টাইগার পাস
কিছু স্তম্ভিত বাঘ এখানে ছড়ানো ছিটানো :
হঠাৎ ঢুকে পড়লো এই রোডে
সাইন বোর্ডে তাদের নাম অঙ্কিত দেখে
এতো গাড়ি আর মানুষের ভিড়ে
কেমন বোকা বনে গেলো আটটা বাঘ
কি করবে, কি করবে, তাই যে টিলাগুলি
দাঁড়ানো, তাদের চূড়ায় প্রত্যেকে
উঠলো তড়িঘড়ি ক’রে, যেনো কেউ
দাবড়ানি না দেয় আসল বাঘ ভেবে
তারা আজ স্ট্যাচু, হুঙ্কার দিবে কি ক’রে;
হা করা ব্যাঘ্র সকল করে না হালুম:
টাইগার পাস টাইগার পাস, তুমি নামেই
স্থবির, তোমার নামজাদা বাঘগুলি
মিলিয়ে গিয়েছে একরাতে
ঐতিহাসিক
অফিস রুমের মধ্যে বসে বাইরের দুনিয়ার কথা বর্ণনা না ক’রে, যে-সকল বোতল পিরিচ পড়ে আছে, তাদের আদল বিষয়ক কথা বলি; আর যে স্ট্যাপ্লার টেবিলে শোয়ানো, সেবার উন্মত্ত দশায় যখন আমাকে মেয়েটি গালি দিয়েছিলো, উত্তর দিয়েছি, স্ট্যাপ্লার মেরে মুখ বন্ধ করে দিবো; আবার যখন হোল্ডারে কাঁচি চোখে পড়লো, মনে পড়ে, টেলিফোনে রাগ হয়ে বেশ চোখ লাল করে বললাম, গাল টেনে এনে কেঁচি দিয়ে টুকরা করবো আর গজগজ করতে করতে রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রায় বাসের ধাক্কায় মারা যেতে পারতাম; কিন্তু নিজের মনকে ঠাণ্ডা রেখে নার্সারির কয়েকটা গাছ কিনে বাসায় ফিরে শীতল হয়ে থেকে মুখে হাসি নিয়ে কথা বলি স্ত্রীর সাথে কতো স্বাভাবিকভাবে;
আর এইসব রাগবিরাগের পাশাপাশি আজ অনেক কোমল অভিপ্সা বুদবুদ আকারে ভেসে ওঠে— যখন দেখছি একটা পেন্সিল স্নিগ্ধ-লাল রঙে সামনে শায়িত, অফিস চেম্বার থেকে আলগোছে সরিয়ে এবার টুকটুকে পেন্সিলটাকে দিয়ে দিবো একটা বাচ্চাকে, তখনো কি একে চৌর্যবৃত্তি বলবো আমরা?
টাকা টাকা
মানিপ্ল্যান্ট এক সার্থক লতিকা:
এরকম সবুজ পত্রের
লতাগাছে উজ্জ্বল পাতা দেখে
আহত হৃদয় থেকে ধীরেধীরে
বিষ নেমে যেতে থাকে
তোমার নামের সাথে তবে
কিসের সম্পর্ক রয়েছে
সত্যিকারের টাকার?
ভাবতে ভাবতে একবার
ড্রেনে পড়ে গিয়ে উঠলাম
গায়ে ময়লা কাপড় নিয়ে
যদি আমাদের জানালার পাশে
গজানো মানিপ্ল্যান্ট
থেকে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে
দোকানদারকে দিয়ে বলি
একটা পাজামা দেন
বিনিময়, তোমাকে জীবন দান
করা হোক, যতো দ্রুত সম্ভব
একদিন টাকার অভাব হবে
পৃথিবীতে আর মানি প্ল্যান্ট নিয়ে
কাড়াকাড়ি হবে, এই লতা উজাড়
করবে লোকে টাকা টাকা ক’রে?
যাবো না, যাবো না
মানুষের মায়া ছেড়ে আমি যাবো না, যাবো না! তবে আরো যারা আমাদের ঘিরে আছে ওয়াড্রোব, বিছানার মুখামুখি দেয়াল ঘড়িটা, চট করে টাইম দেখছি আর লাফ দিয়ে যেতে পারি যেখানে সঠিক সময়ে আর কিছু ড্রেস তারা এতো শান্ত আর চুপচাপ ওয়াড্রোবে পড়ে থাকে, তুলে নিয়ে পরিধান ক’রে জন্মের আনন্দ লাগে—ঘুম যেতে ইচ্ছা করে না তখন;
ওই কোনায় একটা কাগজে লেখা—আনোয়ার মামাকে দিবেন; কাগজ কলম যারা প্রাণহীন, যেরকম একটা ইট, মানুষ ছাড়াও যারা আছে, লোহার টুকরা, টেলিফোন, গাড়ি, স্তূপকৃত বই, তালা-চাবি, মানিব্যাগ তোমাদের ছেড়ে যাবো না, যাবো না; খ্রিস্টানদের মতো আমার কবরে দিও, সাজিয়ে দিও আমার শিয়রের পাশে এসব আর একটা পানির কলের কানেকশন যদি থাকে আরো ভালো হয়:
মরে গিয়ে যেভাবে আমার কঙ্কাল জ্যান্ত থাকবে, তখনো গোসল করতে থাকবো; হাড়ে ক্ষতস্থানগুলি, ভিজে ভিজে শুকাতে থাকবে, উপশম হবে সব ট্রমা!
কেমন আছো তোমরা
কেমন আছে চারা-গাছ
রূপে মেয়েগুলি
নার্সারিতে ওদের
হাঁস-ফাঁস দশা
হেঁটে যেতে যেতে
দেখি রোজ ভোরবেলা
বেচা-বিক্রি কম,
মালিক তাই গালি দেয়:
ওই তোরা বাজা
মেয়েলোক, পানি দিমু না
একটা একটা ক’রে
পাতা ছিঁড়ে ফেলে
আর ন্যাংটা ফুলগুলি
কুঁকড়ে যায়
যেভাবে তাকিয়ে
ছিলো লোকটা যেন
পুষ্পল মেয়েদের
গোগ্রাসে খাবে এবার—
শেফালী টগর
বেলী জুঁই তখন
ভয়ে কাঁপছিলো
আর টপটপ
চোখের পানিতে
শুকনা টবগুলি
ভিজে যাচ্ছিলো
যখন সূর্যের কুসুম
এসে বসলো
ওদের রিক্ত ঠোঁটে
সেই কচি কচি
হাতগুলি টানটান
হলো খুশিতে
ঊর্ধ্বমুখী পাতারূপী
ফুল্ল মেয়েরা
বেরুবে এবার
পৃথিবী প্রদক্ষিণে
আহমেদ নকীব
জন্ম ২৭ জুন, ১৯৬৫ সালে, ঢাকায়। দাদার বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে এ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর। দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করেছেন ছোটকাগজ ‘শিড়দাঁড়া’। প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শিশু ও হারানো বিড়ালের কথা’ (১৯৯৬)। কবিতা মূল বিষয় হলেও আশির শেষদিক থেকে বাংলাদেশে ছোটকাগজভিত্তিক সাহিত্য আন্দোলনে তিনি কার্যকরী ভূমিকা রেখে এসেছেন। ২০১০ সালে উলুখড় থেকে প্রকাশিত ছোটকাগজ আন্দোলনের ২৫ বছর পূর্তিতে ছোটকাগজ বিষয়ক আকরিক গ্রন্থ ‘স্বপ্নের সারসেরা’র সম্পাদনা পর্ষদের অন্যতম ছিলেন। কবিতা, গল্প, মুক্ত-গদ্য ও স্কেচ সব মিলিয়ে এ-পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫টি। অনুবাদ এবং আঁকাআঁকিও করে থাকেন।