পরবর্তী পাণ্ডুলিপি থেকে
আমাদের জার্নি
অনেক বছর ধরে আছি ইনসমনিয়ায়।
আর তুমি রিকশায় যেতে যেতে ঘুমিয়ে পড়ো,
কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ো,
সঙ্গম করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ো।
আর আমার পাশ দিয়ে অবিরাম ছুটে চলেছে একটা অতনু ঘোড়া।
ধূলি উড়িয়ে কোথায় চলেছে সে?
কী অদ্ভুত জার্নি আমাদের— হে সড়ক হে ছায়ামূর্তি!
আয়নার দিকে (২০১৫)
নগেন
উত্তরপাড়ার নগেন দাঁড়িয়ে এক পা তুলে হিসু করে।
ফাঁটা বাঁশের চিপায় পড়েছিল সে।
এক গৃহবধূকে রেপ করতে গিয়ে যত বিপত্তি।
গণধোলাইয়ে অণ্ডকোষে লাথি খেয়ে
একখান বিচি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তার।
অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে তাকে।
বহু দিন বহু মাস জলবিয়োগে— স্ত্রী সংসর্গে
অশেষ যন্ত্রণা সয়েছে সে।
শেষে বিদেশ গিয়ে সস্তায় কুত্তার বিচি প্রতিস্থাপনে
ভালো হলো আমাদের নগেন।
সেই থেকে দাঁড়িয়ে এক পা তুলে হিসু করে সে।
নদীতীরে বসে থাকি
মা সারাক্ষণ ভেবেছে—
নদীতে নিখোঁজ আমার বাবা ও ছোট বোনটি ফিরে আসবে,
থালায় ভাত বেড়ে বসে থেকেছে—
তারা ফিরে আসবে।
মা অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর—
লাঠি ঠুকে ঠুকে নদীতীরে গিয়ে বসে থেকেছে—
তারা ফিরে আসবে।
মা চলে যাওয়ার পর—
একদিন তার কবরও নদীতে চলে যায়।
আজ আমি নদীতীরে বসে থাকি—
নদী ডাকে, আয়… আয়… আয়… ।
সন্তানের পাশে
বাইরে পরিতৃপ্ত নারী ঘরে ফিরে স্বামীর সঙ্গে
সঙ্গম করতে চাচ্ছে না।
স্ত্রীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সম্ভোগ ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে কি না,
প্রকৃতিবিরুদ্ধ কি না—
তা ভাবতে ভাবতে লোকটি
সন্তানের পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে।
বাইরে পরিতৃপ্ত পুরুষ ঘরে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে
সঙ্গম করতে চাচ্ছে না।
জেলে
আমার মায়ের নাম গ্রাম।
পিতা নাকি দূরের শহর!
নদী আর খাল দুটি বোন,
হাওর-বাওড় সহোদর।
আমি ভালবাসি সমুদ্র-দুহিতারে—
দিগন্তের হাওয়া এসে শোনায় সুদূরতা,
মেঘের ঠিকানা, ঝড়ের বার্তাদি।
পিতা ভুলে গেছে আমাদের—
চুপি-চুপি কাঁদে মা আমার।
আমি তো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জেলে,
ফেঁসে গেছি জলচক্রে, জালে—
ফেঁসে গেছি রক্ত-মাংসের কঙ্কালে।
হে জল হে প্রাচীন ধারা—
ক্ষমো এই জন্ম এই মৃত্যু,
তোমার কাছেই সত্য আমার
মৎস ধ্রুবতারা।
মাটির আয়না
সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াই,
প্রতিদিন।
ভালো লাগে, বাঁচতে ইচ্ছে করে।
রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত
নিজের প্রতিবিম্বই উজ্জীবিত রাখে আমাকে।
বেডরুম, ওয়াশরুম, ড্রয়িংরুম, বারান্দা, লিফট, গাড়ি,
অফিস, শপিং মলে… এমনকি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে
পাশের দোকানপাট, বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক ভবনের গ্লাসে গ্লাসে—
ইস্পাতে ইস্পাতে,
নিজের প্রতিবিম্ব দেখি, ভালো লাগে, বাঁচতে ইচ্ছে করে।
কাচের, জলের এ আজব জগৎ বানিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার।
যেদিকে তাকাই সেদিকেই আমি।
যখন আশেপাশে আয়না নেই, জল নেই—
তখন আমি আমার ছায়ার দিকে তাকিয়ে থাকি।
মাটির আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকি।
বেসরকারি কবিতা (২০১২)
অবমুক্ত করো
আমি বনমানুষ।
আমাকে ছেড়ে দাও—
অবমুক্ত করো লাউয়াছড়ায়।
নিহায়েত খাদ্যসন্ধানে ভুল করে ঢুকে পড়েছি
তোমাদের কলোনিতে, সভ্যতায়।
আমি কেন গারদে?
এখানে তো পাগলেরা থাকে।
ওরা দিনরাত মুঠো মুঠো ওষুধ খায়।
আমি বনমানুষ।
আমাকে ছেড়ে দাও—
অবমুক্ত করো লাউয়াছড়ায়।
অভয় পৃথিবী নেই
ইংরেজরা একসময় ভারতীয়দের দাবিয়ে রেখেছে।
পাকিস্তানিরা একসময় বাঙালিদের দাবিয়ে রেখেছে।
এখন বাঙালিরা আদিবাসীদের দাবিয়ে রাখছে।
শেখ মুজিব বললেন, ‘তোরা সব বাঙালি হয়ে যা।‘
মেজর জিয়া মনে করলেন—আদিবাসীরা উপমানুষ,
হান্ড্রেড পার্সেন্ট মানুষ না।
পৃথিবীর দেশে দেশে বিলুপ্ত-প্রায় প্রাণীর বংশবৃদ্ধির
জন্য অভয়ারণ্য রয়েছে। কিন্তু হাজদা, মারমা,
চাকমা, হেমরমদের জন্য অভয় পৃথিবী নেই।
নক্ষত্র
নক্ষত্রকে বিয়ে করে বগলে ময়লা দেখে ভিরমি খেয়েছি।
নক্ষত্রও খায়, ঘুমায়, বাথরুমে যায়—
দাঁত ব্রাশ করার সময় মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হয়,
ঊরুতে ফোড়া উঠলে কোঁকায়, গোঙায়।
রহস্য-টহস্যের কিছু নেই—
নক্ষত্রের মাথায়ও বিষ্ঠা ত্যাগ করে নাগরিক কাক।
পাতার কুটির
সেইসব দিন
যূথবদ্ধ জীবনের অন্ধকার, দগদগে ঘা, পুঁজ—
তবু আমাদের কণ্ঠে ছিল প্রকৃতির গোপন গান।
চারপাশে প্রথা, পাহারা।
তবু আমরা জ্যোৎস্নাতাড়িত হয়েছিলাম,
ছুটে গিয়েছিলাম পাহাড়ের কাছে।
আর ওই দাঁতাল আগুনমুখো ড্রাগনেরা
আমাদের হাত ধরে পাহাড়ের চূড়ায়
বেঁধে রেখেছিল।
আমাদের চোখ, হৃৎপিণ্ড ঠুকরে ঠুকরে
খেয়েছিল ঈগলে—
তবু আমাদের কণ্ঠে ছিল গান,
আর চোখের কোটর থেকে বেয়ে বেয়ে নেমেছিল
সেই জ্যোৎস্নাধারা।
সেই গানই একদিন ঝরনা হয়ে
পাহাড়ের খাদ বেয়ে নদী হয়ে
আমাদের নিয়ে এসেছে এই মোহনায়।
এখানেই গড়েছি আমরা খরকুটো, পাতার কুটির।
বেসরকারি কবিতা
বিয়ে করেছি বাগেরহাটে
সুন্দরবনের কাছে শরণখোলায়।
শাশুড়ি পাতে হরিণের মাংস তুলে দিয়ে বলেন—
বাঘের মতো খাও, বাঘ হও।
হিরালাল
হিরালাল আমার সহপাঠী ছিল।
মেথরের ছেলে বলে তার সঙ্গে কেউ মিশতাম না।
কুতকুতে চোখে পেছনের বেঞ্চে একা একা বসে থাকত সে।
তার মুখে কোনো দিন হাসি দেখিনি আমি।
হিরালাল যেদিন দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম হয়ে
তৃতীয় শ্রেণিতে উঠল—
সেদিনই ওর বারোটা বাজল।
অভিভাবকরা বললেন, মেথরের ছেলের আবার লেখাপড়া!
এর একটা বিহিত করতে হবে।
সহপাঠীরা বলল, ওর গায়ে গু-মুতের গন্ধ, ওয়াক থু।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমার বাবা
বৈঠক ডেকে ওকে স্কুলছাড়া করলেন।
সেই থেকে হিরালাল তার বাবা হিরিঙ্গির সঙ্গে
জগতের বর্জ্য পরিস্কারে নেমে পড়ল।
ফুলচাষি মালি যাই বলো (২০০৯)
তাপে, লালায়
কবরস্থানের পাশে ছোট্ট কুঠুরিতে থাকি আমি।
একদিন দেখি অসংখ্য কবরের তাপে, লালায়—
কবর হয়ে গেছে আমার ঘরখানি।
আরও পাঁঠা চাই
তিন-তিনটে পাঁঠার মালিক আমি।
একটির নাম কৃষ্ণ,
একটির নাম শিব,
অন্যটির নাম মদন।
দূর-দুরান্ত থেকে টাকা হাতে ছাগিরা আসে।
কৃষ্ণ, শিব আর মদনের মাজার তাগদ বাড়াতে
যত্ন-আত্তির শেষ নেই,
এসব আমাকেই করতে হয়।
আমার আরও পাঁঠা চাই—
আরও আয় বাড়াতে হবে।
সাম্প্রদায়িক
পৃথিবীতে মানুষ আসলে বেশিদূর এগোয়নি।
মানুষ তো আজো সাম্প্রদায়িক রয়ে গেল।
আমার হিন্দু বন্ধুরা স্বপ্নে আজো শুধু কালিমূর্তি দেখে,
মুসলমান বন্ধুরা গরুর হাড্ডি দেখে।
আমি তো সবার জন্য কবিতা লিখতে লিখতে
ফতুর হয়ে গেছি—
সামাজিকেরা আমাকে একঘরে করে রেখেছে।
জীবিকা
অজস্র খামের ভেতর রাশি রাশি ভাগ্যলিপি।
থরে থরে সাজানো খামের ওপর হাঁটতে হাঁটতে
বনের পাখিও ভাবে বাণিজ্যের কথা।
ডানাভাঙা টিয়া ঠোঁট দিয়ে তুলে আনে খাম।
ভাগ্য পাঠশেষে উপার্জিত টাকা দেখে
টিয়ারও মনে জাগে ব্যবসায় সফলতা।
আবার বিষণ্ন অবসাদে চোখ বুজে সে ভাবে,
টিয়াজন্মের রক্তমাংস, ডানা—
মানুষজন্মের তানানানা।
সন্ধ্যাকুড়া
কুয়াশায় হিমে সন্ধ্যাকুড়া টিলা চুপচাপ কাঁপে।
শিকড় জড়িয়ে ধরে গজারিতলায় বসে থাকি—
অবশেষে ঠিলা-ভরা গরম চোলাই হাতে হাতে… ।
আদিবাসী হদি পরিবারটির সবকিছু আজ ইসলাম।
অনেক অনেক বিধিনিষেধ তাদের বাস্তবতায়—
গজারির বল্কলে পেরেক মারা মিশনের চোখ দেখলাম।
তবু ওরা একান্ত গোপনে ঐতিহ্যের ভাত পচায়,
ধরা খেলে রিলিফের সুবিধাদি বন্ধ হয়ে যাবে—
সাত ভূতে ঘরদোর তছনছ করবে।
রাত গাঢ় হলে টিলা থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নামি—
পাহাড়ে এত শীত,
বাতাসে এত বিষ,
শীতের দেবতা চায় আরও ভোগ গান মাতলামি!
মদন সরকার
বাংলার শেষ কবিয়াল মদন সরকার কুঁজো হতে হতে
চাকা হয়ে গেছেন।
এখন তিনি কারো মুখ দেখতে পান না—
শুধু পা দেখেন আর মাটি দেখেন,
মাটিকে দিগন্ত ভেবে ভ্রম করেন।
ডাক পেলে এ বয়সেও মাইল মাইল
গড়িয়ে গিয়ে মঞ্চে ওঠেন, আসর মাতান।
এখন বাংলা স্টেশনে রেললাইনের পাশে
ঠাটা রোদের মধ্যে হাতুড়ি পেটাচ্ছেন মদন সরকার।
তার অসমর্থ হাতে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ হাতুড়ি।
তার কাছে নিচু এলাকার নিচু ঘরদোরের মানুষজন আসে।
জংধরা প্রায়-বাতিল কুপিবাতি, হারিকেন, মগ,
লোটার অসুখ সারাতে আসে তারা।
মদন সরকার হারিকেনে পানি ভরে
খালি চোখেই নিশ্চিত হচ্ছেন
কোথায় ছিদ্র, ফুটো।
ছিদ্রের ওপর সিসা বসিয়ে টুকটুক করে
হাতুড়ি পেটাচ্ছেন তিনি,
নিচু মানুষের নিচু ঘরদোরের অন্ধতা সারাচ্ছেন।
কৈ ও মেঘের কবিতা (১৯৯৬)
ভাটিয়ালি হাঁসিয়ালি
আয় আয় তৈ তৈ… ।
দল ছেড়ে দলের সঙ্গে চলেছি।
ওই নিচে চাঁদ দেখে ভেবেছি
উমা দিলে জেগে উঠবে, গান হবে গান।
কিন্তু, চাঁদ সরে সরে যায়,
আমারও জলের স্বভাব।
আজ দূরদেশ। অজানা বাতাস।
সন্ধ্যায় অচেনা কিশোরীর ডাক,
আয় আয় তৈ তৈ আয়… ।
নদীর কোমর ধরে ঝুঁকে থাকা ঝোপঝাড়ে গিয়ে লুকাই।
খুঁজি অপরাহ্ণে খেয়েছি যার শীধু।
অসংখ্য মুখের ভিড়ে সেই মুখ ডুবে গেছে।
সৃষ্টি ও রহস্যের ঝাঁপি নিয়ে নেমে রাত।
এইমাত্র অন্ধকার ফেটে বেরিয়ে এসেছি
চাঁদ, গোলগাল।
বালকের হাতে কুড়িয়ে পাওয়া বিস্ময়, আনন্দ।
চিড়িয়াখানা
বনমানুষটি সুমাত্রা দেশের।
খাদ্যপ্রাপ্তির আশায় তার বাড়িয়ে দেওয়া হাতটাকে
অনেকক্ষণ দেখলাম।
হাতের রেখাগুলো এত স্পষ্ট এত সহজ!
রেখা বলছে : বিদেশগমন, চিরনির্বাসন, বঙ্গদেশ।
দূত
এই পাখি বার্তাবহ
শীতের,
আর শীত পৃথিবীর ছোট বোন।
বৃক্ষ
ওখানে যে গাছটি দেখছ—
ঠিক করেছি এবারের শীতকাল আমি
তার সঙ্গে কাটাব।
প্রবল অনুধ্যানে জেনেছি
জগতে বৃক্ষই জননী।
খ।
কবন্ধ কয়েকটা বৃক্ষ। পড়ে আছে মৃত মানুষ।
কাটা হাত-পা নরম আঙুল ছড়ানো-ছিটানো,
কবন্ধ কয়েকটা বৃক্ষ। পড়ে আছে মৃত মানুষ।
গ।
আমি বৃক্ষ।
আমাকে কেটে কেটে তক্তা বানাও।
চেয়ার, টেবিল, আলনা, খাট, কিংবা নৌকা বানাও।
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
চেয়ারে বসো,
টেবিলে রাখো বইপত্র,
কাপড়দের বিশ্রামে রাখো আলনায়,
খাটে ঘুমাও কিংবা দাঁড় ধরে মারো টান হেইও… ।
আমি বৃক্ষ।
আমার কোনো ছায়া নেই।
হিজলজন্ম
সমুদ্রের সবচেয়ে ছোট মেয়ে এই হাওর। আষাঢ়ে ভাসা জল আর হু হু
ভাটি হাওয়ায় বুক অবধি ডু্বে আছি। শরীরজুড়ে প্রাগৈতিহাসিক গন্ধ।
গুপ্তস্রোত রহস্য করে বলে, জলের পাহারাদার।
আসে অনেকেই। জলপোকা, ভাটিয়ালি পাখি আর সর্পবন্ধুদের থেকে
ক্রয় করি জলদ অভিজ্ঞান।
মাইল মাইল দূরে দ্বীপের মতো তোমাদের গ্রাম। যখন মেঘের পায়ে
ঘুঙুর, বাতাসের পিঠে ভেঙে পড়ে বাতাসের পাহাড়। আতঙ্কিত
তোমাদের নাও-ট্রলার ঘাড় কাত করে আকাশের দিকে তাকায়, ডুবে
মরার ভয়ে দ্রুত ডাঙার দিকে ছোটে।
আমার স্বপ্ন মেঘ,
মেঘ আমার নারী।
জলমগ্ন ছ’মাস। তারপর ধীরে ধীরে বড় হয় যত স্বপ্ন-মেধা-শ্রম, সব
আমার সবুজ সন্তান।
হত্যামুখর দিন
উল্লাসে ফেটে পড়া ছোট ছোট ছুরি
আর চাকুদের পিতা রক্তাপ্লুত নেশায় চুর,
ঝিম মেরে বসে আছে কাছেই,
তার চোখ হিলহিলে তৃপ্তিতে ঢুলুঢুলু, আঁকাবাঁকা।
এদিকে, ছুরিদা ও চাকুদা চামড়া ছাড়াতে ছাড়াতে
কী দ্রুত ছড়িয়ে দিচ্ছে
ফরফর ধ্বনি।
এইভাবে দিকে দিকে ছুরি আর চাকুদের
উৎসব আজ। আজ ঈদ।
হত্যামুখর দিন।
আহা,
নতুন পোশাকে আনন্দে মেতেছে শিশুরা।
পৃথিবী
বাহ্! পৃথিবীটা দেখছি একেবারে নবীনা
এর নদীতে ডুব দেওয়া ভালো।
এরকম সচ্ছল নদীর ছলচ্ছলে
মনপবনের নাও ভাসিয়ে দেওয়া মন্দ নয়।
বাইসন ম্যামথের পেছনে ছুটতে ছুটতে
একদিন এরকম একটি পৃথিবীর সঙ্গে
দেখা হয়েছিল,
তার কথা মনে পড়ে।
আমি প্রতিদিন নতুন নতুন পৃথিবীর
সাক্ষাৎ পেতে ভালোবাসি।
আমি জানি অতীত মানে পুরনো নয়;
সে প্রতিদিন অষ্টাদশী রমণী, প্রতিদিন
বিবাহবার্ষিকী, প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করা।
পৃথিবী রজঃস্বলা চিরকাল,
আমি এর সঙ্গে খেলা করব এখন।
কবি পরিচিতি:
মাহবুব কবির। জন্ম: ২ জুন ১৯৬৮, দক্ষিণ নাগড়া, নেত্রকোণা। পেশায় সাংবাদিক। স্ত্রী সুলতানা ও কন্যা ব্রাহ্মিকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস।
প্রকাশিত কবিতার বই:
কৈ ও মেঘের কবিতা (১৯৯৬)
ফুলচাষি মালি যাই বলো (২০০৯)
বেসরকারি কবিতা (২০১২)
আয়নার দিকে (২০১৫)
নির্বাচিত কবিতা (২০১৬)
সম্পাদিত গ্রন্থ:
নব্বইয়ের কবিতা (১৯৯৯)
উকিল মুন্সির গান (২০১৩)
সম্মাননা: লোক সাহিত্য পুরস্কার (২০১২)
যোগাযোগ: kabir_mahbub@yahoo.com