের মত
ঈগলফুলের দিন থেকে
ঈগলফুল
ঘ্রাণ নেই, গন্ধ আছে, তালহীন ছন্দহীন
তুলার পাতলা হাসি আছে মনে
উড়ে মেঘ পেরিয়ে
ক্ষুদ্র হয়ে যায় তোমার উচ্চারণ!
শিমুলপাখি
প্রেমের উছিলায়,
কাঠে কাঠে লিখে রাখো নখের আচরণ,
তরতাজা আলাপন, ডালে আর পাতায় পাতায়?
কেন মাটির ঘুমে ঝরতে থাকে পাতা,
মাটির ঘুমে আলোর মতন ঝরতে থাকে পাতা?
তবু কি ঈগল মুগ্ধ হয় শিমুল ফুলে
না শিমুল বোঝে তার ডানা?
ঈগলফুল,
ক্ষুধার চোটে, না আকাশের বিরক্তিতে
তীব্রডানা গুটিয়ে আনো,
পালকের নিছে বিঁধে নাও কাঁটার আঘাত,
কাঠের আওয়াজ?
কেন তোমার চোখে ফোটে সর্পগাছ?
ডানায় চকচক করে ক্ষুধা
যেদিন নেমে যাবো সর্পগভীরে, চুপচাপ
মাটির ঘুমে জড়িয়ে নিব রাতের ত্বক,
সাপের আকাশ,
ময়ূরের পাখনা
সেদিনও জাগবে ফুলে ফুরফরানি
ময়ূর শিহরণ
কেবল মাটির ঘুমে ঝরবে যখন পাতা
মাটির ঘুমে ঝরবে শুধু পাতা-
মুক্তি
পৃথিবীতে এমন অনেক ঘোড়া আছে
মুখে কোন খাঁচা নেই
ঘাড়ে কোন লাগাম নেই
পিঠে নেই চাবুকের দাগ
গজাল মারা লোহার পাত নেই খুরে-
মিটিয়ে সবুজ ক্ষুধা –
হাঁড়ে, হৃদে, মাংসে, চামড়ায় ।
লোমশীর্ষে নিয়ে বাতাসের কম্পন
ঘুরে তৃণভূমি, বিস্তীর্ণ চরাচর
তবুও
দীর্ঘ লিঙ্গের মত চিঁহিঁহিঁহিহি স্বর
ঢুকিয়ে নিয়ে নিজেরই অভ্যন্তরে
আর কোন তীব্র পিপাসায়
ছুটে যায় মৌন জলাধারে
হাঁটু গেড়ে অথবা নত করে শির
গভীর আয়নায়, সেও কি দেখে কোন সহিসের মুখ ?
বিবাহ
ছিলাম
দূর-দুনিয়ার আস্তানাতে
গোসত খাওয়ায় রত
হঠাৎ
হাঁড়ের পাশে শিরশির
ঝিরঝিরানি মাথায়
চর্বি আলোয় দেখা
শত প্রস্তরিত রাত
দিকে দিকে জাগ্রত
কাষ্ঠপেশি সাঁতরে এলাম
শীতল সরোবর
জীবনভর নিংড়ে নেওয়া
তলানিতকসহ
রে আমি গুলিয়ে যাই নি
বাদবাকি ঢেউয়ের কারসাজি
শূন্যে খুলি শুনবে বোবার মত
মগজ জুড়ে ঘটছে আতশবাজি
অনুভব, যখন আর নাইরে ভবে
ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিয়া আমার কবর রচিত হবে