আমরা
আমাদের সুখগুলি বরাবর পাশাপাশি ছিল শিশুদের মৃত্যুর। এই শব্দগুলির মত বাকি যোগাযোগ ছিল বেহায়া, পাষণ্ড, দানব ও অর্থহীন। আমাদের সুখগুলি দু’টা আহত নেকড়ে হয়ে বাঘের পায়ের নিচে বসে ফল খেয়েছে। তার বীজে হয়েছে গাছ আর বাসা বেঁধেছে সুস্থ ছোট পাখি। আর পাখিগুলি বরাবর মারা গিয়েছে। আমাদের ভাবগুলি কবিতা গলিয়ে হাত গলিয়ে যে হাতে পড়েছে তা এমনি ভণ্ড ও ন্যাকা। আর আমাদের ন্যাকা ন্যাকা আয়নায় নিজেদের মুখ ভালো বাসিতে বাসিতে কিছু ও অনেক ঘৃণা এসেছে। আমরা হয়ে আছি ও গেছি একটি ও মূলত একটি বিরাট বীভৎস সুন্দরো কাছিম– খোলসে গেঁথে নিয়ে নাবালক ও বালকের পূণ্যবতী লাশ। পবিত্র ও মৃদু। আমরা শীতে পরিধান করেছি শুভ্র উলবস্ত্র। আমাদের কীদারুণ লেগেছে। আমরা কেঁদেছি, দান করেছি শুভ্র উলবস্ত্র। আমরা কীসলজ্জ ও কীনির্লজ্জ হয়েছি–। আমরা মরেছি ও নিজেদের রেখে গেছি। আমরা হাতির পিঠে চড়ে ফিরে এসেছি দেখতে আমাদের ভুল ও শুদ্ধ। হে তোমরা! গ্রহণ করো সব শিক্ষা আমাদের যা কিছু হিংসার– যা কিছু চরম ও পরম একা। হে একা! আমাদের এককো কাছিমো দশা থেকে পুণ্য খুলে ফেলো। আমাদের নগ্ন মাছের মতো লাল প্রস্ফুটিত গাল নিয়ে অচঞ্চল ও চঞ্চলভাবে বেড়াতে দাও।
হে ঈশ্বর
হে নাস্তি
আর যাব না
আর যাব না
আর যাব না মরণের আগে
ওর কান্ধে
ফেলবো না জীবনের ভার আর
দুলিবে গাছ
বাঁচিবে পলিথিন,
গতাসু গাছ।
তবু ঝিঝি একটামাত্র
রিরি ডাকবে আর
তবু ডাকবো না
মরণ তোমারে।
শূন্যতার কোলে বইসা থাকা পাখি,
তুমি বইলা ওঠো
মরণ তোমার কবেকার
ওই কবে হইয়া গেছে নাকি।
আর যাব না
মরণ তোমার কাছে আর
রাখিও পালকগুলি
কান্ধে তোমার।
একটি অনূদিত ঘূর্ণিঝড়
দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা ঝুঁকিপূর্ণ..। বৃষ্টি ঢাকাকে এত মসৃণ করে দিলো গাড়িগুলা পিছলায়ে যাচ্ছে। সবকিছুর প্রান্তরেখা শক্ত আর রাস্তার বাতিগুলা ভুতুড়ে বিরতিতে জ্বলতে ও নিভতে নিল তারস্বরে– যখন বৃষ্টিতে ভিজে গেল। ঘূর্ণিঝড়ের উত্তরাধুনিক সাহিত্য এখন ঢাকা, বড় সমান ও পিচ্ছিল। কার পিঠের পিছে বসে থাকি না জেনেই দুলে দুলে ভাবি– আলেয়া বেগমের কথা আজকেই কেউ ভুলে গেছে। ঘুমের মধ্যে পেটালে বা গরম পানি ঢেলে দিলে কেমন লাগে তার শতবার অনূদিত তীব্রতাসহ। যারা মারা গেছে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবতেছি কেউ তার ঘরের খুঁটি ধরে ঝুলতেছে। আর আমিও তো ঢাকার রাস্তা ধরেই ঝুলতেছি। কিছু কি আর করা যেতে পারে.. এভাবে অবরোধরে পুড়ায় দিতেছে একাকার হওয়া বৃষ্টিবাস্তবতা– বাসের সাথে। আমাদের মুখগুলা বন্ধ থাকতেছে। ওই পিঠের পিছে বসে এখনও ভাবতেছি একদিন দেখা হবে চোখে চোখে, পুড়ে যাওয়ার একটা অনুবাদগল্প লেখা হবে।
দেরিতে গাছগুলি ঝুলে যাবে।
তাও অসীম অবরোধের ঢাকাকে খামচায় ধরে বৃষ্টিবাস্তবতার চোখে আমাদের কোটি চোখ…
কি হবে?
এত এত বিষ্টি।
পাশাপাশি বইসা থাকা কবুতর আটটা
পিছন দিয়া থাকা ঘোড়া দুইটা
সন্ধ্যার পরপর গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে,
তাদের কি হবে যারা এদের দেখে না
তাদের কি হবে?
তাদের কি হবে যারা ঘোড়াগুলার জন্য দুঃখ পায় না
ফুইলা থাকা পাখিদের শীত বোঝে না,
পাশের বাসাগুলা থেইকা যখন আলো আইসা পড়ে
ওরা কিছুই কল্পনা করে না,
আলো থোকা থোকা ওদের আত্মায় পইড়া থাকে
ওদের বারান্দায় পইড়া থাকে।
ওরা বাংলায় জড়ায় জড়ায় ইংলিশ বা
ইংলিশে জড়ায় জড়ায় বাংলা বলে।
ওরা কানলে মায়া লাগে না
আমার কি হবে?
মার্চের বৃষ্টি
এদিকে এইটুক ঢাকায়
বৃষ্টির ঘাম
কবি কবি শীত,
কিছু সারি সারি পোষ কবুতরে
(আহ কি সুন্দর!
তোমাদের কাউয়া ঠোকরায় দিলে খুশি হই)
স্ক্যাফোল্ডিংয়ে
খাঁচার উপর
সরু রড।
ভাবো
ভিতরে
হলোগ্রাম ভূতের মত মন
মনে
অবিবর্তিত হরিণ দৌড়ায় ধীরে
নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে
খাঁচার মাঝে দিয়ে
দেখি সুতরুণ সুকরুণ পেশি
কাম করে
দৌড়ায়
দৌড়ায়
যেন আসে বাতাসের ভিতর দিয়ে দৌড়ায়ে
যায়
দুটো হরিণ মেরে নিয়ে
কবুতর কা কা করে
অনেক জানালা
আটকায়ে থাকে
চরম সুখে
মার্চে
বৃষ্টি পড়ে
লাস্টি কোল্ড নভেম্বরে।
মাসিয়াত জাহিন
জন্ম ১৯৯৯। ঢাকায় থাকেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। কবিতা লেখেন, অনুবাদ করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। পলিটিক্স, বিজ্ঞান, দর্শন ও সাহিত্য নিয়া আগ্রহী।
প্রকাশিত বই : একটা পাখির গল্প একটা ঝাঁকের চেয়ে কত আলাদা (২০২৩, বাছবিচার বুকস)