রিমঝিম আহমেদের সাক্ষাৎকার । আলাপকারী : রনক জামান

এই সময়ের বাংলা কবিতায় পরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ নাম রিমঝিম আহমেদ। নয়টি কবিতাগ্রন্থ ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে তাঁর এ পর্যন্ত। গত দশকের মাঝামাঝিতে সাহিত্যে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই তিনি প্রশংসিত ও বহুল-পঠিত। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লাভ করেন ‘আদম সম্মাননা’।

কবি ও কথাসাহিত্যিক রিমঝিম আহমেদের জন্ম ৮ জুলাই ১৯৮৫, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে। পেশায় উন্নয়নকর্মী। শিরিষের ডালপালার পক্ষ থেকে আমার সুযোগ হয় রিমঝিম আহমেদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের। কথা বলেছি তাঁর কবিতা ও কবিজীবন নিয়ে, ব্যক্তিজীবনের ছাপও উঠে আসে কিছুটা, উঠে আসে তাঁর কবিতা ও অনুভবের জগতের চিত্র ও চিন্তাকৌশল, সেই সঙ্গে সাহিত্য সমাজে নারী ও পুরুষ কবিদের বৈষম্যমূলক মানসিকতার দৌরাত্ম্য ও সাম্প্রতিক আরো কিছু ইস্যুতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানার সুযোগ হলো এই আলাপে।   

শিরিষের ডালপালার দশকপূর্তি বিশেষ সংখ্যার ভাষানন্দিনী পর্বে রিমঝিম আহমেদের সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য ভিন্নমাত্রা যোগ করবে বলে আশা রাখছি।

— রনক জামান


কবি তো সবার আগে একজন মানুষ। মানুষের সমাজ আছে, পরিবার আছে, ক্ষুধা আছে, দায়িত্ব আছে। সমাজে-রাষ্ট্রে টিকে থাকার লড়াই আছে। আর তেমন এক মানুষের ওপর যদি কবিত্ব ভর করে তাহলে সে জীবন বড় দুর্বিষহ। কবির জীবন বড় আত্মঘাতী। একটা কবিতাময় যাপন না পেলে লড়াইটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আবার কবি যদি নারী হয়, তবে তার লড়াই চারগুণ। কারণ এই সমাজে পুরুষের স্বীকৃতিতেই নারী কবি হতে পারে।

 

রনক জামান
গতানুগতিক প্রশ্ন দিয়ে শুরু করছি, লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?

রিমঝিম আহমেদ 
লেখালেখির শুরু ঠিক কীভাবে মনে নেই। তবে একবার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রচলিত একটা গানের সুরে কথা বসিয়ে গেয়ে ফেলেছিলাম, স্কুলে। কিন্তু কাউকে বলিনি ওটা আমারই লেখা। হয়তো ওটাই শুরু। মা মারা গেল তারপর। খুব ছোটই তখন। গাছপালা, বাড়ির দেয়াল ইত্যাদির সাথে কথা বলতাম। নিজে নিজে গল্প বানাতাম। যদিও ওসব একার প্রলাপ। সেসব দিনে খুব একটা বন্ধু ছিল না। আর বন্ধুত্ব হলেও টিকতো না। একাকিত্ব থেকে নিজের কথা বলার একটা তৃষ্ণা তৈরি হয়। সে থেকে ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে উঠলো। বই আর প্রকৃতি আমার সঙ্গী হয়ে উঠলো। পাড়ার বড় আপারা চিঠি লিখে দেওয়ার জন্য আমার কাছে ধর্না দিতে শুরু করে। কারণ অনেকেই লেখাপড়া জানতো না। সম্ভবত গুছিয়ে লিখে দিতাম বলে ভালো চিঠি লিখিয়ে হিসেবে পাড়ায় একটা নামও হয়ে গিয়েছিল। ওভাবেই একদিন মনে হলো, আমিও অনেকের মতো লিখতে পারি।

রনক
সেই সময় কি কোনো বিষয় বা ব্যক্তি আপনাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করেছিল?

রিমঝিম
না, আলাদা করে উৎসাহিত করেছে তা নয়। তবে আমার সমবয়সী চাচাতো ভাই ছিল, মাহবুব। ওর মধ্যেও আমার মতো কিছুটা লেখা ও পড়ার ভূত চেপেছিল। এটা তো একটা জার্নি। আমার ছোট থেকে বড় হওয়ার (বয়স বাড়া অর্থে) জার্নিতে অনেকেরই উৎসাহ আছে। যেমন আমি ছোটবেলায় যা লিখতাম মাহবুব আমাকে সঙ্গ দিতো। সব লেখা ও-ই প্রথম পড়তো। তখন কেউ আগ্রহ নিয়ে লেখা পড়ছে, সেটাতেও নির্মল আনন্দ পেতাম, উৎসাহ পেতাম। আরও বড় হবার পর আমার এক মামা ছিলেন, তসলিম রায়হান। ভালো ছড়া লিখতেন। উনি পড়তেন। উনিই ওখানকার কয়েকজনের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন, যারা সাহিত্যচর্চার সাথে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন আকাশ আহমেদ। শিশুসাহিত্যিক। তিনি আমার বেশ কিছু লেখা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপাতে পাঠিয়েছিলেন ডাকযোগে। কিছু কিছু ছাপাও হয়েছিল। প্রকৃত উৎসাহ যা, তা আমি পেয়েছি নিজের জীবন থেকে। মা-বাবা হারানো, একাকিত্ব, আমার আশপাশের প্রকৃতি থেকে। কেননা সেসব আনাড়ি লেখাও আমাকে নির্ভার করতে দারুণ সহায়তা করেছে।

রনক
আপনার জন্মস্থান চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে, পড়াশোনাও চট্টগ্রামেই। আমরা দেখি, সাহিত্যিকদের শৈশব ও শৈশবের পরিবেশ লেখালেখিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সাধারণত। আপনার কবিতায় রাঙ্গুনিয়া ও শৈশবের ভূমিকা কতখানি?

রিমঝিম
আমার ধারণা মানুষ তার শৈশব-কৈশোরের অভিজ্ঞতাকে কখনো এড়াতে পারে না। শিশুর বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওই সময়টা। এর প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। 

 


কবিতাকে মনে হয় দূরের দ্বীপ, কাছে যাব যাব করেও যাওয়া হয় না। ছোঁয়া হয় না তার অমৃতরহস্যভাণ্ডার। চিরঅনাবিষ্কৃত। অধরা মাধুরী। তবু এই অধরাকে ধরতে কী প্রাণান্তকর চেষ্টা কবিদের!

 

রনক
আপনার কবিতায় জীবন যাপনের অভিজ্ঞতা, সেখান থেকে এক মেলানকলিক সুর, এর পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলেরও ছাপ পাই। এই ভৌগলিক অবস্থান আপনার কবিসত্তায় কতটা প্রভাব রাখে? আপনিই-বা সচেতনভচাবে নিজের স্থানকে কতটা ধারণ করার চেষ্টা করেন?

রিমঝিম
আমার ছোটবেলাটা পুরোপুরিভাবে কেটেছে রাঙ্গুনিয়াতে। বেড়ে ওঠার সবটা জুড়ে আছে রাঙ্গুনিয়া। এর বাইরে আমার আর কোথাও যাওয়া হয়নি। তবে এক-দুবার কক্সবাজার, মহেশখালী যাওয়া বা কিছুদিন থাকা হয়েছে। যেহেতু বাবার জন্মসূত্রে আমি ওদিককারই। কিন্তু আমার জন্ম-বেড়ে ওঠা, লেখাপড়ার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়াতেই। ফলে এর বাইরের জগত, কিংবা অনেক কিছু দেখার সুযোগ আমার হয়নি। ভীষণ ছোট গণ্ডিতে জীবনের ১৮/১৯ বছর কেটেছে। বিয়ের পর যদিও একটা বৃহৎ জগত আমি পেয়েছি আমার দাম্পত্যসঙ্গীর সৌজন্যে। ফলে ওই এক রাঙ্গুনিয়া-ই তার সবুজ-শ্যামল মায়ায় এত জড়িয়ে রেখেছিল যে, আমি দুহাত ভরে নিয়েছি। মা মারা যাবার পর পাহাড়-জঙ্গল আর লতাগুল্মের সাথে আমার ভালো একটা বন্ধন তৈরি হয়েছিল ছোটবেলা থেকে। এখনো লিখতে গেলে ওসবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রভাবিত করে। এর বাইরে আমি যেতে পারিনি আজও। তবে আমি যেখানে থাকতাম, সেখানে অনেক শ্রমজীবী মানুষের বাস ছিল। নানারকম মৃত্তিকালগ্ন মানুষ, তাদের জীবনাচার দেখেছি। নির্ভান, একেবারে নিরাভরণ সাধারণ মানুষ তারা। মানুষই আমাকে সবচেয়ে বেশি শিখিয়েছে। আজও শেখায়।

রনক
দারুণ… আপনার কবিতাভাবনা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আপনার কাছে ‘কবিতা’ কী?

রিমঝিম
লেখালেখির এত বছর পরেও, আজও আমি কবিতা কী- সেটা বুঝে উঠতে পারিনি। এটা একটা কঠিনতর প্রশ্ন। হয়তো এই একটা প্রশ্নের উত্তর আমি নানা সময় নানাভাবে দিই। কবিতাকে মনে হয় দূরের দ্বীপ, কাছে যাব যাব করেও যাওয়া হয় না। ছোঁয়া হয় না তার অমৃতরহস্যভাণ্ডার। চির অনাবিষ্কৃত। অধরা মাধুরী। তবু এই অধরাকে ধরতে কী প্রাণান্তকর চেষ্টা কবিদের! আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় কেন লিখি? তবে বলবো- আত্মমুক্তির জন্যই আমি লিখি। এটি এক বিষাদময় আনন্দ। একটা কবিতা হয়ে ওঠার আনন্দের কাছে তাবৎ বিষাদ যেন ম্লান হয়ে যায়। সে-ই প্রথম বুঝলাম, বিষাদেরও আনন্দ আছে। আর কিছুতে এমন অতিনিবিড় অন্তগূঢ় আনন্দ পাই না। একটা অনিশ্চিত পথে হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্যহীনতার দিকেই এই যাত্রা। বহু ব্যঞ্জনা রেখে কবিতা জানায়, তাকে কথা দিয়ে নয় অনুভূতি দিয়ে ধারণ করতে হয়। এরপর জানি না। কবিতা আসলে কী, কেন!

রনক
ব্যক্তি ও কবি রিমঝিম আহমেদের মধ্যে পার্থক্য কতটা?

রিমঝিম
ব্যক্তি আমি অতি সাধারণ এক মানুষ। নারী। মা। খোলাখাতার মতো। যে কেউ পড়ে ফেলতে পারে। নির্ভান, অকপট, খানিক রাগী।

কবি রিমঝিম আহমেদ একটু আত্মাভিমানী। কবিতার ভেতর বসবাস করে। যাপনের সবকিছুতে কবিতা খোঁজে। কবিতাময় সরল যাপন তার।

রনক
যাপনই কবিতা, সুন্দর… আপনার কবিতা-যাত্রা সম্পর্কেও যদি একটু বলেন। অর্থাৎ নিজেকে প্রকাশযোগ্য করে তোলার সময়, ধরে নিচ্ছি প্রথম বইয়ের সময়কাল বা তার আগে থেকে আজ অবধি কী কী পরিবর্তন এসেছে আপনার কবি-মানসিকতায়? এর কতটুকু সচেতনভাবে?

রিমঝিম
মানুষের জীবনটা তো একটা জার্নি। বয়স বাড়ে, অনেক কিছুর মুখোমুখি হয়। অভিজ্ঞতা-অভিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসে। কবি আমিও তো মানুষ। আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসলে, আমার কবিতার ভাষাও বদলে যাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। এই ভাষা বাংলা, আরবি, উর্দু, হিন্দি ভাষা নয়। এই ভাষা হলো কবিতার ভাষা। বুনন ভঙ্গি, দেখার ভঙ্গি, বলার ভঙ্গি সবটা বদলে দেয়। সেটা রাতারাতি নয়। ধীরে ধীরে। যা আমি অতি সহজে বিশ্বাস করতাম, একটা ধারণায় আবদ্ধ করে ফেলতাম, সিদ্ধান্তে উপনীত হতাম, তা থেকে এখন অনেকটাই মুক্ত। সময় ও পরিস্থিতি সেটা শিখিয়েছে। আর, পঠন-পাঠনও তো অনেকখানি সাহায্য করে মানুষকে। জীবনের নানা বাঁক। পরিবেশ, প্রতিবেশ, মানুষ, ঘটনা-দুর্ঘটনা, পরিস্থিতি কত কী শেখায়! সেই শেখাটা তো আলো ফেলবেই জীবনে, সৃষ্টিতে। কবিতা তো আমি হতে মুক্ত নয়, বরং আমারই শিল্পিত প্রতিরূপ। সৌন্দর্য যুক্ত হলে সেটা  শিল্পে পরিণত হয়। তবে এখানে সচেতন ও অবচেতন কার পাল্লা ভারি বলা মুশকিল। কৃৎকৌশল নিয়ে বললে সবটা সচেতনভাবেই। বাকিটা জলের আয়না। অতখানি স্পষ্ট নয়, কল্পনার আঁচড়ে আঁকা হয়ে যায়। তার হদিস আমি সবখানি পাইনি আজও। আমার অজান্তেও নিরন্তর খেলা চলছে প্রকৃতির।

 


কবি যদি নারী হয়, তাকে পদে পদে প্রমাণ দিতে হয় যোগ্যতার। দাঁড়িপাল্লায় মেপে তবেই তাকে সমাজ কিছু দেয়। পরিবারে, সমাজে দায়িত্ব বহাল রেখে তার কবিতার হাত ধরতে হয়। সমাজ ও পরিবার নারীদের প্রতি এত বিরূপ, পিতৃতন্ত্র এমন চাগিয়ে উঠছে যে, নারীকে যেখানে মানুষ হিসেবে নিজের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্যই লড়তে হয়, সেখানে সাহিত্যপাঠ, সাহিত্যচর্চা তো রীতিমতো শৌখিন পর্যায়ে পড়ে।

 

রনক
২০১৬ সালে চৈতন্য থেকে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘লিলিথের ডানা’ থেকেই দেখতে পাই ছন্দ সচেতনতা লক্ষণীয়। আপনার ছন্দচিন্তা সম্পর্কে জানতে চাই। কিছুদিন পরপরই আমাদের কবিসমাজে ছন্দ নিয়ে নানানরকম মতবিরোধ, তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে। এগুলো সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

রিমঝিম
আমি কবি হলাম কি হলাম না, তার আগে তো পাঠক। ২০১৩/২০১৪ সালের দিকে ফেসবুকে নিয়মিত ছন্দ-ছন্দহীনতা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হতো কবিদের মাঝে। আমি নীরবে পর্যবেক্ষণ করতাম এসব। মেয়েরা ছন্দ জানে না এরকম একটা কথা প্রায়ই শুনতাম। এমনকি নিজের পাঠ থেকেও বুঝতে পারতাম আমাদের দেশে নারী কবিতা লিখিয়েদের মধ্যে ছন্দ জানেন এমন নিতান্তই কম। এক/দুজন বলা যায়। তখন মনে হয়েছে, যদি সিরিয়াসলি কবিতা লিখিই, তাহলে প্রস্তুতি নিয়ে লিখবো। যেন কেউ নারী-কবি বলে একটা ট্যাগ লাগিয়ে না দেন। কবির আবার নারী-পুরুষ কী! আমি চিরকাল মানুষ হবার চর্চা করি, তেমন করে কবি হবার চর্চা জারি রাখি। নারী-কবি হব বলে নয়।

পুরো পৃথিবীটাই একটা ছন্দে চলছে। প্রচ্ছন্ন। পাতাঝরা, বৃষ্টি, হাওয়ার আওয়াজ, পতঙ্গের ও মানুষের চলা, কী না ছন্দে চলে? কবিতার ইতিহাস দেখলে তো ছন্দহীনতার কথা ভাবাই যায় না। সব বড় কবিদের দিকে তাকান, ছন্দ জানে না এমন কে আছেন? অমর কবিতাগুলোর দিকে তাকান! আসলে কিছু অগ্রাহ্য করার আগে গ্রাহ্য করা জানতে হয়। প্রথাগত ছন্দ জেনেই তবে তা ভাঙার তরিকা শিখতে হয়। তাই ওসব বাহাস বৃথা, যদি আমার প্রস্তুতি না থাকে। শৌখিন লিখিয়েদের জন্য যদিও এসব কথা বলা নয়। তারা আসবে যাবে, প্রতি দশকে, প্রতি যুগে। কিন্তু সত্যিই যারা কবিতাই লিখতে চায়, তাদের প্রস্তুতি আবশ্যক। ছন্দও তার অংশ। অস্বীকার করার উপায় নেই।

রনক
‘নারী-কবি’ প্রসঙ্গে যদি যাই। সমাজে, রাষ্ট্রে, জগতে মানুষ হিসেবে জৈবিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য আছে। কবিতা লেখার সময় কি আপনার মনে কখনো এসেছে যে, আপনি নারী হিসেবে একজন নারী কবিকে রিপ্রেজেন্ট করছেন? ‘নারীর কবিতা’ বলে এক ধরনের নেগেটিভ প্রচারণাও আমরা লক্ষ্য করি। সেটা কি নেগেটিভ হিসেবেই নেন নাকি সেখান থেকে নারী হিসেবেই সমাজে আত্মপরিচয় গঠনের কোনো চেষ্টা কবিতায় এসেছে? যদিও এরকম প্রশ্ন কোনো পুরুষ কবিকে করতাম না। কেননা পুরুষতন্ত্রের বেসিসেই মেইনস্ট্রিম গড়ে উঠেছে, ফলে এ নিয়ে আলাদা প্রশ্ন করার সুযোগ তাদের কম।

রিমঝিম
দেখুন, আমি যখন লিখতে আসি, সচেতনভাবে, তখন থেকেই ভেবে রেখেছি আমি কবিতা লিখব। সেটা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নৈর্ব্যক্তিকতা নিয়েই। সত্যিই কখনোই নারী-কবি হতে চাইনি, ভবিষ্যতেও চাই না। চাইনি কেউ বলুক, নারীদের মধ্যে ও ভালো লেখে! সামাজিক লিঙ্গ তো সেটাই, যেটা সমাজ দ্বারা মানুষের ওপর আরোপিত। নারী এমন হবে, পুরুষ অমন হবে-এরকম একটা ছক বেঁধে দেয়। আমি মানুষ হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে নারী। সেটা অস্বীকার করা যাবে না। তেমনি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নারীর কবিতা বলে খাটো করা হোক, তেমন পুতুপুতু লেখা আমি লিখতে চাইনি বলেই কবিতা নিয়ে পরিশ্রম ছিল শুরু থেকেই। কিন্তু মানুষ হিসেবে যেহেতু আমি নারীর জীবন যাপন করি, সে যাপনের অভিজ্ঞতা তো আমার লেখায় এসেছেই। আসাটা স্বাভাবিক নয়? পুরুষের কি আসে না?

কবি যদি নারী হয়, তাকে পদে পদে প্রমাণ দিতে হয় যোগ্যতার। দাঁড়িপাল্লায় মেপে তবেই তাকে সমাজ কিছু দেয়। পরিবারে, সমাজে দায়িত্ব বহাল রেখে তার কবিতার হাত ধরতে হয়। সমাজ ও পরিবার নারীদের প্রতি এত বিরূপ, পিতৃতন্ত্র এমন চাগিয়ে উঠছে যে, নারীকে যেখানে মানুষ হিসেবে নিজের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্যই লড়তে হয়, সেখানে সাহিত্যপাঠ, সাহিত্যচর্চা তো রীতিমতো শৌখিন পর্যায়ে পড়ে। সব ফেলে লেখালেখি? সেটা আরও কঠিন। ভেবে দেখুন না, আমাদের চিরচেনা পরিবারে নারী ও পুরুষের জীবন, তাদের তুলনামূলক যাপন। ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরা একসময় ধরে নিতাম পিতৃতন্ত্রের ধারক শুধু পুরুষ। এখন নারী ও পুরুষ উভয়েই। সেখানে এত প্রতিবন্ধকতা ভেঙে একজন নারীর কবিতা লেখা তো হিমালয় অভিযানের মতোই। নারীর মানুষ হিসেবে লড়াই করতে হয়, আবার নারী হিসেবেও লড়াই করতে হয়। কবি হিসেবে লড়াই, আবার নারী-কবি হিসাবেও লড়াই। চার গুণ! দেখুন, পুরুষেরা পুরো কথাসাহিত্যের মাঠকে নারীদের অধিকারে বিনাবাক্যে দিয়ে দিতে রাজি। কিন্তু কবিতার মাঠে নারীদের তারা নামতেই দিতে চান না। এদেশে পুরুষ জন্মালেই কবি। কাল যে পুরুষ কবিতা লিখতে এসেছে, সেও নারীর কবিতা হয় না বলে বাতিল করে দিতে স্পর্ধা দেখায়। তার কোনও প্রস্তুতি লাগে না। তাদের কাছে নারী কেবল ভালোবাসার বস্তু, তাকে তোষণ করেই কবিতা লেখা হবে যুগে যুগে। নারী তো রক্তমাংসের এক কবিতা! নারীর ক্ষেত্রে কবির স্বীকৃতি দিতেই তাদের যত জ্বালা। (আমি সবার কথা বললাম না, কিন্তু বেশিরভাগেরই চিন্তা এরকম। এটা আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ।)

 


শুধু ছন্দ জানলে, তত্ত্ব জানা থাকলে, কৌশল জেনে কি কবিতা হয়? যদি না হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আরও কিছু লাগে। যেটা বই পড়ে, আড্ডা করে, প্রশিক্ষণ করে শেখা যায় না। ধার করা যায় না, বাজার থেকে কেনা যায় না। তাহলে সেটা কঠিন নয়? যদি সহজ হতো, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতাটা আমিই লিখে ফেলতাম।

 

রনক
হ্যাঁ, এই চিত্রগুলো একদমই বাস্তব। সমস্ত বাঁধার পর, মানুষ হিসেবেই, ‘কবিতা লেখা’—এটা কতটা কঠিন কাজ?

রিমঝিম
জীবনবাবুই তো বলে গেছেন- সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি। সেরকম হলে কবির ছেলেমেয়ে মানেই কবি হতো। সাহিত্য পড়া লোকজন সকলেই কবি হতেন। তা তো হন না। কেউ কেউ হন। কঠিন বলেই। শুধু ছন্দ জানলে, তত্ত্ব জানা থাকলে, কৌশল জেনে কি কবিতা হয়? যদি না হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আরও কিছু লাগে। যেটা বই পড়ে, আড্ডা করে, প্রশিক্ষণ করে শেখা যায় না। ধার করা যায় না, বাজার থেকে কেনা যায় না। তাহলে সেটা কঠিন নয়? যদি সহজ হতো, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতাটা আমিই লিখে ফেলতাম। কবিতার সে অধরা মাধুরী কখন একটু ছোঁয়া দিয়ে যাবে তার জন্যই এই অপেক্ষা, এই তপস্যা। আমি অতি সাধারণ মানুষ, অনেক কম জানি। এর বেশি অত বুঝি না।

রনক
একেবারেই একমত। আপনার কবিতা কীভাবে হয়ে ওঠে? একটা কবিতা লেখার সময় কী কী বিষয়ে সচেতন থাকতেই হয় আপনাকে? কী কী সঙ্কটের মুখোমুখি হন?

রিমঝিম
আমার কবিতা সবচেয়ে বেশি হয় ঘোরের মধ্যে। মানে সবটা আমার জানার ভেতর ঘটে না। ভিড়, কোলাহল এসবও প্রতিবন্ধক নয় কোনও কোনও সময়। একটা তীব্র বেদনার মতো ঘোর। লেখা শেষে সেটা আনন্দের রূপ নেয়। এটা থেকে শিখেছি যে, বেদনারও আনন্দে রূপান্তর ঘটে। চেতন আর অবচেতনের মাঝে আমাদের বসবাস। চেতনকে যতটা ধরা যায়, অবচেতন ততটাই অধরা। তবে পুরোটা নয়। একটা শব্দ বা একটা বাক্য। বাকিটা সচেতন সুতো টেনে চলা। ওই একটা শব্দ বা একটা বাক্য কবিতাকে টেনে নিয়ে কোথায় যে ফেলে! তারপর তো আমি পাঠক। সচেতন পরিমার্জন যেখানে থামে, সেখানেই শেষ করি। সঙ্কট বলতে, যা বলতে চাই, তার সবটাই প্রায় অপ্রকাশ্য থেকে যায়। শব্দ-বাক্যে ধরতে পারি না। কত মহৎ কবিতা সেই ফাঁক গলে উড়ে গেছে! অসংখ্য জঞ্জাল লিখে চললাম, আমার একটা মহৎ কবিতা লেখা হয়ে উঠলো না। তৃষ্ণা রয়ে গেল। সে তৃষ্ণা-ই আরও লেখার দিকে তাড়িত করে চলেছে।

রনক
গদ্যকবিতা ও ছন্দবদ্ধ কবিতা সাবলীলভাবেই লিখে চলেছেন। কোনো কাব্য পুরোপুরি ছন্দের ফর্মে, কোনো বই পুরোপুরিই গদ্যছন্দে, আবার দুটো পাশাপাশি রেখেও বই করেছেন। এই দুই ফর্মে যুগপৎভাবে লিখতে গিয়ে কি কোনো সমস্যা তৈরি হয় বা হয়েছে?

রিমঝিম
আমার ভেতরে অনেক কথা। কথার তোলপাড়। ফলে আমি প্রচুর লিখি। এত লিখি যে বই করার পরেও আমার এক দুইটা পাণ্ডুলিপি পড়ে থাকে। সে কারণে লেখাটাকে যাপনের একটা অংশ করে নিয়েছি। এটা বোধহয় কারো কারো প্রবৃত্তি। ফলে একাধারে একই দিনে, এক বসায় দেখা যায় ছন্দে ও গদ্য ফর্মে আমি দু’চারটা কবিতা লিখে ফেলি। আবার এক সপ্তাহ কিংবা একমাসও লিখি না। এটা আমার ক্ষেত্রে একটা প্রবণতা। একেবারেই ন্যাচারাল। কবিতা আমার কাছে আসে, ডাকলেই আসে। তবে প্রশ্ন থাকতে পারে, এসব কতখানি কবিতা হিসেবে উতরে যায়। অন্যথায় সমস্যা হয় না। হা হা

 


একজন বলেছেন- “নিজের বুকে কান পাতুন। নিজেকে বুঝুন, তারপর লিখুন।’ আরেকজন বলেছেন- “কবিতা আড়াল দাবি করে।’ আমরা তো যাত্রাপথে কত কী শিখি! এই দুটি টেকনিক আমি মেনে চলি।

 

রনক
আপনার বইগুলোর পাণ্ডুলিপি গোছানোর সময়কার ভাবনাগুলো কী ছিল? কী কী জিনিস একটা পাণ্ডুলিপি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের পাণ্ডুলিপিতে শুধরেছেন?

রিমঝিম
অনেক কবিতা থেকে ভালো কবিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমার বরাবরই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। শুরুর দিকে দুয়েকজন কবি বন্ধুর ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। পরে নানারকম বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ে নিজেই শিখে গেছি। একটা সময় সবাই শিখে যায়। ওভারঅল ভালো কবিতার পাঠক আমি। নিজের পাণ্ডুলিপির ক্ষেত্রে অনেকখানি নির্লিপ্ত হতে পারলে নির্ণয় সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা তো সেটা পারি না। আমার উপলব্ধি এটাই, কবিতা পড়ে ভালো লাগা, না-লাগা আদতে কোন্ মানসিক পরিস্থিতিতে পড়া হচ্ছে সেটাই মূল বিবেচ্য। যে কবিতা আগে পড়ে ভালো লাগেনি, পরে আবার সেই একই কবিতাই ভালো লাগছে। এমন তো হামেশা হয়। সব লেখাই কারো না কারো সাথে সংযোগ স্থাপন করে। ফলে আমি নিজের পাঠের অভিজ্ঞতাকে এখন গুরুত্ব দিই। নিজেই নিজের কবিতার পাঠক হয়ে যাই। তাছাড়া একটা দরজা বন্ধ হলে অন্য কোথাও আরেকটা দরজা খুলে যায়। আমি তাতে আস্থা রাখি। খেয়াল রাখি এমন আঙ্গিক ও বিষয়গত দিক থেকে সবরকম কবিতার সমন্বয় রাখতে যাতে পাঠকের একঘেয়ে না লাগে।

রনক
আচ্ছা… এবং সময়ের সাথে সাথে আপনার কবিতার টেক্সটেরও সমৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো, দৃশ্যকল্পের আবহগুলোও উল্লেখযোগ্য। কবিতার অভ্যন্তরীণ এই অলঙ্কার-চিন্তা নিয়ে আপনার ভাবনাগুলো শুনতে চাই। কবিরা হয়ত নিজেদের কবিতার টেকনিক সবাইকে বলেন না, তবু, যতটা বলা সম্ভব। অন্যরা উপকৃত হবে আশা করি।

রিমঝিম
সবটা আমার চেতনে হয় এমনটা না। ঠিক করে বলতে পারব না। একজন বলেছেন- “নিজের বুকে কান পাতুন। নিজেকে বুঝুন, তারপর লিখুন।’ আরেকজন বলেছেন- “কবিতা আড়াল দাবি করে।’ আমরা তো যাত্রাপথে কত কী শিখি! এই দুটি টেকনিক আমি মেনে চলি। সেটা সবার ক্ষেত্রে কাজ নাও করতে পারে। মানে, যা বলছি কিন্তু তা বলছি না। সব বলে ফেললেই তো খেল খতম! পাঠকের জন্য একটা ইন্দ্রজাল তৈরি করা যায় তো! কেননা মানুষ মাত্রই আবিষ্কার করতে ভালোবাসেন। আমি কবিতায় সে পথটা, সে ভাবনার পরিসরটা তৈরি করে দিতে চেষ্টা করি। বাকি কথা কবিতাই পাঠকের সাথে বলবে। আমি কেউ না তখন।

রনক
কী মনে হয়, আমাদের জীবন যে আধুনিকতায় পৌঁছে গেছে, আমাদের কবিতাও কি ততটা আধুনিক হয়ে উঠতে পেরেছে? নতুন কী হচ্ছে বাংলা কবিতায়?

রিমঝিম
আমি সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী। বই পড়ে জেনেছি, সমাজের বিবর্তন অনেক মন্থর। সেটা একটু দূরে গিয়ে টের পাওয়া যায়। মানে, দিনরাত্রির মতো দ্রুত নয়। সবকিছু সময়ের সাথে বদলাচ্ছে। আগে তো চিঠি লিখতাম, সে চিঠি প্রাপকের হাতে পৌঁছে, ফেরত ডাকে উত্তর পেতে অনেক সময় লেগে যেতো। তার মাঝে কত অপেক্ষা, কত উত্তেজনা, আবেগ, জন্ম-মৃত্যু বয়ে যেতে পারে। হস্তাক্ষর দেখে, পড়ে অনেককিছু কল্পনা করে নিতাম। মননে কত গল্প তৈরি হতো। আর এখন নিমিষেই সব ফকফকা। কত দ্রুত আবেগ পৌঁছে যাচ্ছে। অত কল্পনার সুযোগ নেই। সময়ের ব্যবধানেই তো? তেমনি করে কবিতার ভাষাও বদলেছে, হয়তো সে বদলটা এনালগ থেকে ডিজিটাল হয়ে যাবার মতো না হলেও অনেকখানি। সময়ের ছাপ পড়েই। বাংলা কবিতার বদলটাও আরেকটু দূরে গিয়ে, ওপর থেকে দেখার আছে বোধহয়। চিন্তার জগতে বদল ঘটলে, অভিজ্ঞতা-অভিজ্ঞানে বিজ্ঞ হলে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসলে কবিতার ভাষাও বদলে যায়। আমাদের এই জেনারেশন একটা ক্রাইসিসের মধ্যে আছে। একটা চক্করে ঘুরে যাচ্ছে। সে চক্করটা সময়ের। হাওয়া বদলের। গত বিশ বছরে পৃথিবী বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে এত দ্রুত বদলে গেছে যে মানুষের মধ্যে একটা দিশেহারা অবস্থা তৈরি করে দিয়েছে। তারপর করোনা মহামারী এসে আরো অস্থির করে দিয়েছে। ফলে খেই হারিয়ে ফেলাটা স্বাভাবিক। খেয়াল করে দেখবেন সে অস্থিরতা কবিতায়ও দৃশ্যমান। আমরা ওই যুগের মাথা আর এই যুগের লেজ ধরে ঝুলছি। পথটা নির্দিষ্ট হলেই গড়গড়িয়ে চলবে।

 


আমি মৃত্যুকে এক হাতে রেখে অন্য হাতে জীবনের হাত ধরে আছি। মরতে দ্বিধা নেই, ভয় নেই। গত ছয় মাসে অসংখ্যবার নিজের মৃত্যুকামনা করেছি। কিন্তু আত্মহত্যার সাহস করতে পারিনি। কারণ, সব ছাপিয়ে আমি একজন মা। স্বেচ্ছামৃত্যুর কথা ভাবলে সন্তানের মুখটা ভেসে ওঠে।

 

রনক
একদম… গতানুগতিক প্রশ্ন, কবিতায় বা যে কোনো শিল্পেই, প্রেম একটি বিশেষ অংশ। আপনার কবিতাতেও দেখতে পাই প্রেমের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। আপনার কাছে প্রেম কী? ব্যক্তিপ্রেম ও সামগ্রিক প্রেম?

রিমঝিম
প্রেম সে-ও এক অভ্যাস। বিনাচর্চায় মন ছেড়ে পালিয়ে যায়। তার মানে, প্রেমও মানুষের চর্চায় বাঁচে, সজিব থাকে। অন্য সবকিছুর মতো এটাও একটা মানবিক অনুভূতি। নানা সময়ে প্রেমের চক্করে পড়ে মানুষ। আমিও পড়েছি। যুগলেই প্রেম- তাই যদি হয় সে প্রেম আমার হয়নি। প্রেমে পড়া মানে তো প্রেমে সক্রিয় হতে হবে এমন নয়। সক্রিয় হতে দুজন লাগে। আমার ক্ষেত্রে মনে প্রেমানুভূতি জাগলেই হলো। তাকে লালন করার, যত্ন করার প্রক্রিয়া তো ব্যক্তির নিজের ওপর বর্তায়। আমি প্রেমে পড়েছি বারবার। প্রকাশও করেছি। কাছে গিয়ে দেখেছি, আমি যার প্রেমে পড়েছি, সে তো সে নয়! সবখানেই ত্রুটিপূর্ণ মানুষ। কল্পনার যে প্রেমিক সে অধরা, সে সর্বদা সুন্দর। তার সাথেই তো আমার প্রেম। নিজের মনে সে প্রেমের বিস্তার ঘটিয়েছি। তার প্রভাব পড়েছে কবিতায়। আর সে প্রেম ঐশ্বরিক। এমন প্রেমিকের দেখা একজনমে মেলে? মিললই না যদি সে থাকে, কল্পিত প্রেমে, বিরহে-দহনে। এই প্রেম ব্যক্তিকে ছাপিয়ে উড়ুক্কু মাছ হয়ে গেছে কবে! কখনো কখনো সে কবিতায় এসে চুমু খায়। এটুকুই!

রনক
মৃত্যুচিন্তা আপনাকে প্রভাবিত করে?

রিমঝিম
আমি মৃত্যুকে এক হাতে রেখে অন্য হাতে জীবনের হাত ধরে আছি। মরতে দ্বিধা নেই, ভয় নেই। গত ছয় মাসে অসংখ্যবার নিজের মৃত্যুকামনা করেছি। কিন্তু আত্মহত্যার সাহস করতে পারিনি। কারণ, সব ছাপিয়ে আমি একজন মা। স্বেচ্ছামৃত্যুর কথা ভাবলে সন্তানের মুখটা ভেসে ওঠে। এত শোকের ভার নিয়ে বেঁচে থাকা বড়ো কষ্টকর। কিন্তু জীবন তো ভারবাহী ঘোড়া, খোঁড়াতে খোঁড়াতেও চলে। দমে না। বাঁচার আনন্দ না থাকলে মৃত্যুকে মনে হয় এক শান্ত সমাহিত নদী। তার জলে গা ভাসাতে প্রায়শই ইচ্ছে করে। মৃত্যু আসুক তার অমোঘতা নিয়ে। শান্ত হয়ে যাক সব। তৈরি হয়ে আছি।

রনক
মৃত্যু তো আসবেই, চাওয়া না চাওয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন ভঙ্গিতেই সে আসবে। মৃত্য প্রায় সবদিক থেকেই একটা সুন্দর অংশ, নিজের জীবনের। কিন্তু আত্মহত্যা প্রসঙ্গে যদি যাই, আত্মহত্যা যে করে তার মানসিক অবস্থা হয়তো আশাবাদের পক্ষেই থাকে না। তবু, আত্মহত্যা জগতের কাছে পরাস্ত হওয়ার বার্তা দেয় কি-না? যেহেতু আগামীকাল কী ঘটবে আমরা জানি না, কিংবা এক মুহূর্ত পরই কী ঘটবে তাও জানি না। সুতরাং সম্ভাবনা তো থাকেই। একটু সাহস করে তাকালেই অনেক সম্ভাবনা চোখে পড়তে পারে। জীবন কি শুধুই নিজের চাওয়া মতো হতে হবে, নাকি চাওয়া থাকবে কিন্তু পাওয়াটাকে মেনে নিয়ে এগোতে পারাই জীবন?

রিমঝিম
তা তো বটেই! জীবনের পথে পথে কত আত্মহত্যার কারণ ঘটেছে! তারপরও জীবনকে জীবনের মতো ছেড়ে দেওয়া শিখেছি। হয়তো কোনও শিক্ষাই শেষ অব্দি স্থায়ী নয়। কত আগামীকাল কেটে যায়, সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে আলো আসে না। সেটাও আপনি হয়তো সয়ে নেবেন। তারপর? কখনো কখনো তাবৎ স্থিতি নষ্ট করে প্রলয়ঙ্করী ঝড় আসে, প্রিয়জন হারানোর ব্যথা আসে। যে বা যারা বেঁচে থাকার পথে অনিবার্য তাদের হারাতে হয়- তখন ফের জগতে অন্ধকার নামে। মানুষের বাঁচার আশা হারিয়ে যায়। আবার আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগে। মানুষ তো মরতে চায় না। তবু মরে যায়, কখনো সেটা স্বেচ্ছায়। হয়তো এই হতাশা এত জীবননিবিড় হয় যে, পেরে ওঠে না। আবার ক্লিনিক্যাল বিষণ্ণতার কাছেও মানুষ হাল ছেড়ে দেয়।

আত্মহত্যা শুধু একটা মানুষের মৃত্যু নয়, একটি পরিবারের স্বপ্নের, আশার মৃত্যু। এই যে মানুষটি চলে যায়, এটা হয়তো তার একার সিদ্ধান্ত, কিন্তু এ ঘটনায় আক্রান্ত হয় তার পরিবার-পরিজন, কাছের প্রতিটি মানুষ। অনেক উত্তরহীন প্রশ্ন, গভীর শূন্যতা আর অশান্তি নিয়ে তারা আজীবন বেঁচে থাকে। একদিকে হয়তো কোনও মানুষ আত্মহত্যা করছে, আবার অপর দিকে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আরেকটা মানুষ বাঁচার জন্য লড়ে যাচ্ছে। আমি তবু আশার পক্ষে, লড়ে যাওয়ার পক্ষে। জেদ চেপে বসে- ভাবি, বাজি ধরে দেখি, কে হারে! অন্ধকার চিরকাল থাকবে না। আলো আসবেই। ঝড় পেরিয়ে যায়। পেরিয়ে যাওয়ার পথে দাগটুকু রেখে যায়। মানুষের সেটুকু মনে থাকে। সে দাগ বড় কঠিন। কিন্তু আশাবাদী মানুষ কঠিনের সাথে লড়ে।

 


আমাদের দেশে নানা ফর্মে, অনেক নীরিক্ষাধর্মী কাজ হচ্ছে। তার মধ্যে ছন্দে লেখার প্রবণতা যেমন আছে, তেমনি আছে ছন্দকে অস্বীকার করার প্রবণতাও। কবিতায় উচ্চস্বর, স্লোগানমুখর প্রবণতা ছাপিয়ে অন্তর্মুখিতা যেমন আছে, তেমনি বেশকিছু আড়াল ছাপিয়ে সরাসরি বলার ব্যাপারটাও আছে। তেমনি কবিতাকে ইসলামিকরণের প্রবণতাও চোখে পড়ে।

 

রনক
এই দেশে কবি হিসেবে বেড়ে উঠতে গেলেও জীবনের সব রকম বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। যেন পরিবার, সমাজ ও বাস্তবতার কাছে কবি এক নিষিদ্ধ জীবন। কাছে-কিনারের সকলেই যখন জাগতিক সুখ সমৃদ্ধির স্তর পেরোচ্ছে, একজন কবি তখন একটা কবিতার ভাব মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন ডুবে আছেন। জাগতিক অনেক সুযোগ হেলায় হারাচ্ছেন। এরকম মানুষদেরকে/ কবিদেরকে সমাজ কতখানি স্থান দেয়? আপনার কবি জীবনের বিপক্ষে বাধগুলো কীরকম? এর মোকাবেলা কীভাবে করেন?

রিমঝিম
কবি তো সবার আগে একজন মানুষ। মানুষের সমাজ আছে, পরিবার আছে, ক্ষুধা আছে, দায়িত্ব আছে। সমাজে-রাষ্ট্রে টিকে থাকার লড়াই আছে। আর তেমন এক মানুষের ওপর যদি কবিত্ব ভর করে তাহলে সে জীবন বড় দুর্বিষহ। কবির জীবন বড় আত্মঘাতী। একটা কবিতাময় যাপন না পেলে লড়াইটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আবার কবি যদি নারী হয়, তবে তার লড়াই চার গুণ। কারণ এই সমাজে পুরুষের স্বীকৃতিতেই নারী কবি হতে পারে। এমনই তো চোখে পড়ে আজকাল! কিছু কিছু নারীও সে স্বীকৃতির জন্য লালায়িত। নিজের লেখার চেয়ে পুরুষের স্বীকৃতির দিকে ফোকাস বেশি। আমি চিরকাল দলের বাইরে চলা মানুষ। এখনো অনেক পথ বাকি। জার্নি চলমান। নিজের লেখাটাই লিখি। জানি, দিনশেষে কাজটাই থাকে, আর কিছু না। পিতৃতন্ত্রকেই আমার নারীর বাধা মনে হয়। একটা নির্দিষ্ট ছকের বাইরে গেলেই সর্বনাশ’ বলে সমাজ চেঁচিয়ে ওঠে। নারীকে ধর্ম দিয়ে, পর্দা দিয়ে, সংসার দিয়ে, সন্তান দিয়ে যতটা বেঁধে রাখা হয়, এবং যতখানি মহান করে তোলা হয়, তা কি কবিতা যাপনের জন্য অনুকূল? এই ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে একজন মানুষের স্বেচ্ছা-স্বাধীন জীবন কাটানোর সুযোগ কতজন নারীর আছে!

রনক
চমৎকার বললেন… এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই, বাংলাদেশের কবিতা সম্পর্কে আপনার ভাবনা কীরকম? পশ্চিমবঙ্গের কবিতার তুলনায় এদেশের কবিতা ও এর চর্চার অবস্থান কীরকম বলে আপনি মনে করেন?

রিমঝিম
এটা বলার মতো আমি এখনও কেউ হয়ে উঠিনি। তবে যেহেতু আমি কবিতার পাঠক, তাতে মনে করি- দুই বাংলায়ই কমবেশি ভালো কবিতা লেখা হচ্ছে। আমার পাঠের পরিসর যতটুকু তাতে বলতে পারি, আমাদের দেশে নানা ফর্মে, অনেক নীরিক্ষাধর্মী কাজ হচ্ছে। তার মধ্যে ছন্দে লেখার প্রবণতা যেমন আছে, তেমনি আছে ছন্দকে অস্বীকার করার প্রবণতাও। কবিতায় উচ্চস্বর, স্লোগানমুখর প্রবণতা ছাপিয়ে অন্তর্মুখিতা যেমন আছে, তেমনি বেশকিছু আড়াল ছাপিয়ে সরাসরি বলার ব্যাপারটাও আছে। তেমনি কবিতাকে ইসলামিকরণের প্রবণতাও চোখে পড়ে। এসব ইতিবাচক কি নেতিবাচক সে সিদ্ধান্তে আমি যাব না। তবে এত বেশি এই চর্চা বেড়ে গেছে যে, কবিতা একটা সুপরিকল্পিত প্রকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। অনেকে মিলেই যেন একটা কবিতা লিখছে।

আবার ওপার বাংলায় এই অস্থিরতা কম। তাদের কবিতার ইতিহাস, ধারাবাহিকতা, বহমানতার মধ্য দিয়েই এর একটা স্থির পরম্পরা আছে। তা সত্ত্বেও এখন তো ইন্টারনেটের যুগ। ফেসবুক, ব্লগ ইত্যাদি আমাদের অনেকখানি কাছাকাছি এনে দিয়েছে। ফলে দুই বাংলায়-ই ভালো, মেধাবী কবিরা একটা পরস্পরের ওপর প্রচ্ছন্ন প্রভাব ফেলে। এটা অনুচ্চারিত বিনিময়। যে কোনো ভালো লেখাই সীমানা ডিঙিয়ে প্রভাববিস্তারী। এড়ানো যায় না।

যে যার টেস্ট বুঝে রাঁধুক, যে যার স্বাদ বুঝে বেছে খাবে। সময়ই তো বলবে শেষ কথাটা। আমি কোন ছার!

রনক
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পশ্চিমবঙ্গের বইয়ের প্রবেশ নিয়ে দুই পক্ষের একটিভিস্টদের নানান মত ও মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। এ সম্পর্কে আপনি কতটা অবগত? আপনার বক্তব্য কী?

রিমঝিম
কোলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায় বাংলাদেশের জন্য যদি একটা প্যাভিলিয়ন থাকতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে কেন তাদের জন্য একটা প্যাভিলিয়ন রাখা যাবে না? তাতে তো সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়ে। পরিসর তৈরি হয়। হ্যাঁ, আমরা বলতে পারি, এটা আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ। অমর একুশে বইমেলা একান্তই আমাদের, এখানে অন্য দেশের অধিগম্যতা চাই না। সে ক্ষেত্রে বছরের যে কোনো নির্দিষ্ট সময় একটা আন্তর্জাতিক বইমেলার প্রস্তাব রাখা যেতেই পারে। আমরা পশ্চিমবঙ্গের বই তো পড়ি, এবং দ্বিগুণ দামে কিনে পড়ি। তাহলে তাদের মেলায় অংশগ্রহণে আমাদের আপত্তি কেন? আমি তাতে বরং আমাদেরই লাভ দেখি।

 


আমি যেখানে বেড়ে উঠেছি, সেখানে এত এত গল্প ছড়িয়ে আছে যে, যা ধারণ করতে হলে বৃহৎ পটভূমিকার দরকার। উপন্যাস ছাড়া এতগুলো জীবনকে একত্র করার আর কোনো মাধ্যম নেই। ফলে উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছিলাম।

 

রনক
কবি রিমঝিম আহমেদ কতটা রাজনীতি সচেতন?

রিমঝিম
মানুষ মাত্রই রাজনৈতিক জীব। এরিস্টটল বলেছেন। সচেতন মানুষ মানেই তার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতাও থাকবে খুব স্বাভাবিক। কবি রিমঝিম আহমেদ যেহেতু নিজেকে সচেতন দাবি করে, রাষ্ট্রযন্ত্রের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলে, রাজপথে বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার হয়, ভোটাধিকার প্রয়োগ করে, নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সেহেতু অতি-অবশ্যই সে রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি।

রনক
চারটি কবিতাগ্রন্থের পর ২০২০-এ বাতিঘর থেকে বের হয় আপনার প্রথম উপন্যাস ‘বিস্ময়চিহ্নের মতো’। কথাসাহিত্যে কদম ফেলার গল্পটা শুনতে আগ্রহী। এ নিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা রয়েছে?

রিমঝিম
তেমন পরিকল্পনা করে কিছু নয়। আমি যেখানে বেড়ে উঠেছি, সেখানে এত এত গল্প ছড়িয়ে আছে যে, যা ধারণ করতে হলে বৃহৎ পটভূমিকার দরকার। উপন্যাস ছাড়া এতগুলো জীবনকে একত্র করার আর কোনো মাধ্যম নেই। ফলে উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছিলাম। এই উপন্যাসটা আমি লিখতামই। জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এটা আমাকে লিখতে হতো। পাঁচ বছর সময় নিয়ে “বিস্ময়চিহ্নের মতো’ লিখেছি। এর মাঝে পাঁচ বছর কেটে গেল। ওটা যেখানে শেষ করেছি, ঠিক সেখান থেকে নতুন উপন্যাসের শুরু। দ্বিতীয়টাও বলা যায় সিক্যুয়েল। মন স্থির হলে চলতি বছরেই শেষ করা যাবে আশা রাখি।

রনক
সাহিত্য পুরষ্কার নিয়ে আপনার চিন্তা কীরকম?

রিমঝিম
পুরস্কার ভালো লাগে, কারণ এর একটা অর্থমুল্য আছে। আরও ভালো লাগতো যদি বই জমা দেওয়ার ব্যাপার না থাকতো! আমার অর্থের দরকার আছে। কিন্তু বই জমা দেবার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে অর্থের আকাঙ্ক্ষা সামলে রাখি। তাছাড়া পুরস্কার পেলেই তো মুখে আলো পড়ে। আমার আলোতে অসুবিধা আছে। অন্ধকারে স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। নিজের মতো থাকা যায়।

রনক
বিতর্কিত প্রশ্ন, আপনার সমসাময়িক পাঁচজন প্রিয় কবি?

রিমঝিম
এটা খুব কঠিন। অনেকের কবিতা ভালো লাগে। কিন্তু নাম নিলেই বিপদ। গোত্রের ট্যাগ লাগিয়ে দেবে। গোত্রের বাইরে থাকার জন্য একটু চালাকি করতে চাই এখানে। তাই প্রশ্নটা স্কিপ করলাম।

রনক
হা হা… বেশ… শেষ প্রশ্ন, লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

রিমঝিম
কবিতা যতদিন আমাকে চায়, তাকে আদর করে বসতে দেবো।

স্বপ্ন দেখি, আমার দুয়েকটা উপন্যাস, গোটা দশেক গল্প, একটা চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য আর শিশু সাহিত্য নিয়ে খানিকটা কাজ থাকবে। বেঁচে থাকলে এসব করতে চাই। জীবন তো আমার সব কেড়ে নিল। এই যে বেঁচে আছি, তাকে নিয়ে কী করবো যদি অর্থময় না করতে পারি! আরেকটা ইচ্ছে আছে, কিছু অর্থের যোগান হলে ভারতবর্ষ ভ্রমণ করবো। তারপর একটা ভ্রমণ কাহিনি লিখব। ব্যস!

রনক
আপনার সব স্বপ্ন পূরণ হোক, সাহিত্য-জীবন সার্থক ও সুন্দর হোক। অনেক প্রশ্নই করে ফেললাম, এতটা সময় দেবার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ!

রিমঝিম
আপনিও এতটা আন্তরিক না হলে আমার পক্ষে খোলাখুলি আলাপ করা সহজ হতো না। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

শেয়ার