গাসান কানাফানি : তাঁর শৈশব, সাহিত্য, মার্ক্সবাদ, দ্য ফ্রন্ট ও আল- হাদাফ
গাসান ফায়েজ কানাফানি ফিলিস্তিনের বিখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা। তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালের ৮ এপ্রিল ফিলিস্তিনে; ইসরায়েলি গোয়েন্দাসংস্থা মোসাদ তাঁকে লেবাননের বৈরুতে গুপ্তহত্যা করে ১৯৭২ সনের ৮ জুলাই। মাত্র ৩৬ বছরের জীবনে তিনি সাহিত্য ও জন্মভূমির স্বাধীনতা আন্দোলনে এমন ভূমিকা রেখেছেন যে, আজও তিনি ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্যা লিবারেশন অভ প্যালেস্টাইনের সম্মুখসারির নেতা ছিলেন। এই সংগঠনের পত্রিকা আল-হাদাফের সম্পাদনা পর্ষদে কাজ করেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। Men in The Sun (1962), All That’s Left to You (1966), Umm Sa’ad (1969), Return to Haifa (1970) তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এই সাক্ষাৎকারটি গাসান ফায়েজ কানাফানির দেওয়া প্রথম প্রকাশিত সাক্ষাৎকার। জুলাই ১৯৭৪ সনে প্যালেস্টিনিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইস্যু ৩৬)-এ, সাক্ষাৎকারটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল (মূল সাক্ষাতকারটি রোমানে আরবীতে প্রকাশিত হয়)। কানাফানির সাহিত্যে বিশেষজ্ঞ, একজন সুইস লেখকের সাথে, কানাফানির একান্ত ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সম্পূর্ণ পাঠ্যটি প্যালেস্টিনিয়ান অ্যাফেয়ার্স-এর অধিগত। কানাফানি হত্যার অর্ধ-শত বার্ষিকী স্মরণে, গত বছর সাক্ষাৎকারটি প্যালেস্টাইনিয়ান প্রিজনার সলিটারি নেটওয়ার্ক-এর অনলাইন মূখপত্র samidoun-এ আবারও প্রকাশিত হয়। এই বিশেষ সংখ্যার জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় ভাষান্তরিত করেছেন কবি, সংস্কৃতি ও সংবাদকর্মী তানজিনা নূর-ই সিদ্দিকী।
আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার সামনে বসে থাকা বাচ্চাদের দিকে না তাকিয়েই, যে তারা কখনোই একটি আপেল অথবা একটি কলা দেখে নাই
গাসান, আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন?
আমি মনে করি আমার গল্পে ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যগত পটভূমির প্রতিফলন প্রগাঢ়। আমি ফিলিস্তিন ত্যাগ করেছিলাম এগারো বছর বয়সে এবং আমি একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী এবং আমি একটি ফরাসি মিশনারি স্কুলে পড়ছিলাম। হঠাৎকরে এই মধ্যবিত্ত পরিবারটি ধ্বসে পড়ে এবং আমরা শরণার্থী হয়ে যাই, আর আমার বাবা গভীরভাবে শ্রেণীসচেতন ছিলেন বলে অবিলম্বেই কাজ করা বন্ধ করে দেন। ফিলিস্তিন ছেড়ে আসার পরেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার ধারণাটি তাঁর কাছে অর্থবহ ছিল না। এই বিষয়টিই হয়ত তাঁকে তাঁর সামাজিক শ্রেণী পরিত্যাগ করে নিম্নশ্রেণীতে নামতে বাধ্য করেছিল। এটি সহজ নয়। যেমন আমরা, শৈশব ও কৈশোরে পরিবারকে সাহায্যার্থে কাজ শুরু করেছিলাম। আমি গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কাজের সুবাদে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সমর্থ ছিলাম, সেখানে পড়ানোর জন্য কোনো উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন ছিল না। এই শুরুটা ছিল সুসঙ্গত, যেহেতু আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছি এবং এর মাঝেই আমি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উৎরে গেছি। এরপরে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে (দামাস্কাস বিশ্ববিদ্যালয়) আরবী সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হই, তিন বছর পর, রাজনৈতিক কারণে আমি বরখাস্ত হই। তারপর, আমি কুয়েত চলে যাই, যেখানে ছয় বছরের জন্য স্থায়ী হয়েছিলাম। সেখানে আমি পড়তে ও লিখতে শুরু করেছিলাম।
১৯৫২ সনে আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু, যখন আমার বয়স চৌদ্দ বা পনেরো। সেই বছরেই, অথবা ১৯৫৩ সনে, দামাস্কাসে প্রথমবারের মতো আমার সাক্ষাত হয় ডক্টর জর্জ হাবাস-এর সঙ্গে। একটা ছাপাখানায় আমি তখন প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ করছিলাম। আমি স্মরণ করতে পারছি না, আল- হাকিম এর সাথে কে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু তাঁর সাথে তখন থেকেই আমার সম্পর্কের শুরু। আমি কালক্ষেপন না করে আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টে একটি পদে যোগ দেই এবং এভাবেই আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। কুয়েতে অবস্থানকালীন, রাজনৈতিকভাবে আমি আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টে সরব ছিলাম, বর্তমান কুয়েত সরকারে এটির একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু প্রতিনিধি। ১৯৬০ সনে আমাকে বলা হলো লেবাননে স্থানান্তরিত হয়ে পার্টির সংবাদপত্রে কাজ করার জন্যে। ১৯৬৭ সনে, আমাকে লিবারেশন অভ প্যালেস্টাইনের পপুলার ফ্রন্টের সঙ্গে কাজ করতে বলা হলো, যেটি আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের ফিলিস্তিনি শাখা। ১৯৬৯ সনে, আমি আল-হাদাফ সংবাদপত্রে কাজ শুরু করি, সেখানেই কাজ চালিয়ে যাই।
আরবী সাহিত্যে পড়ার সুবাদেই কি আপনি লেখালেখি শুরে করেছিলেন?
না, আমার মনে হয়, পড়াশোনা শুরুর আগেই আরবী সাহিত্যের প্রতি আমার উৎসাহ জন্মেছিল। আমার সন্দেহ, এই কৌতূহল একটা জটিল কিছুর ফল, যদি আমি ভুল না করি। আমরা ফিলিস্তিন ছাড়ার আগে, আমি একটি ফরাসি মিশনারি স্কুলে পড়ছিলাম, যেমনটা আমি আগে বলেছি। তাই, আরবী ভাষাকে আমি একজন এরাবের মতো করে অধিকার করি না। এর কারণে আমার অনেক ধরণের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমার বন্ধুরা সবসময় আমার সাথে মজা লুটেছে কারণ আমার আরবী ভালো ছিল না। ফিলিস্তিনে বসবাসকালীন এই ধারণাটি পরিষ্কার ছিল না আমার সামাজিক অবস্থানের কারণে। কিন্তু, যখন আমরা ফিলিস্তিন ছেড়ে এলাম, আমার বন্ধুরা ভিন্ন সামাজিক অবস্থানের ছিল এবং তড়িত খেয়াল করেছিল যে আমার আরবী দুর্বল এবং আমি অস্থানীয় অভিব্যক্তিনির্ভর ছিলাম, এবং যে কারণে আমার সমস্যা সমাধানের জন্য আমি আরবী ভাষার উপর মনোনিবেশ করেছিলাম। এটা সম্ভবত ১৯৫৪ সনের দিকে। আমার মনে হয় একটা দুর্ঘটনায় আমি পা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। আমাকে ছয় মাস বিছানায় থাকতে হয়েছিল। সেই সময়টাতেই আমি মন দিয়ে আরবী পড়তে শুরু করেছিলাম।
আমি মনে করি ইতিহাস থেকে আমরা অনেক উদাহরণ উদ্ধৃত করতে পারি যেখানে মানুষ যারা তাদের ভাষা হারিয়েছে এবং সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। আপনার কি মনে হয় যে এই প্রক্রিয়াটি একজন মানুষকে রাজনৈতিক মনন দেয়?
আমি জানি না। এটা হতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে, আমার ক্ষেত্রে, রাজনীতিকীকরণ হয়েছিল ভিন্ন পন্থায়। আমি অল্প বয়সে রাজনীতিতে জড়িয়েছিলাম কারণ আমরা ক্যাম্পে বসবাস করতাম। আর তাই, আমি সরাসরি ফিলিস্তিনিদের নৈকট্যে ছিলাম এবং তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে দুঃখ ও আবেগীয় পরিবেশের মধ্য দিয়ে, একটি শিশু হিসেবে অবলোকন করেছি। যে পরিবেশে আমি ছিলাম তার রাজনৈতিক শিকড় আবিষ্কার করা আমার জন্য কঠিন ছিল না।
আমি যখন শিক্ষকতা শুরু করি, ক্যাম্পে শিশুদের পড়াতে গিয়ে আমাকে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শ্রেণীকক্ষে কোনো শিশুকে ঘুমাতে দেখলেই আমি রেগে যেতাম। তারপর আমি কারণ খুঁজে পেলাম- এই শিশুগুলো রাতে কাজ করতো, সিনেমা হলে অথবা রাস্তায় এরা মিষ্টি অথবা চিউইং গাম বিক্রি করতো। স্বাভাবিকভাবেই, ক্লাসে তারা আসতো ক্লান্ত হয়ে। এইরকম পরিস্থিতি তৎক্ষণাৎ মানুষকে সমস্যার মূলে নিয়ে যায়। আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে বাচ্চাদের তন্দ্রাচ্ছন্নতা আমার প্রতি তাদের অবজ্ঞা অথবা শিক্ষার প্রতি অনীহার কারণে নয়, ঠিক যেমন একজন শিক্ষক হিসেবে আমার মর্যাদার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু এটি নিছকই রাজনৈতিক সমস্যার প্রতিফলন ছিল।
তাহলে আপনার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আপনার সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
হ্যাঁ, আর আমার মনে আছে, এটি একদিন সরাসরি ঘটেছিল। যেমন আপনি জানেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকল বিষয়েই পাঠদান করেন, চিত্রাঙ্কন, পাটিগণিত, ইংলিশ, আরবী ও অন্যান্য বিষয়াদিসহ। একদিন, সিরীয় সরকার অনুমোদিত সিলেবাস অনুযায়ী, আমি শিশুদের একটি আপেল ও একটি কলা আঁকা শেখানোর চেষ্টা করছিলাম, যেহেতু আমি সেখানে পড়াচ্ছিলাম, আমাকে পুংখানুপুংখভাবে বই অনুসরণ করতে হচ্ছিল। আর সেই মুহূর্তেই, যখন আমি ব্ল্যাকবোর্ডে আমার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করছিলাম এই দুইটা ছবি সবচেয়ে ভালো করে আঁকার, আমি বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেছিলাম, অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার, এবং আমার স্পষ্ট মনে পড়ে যে সেই মুহূর্তে আমার মনে হয়েছিল যে আমাকে কিছু একটা করতে হবে, কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার সামনে বসে থাকা বাচ্চাদের দিকে না তাকিয়েই, যে তারা কখনোই একটি আপেল অথবা একটি কলা দেখে নাই। তাই এই জিনিসগুলোর প্রতি তাদের কোন আগ্রহ ছিল না। এই দুইটি ছবির সাথে তাদের কোনো সংযোগ ছিল না। কার্যত, তাদের অনুভূতি আর ছবিগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক ছিল চাপিয়ে দেওয়া, ভালো কিছু নয়। এটি একটি সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল, আমার জীবনের অন্য সকল ঘটনার মধ্যে ঐ মুহূর্তটা পরিষ্কারভাবে মনে আছে। যার ফলশ্রুতিতে, বোর্ড থেকে আমি ড্রয়িংগুলো মুছে বাচ্চাদের বলেছিলাম ক্যাম্পের ছবি আঁকতে। কিছুদিন পরে, পরিদর্শক যখন স্কুলে এসেছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে আমি সরকার নির্ধারিত কর্মসূচী থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছি, যা প্রমাণ করবে যে শিক্ষক হিসেবে আমি ব্যর্থ। নিজেকে রক্ষা করার ব্যর্থতা আমাকে ফিলিস্তিনের দিকে নিয়ে যায়। এরকম ক্ষুদ্র পদক্ষেপগুলোই মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে যা তার পুরো জীবনকে চিহ্নিত করে।
ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে যখন আমি চিত্রিত করি, আমি মূলত তাদের গোটা দুনিয়ার দুঃখের প্রতীক হিসেবে দেখি
এ বিষয়ে বলতে চাই, আপনি যখন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন, এবং একজন সমাজতান্ত্রিক হিসেবে, শিল্পকে তখন আপনি সরাসরি যুক্ত করেন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বলয়ে। একটি আপেল ও কলা আঁকার মধ্য দিয়ে আপনি এই জায়গাটি স্পর্শ করেছেন। কিন্তু আপনার লেখার ক্ষেত্রে, এই কাজগুলো কি আপনার বাস্তবতা ও বর্তমান অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত, নাকি ঐতিহ্য (সাহিত্য) থেকে উদ্ভূত?
আমার প্রথম ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৬ সনে, যেটির নাম ছিল একটি নতুন সূর্য। গাজার একটি বালককে কেন্দ্র করে গল্পটির আবর্তন। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে এ যাবত লেখা সব গল্পগুলোকে যদি আমি পুনঃমূল্যায়ন করি, তাহলে আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে প্রত্যেকটি গল্প প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে আমার জীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিহি অথবা মজবুত সুতোর বাঁধনের মতো জড়িয়ে আছে। যাই হোক, আমার লেখার স্বাতন্ত্র্য তৈরি হয়েছে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সালের মাঝে, আরো সূক্ষ্মভাবে বললে, ১৯৬২ সনে। শুরুর দিকে, লিখছিলাম, ফিলিস্তিন স্বয়ং তার নিজের অধিকারের পথে অন্তরায়, পাশাপাশি ফিলিস্তিনি শিশুদের নিয়ে, ফিলিস্তিন নিয়ে লিখেছি একজন মানুষ হিসেবে, ফিলিস্তিনি স্বপ্ন নিয়ে, তাদের নিজেদের আলাদা অবস্থান আমাদের স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত পৃথিবীর বাইরে, লিখেছি ফিলিস্তিনের অনিবার্য তথ্য নিয়ে। তখন আমার কাছে স্পষ্ট হয় যে ফিলিস্তিনের মাঝে আমি সমগ্র মানবরূপ দেখেছি। ফিলিস্তিনি কোনো পরিবার সম্পর্কে যখন আমি লিখি, আমি আসলে তখন একজন মানব অভিজ্ঞতালুব্ধ হয়ে লিখছি। পৃথিবীতে এমন কোনো সংঘর্ষ নাই যা ফিলিস্তিনে সংঘটিত বিপর্যয়ে প্রতীয়মান হয়নি। ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে যখন আমি চিত্রিত করি, আমি মূলত তাদের গোটা দুনিয়ার দুঃখের প্রতীক হিসেবে দেখি। এবং আপনি বলতে পারেন যে আমার গল্পে ফিলিস্তিন সমগ্র বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে। সাহিত্য সমালোচকেরা এখন লক্ষ্য করবেন যে আমার গল্পেরা কেবল ফিলিস্তিন (ব্যক্তি) এবং তার সমস্যা ঘিরে নয়, বরং মানুষের মানবিক অবস্থাকে ঘিরে, যারা সেইসব সমস্যায় জর্জরিত।
আপনার সাহিত্যিক বিকাশ কি আপনার রাজনৈতিক বিকাশকে সঙ্গ দিয়েছে?
জ্বী। মূলত আমি জানি না কোনটা কার আগে। গত পরশু, আমি আমার গল্পের উপর নির্মিত একটি চলচ্চিত্র দেখছিলাম। আমি এই গল্পটি ১৯৬১ সনে লিখেছিলাম। এই সিনেমাটি আমি নতুন ভাবধারা নিয়ে দেখেছি, যেন আমি হঠাৎ করে আবিষ্কার করলাম যে প্রধান চরিত্রদের মাঝে বাক্যালাপ, তাদের চিন্তার ধারা, তাদের (সামাজিক) শ্রেণী, তাদের আকাঙ্ক্ষা ও তাদের শিকড় আমার রাজনৈতিক চিন্তনের উন্নত ধারণার প্রকাশ ঘটিয়েছে। তাই আমি বলতে পারি যে ঔপন্যাসিক হিসেবে আমার ব্যক্তিত্ব আমার রাজনৈতিক অভিনেতা পরিচয়ের চাইতেও মজবুত, অন্য কোনো উপায়ে নয়, এটি সমাজ সম্পর্কে আমার বিশ্লেষণ ও উপলব্ধিতে প্রতিফলিত হয়।
আপনার লেখায় কি আপনার সমাজের বিশ্লেষণ প্রতিফলিত হয় না কি আপনিও বিশ্লেষণে আবেগের প্রলেপ দেন?
আমার ধারণা, শুরুর দিকে আমার গল্পগুলোর ভিত্তি ছিল আবেগ। কিন্তু আপনি বলতে পারেন যে ষাটের দশকের শুরুর দিকে আমার লেখা বাস্তবতার প্রতিফলন হতে শুরু করে। আমার গল্পগুলোর বিশ্লেষণের অভাব আছে। তারপরও, গল্পের প্রধান চরিত্ররা যেভাবে অভিনয় করে, তারা সেটাই বর্ণনা করে, তারা যে সিদ্ধান্ত নেয়, যে সমস্ত কারণ তাদেরকে ওইসব সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে, সেই সিদ্ধান্তগুলোকে স্বচ্ছ করবার সম্ভাবনা, ইত্যাদি। যেমনটা আমি বুঝি, আমার উপন্যাসে বাস্তবতাকে আমি প্রকাশ করি, বিশ্লেষণহীন। এটা বলার মাধ্যমে আমি বোঝাতে চেয়েছি যে আমার গল্পগুলো (রাজনৈতিক মতামতের চাইতেও) অনেক বেশি উদ্দীপিত, যখন সিনেমার মধ্যে গল্পের চরিত্রগুলোকে অগ্রসর হতে দেখি, যেগুলো অনেক বছর আমি পড়িনি- আমি বিস্মিত হয়ে আমার চরিত্রগুলোর তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে সংলাপ শুনেছি (আবার) এবং সেই সংলাপগুলোর সাথে আমার লেখা সমসাময়িক রাজনৈতিক নিবন্ধগুলোর তুলনা করতে সমর্থ হয়েছি, এবং দেখেছি যে গল্পের প্রধান চরিত্ররা রাজনৈতিক নিবন্ধের চাইতে গভীর ও যথাযথভাবে বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করছে।
আপনি উল্লেখ করলেন ১৯৫৩ সনে যে দিনটিতে আপনি হাবাশ-এর সাথে সাক্ষাত করলেন সেদিনই আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট-এর সাথে আপনার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের শুরু। সমাজতান্ত্রিক নীতিকে আপনি তবে কখন আলিঙ্গন করেছিলেন (তখন)? আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট শুরুর দিকে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ছিল না।
না, তা ছিল না। আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট ঔপনিবেশিকতা, সাম্রাজ্যবাদ এবং প্রতিক্রিয়াশীল জনতার বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। সে সময় এর আদর্শিক কোন সূত্র ছিল না। যাই হোক, এই আন্দোলনটি বিদ্যমান বছরগুলিতে সমাজতন্ত্রের স্বকীয় ধারা গ্রহণ করেছিল। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধ সমাজতন্ত্রকে প্রেরণা দেয়, এটি যদি যুদ্ধের মাঝখানে লড়াই বন্ধ না করে এবং এটি যদি সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে মিত্রতা না করে। এরকম অবস্থা দাঁড়ালে সেই আন্দোলন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন হবে না। কিন্তু একজন যদি সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে (এটা স্বাভাবিক) তবে (সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধ) সেই আন্দোলন একটি সমাজতান্ত্রিক রূপ নেবে। আরব ন্যাশনালিস্টরা এই সত্যটি বুঝতে পেরেছিলেন ১৯৫০-এর দিকে। তারা বুঝেছিলেন যে তারা সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিততে পারবেন না যদি না তারা কিছু নির্দিষ্ট (সামাজিক) শ্রেণীর উপর নির্ভর না করেন: এই শ্রেণী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কেবল তাদের মর্যাদার জন্যই নয়, জীবিকা নির্বাহের জন্যও যুদ্ধ করে। আর এটিই সেই রাস্তা যা সমাজতন্ত্রের দিকে নিয়ে যায়।
কিন্তু আমাদের সমাজ ও আন্দোলন (দি আরব ন্যাশনালিস্ট ম্যুভমেন্ট) মার্ক্সবাদ ও লেনিনবাদ (নীতি), এবং এই অবস্থান সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের বৈরভাবের কারণে নয়, বরং আরব বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর ভুলের পরিণাম। যে কারণে ১৯৬৪ সালের আগে দি আরব ন্যাশনালিস্ট ম্যুভমেন্ট-এর জন্য মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ পরিগ্রহণ ভীষণ কঠিন ছিল। কিন্তু ১৯৬৭ সনে, বিশেষ করে জুলাইতে, দ্য পপুলার ফ্রন্ট মার্ক্সবাদ ও লেনিনবাদকে আলিঙ্গন করে, দি আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের মধ্যে সেটিই একমাত্র ফ্রন্ট। দি আরব ন্যাশনালিস্ট ম্যুভমেন্ট-এর নাম পরিবর্তন করে দ্যা সোশ্যালিস্ট লেবার পার্টি রাখে। ফিলিস্তিনীয় শাখার জন্য, এটির নাম ছিল দ্যা পপুলার ফ্রন্ট। অবশ্যই, এটি সমস্যার একটা সরলীকরণ ছিল। আমরা দ্যা আরব ন্যাশনালিস্ট ম্যুভমেন্টের মধ্যে থেকে তৈরি হয়েছি। এই মুভমেন্টে সবসময় তথাকথিত ডান ও বাম-এর মাঝে সংঘর্ষ লেগে থাকত। সব রাউন্ডেই, আমাদের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অবস্থান ও প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব (ডানপন্থীদের অবস্থানের তুলনায়) ভালো ছিল বিধায় বাম বিজয়ী হতো। ফলশ্রুতিতে মার্ক্সবাদ- লেনিনবাদ গ্রহণ করা হয়েছিল।
আমার ক্ষেত্রে, আমার এখন মনে পড়ছে না, ফ্রন্টের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব জন্ম নিয়েছিল তাতে আমার অবস্থান ডান অথবা বাম কোনদিকে ঝুঁকেছিল, কারণ তখন ডান ও বাম-এর মাঝে এখনকার মতো সীমানা আলাদা ছিল না, যেমনটা উন্নত রাজনৈতিকক্ষেত্রগুলোর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কিন্তু আমি বলতে পারি যে, দ্যা আরব ন্যাশনালিস্ট ম্যুভমেন্ট কিছু নবীন উপাদান যোগ করেছিল, আমিসহ, যারা পুরনো লোকদের কমিউনিজমের প্রতি সংবেদনশীলতা নিয়ে মজা করেছি। অবশ্যই, সে সময় আমরা কমিউনিস্ট/ সাম্যবাদী ছিলাম না এবং আমরা কমিউনিজমের পক্ষেও ছিলাম না। যাই হোক, কমিউনিজমের প্রতি আমাদের সংবেদনশীলতা প্রবীণদের তুলনায় কম ছিল। ফলতঃ নতুন প্রজন্ম আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে মার্ক্সবাদী- লেনিনবাদী আন্দোলনে পরিণত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এর প্রধান কারণ আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অধিকাংশ সদস্য দরিদ্র শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ বুর্জোয়াদের তুলনায় এদের সদস্য সীমিত ছিল। তারাও এই আন্দোলন চালিয়ে যান নি, যোগদানের দুই বছরের মধ্যেই তারা আন্দোলন ছেড়ে দেন। এই শ্রেণীর অন্য সদস্যরাও যোগ দিয়েছিলেন, তারাও তাদের পালা ছেড়ে দেন (অল্প সময় পরই)। কিন্তু দরিদ্র শ্রেণী, তারা অব্যাহত রেখেছিল, এবং দি আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টে তারা একটি প্রেসিং ফোর্স গঠন করেছিল।
মার্ক্সবাদ- লেনিনবাদ আপনি কবে পড়তে শুরু করেছিলেন? আপনার মনে পড়ে কী?
এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা গতানুগতিক নয়। প্রথমত, আমি সোভিয়েত লেখকদের অনুরক্ত ছিলাম এবং আছি। যাই হোক, তাদের প্রতি আমার প্রগাঢ় অনুরক্তি ছিল, যেটি মার্ক্সবাদ আর আমার মাঝে শীতলতা ভেঙ্গে দিতে সাহায্য করেছিল। এই উপায়ে, পড়াশোনা ও সোভিয়েত লেখকদের প্রতি অনুরাগের সূত্র ধরে আমি খুব অল্প বয়সে মার্ক্সবাদের সংস্পর্শে আসি। দ্বিতীয়ত, আমার বোনের বর একজন দীপ্যমান কম্যুনিস্ট নেতা ছিলেন। আমার বোন বিয়ে করেছিলেন ১৯৫২ সনে এবং আমার জীবনে বেড়ে ওঠার সময়টায় তাঁর বরের প্রভাব পড়ে। আমি যখন কুয়েতে গেলাম, সেখানে আরো ছয়জন নবীন মানুষের সঙ্গে একটা বাড়িতে ছিলাম, সেখানে পৌঁছানোর কয়েক সপ্তাহ পর, আমি জানতে পারি যে তারা কমিউনিস্ট সেল গঠন করছেন। তাই খুব অল্প বয়সেই আমি মার্ক্সবাদ সম্পর্কে পড়তে শুরু করেছিলাম। আমি জানি না, দ্যা আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের আবেগ পরিবেষ্টিত থেকে, সে সময়ে আমি কতটুকু ধারণ করতে পেরেছি। আমি যে সমস্ত বিষয়ে পড়েছি তা নিয়ে আমার বোধ বা উপলব্ধি আমি পরিমাপ করতে পারব না। যাই হোক, এই বিষয়বস্ত আমার জন্য অপরিজ্ঞাত কিছু ছিল না।
এগুলো প্রথমদিকের প্রভাব হতে পারে যা আপনার (শুরুর দিকের) গল্পগুলোকে এগিয়ে নিয়েছে (আপনার তৎকালীন রাজনৈতিক চেতনার সাথে সম্পর্কিত)। আমার মনে হয় সোভিয়েত সাহিত্য পাঠ এবং মার্ক্সবাদীদের সাথে যোগাযোগের প্রভাব আপনার লেখায় পড়েছে।
আমি মনে করি না এই বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। আমি মনে করি আমার লেখায় সবচেয়ে বড় প্রভাব বাস্তবতার: আমি যা দেখি, আমার বন্ধুদের অভিজ্ঞতা, আত্মীয়, ভাই ও বোন, এবং ছাত্র-ছাত্রী, ক্যাম্পে আমার দারিদ্র্য ও দুর্দশার সাথে বসবাস। এই কারণগুলোই আমাকে প্রভাবিত করেছে। হয়ত সোভিয়েত সাহিত্যের প্রতি আমার অনুরাগের কারণ ছিল যে এর প্রকাশ, বিশ্লেষণ, লেনাদেনা এবং বর্ণনার ধরণ আমি যা কিছু প্রত্যক্ষ করেছি, তাই। আমার মুগ্ধতা এখনও রয়ে গেছে, নিঃসন্দেহে। যদিও, আমি জানি না সোভিয়েত সাহিত্যের প্রভাব আমার লেখায় আছে কি না। আমি এই প্রভাবের ব্যাপ্তিও জানি না। আমি বরং বলব যে প্রথম প্রভাবক এটি নয়, বরং বাস্তবতাই। আমার উপন্যাসে চরিত্রগুলো বাস্তবতা থেকে অনুপ্রাণিত, যা আমাকে শক্তি দিয়েছে, এবং কল্পনার দ্বারা নয়। শৈল্পিক (সাহিত্যিক) কারণ থেকেও আমি আমার নায়কদের নির্বাচন করিনি। তারা প্রত্যেকেই ক্যাম্প থেকে, বাইরের কেউ নয়। যেমন আমার শুরুর গল্পগুলোতে শৈল্পিক চরিত্রগুলো, তারা সব দুষ্ট চরিত্রের। এবং এর কারণ (আমার অভিজ্ঞতা) কর্মক্ষেত্রে অধীনস্থদের সাথে। তাই জীবনই আমার লেখার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল।
সংবাদপত্রে কাজ করার চেয়ে তৃণমূলে কাজ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ
আপনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হয়েও শৈশবে সর্বহারাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।
জ্বী, অবশ্যই, আমার অতীত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঙ্গে যুক্ত কারণ সিরিয়াতে শরণার্থী হিসেবে যাওয়ার আগে আমার বাবা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এবং আমার পরিবারের শিকড়ের (শ্রেণী) সাথে সংযুক্তি বাস্তবতার চাইতে অনেক দূরে ছিল, শিকড়ের সাথে যার কোনো যোগ ছিল না। এই দ্বন্দ্বের মূল্য শিশু হিসেবে আমাদের দিতে হয়েছে (অতীত ও বর্তমানের মাঝে)। তাই, আমার সম্পর্ক (আমার শ্রেণীর সদস্যদের সাথে) বন্ধুত্বের বদলে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল। আমি শ্রমজীবী শ্রেণীতে যোগ দেওয়ার ভণিতা করব না। আমি আক্ষরিক অর্থে শ্রমজীবী ছিলাম না, কিন্তু আমাদের ভাষায় যাকে বলে ছিন্নমূল সর্বহারা তাতে আমি যোগ দিয়েছিলাম, যাদের সদস্যরা উৎপাদনশীলতার অংশ ছিল না, তারা সর্বহারাদের পাড়ঘেঁষা ছিল। কিন্তু তারপর শ্রমজীবীদের মতাদর্শ বুঝতে আমাকে এটি সাহায্য করেছে, অবশ্যই, কিন্তু আমি বলব না যে সে সময় আমি তাদের অংশ ছিলাম।
যাই হোক, শুরু থেকেই আপনি নির্যাতিতের দৃষ্টিকোন থেকে বাস্তবতাকে দেখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
জ্বী, আপনি এটা বলতে পারেন। আমার মতবাদ, যাই হোক, বিজ্ঞানসম্মত, বিশ্লেষণাত্মক উপায়ে স্বচ্ছতা পায়নি, কিন্তু মানসিক অবস্থার অভিব্যক্তি ছিল।
এবার ১৯৬৭ সনে ফিরে যাওয়া যাক, যখন পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্যা লিবারেশন অভ প্যালেস্টাইন জন্ম নিল। এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসগুলো কি ছিল এবং একটি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির পেছনে কারণগুলো কি ছিল?
যেমনটি আপনি জানেন, দ্যা পপুলার ফ্রন্ট নতুন কোনো দল ছিল না। এটি মূলত আরব জাতীয়তাবাদী দলের ফিলিস্তিনীয় একটি শাখা, যেটির সদস্য ছিলাম আমি। শুরুর দিকে এটি বিকশিত হয় সদস্যদের মাধ্যমে ১৯৬৭ সালে। আমরা পপুলার ফ্রন্ট তৈরি করেছিলাম কারণ আরব বিশ্ব (নিয়েছিল) মনযোগের কেন্দ্র (রাজনৈতিক ক্ষেত্রে)। দ্যা আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টে ফিলিস্তীনীয় শাখার আকারও অনেক বিস্তৃত হয়েছিল এবং এর নেতৃত্বেও পরিবর্তন এসেছিল এবং সদস্যদের মানসিকতায়ও পরিবর্তন এসেছিল। তাই আমরা পপুলার ফ্রন্টে যুক্ত হয়েছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে দ্যা ফ্রন্টে যুক্ত হয়েছিলাম কারণ আমি বিশ্বাস করি যে দ্যা ফ্রন্ট একটি দল হিসেবে ফিলিস্তিনীয় কাজের ক্ষেত্রে (রাজনৈতিক) অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অগ্রগামী পর্যায়ে ছিল। আমি বিশ্বাস করি যে আমি আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যগুলো এই প্রতিষ্ঠানের সুবাদে বুঝতে পারি। পপুলার ফ্রন্টে আমার যোগদানের প্রধান কারণ এটিই।
এই প্রতিষ্ঠানের সংবাদপত্র আল হাদাফ-এর প্রধান সম্পাদকের ভূমিকাটি আপনি কিভাবে দেখেন, এবং এর গতিবিধি সম্পর্কে কি কিছু বলতে পারেন?
আমি এই প্রতিষ্ঠানের একজন সদস্য, যা আসলে একটি দল গঠন করে, যার নিজস্ব অভ্যন্তরীন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। এর মূল গণতান্ত্রিক নীতির উপর ভিত্তি করে সাংগঠনিক ও নেতৃত্বের কৌশলও রয়েছে। তাই, নেতৃত্ব যখন আমাকে একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে নিযুক্ত করে, আমার সেই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। আমি পপুলার ফ্রন্টে কেন্দ্রীয় তথ্য পরিষদের সদস্য। আল হাদাফ মিডিয়া কাঠামোর একটি অংশ, মিডিয়া নিয়ে আমাদের উপলব্ধি অনুযায়ী, যা কোনো রটনার সাথে সম্পর্কিত নয়, কিন্তু শিক্ষাকে অতিক্রম করে, ইত্যাদি। আল হাদাফ নিয়ে আমি দায়বদ্ধ নই। এই কাজটি কেন্দ্রীয় মিডিয়া কমিটির উপর ন্যস্ত, আমি সংবাদপত্রে এই কমিটিকে প্রতিনিধিত্ব করি। বাস্তবিক অর্থে, এই প্রতিষ্ঠানের (আল হাদাফ) সাংগঠনিক দিক তদারকি করতে হয়, কিন্তু আমাদের একটি কমিটি আছে যেটি আল হাদাফ পড়ে ও মূল্যায়ন করে, প্রবন্ধ লেখে এবং সম্পাদকীয় নিয়ে আলোচনা করে। ফ্রন্টের মাঝে, দশটি অনুরূপ প্রতিষ্ঠান ও বিভাগ রয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান বাকিগুলোর চাইতে ছোট হতে পারে। যাই হোক, পপুলার ফ্রন্টের মাঝেও দল আছে যারা ক্যাম্পের ভেতরের সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে চর্চা করে। আমাদের মাঝে অনেকে আছে যারা সামরিক সংঘর্ষ ও অন্যান্য ক্যাম্পে কাজ করে। আমরা একে অন্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অবশ্যই, যারা সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কাজ করেন, যেমন, সম্মেলনের আয়োজন, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, সমাবেশ ও জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ, আমাদের সংবাদপত্র থেকে উপকৃত হন, পপুলার ফ্রন্টের দৃষ্টিকোণ প্রকাশে। তারা জনসাধারণদের নিয়েও আমাদের সাথে শলা পরামর্শ করে। অতএব, তাদের মধ্যে এই অগ্রসরমান সম্পর্কের কারণে সকলে মিলে একত্রে গণসংহতি কার্যক্রম পরিচালনা করে।
আপনি কি আমাকে সংবাদপত্র সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন?
(সংবাদপত্র)-এ কাজ করা প্রচণ্ড ধকলের। এই সপ্তাহের বিষয়গুলো শেষ করার পর এখন আমার এটিই মনে হচ্ছে। আমি ক্লান্ত বোধ করছি এবং এ ধরণের কাগজে কাজ করা কারো জন্য ভয়ানক। আপনি একটি বিষয়ের শেষ বাক্য সমাপ্ত করতে না করতেই আরো বিশটি ফাঁকা পাতা সামনে চলে আসে। এছাড়াও কাগজের প্রতিটি লাইনের শিরোনাম ও ছবি দ্যা ফ্রন্ট-এর সদস্যরা আলোচনা করেন এবং ক্ষুদ্রতর ভুলগুলোও পর্যবেক্ষণ করা হয়। সংবাদপত্রটি নিয়ে তখন তীর্যক আলোচনা করা হয় এবং এটি সাধারণ কোনো সংবাদপত্রে কাজ করার মতো না। সাধারণ সংবাদপত্রে আপনাকে শুধু আপনার কাজটুকু করতে হয়, কিন্তু আমাদের সংবাদপত্রে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলোও আলোচনা করা হয় (ফ্রন্টের নানা গোত্র) যারা এটি সতর্কভাবে পড়েন। তাই ফ্রন্টের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে তৈরি একটি বড় আদালতে সামনে সমন্বিত একটি কাজ করা একজন মানুষের পক্ষে খুব কঠিন। তাই, মানুষটি মনে করে যে তাকে আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
আবার, আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশে বাস করি। প্রতিরোধ আন্দোলনে এবং আমাদের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি বিভাগ মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, তারা যত ছোটই হোক না কেন, জড়িত কাজটি সম্পন্ন করতে, যেহেতু কাজ শেষ করা এবং একজনের উপর অর্পিত একটি প্রোগ্রামের বাস্তবায়ন করা, ব্যক্তির জন্য জরুরি। আমরা, আল হাদাফ-এ, অল্প সংখ্যক কর্মচারী আছে, আমরা যখন ফ্রন্টকে আরো কর্মী দিতে বলি, যে উত্তরটি আমরা শুনি তা হলোঃ তৃণমূলকে শেখানোর জন্য আপনার দুই বা তিনজন কর্মী আমাদের দিন, কারণ সংবাদপত্রে কাজ করার চেয়ে তৃণমূলে কাজ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা নিরব থাকি, পাছে তারা আমাদের কর্মীদের নিয়ে যায়। অন্যদের জন্য এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে মাত্র তিনজন ব্যক্তি আল হাদাফ-এ সম্পাদনা করেন। এই অবস্থা তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। মাঝে মাঝে আমরা চতুর্থ ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়তি সাহায্য পাই, কিন্তু এরপর সেই ব্যক্তিটি আমাদের ছেড়ে চলে যায়, এবং আমরা অন্য আরেকজনকে নিই, এবং গল্পের পুনরাবৃত্তি হয়।
তারপর আপনাকে দিন রাত কাজ করতে হয়।
জ্বী। আমার মনে হয় না, সহকর্মীদের কেউই দিনে ১৩-১৪ ঘণ্টার কম সময় কাজ করেন। এবং সেটি বিরতিহীন, ছুটি ছাড়া এবংকড়া সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। আমাদের সংগঠনের মানুষ, সরকার ও অন্যান্য সংবাদপত্র আমাদের সমালোচনা করেছে।
রাজনৈতিক আন্দোলন মানুষের মতো। একজন মানুষ যখন সুস্থ, বিখ্যাত ও ধনী, বন্ধুরা তাকে ঘিরে থাকে এবং সবাই তাকে সমর্থন করে।
আপনি কি আল হাদাফকে একটি প্রগতিশীল সংবাদপত্র হিসেবে বিবেচনা করেন, এবং এটি তাত্ত্বিক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে একটি প্রগতিশীল সংবাদপত্রের মতো পড়ে?
জ্বী, এবং আমি মনে করি এটি একটি সমস্যারও কারণ। আমি সংবাদপত্রটির প্রশংসা করার চেষ্টা করছি না, কিন্তু গভীর রাজনৈতিক ও তাত্ত্বিক ধারণা সহজভাবে প্রকাশটা সত্যিই দুরূহ। এই ক্ষমতা সীমিতসংখ্যক মানুষের আছে। পপুলার ফ্রন্টে আমাদের দুজন মানুষ আছেন যারা গভীর ভাবনাকে বোধগম্য করে প্রকাশ করতে পারেন যাতে কেউ সেগুলো পড়ে বুঝতে পারে। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন জর্জ হাবাস। আরেকজন অন্যতম সামরিক নেতা যিনি দারুণ সব লেখা লিখেছেন। বাকিদের জন্য এটা কঠিন, বিশেষ করে, তারা যদি আগে অনুশীলন না করে থাকেন। তৃণমূল থেকে আমরা সবসময় সমালোচনার মুখে পড়ি যে আমরা যা লিখি সেগুলো বোঝা ভীষণ কঠিন, এবং আমাদের বিষয়গুলোকে সহজ করতে হবে এবং সহজ ভাষায় লিখতে হবে।
যে কারণে কাগজ প্রস্তুত করতে অনেক সময় লাগে, যেহেতু আমাকে কাগজটি সংশোধন করতে হবে এবং এটি লেখার পরে কিছু উত্থাপিত কিছু বিষয় সহজ করতে হবে। আমি মনে করি যে ফ্রন্টে অভ্যন্তরীন সংবাদপত্র তৈরি করা আমাদের কাজকে সহজতর এবং কাজের এই ধারাকে চলমান রাখবে। অভ্যন্তরীন সংবাদপত্র সহজ জিনিস ও ধারণা প্রকাশ করতে পারে। আমাদের মতো একটি কেন্দ্রীয় পাবলিক সংবাদপত্রের জন্য, অভ্যন্তরীন সংবাদপত্র অনুকরণ করা কঠিন কারণ আমাদের কঠোর অবস্থান নিতে হয়। সেটা করতে গিয়ে, আমরা চেষ্টা করছি (এখন) জটিল রাজনৈতিক বিষয়াদির সাথে সম্পর্কিত নিবন্ধের পরিমান কমাতে, যাতে এই নিবন্ধগুলো অল্প পরিসর নেয় এবং সরাসরি রাজনৈতিক প্রচারণায় দৃষ্টিপাত করে।
আপনি কি আপনার সংবাদপত্রে সাহিত্যকর্ম প্রকাশ করেন, যেমন কবিতা ও অন্যান্য?
সাহিত্যের জন্য আমরা দুইটি পাতা উৎসর্গ করেছি, চলচ্চিত্র সমালোচনা, থিয়েটার, শিল্প, চিত্রকলা ও আরো অনেক কিছু। আমি মনে করি পূর্বে উল্লেখিত সাংবাদিকেরা সবচেয়ে জনপ্রিয় কারণ ফ্রন্টের অনেক সদস্য এই পাতার মাধ্যমে বামপন্থী চিন্তাধারা বুঝতে পারেন।
আপনি কি ব্যক্তিগতভাবে ছোটগল্প প্রকাশ করেছেন?
আল হাদাফ-এ কাজ শুরু করার পর থেকে আমি লেখার সময় পাইনি। আদতে, আমি (সম্প্রতি) মাত্র দুটো গল্প প্রকাশ করেছি একজন বৃদ্ধ নারীকে নিয়ে আমি সবসময় লিখি (উম সাদ)। আমার সাহিত্য বিষয়ক লেখা লিখবার মতো সময় নেই এবং এটি খুবই বিরক্তিকর।
আপনি কি আরো লিখতে চান?
সাধারণত যখন আমি অফিস থেকে কাজ শেষে বের হই এবং বাসায় যাই এতো ক্লান্ত বোধ করি যে লিখতে পারি না। তাই এর পরিবর্তে আমি পড়ি। এবং, অবশ্যই, আমি প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে পড়ি কারণ এটি ছাড়া আমি চলতে পারব না। কিন্তু পড়া শেষ করার পরে ঘুমাতে যেতে অথবা হাল্কা কোন সিনেমা দেখতে আমার ভালো লাগে, কারণ (আমার কাজ শেষ করার পরে) আমি লিখতে পারি না।
আপনি কি মনে করেন যে ফ্রন্টের মাঝে সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলোর প্রতিফলন এমন যে এটি একটি সমষ্টি যেখানে বিতর্ক হচ্ছে বেশি, সামরিক কার্যকলাপে নিয়োজিত সমষ্টির পরিবর্তে?
না, আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। আদতে, ফ্রন্টের মধ্যে আমরা সব সময় জোর দিয়েছি একটি নির্দিষ্ট কৌশলগত দিকে যেটির নীতি হচ্ছে প্রত্যেক রাজনীতিবিদই একজন যোদ্ধা এবং প্রত্যেক যোদ্ধাই একজন রাজনীতিবিদ। আপনি এখন যে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করছেন, তা আমাদের মাঝে সীমাবদ্ধ নয় (ফ্রন্টে)। এই ঘটনাটি এই কারণে যে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন এখন পতনের দিকে কারণ একটি নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান আমাদেরকে এই সময়ের মাঝে ধ্বংস করে দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা সেই ১৯৭০ এর সেপ্টেম্বর থেকে এই নিঃশেষিত অবস্থায় আছি, যা আমাদের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধিতে বাধা দিচ্ছে।
কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আমরা সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিব। সহজ করে বললে, এই আন্দোলন প্রতিরোধের। বিশেষ করে পপুলার ফ্রন্টের জন্য গাজা, পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলে আমাদের সামরিক অভিযান গত দুই বছরে তীব্র হয়েছে। কিন্তু ইজরায়েল এই অভিযানগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা সক্রিয়। দক্ষিণ লেবাননেও আমাদের ঘাঁটি রয়েছে এবং জর্ডানে প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে আমরা একটি গুপ্ত জনযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যাই হোক, ক্ষয়ক্ষতির যে অবস্থাটায় আমরা বসবাস করি এবং আরব সরকার আরোপিত স্বভাবজাত দমনমূলক পরিবেশ জনমতকে প্রভাবিত করে, এবং মানুষ মনে করে যে আমরা সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু এই যবনিকা ভুল।
আপনার মতানুযায়ী, কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ভাবনাকে উল্লেখ না করে, ক্ষয়িত এই অবস্থা, কিভাবে ফিলিস্তিনি ব্যক্তির উপর প্রভাব ফেলেছে?
রাজনৈতিক আন্দোলন মানুষের মতো। একজন মানুষ যখন সুস্থ, বিখ্যাত ও ধনী, বন্ধুরা তাকে ঘিরে থাকে এবং সবাই তাকে সমর্থন করে। কিন্তু যখন সে বৃদ্ধ হয়ে যায়, অসুস্থ এবং টাকার অভাব হতে থাকে, আশেপাশে বন্ধুরা দূরে সরে যায়। এখন আমরা (একটি প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে) এই স্তরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, উদাসীনতার পর্যায়, যদি বলি। ফিলিস্তিনি ব্যক্তিরা মনে করে যে গত কয়েক বছরে যে স্বপ্নগুলো তারা গড়েছে তার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এটা একটা যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি, জানেন, এবং আমি মনে করি অনেক সহযোদ্ধারাই আমার মতামত ভাগ করবেন, যে এই পর্যায়টা ক্ষণস্থায়ী। যখন ফিলিস্তিনিয় ব্যক্তি আবিষ্কার করে যে আমরা একটি বৃহত্তর শত্রুর সাথে যুদ্ধ করছি যাদের আমরা কয়েক বছরের মধ্যে পরাজিত করতে পারব না, আমাদের এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী এবং আমরা বারবার পরাজিত হবো, তখন ফিলিস্তিনি বিপ্লবের প্রতি ফিলিস্তিনি ব্যক্তির আনুগত্য এখনকার মতো ভঙ্গুর ও আবেগপূর্ণ থাকবে না। আমি বিশ্বাস করি যে যখন আমরা আমাদের প্রথম বিজয় অর্জন করব তখন আমরা আবার জনসমাগমকে গতিশীল করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি এই বিজয় অর্জিত হবে। আমরা এই খারাপ সময়টা নিয়ে ভীত নই, আমি এভাবেই বলতে চাই। এটা স্বাভাবিক যে আরব নেতারা এবং মিডিয়া মুখপাত্ররা গণমানুষের কাছে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সহজে অর্জনযোগ্য বিজয়ের প্রশংসা করে। এখন, অনেক আরবরাই আবিষ্কার করেছেন এই প্রতিজ্ঞাগুলো বিভ্রান্তিকর। তাই, আমি বিশ্বাস করি না যে এই ঘটমান বিষয়টি (যেমনঃ ফিলিস্তিনিয়দের উদাসীনতা) একটি সহজাত ও ধারাবাহিক। আমি জানি যে এই পর্যায়টি ভবিষ্যতে আমরা অতিক্রম করে যাব এবং বিপ্লবের উপর গণমানুষের আস্থা আগের চাইতে শক্তিশালী হবে।
আপনি অথবা ফ্রন্টের নেতৃত্ব ১৯৬৭, ১৯৬৮ অথবা ১৯৬৯ সালে কি ভীষণ আশাবাদী ছিলেন? আপনারা কি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? আপনারা কি এই সংঘর্ষকে সহজ বিবাদ হিসেবে দেখেছিলেন?
না। মূলত পপুলার ফ্রন্ট-এর লিখিত কাগজাদির মাধ্যমে গণমানুষকে সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে সমস্যাটি সহজ ছিল না। এটি আরো সতর্ক করেছিল যে তারা বারবার পরাজিত হবে ও রক্তপাত এবং আরো অনেক বিয়োগান্তক ঘটনা ও গণহত্যার সম্মুখীন হবে। আমরা এটি বহুবার উল্লেখ করেছি, কিন্তু, ফিলিস্তিনিয় বিপ্লবী নেতারা জনগণকে একটি সহজ জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আশাবাদ নিয়ে যদি বলতে হয়, তাহলে আমরা খুবই আশাবাদী, এবং আমি বলতে পারি যে আমাদের অবস্থা বর্তমানে, আমাদের কঠিন সংগ্রামের সর্বনিম্ন পর্যায়েও, ১৯৬৭, ১৯৬৮ বা ১৯৬৯ সনের চাইতে ভালো- বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং একটি প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে, যার মাধ্যমে এটি তার ঐতিহাসিক আন্দোলনকে মূল্যায়ন করে, অস্বচ্ছ কোনো আকারের মাধ্যমে নয়।
তানজিনা নূর-ই সিদ্দিকী
কবি, সংস্কৃতি ও সংবাদকর্মী