পাঁচটি কবিতা | আন্দালীব


রাইজ অব দ্য মেশিনস


যদি দেখ অ্যালগরিদমের দম
রিদম
ধুকপুক করছে থেকে-থেকে
স্তব্ধপ্রায় যন্ত্রের হৃদপিণ্ডে

কব্জির শিরা কাটতেই
গড়িয়ে নামছে সিনথেটিকের ব্লাড
একটা ধীর ও দ্বিমাত্রিক ছবি
আঁকবার অপরাধে
তোমার চাকরি খেয়ে নিচ্ছে যারা
তাদেরই নাম বোঝা গেল
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

তুমি যতোখ’নে
একজোড়া স্তন আঁকা শেষ করলে
ততোখ’নে সে হয়ত
ভেদ করে এসেছে
অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের বিপুলা রহস্য
নক্ষত্রধুলি
অ্যান্ড্রোমিডার দুধসাদা তলপেট

ফলত জৈব পরিচয়ের এই রাতে
দৈবচয়নের সাথে
বেছে নিতে পার যদি সঙ্গীকে
দেখবে তোমাকে চালাচ্ছে আসলে
নিরাসক্ত কিছু মেশিন
জানবে — তোমার জন্মেরও বহু আগে
তোমাকে জন্ম দিয়ে রেখেছিল
যেই অকৃতবীর্য হিজড়েরা
তাদেরই হাতে আজ রাজদণ্ড

তোমাকে অহেতুক কিনে রেখেছে তারা
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে
যে কোন প্রকারের
দাসপ্রথা ছাড়া


থার্মোপাইলি


শুকনো ফুলের মত
মর্চে পড়া তলোয়ারে জারেক্সেসের ক্ষত
ঘোড়ার পাঁজর যেই
ভেদ করেছে তিরের ফলা অমনি দেখি নেই
শিরস্ত্রাণের ফুটো
বন্ধ করে অন্ধ তবু তাকাচ্ছে, চোখ দুটো —
উপড়ানোর পরে হা
ফিনকি দিয়ে উঠছে গরল-অমিয়ধারা
কত লক্ষ গারদের
শূন্যতাকে পূর্ণ করে নামছে পারদের
তপ্ত অ্যামালগাম
সম্রাটেরই প্রিয় ছিলেন এমন কারোর নাম
শিরচ্ছেদের পর
খেলছে হাওয়া যার খুলিতে সারা রাত্রিভর
জল্লাদটার ঘায়
বালিয়াড়ির ঢালে চাঁদটা অস্তমিত প্রায়
তখন ইতস্তত
বইছে হাওয়া গিরিখাতে শুকনো ফুলের মত


লুসিড ড্রিম 


পুড়ে ফেল গুপ্তচরের পাসপোর্ট
গুমনাম রাষ্ট্রবিদের ঠোঁট থেকে
প্রকাশ্য চুম্বন তুলে নাও

জেটি থেকে আজ যত
ছেড়ে গেছে বাষ্পীয় জাহাজ
কাল তারা ক্রান্তীয়
ঝড়ের মুখোমুখি হবে

ক্ষয়রোগে আক্রান্ত নাবিকেরা
পথ ভুলে ঢুকে পড়বে তোমারামার
অনন্ত স্বপ্নের ভেতর

তাদের খসে পড়া আঙুল কেবলই
সূর্যাস্ত নির্দেশ করবে
আমরা কপচাব
জিঙ্গোইজম
মৃদুমন্দ দেশ কাল মানচিত্র

পাথরের চোখ মেলে নির্নিমেষ
সমুদ্রের পরিনতি দেখব

এই রুথেনিয়ামে গড়া
অলংকার বা শেকল পায়ে
একদিন আমরাও শেষহীন
এই স্বপ্নের কিনারে পৌঁছোব


ব্যাটারি রিকশা


ব্যাটারি রিকশায় যেতে-যেতে
আমরা দেখলাম
টিকটক-মামুনের বিচ্ছেদের লাইভ
আর নির্বাচনী পোস্টারে
ছেয়ে যাওয়া সমস্ত মিল্কভিটা চত্ত্বর
আমরা দেখলাম সিন্ডিকেটমুক্ত
বাজারের স্বপ্ন —
তার ভেতর অতর্কিতে ঢুকে পড়া
কৌরব ও পাণ্ডব সকল

যেতে-যেতে আমরা দেখলাম
অগুন্তি রিলস
কতিপয় বি-গ্রেড নায়িকার
বোটক্স করা ঠোঁটে
উড়ন্ত চুম্বনের প্রতিশ্রুতি

আমরা দেখলাম মৃত্যুপথযাত্রী
তারার বিস্ফোরণ —
তথা সুপারনোভা
আর ভাবলাম কিছু তারা কেন
নিজের ভেতরে গুটিয়ে যায়
ভেঙে পড়ে

এই অন্তর্লীনতাই কি সিঙ্গুলারিটি
ব্যাটারি রিকশার দম ফুরিয়ে আসে
থেমে যাবার আগে
টিকটক-মামুনের ব্রেকাপ
মিটমাট হয়ে যায়


যে কারণে সমুদ্র নীল 


যে কারণে সমুদ্র নীল
তারও অধিক বেদনা নিয়ে
ডুবে যায় গ্যানিমেড
ইউরোপা লো —
অন্যতর আকাশে

সৌরজঞ্জালে হাত ঘসে
যারা ছুড়ে মারে নক্ষত্রধুলি
ঘুরে-ঘুরে একদিন সেইসব
তাদেরই দেহে পৌঁছোয়

চুম্বক-বিভব নির্বিশেষে
যেভাবে ভেঙে ফেলে সম্পর্ক
জুড়ে রাখে জগতের সমস্ত
ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটার

তেমনই নিস্পৃহ কোন
কম্পাসের দেহে
জেগে ওঠে মেরুবৈকল্য
দিকবলয়গুলো
একে-একে ভরে ওঠে
শূন্যতায়


আন্দালীব

কবিতা-লেখক। জন্ম ১৯৭৮ সালের ১ অক্টোবর, ঢাকা, বাংলাদেশ। লিখছেন প্রায় দুই দশক ধরে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ; বিদূষিকার লন্ঠন (২০২১), অপুষ্পক (২০১৮), বৃশ্চিকসূর্যের নিচে (২০১৬), টোটেম সংগীত (২০১১) ও ফ্রস্টেড গ্লাসের ওইপাশে (২০০৮)। বর্তমানে একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিচালক (শিক্ষা) হিসেবে কর্মরত।

শেয়ার