মিয়ানমার
মাছেদের আমি জাতকের পাঁচশ গল্প শোনালাম
জলপুরিতে মাৎস্যন্যায় তবু বন্ধ হলো না!
লাল কাঁকড়া
সাগর পাড়ের বালু তীরে লাল কাঁকড়াকে অসহায় মনে হয়,
কাঁকড়ার পিছে হেঁটে জেনেছি প্রতিটা কাঁকড়ার নিজস্ব গর্ত আছে
জলে ধোয়া সমতলে তাদের ধরতে গিয়ে দেখেছি হঠাৎ নাই
বস্তুত কেউ অসহায় নয় জল আর মাটির সংস্পর্শে
ডুবোচর জেগে ওঠে ভাটায়, বিকেলে রোদে সেই চরে
খণ্ড খণ্ড হৃদপিণ্ডের মতো ছুটে যায় লাল কাঁকড়া,
স্পন্দন আল্পনা হয়ে পড়ে থাকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে
বালিহাঁস
বালিহাঁস, ডুব দিয়ো না জলে
রঙিন মাছের প্রাণ আমার— হাঁটছি ডুবোচরে
জলে ভাসো, ভাসো মনের সুখে
ভাটার সময় চলে যাব আরো দূর সাগরে,
তোমার ডানায় তবে নিবে আমায়
বলো, ঠোঁট দিবে না গায়
বালিহাঁস থাকবে বলো
এই জল যমুনায়!
পাতালপুরীর গল্প শোনাবো তোমায় রোজ
তুমি দিবে দূর আকাশের চান-তারার খোঁজ
বালিহাঁস উড়ে যাবে, উড়ো প্রাণ বুঝি থাকে না জলে!
আবার শীতের কালে তবে এসো পাখি
তোমার পালক রাখলাম এইখানে বালি দিয়ে ঢেকে —
যত্নে রেখো পায়ে এই শ্যাওলা লতার রাখী!
কী আশায় এসেছিলে উত্তমাশায়
তোমার নোঙর ফেলা শব্দে
উড়ে গেল পাখি —
জেব্রার পালে লেগে গেল হুলস্থূল,
বনমানুষের মন ভেঙে গেল
এইখানে দিগন্ত জুড়ে ছিল স্বপ্ন —
ঘাসের ডগায় ছিল ছটফটে ফড়িং;
প্রজাপতি বসন্তের বার্তা বয়ে এনেছিল,
সিংহীর কোলে ছিল ফুটফুটে শাবক —
জিরাফের প্রাণপণ দৌড় দেখে
দলছুট হয়েছিল পিগমি হরিণ
কী আশায় এসেছিলে উত্তমাশায়
তোমার নোঙর ফেলা শব্দে
উড়ে গেল পাখি!
অন্তরীপের এ কোরাল বনে ঢেউ ছিল না
কোনো ঢেউ ছিল না —
শীতল বালুর বিছানায় ছিল ঘুমন্ত ঝিনুক,
শুশুকের স্তনে চুকচুক করছিল শিশু
অন্তরীপের কোনো দুঃখ ছিল না।
নথি
গামা এসেছিল ভারতে
এমৃকায় কলম্বাস
কবে কোন সনে
সব নথি পাওয়া যায় —
জানা যায়নি শুধু
কোন চিল প্রথম
পাড়ি দিল আটলান্টিক…
নুহের নৌকায়
মহাপ্লাবনের দিনে নুহের নৌকায়
তুমি আর আমি ছিলাম মানব-বীজ,
আমাদের প্রেমে সিক্ত হয়ে
পৃথিবীতে কেটে গেল মানুষের
আজ কত কত বছর।
মেঘনা
মিঠা পানি নোনা হয়ে গেল
নদী ভেঙে সাগর আসলো তীরে
তীর ভেঙে একদিন নদী এসেছিল,
ঘাটবাধা পুকুর ভেঙে
মুক্তির মিছিলে শ্লোগান তুলে কচুরি
সাগরের জলে ভবঘুরে হয়ে গেল —
একটা গাছের গুঁড়ি ভেসে ভেসে
ভুলোমনা বালিকার কাছে এসে
কুমিরের চোয়াল দেখাল
নদী ভেঙে সাগর হলো
উড়ে গেল ছৈ নৌকার পাল,
রাজহাঁস কী আর ডাঙায় ফিরল!
নাকি থেকে গেল জলে, জল ভালোবেসে —
‘মেঘনা’ নদীর কোনো নাম না
সাগরের ফুসফুসে দম নেয় সে!
নিঃশ্বাস
ডাহুক একশ একবার ডেকে গলা থেকে রক্ত ঝরায়, থামে।
নৌকা ডুবে মরা মানুষের চিৎকারগুলো যেন ডাঙায় আসে —
বেহালার তার ছিড়ে; মানুষের অন্তিম স্বর গাঁথা যায় না যন্ত্রে,
এমন দীর্ঘ সংগীত শেষ কবে গেয়েছে কে কোন মরণের আগে!
সীসা হয়ে বাতাস মাটিতে লুটে পড়ে, শুধু বিচ্ছেদের গানে
চারদিক থমথমে — জলাভূমি থেকে সেই গান একবার এসে
গাছের পাতায় স্বরলিপি এঁকে আমাদের নিঃশ্বাস হয়ে গেছে।
দম
বাতাসের কাছে নিঃশ্বাসের হিসাব বুঝিয়ে
মানুষ মাটির কাছে ফিরে
নিঃশ্বাসগুলো ঝড় হয়ে বয়ে চলে সমতলে
প্রতীক্ষায়
চোখের বড়শি ফেলে ঘাই মারা জলে
নিশ্চুপ এক বক বসে আছে ডালে —
হেলেঞ্চা বনে ফড়িঙের দৌড় ঝাঁপ
কোমরে নাচন তোলে পানক সাপ
টুপ করে জলে নামে এক কাছিম,
তবু তার চোখে কত রাজ্যের ঝিম!
স্থির বসে আছে সেই মরা ডালে
চোখের বড়শি ফেলে ঘাই মারা জলে
নিজাম বিশ্বাস
জন্ম ঃ ১৯৮৬; মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল।