ভাবছিলাম দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর চলচ্চিত্রের কথা। গত কয়েক বছরে নেপালের কিছু ছবি বিশ্বের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে সুনাম করছে। এমন সুনাম আমাদের ছবিও করছে। সে তুলনায় পাকিস্তানের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ডকুমেন্টারি ছবি দুইবার অস্কার জিতছে। সে তুলনায় ভারতের এত বড় ও এত ঐতিহ্যবাহী শিল্প থেকেও এমন কিছু আসেনি। যদিও এ আর রাহমান অস্কার জিতছে। কিন্তু সেইটা সম্পূর্ণই হলিউডি একটা সিনেমায় কাজ করার সুবাদে। সে তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার অপর দেশ শ্রীলঙ্কার খবর কি? বহু আগে শ্রীলংকার একটা ছবি আমরা দেখছিলাম। ‘ফোরসাকান ল্যান্ড’। সেই পরিচালককে দেখছি কেবল প্রডিউসারকে কাজে লাগানোর জন্য স্বস্তা চটকদারি বাংলা ছবি বানাতেও। কিন্তু শ্রীলংকার ছবি কি আসলেই তেমন? সেই আগ্রহ নিয়ে খুঁজতে শুরু করলাম। দেখলাম কানে সেরা ছবির পুরস্কার জিতছে এমন ছবিও আছে। পরে দেখা গেলো এই ছবি ফরাসি নির্মাতার। ভাষা, গল্প ও চরিত্র শ্রীলংকান ও সিংহলিজ। প্রেক্ষাপটও বলা যায় ফ্রান্স-ই। এই ছবির নাম ‘ধীপান’। বানাইছে ‘দ্যা প্রফেট’ খ্যাত জ্যাকস অডিয়ার্ড। ‘দ্যা প্রফেট’ দেখছি। তবে তার (পরিচালকের) নাম মনে রাখতে পারি নাই। কেবল মনে ছিলো ফরাসি নির্মাতা। ভালোও লাগছিলো। এক সময় ভুলে গেলে যা হয় আর কি। তো তার ছবি সামনে আসায় তা নামানো হইলো। নামায়ে দেখতে বসলাম।
ছবির প্রেক্ষাপট দুই তামিল গেরিলার জীবন। যুদ্ধ শেষের (শ্রীলংকান সরকার তামিল গেরিলাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দিয়ে শান্তি(!) প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে) পর দুই তামিল গেরিলার আত্মসংগ্রামের গল্প। সে যাক গে। ছবির একটা অংশকে চিহ্নিত করা হইছে শ্রীলংকা, ছোট একটা পার্ট ইন্ডিয়া আর পুরোটাই ফ্রান্সের একটা শহর। বলতে গেলে ছবির একটা বড় অংশই সেইটা। যেহেতু পুরো প্রোডাকশনটাও ফরাসি’ই। সেই অর্থে এইটা ফ্রেঞ্চ সিনেমা। কিন্তু ভাষা, ছবির কেন্দ্র লংকান বলে তাকে লংকান ছবিও ধরা যায়। আর তা করলে বলা যায় এই ছবির মধ্য দিয়া লংকান ছবি অনেকটা আগায় গেলো। অন্তত একটা ব্যাকগ্রাউন্ড সে পাইলো, যাতে আরও ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারবে ভবিষ্যতের নির্মাতারা। এই ভাবনা অবশ্য সিনেমা দেখার সময় মাথায় ছিলো না। পরে আসছে। তাই আপাতত বাদ। সিনেমা নিয়েই ভাবি একটু।
একটা কথা আছে, হয় সিস্টেম ভাঙো নইলে সিস্টেমে ঢুকো। এই সিনেমার মূল চরিত্রেরা সিস্টেম ভাঙতেই জীবন উৎসর্গ করতে চাইছিলো। একটা সময় যখন আর জীবনের কোনও মূল্যই ছিলো না, তখন তারা সিস্টেমেই ঢুকছে, তবে বিকল্প সিস্টেমে। সেইটা প্রবাস জীবন। এইখানে একটা প্রবাস জীবনে নিজেদের ব্যক্তিক দ্বন্দ্বগুলোকে বহু কষ্ট করে হলেও তারা অতিক্রম করছে। আর এই অতিক্রমের আগে আর নিজেকে খুঁজে ফেরার লড়াইটাই এই সিনেমার উল্লেখযোগ্য দিক। অল্প কথায় শ্রীলংকান তামিল গেরিলারা যারা যুদ্ধ শেষেও বেঁচে ছিলেন তাদের অবস্থা কেমন হইতে পারে তার ও আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো উঠে এসেছে দারুণভাবে। ছবি দেখতে বসার পর প্রথম কয়েক মিনিট হয়ত একটু সময় লাগতে পারে বুঝে উঠতে, যদি না লাগে তাহলে তো কথাই নেই। তবে এরপর আর উঠে পরার সুযোগ থাকবে না। স্টোরি টেলিং এতই সাবলিল। হয়ত প্রেক্ষাপট আর ফ্রেম-ভাষা ভিন্ন, এই যা।
Dheepan (2015) Free online streaming Link:
https://newmovies.to/dheepan/