হাসনাত শোয়েবের নয়া বইয়ের কবিতা

  রেইনি সিজন

॥ ১ ॥

দুপুর দুপুর

‘ইম্যাজিন দেয়ার ইজ নো হেভেন’। মেয়ে বলল বাবাকে। সামার ভেকেশনে আমরা মাউন্টেন দেখতে যাব। বাবা বলল মেয়েকে। গিজারে গরম পানি দেয়া আছে, দুটি খরগোশের বাচ্চা গোসল করছে। বাবা দেখছে, মেয়ে হাততালি দিছে।

 

গুড আফটারনুন

সামার ভেকেশনের আগেই বাবা মরে গেলো। মেয়ে একা একাই মাউন্টেন দেখতে গেল। সাথে গিজার এবং খরগোশের বাচ্চা দুটি। হঠাৎ বৃষ্টি নামল। মেয়েটি ভিজে গেল।

 

গুড নাইট

তুমি কি মীন নাকি মেষ? মেয়েটি জিজ্ঞেস করল। আমি কন্যা। মেয়েটি হাসল। অট্টহাসি। তুমি? আমি সিংহ, কিন্তু আমার বাবা মরে গেছে।

 

॥ ২ ॥

জানুয়ারি

পাহাড়ের দিকে শীত নেমে গেছে। পাশাপাশি দুজন মানুষ একে অপরের দিকে না তাকিয়েই হাঁটছে। তারা আঙুল আর ঠোঁট থেকে মুছে নিয়েছে জন্মদাগ। অনেকদূর হাঁটার পর তাদের মনে পড়ে একজন বিষণ্ন ব্যাজ্জিওর কথা। অতঃপর তারা পরস্পরের দিকে ফিরে তাকিয়ে কেউ কাউকে চিনতে পারলনা।

 

জুন

জুন একটি মেয়ের নাম। জুন মাসে পুরুষেরাও ঋতুবর্তী হয়ে ওঠে। দুজন মানুষ, যারা পরস্পরকে চিনতে পারেনি সঙ্গমে জড়ো হয়। সেখানে বিকেলগুলো যেন আরো বেশি বিকেল। রাতের বেলা যেসব মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুমেই তাদের মৃত্যু ঘটে।

 

ডিসেম্বর

ডিসেম্বর মাসে ক্যালেন্ডারের অসুখের দিন। মৃত্যুকালে সে হয়তো জুন মাসের সঙ্গমের কথা ভাবে। ক্যালেন্ডারে দাগ টেনে দুটি মানুষ পাশাপাশি শুয়ে আছে। দুটি পাশাপাশি পুরুষ কেউ কাউকে চিনে না।

 

॥ ৬ ॥

সামার

দুপুরগুলো এলোমেলো পড়ে আছে। তার ওপর শুয়ে আছে কয়েকটা কুকুর। একটির নাম জেনেলিয়া। এই নাম ধরে ডাকলে সে তাকায়। আরেকটির নাম সামার। ডাকলে সে সাড়া দেয় না। আরো জড়ো হয়ে বসে। দুপুর গড়াতে শুরু করেছে; জেনেলিয়া পালিয়ে গেছে। সামারের ছায়া ক্রমশ বড় হতে শুরু করেছে।

 

অটাম

সে ক্যালেন্ডার উল্টিয়ে যাচ্ছে একা একা। হেমন্ত মাস খুঁজে পাচ্ছে না। সান্তিয়াগোর রাস্তাগুলো এখনো তুষারাবৃত। অথচ আমরা কেউই হেমন্ত মাস খুঁজে পাচ্ছি না। রেডিওর সতর্কবার্তা, হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। সে তবুও ক্যালেন্ডার উল্টিয়ে যাচ্ছে একা একা।

 

উইন্টার

উইন্টার মানে শীত, জানার পর থেকে উইন্টার আমার প্রিয়। উইন্টারে গাছের পাতা ক্রমশ ছোট হতে শুরু করে। এ সময় জেনেলিয়া ও সামার কাছাকাছি আসে। তারা জানে না, দীর্ঘ শীতের পর পাতাগুলো কেবল বিষণ্ণ বোধ করবে।

 

॥ ১৩ ॥

অসুখ

আমিও কি ফিরেছি তবে? আপনি ফিরবেন কেবল নৃত্যশিল্পীর আত্মজীবনীতে। একা একা। আপনার হাতে পৃথিবীর অজস্র অসুখ। আমরা আসব শুশ্রুষা নিয়ে। সাথে থাকবে হাসপাতাল, সিরিঞ্জ ও সুন্দরী নার্সদল। তারা আসবে মার্চপাস্ট করতে করতে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকবে—  ওদের জ্ঞান দাও প্রভু, ওদের অসুখ দাও।

 

যন্ত্রণা

ইউ আর রিয়েলি মিউজিক্যাল এবং সেক্সি। তবে আস ফুল তুলি। কী ফুল তুলবা? দাঁড়াও সুন্দর একটা নাম ভাবি! ফুলের নাম, গোলাপ ফুল। গোলাপ একটি ক্লিশে ফুল, অসুখের সময় আমরা গোলাপ ঘৃণা করি।

 

শুশ্রুষা

তুমি একা একা জ্বর মাপ। তুমিই পৃথিবীর বুকে নির্জন হাসপাতাল।

 

॥ ১৬ ॥

গাছ

গাছের বিস্মরণ আমিও জানি! শিকড় ছড়িয়ে সে তাস খেলে। তার মুখের ওপর হেঁটে যাওয়া পাতা, সে কেবলই সরিয়ে দিতে চায়। পাতার যন্ত্রণা খুঁটিয়ে দেখে পাতা। গাছ জানে, মুখ থেকে সরে যাবে পাতা। মুখের ওপর হেঁটে যাবে তাদের লাশ। জেনেসিসের ড্রাকুলারাও একে একে বের হবে সেদিন।

 

পাতা

এবার মুছে দিতে পার শিকড় বিষয়ক রহস্য। আমাদের আছে ঔষধি গাছ, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও মিথ্যা অহংকার। আঙুর গাছের নিচে জমা হোক প্রার্থনার হাঁস। তুমি আসিও তবে শেষ ভোজসভায়।

 

বিশ্বাস

এখন চামড়া বদলানোর মৌসুম। আমরা জ্বর নিয়ে অপেক্ষা করছি অবিশ্বাসী পাতাদের জন্য।

 

 

 

  ক্ল্যাপস ক্ল্যাপস

 

দানিয়েল, তোমার জন্য মন্দ্রাকান্তা চিঠি

১.

হেমন্তকালীন মাছেরা ফিরে গেছে অপেরা । আমাদেরও খুব বেশি সময় আর নেই। দ্রুত লিখে নাও মন্দ্রাকান্তা ঠিকানা। কেউ হয়তো অসুখ নিয়েই পাহাড়ে চলে গেছে। জেনে গেছে, হাড়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা মাংসের স্বাদ নোনতা। অতপর আমরা পাল্টে ফেলি জিহ্বার পুরোনো সব স্মৃতি। অপেরায় যে মাছ একা একা গান গায় সে নাকি কাঠের। তার কাছে পাঠিয়েছি মন্দ্রাকান্তা সব চিঠি।

 

ফ্রেগরেন্স অব ইয়াবা

১.

রুম নাম্বার ৪৪৫, উড়িয়ে দাও তোমার মখমলে ফেরেশতা। পশমাবৃত উইকেন্ডের গায়ে ফ্রেগরেন্স অব ইয়াবা। তোমরা কেউ এগিয়ে এসে বিউগল তুলে নাও। বাজাও পরমগীত সলোমন। ছায়ার ভিতর মেরুন অন্ধকার। আর শিরার ভিতর সিরিঞ্জ ভর্তি রঙিন বিষাদ। ওহে ফেরেশতা, চোখে এবার কিছু ফ্রেগরেন্স জড়িয়ে নাও। শুয়ে পড়ো কোমল গান্ধর্বে।

২.

জেরেমি, তুষার শুভ্র নায়িকাদের কসম। ফ্রেগরেন্স অব ইয়াবার দিন শেষে তোমরা বিষন্ন বোধ করবে।

 

শমোসন তোমাদের নগরে বৃষ্টি

৬.

সে তাহার পনিটেলে আঙুল রাখিয়া বলিল-‘এইখানে শুয়ে আছে মৃণালিণী ঘোষালের শব’। দীর্ঘ ক্লান্তির পর ঘুমের পাশ দিয়ে চলে গেছে মোটরগাড়ি। আমরা ধীরে ধীরে গুছিয়ে এনেছি আত্মহত্যাকালীন সরঞ্জামসমূহ। ফিরে আসার জন্য ভাড়া করা পুরোনো সেভরোলেটিও প্রস্তুত। তবুও কোথাও যেনো তুষারপাতের শব্দে আমাদের কান্না পাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে লুকিং গ্লাসে ভেসে উঠবে কারো কান্নার দৃশ্য।

৭.

পিয়ানোবাদকের মৃত্যুর পর আপনি বিমর্ষ বোধ করবেন। দুপুরের পর আরো একবার সেরে নিতে পারেন যৌনকার্য। আপনার মন খারাপ বাড়ছেই । দেখে নিতে পারেন লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরার শেষ দৃশ্য। শেষ মুহূর্তে আপনার মনে পড়বে দুর্গার কথা। সত্যজিৎ আর বিভুতিভূষণের জন্মনা হলে দুর্গা নিশ্চয় আজ বেঁচে থাকতো।



বইঃ দ্য রেইনি সিজন

প্রকাশকঃ আগামী প্রকাশনী

প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৯


বইঃ ক্ল্যাপস ক্ল্যাপস

প্রকাশকঃ ঐহিক (কলকাতা)

প্রকাশকালঃ জানুয়ারি ২০১৯

শেয়ার