চিত্রকর
তোমার অলৌকিক ছায়ার ভেতর ডুবে গেল যে ঘুম, তার ওপরে আমি হেঁটে যাচ্ছি তিনশ’ বছর। আমার সরীসৃপ দিনের ভিতর বসে থাকে যৌনশিক্ষক, কোলে শুয়ে শুনি তোমার আমার দূরত্বের ভেতর বেজে যাওয়া তিনটি গান। তারপর কী করবো? তারপর কী করবো ভেবে ভেবে হাতে উঠে আসে কবরের মাটি, লাফ দিয়ে উঠে পড়ি স্মৃতির মগডালে। বুকের ভেতরের সাইকোলজিক ভূমিকম্পে ধ্বসে যায় আমার স্বপ্নের ঘরবাড়ি, চায়ের কাঁপে ঢুকে পড়ে চরভৈরবী, বসন্তচৌচির বেদনার ভেতর তুমিও কি শুয়ে আঁকছো আমার পরের তিনশ’ বছর?
উল্টো রথ
সকালের পাশে বাজেয়াপ্ত ঘুম, এইতো- সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি অকৃপাময় পাথারের দিকে—বসে আছো তুমি কি রঙিন পাল তুলে। আরও আরও শিথিলতা খুঁজি, আর কী যেন এসে শিখিয়ে দেয়, ফাঁকির এ জীবনজাদু- এঁকে চলো সমুখের মহাধূলায় অদেখার বেণুবন, আমার বোকা মন আর তুমি চলমান আমার দীর্ঘ স্বপ্ন, তোমার কথার তালে ঝরে পড়ে বৃষ্টি, একা দাঁড়িয়ে ভিজে যাই এ জীবনের রেলব্রিজে।
তোমাকে
তুমি এক আলোর তীর, এই আজন্ম দুঃস্বপ্নময় জীবনের দিকে রেখেছো নিশান। কথা ডুবে যাওয়া ঠোঁটের পাশে তুমি সুর গুনগুন, ব্যথার তান৷ কখনো আবাহনে, কাঁপাকাঁপা শৃঙ্গারে তুমি মন্ত্রপূত ফুল। তুমি কেন নিশ্চুপ, আমিও তো আড়ালে কোলাহল ঘন নিরবতার৷ আমাদের কথারা আজ কাটাছেঁড়া কাটাছেঁড়া ব্রহ্মপুত্রের মতো সরু, বেদনার ঢেউ বয়ে বয়ে৷ দুপুরের শালিক আমাদের উঠোনে ভাঙে সংসার- অসাড় বেলারা নুয়ে পড়ে সন্ধ্যামনির ডগায়৷ সময় তবু এগোয় আমাদের ফেলে রেখে, জলভরা খালের বুকে মাথা গোঁজা সূর্য তাপের আহুতি দিতে দিতে আরও কিছু মেলানকলি সন্ধ্যায় কত ফুলকলিও ফোঁটে বারান্দায়—বাতুল ক্লান্তি এড়িয়ে৷ পথে আলো টিমটিম -চোখের দিকে, জীবনের সাইরেন বেজে বেজে ফুরিয়ে আসে দূরত্ব ভাঙা মাইগ্রেনের ভেতর। ওভাবেই সুরলহরী থেকে ছিটকে পড়া কিছু স্বরগম কখনো খোঁজেনি মাহফিল, নাইয়ার কণ্ঠে আকুলতার বাসা বেঁধে চিরবহতা তার কাল। এই এত মুখরতার সায়রে আমরা কি মাছের কানকোর ধুকপুক? নাকি হাওয়ার অতলে উড়োউড়ি দু’টো টুকরো টুকরো হওয়ার পাল?
উড়ান
এই দীর্ঘ শূন্যতাতে বুঝি উড়ে যাব। দিনের আঙুল ধরে ঝুলে থাকবে হাহাকার জীবনবেদ, আর যতখানি বুঝেছিলাম স্মৃতি
খোলস ছেড়েছে চন্দ্রহীন রাত্রির দিকে
তুমি চেয়েছিলে কল্পনার খেলাঘর, তোমার হাত ভরা আমার স্বপ্নের মাটি,
মিথ্যে চন্দ্র আর আদিসত্যের মধুভাঁড়ে তোমাকে আবার ফেলে রেখে
শূন্যতার বুকে চেপে উড়ে যাব।
ভ্রম
ঘোর ঘন সন্ধ্যার বুক চিড়ে
পাশাপাশি একাদের ভিড় থেকে-
ছিঁড়ে আসে পুরানো সরগম
রঙনয়া হিম, ডাহুকের ঘর ভেঙে
আলো থমথম,
ভোরের কাছাকাছি যে রাত-
শেষ হবে হবে বলে
ধরে রাখ হাত, কুয়াশার ঘন
বুক ভেদ করে কোনো
ধনুর্বিদ ছুঁড়ে দিলো ধারালো উত্তাপ
জলহীন, এক হাওয়ার অতল
ধাওয়া করে যেন সেই-
ভ্রমের বিড়াল ছুটে গেল
না বোঝা সুরের দিকে
তারপর থৈ থৈ জল
হাওয়ার বুক ভেঙে
এঁকেবেঁকে বাঁধলো যে গান
সেইখানে, আমি তুমি
রেওয়াজের বাইরে যেন-
মরমিয়ার অবুঝ কলতান।
শতাব্দীকা ঊর্মি
কবি, শিক্ষার্থী, নারীবাদী।
মাতাপিতার নিবাস : নাটোরের লালপুর।
অস্থায়ী বসবাস : ঢাকা শহর।