এই সংকলনে রয়েছেন লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের কবিরা। এঁদের মধ্যে কেউ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মুক্তিসংগ্রামে শহিদ হয়েছেন, কেউ আবার সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও কলমের তরোয়ালে বিদ্ধ করতে চেয়েছেন স্বৈরশাসককে। কারো কবিতায় আবার ধ্বনিত হয়েছে চিরন্তন প্রেম ও মানবতা। বিভিন্নতা থাকলেও তাঁদের রচনার অভিন্ন সুরটি কিন্তু, লাতিন বিশ্বের জাতীয় স্বাধীনতা, মানবাত্মার মুক্তি।
“তাম্বোরিলো” মধ্য আমেরিকার অরণ্যের একটি ফুল। গুয়াতেমালার বিপ্লবী কবি ও লেখক মারিও পায়েরাজ লিখেছিলেন ‘ প্রথম বসন্তে উচ্ছ্বসিত এক রাশ হলুদ তাম্বরিলো ফুল ভালোবাসা আর কমরেডদের ভালোবাসতে শেখা—-দুই-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ‘ ফুলটির বর্ণ হলুদ হলেও কবিদের স্বপ্ন রঞ্জিত। তাই এই সংকলনের নাম দেওয়া গেল তাম্বোরিলো ফুলের নামে।
ভাষান্তর ও ভাষ্য : মৃন্ময় চক্রবর্তী
চিলি
নিকানোর পাররা
জন্ম ১৯১৪। পাবলো নেরুদার পর চিলির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আশ্চর্য শক্তিশালী কবি নিকানোর পাররা। প্রচলিত লোকগীতির ধারাকেই কথ্য ভাষার সাথে মিশিয়ে শ্লেষাত্মক দুর্লভ কাব্য রচনা করেছেন। তাঁর “কবিতা ও বিরুদ্ধ কবিতা” একটি উল্লেখ্য কাব্যসংকলন। কবি ২০১৪ সালে শতায়ু পূর্ণ করেছেন।
আমার বলা কথাগুলো আমি ফিরিয়ে নিতে চাই
চলে যাবার আগে
আমার একটি প্রত্যাশা পূরণের বাসনা আছে।
শ্রদ্ধেয় পাঠক
আমার বইগুলো পুড়িয়ে ফেলুন।
আমি যা বলতে চেয়েছিলাম এতে মোটেও তা নেই
যদিও এসব রক্ত দিয়েই লেখা হয়েছিল,
কিন্তু এগুলো তা নয়
যা আমি বলতে চেয়েছিলাম।
এরা কেউই আমার চেয়ে বেশী বিষাদ বহন করতে পারে না,
কিন্তু আমি আমার ছায়ার কাছেই হেরে গেছি :
আমার শব্দরা আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে
ক্ষমা করুন পাঠক, প্রিয় পাঠক
যদি আমি আপনাকে
উষ্ণ আলিঙ্গনে বিদায় জানাতে না পারি,
যদি আমি একটি বিষণ্ণ হাসি রেখে
জোর করে বিদায় নিতে চাই।
হয়ত এই লেখাগুলোর সবটাই আমি
তবু আমার শেষ কথাটুকু শুনুন :
আমি ফিরিয়ে নিতে চাই আমার কথাগুলো।
এক পৃথিবী বিষাদ নিয়ে বলা
আমার কথাগুলো আমি ফিরিয়ে নিতে চাই।
♦♦
গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল
গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রালের জন্ম ১৮৮৯ এ, চিলির ভিকুনায়। প্রকৃত নাম লুসিয়া গড়োই আলকাইয়াগা। তিনি লাতিন আমেরিকার প্রথম নোবেল বিজয়িনী। ব্যর্থ প্রেম এবং গভীর মাতৃত্বের অনুভব তাঁর কবিতার মূল প্রবাহ। পাবলো নেরুদা কৈশোরে তাঁর রচনা থেকে প্রেরণা খুঁজেছিলেন। ১৯৫৭ সালে এই বিদূষী নারীবাদী কবি ও প্রজ্ঞাময়ী শিক্ষাবিদের জীবনাবসান ঘটে।
গোধূলি
আমি টের পাচ্ছি আমার হৃদয় গলে পড়ছে
নরম মোমের মত গলে পড়ছে
আমার শিরা উপশিরা তেলের মত ধীরে বহমান
এবং একেবারেই মাতাল নয়,
আমি ছুঁতে পারছি আমার অনুভব
স্থির, প্রচ্ছন্ন, সোনার হরিণের মতো।
♦♦
এল সালভাদর
রোকে দালতোন
দালতোনের জন্ম ১৯৩৫ সালে, সালভাদরের এক উচ্চবিত্ত পরিবারে। উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৬ তে যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। ১৯৫৯-৬০ এ কৃষক অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশ নিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। তাঁর মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে স্বৈরাচারী একনায়ক সরকার। কিন্তু অদ্ভুতভাবে ফাঁসির দিনেই সেই স্বৈরশাসকের পতন ঘটে, আর তিনি বেঁচে যান।১৯৬১ তে দেশত্যাগ করে মেক্সিকো চলে যান। এখান থেকেই তাঁর কাব্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটে। এরপর তিনি চলে যান কিউবা। এখানে এসে তিনি প্রচুর লেখালেখি করেন। এবং লাতিন আমেরিকার একজন অন্যতম প্রধান বিপ্লবী কবি হয়ে ওঠেন। কিউবা থেকে যান প্যারাগুয়ে, সেখানে তাঁর রাজনৈতিক বক্তৃতা অনেককে চমৎকৃত করে।
এরপর ১৯৬৫ তে ফিরে আসেন দেশে। যোগদেন সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে। প্রথমে মার্ক্সবাদী – লেনিনবাদী দল তাঁকে সামরিক শাখায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়নি। তিনি প্রমাণ করেন যে তিনি কবি হতে পারেন কিন্তু প্রয়োজনে বন্দুক ধরতেও পারেন।
সশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। এবারেও ফাঁসির আদেশ হয় তাঁর। কিন্তু এবারেও অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। ফাঁসির জন্য নির্ধারিত দিনের আগেই ভুমিকম্পে জেলের দেওয়াল ধসে পড়ে। তিনি পালিয়ে যান। সন্তের ছদ্মবেশে গোপনে আবার তাঁর কমরেডদের সাথে যোগাযোগ করেন।
কিন্তু অত্যন্ত বেদনার বিষয় হল, লাতিন আমেরিকার অন্যতম শক্তিশালী বিপ্লবী কবি, যাঁকে চে গুয়েভারার পরেই স্থান দেয় লাতিন বিশ্ব, তাঁর মৃত্যু হয় ১৯৭৫ এর ১০ মে, বিপ্লবীদের মধ্যে চলা এক আন্তঃসংঘর্ষে।
তোমাকেই চাই আমি তোমাকেই
ভালবাসা, এই জীবন চাওয়া পাওয়ার,
মিষ্টি গন্ধের মতো, নীল আকাশের মতো
জানুয়ারির সুন্দর প্রকৃতির রঙে উজ্জ্বল।
আমার রক্ত ফুটছে টগবগ করে
আমি চোখ জুড়িয়ে হাসছি,
যদিও হাসিরা জানে এখানে অনেক অশ্রুকুঁড়ি আছে।
আমি বিশ্বাস করি, এই পৃথিবী সুন্দর, বড় বেশী সুন্দর,
আর এই কবিতাও, রুটির মতোই সবার জন্য, সবার।
আমার শিরাপ্রবাহ আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, একেবারেই নয়,
এ তো তাদেরই একতার ভেতরে বয়ে যাচ্ছে
যারা সংগ্রাম করেছে জীবনের জন্য
ভালবাসার জন্য, ছোট ছোট চাওয়া পাওয়ার জন্য,
সুন্দর প্রকৃতি আর রুটির জন্য।
আর একটি কবিতার জন্য যা সবার, একান্তই সবার!
♦♦
কলম্বিয়া
আর্মান্দো ওরোজকো তোভার
তোভারের জন্ম ১৯৪৩ সালে। তিনি একাধারে কবি ও চিত্রশিল্পী। কলম্বিয়ার বোগোটা শহরে তাঁর জন্ম। কিউবার হাভানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে পাশ করে রেডিও হাভানায় চাকরি করেছেন। পরে কলম্বিয়ায় ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার পাশাপাশি সাংবাদিকতাও করেছেন।
তিনি তাঁর বাবার প্রভাবে সাহিত্য বিষয়ে আগ্রহী হন। প্রথমদিককার লেখালেখি শুধু প্রেম বিষয়েই সীমাবদ্ধ ছিল, পরে মায়াকোভস্কি,নেরুদা, হারনানদেজ,ভালেজোর প্রভাব তাঁর উপর পড়ে।
কিউবা বিপ্লবের দিনগুলোয়, যখন তিনি কিউবায় ছিলেন, তখন প্রচুর লেখালেখি করেছেন। পুরস্কার পেয়েছেন। তার কয়েক বছর পর দেশে ফিরে সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা করেন, কিন্তু পরে আবার সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে লেখায় মনযোগী হন। বহুবার মতবাদ ও লেখনির জন্য কারাবাস সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। তিনি নিজেকে একজন নাস্তিক এবং বস্তুবাদী ভাবতেই পছন্দ করেন। গত ৩০ জানুয়ারির ‘১৭ তিনি প্রয়াত হয়েছেন।
তোভারের কবিতার সম্ভবত এই প্রথম বাংলা তর্জমা হল।
উদাহরণ
(আউগুস্তো লারা সাঞ্চেজের জন্য)
সংগ্রামের ভেতর জয়
লুকানো থাকে রূপকের আকারে
আয়নার পিছনে থাকা
মুখের মতই।
*
যে কোনো দিন হয়ে যেতে পারে তোমার লড়াই
আর প্রতিটি কোণে একটি স্বপ্ন
অথবা বর্শা থাকতে পারে তোমার প্রতীক্ষায়।
*
পরাজয়ের আশা কোরো না
যদি এখনো নিশ্চিহ্ন হয়ে না যাও
তাহলে তোমার আত্মার ভেতর মরচে তরবারির ক্ষয় করতে থাকবে।
*
মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা কোরো না,
মৃত্যুর জন্য একটি উদাহরণ দরকার।
♦♦
পেরু
হাভিয়ের হেরাউদ
পেরুর চিরতরুণ কবি হাভিয়ের হেরাউদ পেরেজের জন্ম ১৯৪২ এ। যৌবনে তিনি পেরুর ন্যাশানাল লিবারেশন আর্মিতে যোগ দেন। বলিভিয়ায় গিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হন। ১৯৬৩ -র জানুয়ারিতে তাঁর নেতৃত্বে একটি ছোট গেরিলা দল দক্ষিণ পেরু সীমান্ত পেরিয়ে দেশে প্রবেশ করে। কিন্তু একধরণের পরজীবী ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে অসুস্থ অবস্থায় নিকটবর্তী শহরে চিকিৎসার জন্য প্রবেশ করতে চেষ্টা করলে তাঁকে পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়। এবং ১৫ মে মাত্র ২১ বছরের প্রাণবন্ত হেরাউদকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে।
গেরিলার মন্ত্র
কেননা আমার স্বদেশ সুন্দর,
যেন আকাশে উঁচানো তলোয়ার,
এবং শুধু আজকের নয় চিরকালের জন্য মহান
সেই সঙ্গে আরো বেশী রূপময়
আমি তার কথাই বলি তাকেই রক্ষা করি
আমার জীবনের বিনিময়ে।
বিশ্বাসঘাতক কী বললো আমি তার পরোয়া করি না।
আমরা অতীতকে চাপা দিয়েছি
ইস্পাতের গাঢ় অশ্রুতে।
আমাদের স্বর্গ,
আমাদের প্রতিদিনের রুটি,
আমরা রুয়েছি, গোলায় তুলেছি
গম আর মাটি,
এবং গম আর মাটি
আমাদেরই,
এই সমুদ্র
এই পাহাড় আর পাখিরা
চিরকালের জন্য হবে আমাদেরই ।
♦♦
জোসে ভালদিভিয়া দোমনিগুয়েজ ‘ জোভালদো’
পেরুর জনগণের কবি জোভালদোর জন্ম ১৯৫১ সালে। তিনি পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। পেরুতে চলমান বিপ্লবী গণযুদ্ধের একজন সৈনিক হিসেবে তিনি যোগ দেন। এইসময়ে তাঁর কবিতা অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। তিনি গ্রেপ্তার হন। এল ফ্রন্টন নামে একটি দ্বীপে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৮-১৯ জুন জেলবিদ্রোহ দমনের অছিলায় পেরুর ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ৩০০ জন বন্দির সঙ্গে জোভালদোকেও হত্যা করে।
প্রিয় জনতার জন্য গান
আমায় ক্ষমা কোরো যদি আমি গোলাপের জন্য কবিতা লিখতে না পারি,
অথবা আমার অচেতন থেকে কোনো বুর্জোয়া ভাবনা বেরিয়ে না আসে,
অথবা যদি আমার হাতে কোনো রত্ন বা সুগন্ধ না থাকে।
ক্ষমা কোরো মাগো
আজ যদি ঘরের কাজে কোনো সাহায্য করি,
ক্ষমা কোরো আমায়, কিন্তু এও তো ঠিক… আমি কখনও এসব পারি না!
জঞ্জাল আর একাকিত্বে ভরা প্রাচীন রাস্তায়
আমি পারি না ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াতে।
আমি কখনোই সেই নিষ্কর্মা ছেলেটির মতো হতে চাই না অথবা প্রতিবেশী সেই বাচ্চাটির মতো,
যে রুটি কখনোই মিলবে না তার জন্য যে দীর্ঘ ক্ষুধার কামড় সয়েই চলবে।
আমাদের দরজার সামনে থেকে যতদূর যাওয়া যাক শুধুই রক্তের দাগ।
ক্ষমা করো আমায় হে জীবন
যদি একটি শিশুর মতো আমি ভাবতাম তোমাকে নিয়ে যাব
একটি বিলাসবহুল কামরায় ধনীরা যেমন যায়
এবং তোমাকে সাজাব রূপকথার স্বপ্নগুলো দিয়ে
ক্ষমা করো আমায়, কিন্তু এই যে…..
আমার রক্তেরা আবার বেঁচে উঠেছে ভোরের আলোয়,
আমার গালে,
নতুন স্বদেশের স্বপ্নে।
আমার অশ্রুর উজ্জ্বল লাল চিহ্ন জেগে আছে হাওয়ায়
আমার দুপায়ে দাঁড়ানো চেতনার মতো।
আমার রক্তের মশাল যেমন গানের সাথে তাল রাখে
তেমনই মাটিকে চুম্বন করবে আমার হাত।
আমার গান ঝড়ের গান,
পুনা মালভূমির,
গমখেতের ভাষা
আমার ভাষা,
গরিব মানুষের অতি সহজ ভাষা।
এজন্য আজ আমায় ক্ষমা কোরো
আমি লিখতে পারিনি
যা তুমি ভালবাস, অথচ যা আমার পক্ষে বেমানান,
আমি পারিনি কারণ পৃথিবী কাঁপছে
ধ্বসে পড়ছে পুরোনো দুনিয়া
আরো আরো কাছে শোনা যাচ্ছে নদীর গর্জন
বিদ্যুৎ তরঙ্গ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রাচীরগুলো।
এসব কিন্তু আমার কথা নয়
একথা বলছে ইতিহাস
বলছে মেহনতি জনতা
তাই আমিও বলতে চাই এই কথাগুলো
এসো উঠে দাঁড়াও
পুনাগুলোর* দিকে তাকাও
দেখ গমখেতগুলো জয়ী হচ্ছে
ধ্বসে পড়ছে ভয়
তাদের রক্তদানের ভিতর দিয়ে
দারুন সূর্যোদয়ের মত।
জনতার উজ্জ্বল দীপ্তিমান
এই পদযাত্রা এগিয়ে চলেছে
তারা দেখতে পাচ্ছে ফুটনোন্মুখ নতুন পৃথিবী।
ক্ষমা কোরো আমায়
কারণ আমার দেশের মানুষ
এখন লড়াই করছে খেতে আর কারখানায়।
____________________
* পুনা- মালভূমি
♦♦
মেক্সিকো
ফিল গোল্ডভার্গ
জন্ম ১৯৩৪। ফিল গোল্ডভার্গ আদতে আমেরিকার মানুষ। সেখানকার ক্যালিফোর্নিয়ায় তাঁর জন্ম। জাপাতিস্তা আন্দোলনের পটভূমিকায় তিনি বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন। তিনি ছিলেন জাপাতিস্তা সলিডারিটি কনসলিডেশনের একজন অন্যতম সংগঠক। ২০০৪ এ তিনি প্রয়াত হন।
হারাবার কিছু নেই
“We have nothing to lose, absolutely nothing…”
—জাপাতিস্তা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (EZLN)
(লাকান্দোন অরণ্যের ঘোষণা, ১৯৯৩)
……. হারাবার কিছু নেই
…….সত্যিই কিছু নেই,
…….সব চলে গেছে,
অদৃশ্য হয়েছে উত্তরের কোনো গোপন কক্ষে
…… লোভী চোখের পাহারায়
……. তাই ন্যায় বিচারের দেখা নেই
নিপীড়ন
……. তীব্র বঞ্চনা,
এখানে কোনো বিদ্যালয় নেই
কেবল মৃত্যুর শ্রেণীকক্ষগুলো ছাড়া
……. যেখানে শিশুরা শেখে কেমন করে মরতে হয়
খিদের জ্বালায়
……. অথবা কোনো কমজোরি পোকার মত,
কোনো জমি নেই এখানে,
……. কেবল এবড়োখেবড়ো পাথর
……. এমনকরে নিঙড়ে নেওয়া যার আর দেবার কিছুই নেই
আর আছে বন্ধ্যা প্রতিশ্রুতির
…….. কাগুজে ভূচিত্রগুলো
এখানে কোনো ঘর নেই,
……. শুধু পাতলা কাঠের আবরণ
……. বাতাসকে বোকা বানাবার জন্য,
যে জানে আমরা ধর্ষিত হয়েছি
……. আর পড়ে আছি ক্ষতবিক্ষত হয়ে,
……. আবরণহীন পা-জোড়া শীতের দিকে বাড়িয়ে,
এখানে কোনো পরিকল্পনা নেই
……. কেবল ধনীদের মধ্যকার মুক্তবাণিজ্য ছাড়া,
যখন এসবের বিরুদ্ধে আমাদের নাক কুঁচকে ওঠে
……. তখন শস্যরাঙানো জানালাগুলোয়
আঠার মতো লেগে থাকে
……. আমাদের পুয়েবলোর* শুকনো রক্ত
……. আমাদের পূর্বপুরুষের,
এখানে কোনো ন্যায়বিচার নেই
……. বন্ধ আদালত,
বিচারপতির হাতুড়ি গুঁড়ো করে দেয় আমাদের মাথা,
……. আমাদের হাড় আর্তনাদ করে
বাস্তা — বাস্তা — বাস্তা**
……. তারা আর্তনাদ করে
……. আমাদের হারাবার কিছু নেই।
____________________________
* পুয়েবলো — আমেরিকার প্রাচীন অধিবাসী।
** বাস্তা— যথেষ্ট হয়েছে।
♦♦
গুয়াতেমালা
অটো রেনে কাস্তিল্লো
গুয়াতেমালার বিপ্লবী গেরিলা যোদ্ধা, কবি অটো রেনে কাস্তিল্লোর জন্ম ১৯৩৬ এ। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা CIA ১৯৫৪ সালে আরবানেজের গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্যু দ্বারা উৎখাত করলে কাস্তিলো দেশত্যাগ করে সালভাদরে চলে যেতে বাধ্য হন। সেখানে গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে কবি রোকে দালতোন এবং অন্য বিপ্লবী কবি ও লেখকদের সঙ্গে। তাঁদের সাহায্যে তাঁর প্রথমদিককার লেখাগুলি প্রকাশ পায়। ১৯৫৭ তে স্বৈরাচারী আরামাসের মৃত্যুর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। তারপর ১৯৫৯ এ উচ্চশিক্ষা নিতে সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানিতে যান। ১৯৬৪ তে দেশে ফেরেন এবং ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দেন। এরপর ‘এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার’ নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই সময় তিনি প্রচুর কবিতাও লেখেন। এই একই বছরে আবার তিনি গ্রেপ্তার হন, কিন্তু জেল থেকে পালাতে সক্ষম হন। তারপর ইউরোপ চলে যান। পরে গোপনে দেশে ফিরে আসেন এবং জাকাপা পাহাড়ের সশস্ত্র বিপ্লবী গেরিলা সংগ্রামে যোগ দেন। ১৯৬৭ তে তিনি আচমকাই তাঁর কয়েকজন কমরেড ও স্থানীয় সহযোগীসহ আটক হন। শত্রুপক্ষ তাঁদের অকথ্য নির্যাতন করে এবং বর্বরের মতো জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে।
অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা
একদিন
আমার দেশের
অরাজনৈতিক
বুদ্ধিজীবীদের
সহজ সরল লোকেরা
প্রশ্ন করবে।
*
তাদের জানতে চাওয়া হবে
যখন ছোট্ট নিঃসঙ্গ
মধুর আগুনের মতো
তাদের জাতি ধীরে ধীরে মরতে বসেছিল
তখন তারা কী করছিল?
*
কেউ তাদের জিজ্ঞাসা করবে না
তাদের পোষাক,
তাদের মধ্যাহ্নভোজনের পর
দীর্ঘ দিবানিদ্রা সম্পর্কে,
কেউ জানতে চাইবে না
তাদের ‘শূন্যগর্ভ ভাবনার’
নিস্ফল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে,
তাদের উঁচু টাকাকড়ির বিদ্যেকে
কেউ পরোয়াই করবে না।
*
গ্রীক পুরাণ সম্পর্কে
প্রশ্ন করা হবে না তাদের,
কিংবা সম্মান জানানো হবে না তাদের
ব্যক্তিগত বিরক্তির প্রতি,
যখন তাদের মধ্যে কেউ একজন
মরতে বসেছে
কাপুরুষের মতো।
*
তাদের কিছুই জিজ্ঞাসা করা হবে না
তাদের অযৌক্তিক
ন্যায্যতা সম্পর্কে,
সম্পূর্ণ মিথ্যার ছায়ায়
যার জন্ম হয়েছে।
*
সেই দিন
সবচেয়ে সরল মানুষেরা আসবে
*
অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের
বইয়ে আর কবিতায়
যারা ঠাঁই পায়নি,
কিন্তু প্রতিদিন তাদের
যুগিয়েছে দুধ আর রুটি,
তর্তিলা আর ডিম,
তারা, যারা তাদের গাড়ি চালিয়েছে
যারা তাদের কুকুর আর বাগানের যত্ন নিয়েছে
এবং তাদের জন্য মেহনত করেছে
তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে :
*
“তোমরা কী করছিলে যখন গরিবেরা
যন্ত্রণা ভোগ করছিল, যখন জীবন
আর সহানুভূতি
তাদের জন্য পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল?”
*
আমার প্রিয় দেশের
অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীরা
তোমরা উত্তর দিতে পারবে না
*
তোমাদের নাড়িভুঁড়ি গিলে ফেলবে
এক শকুনের স্তব্ধতা
*
তোমাদের নিজেদের দুর্দশা
কুরে কুরে খাবে তোমাদের আত্মাকে
*
আর তোমরা চুপ হয়ে থাকবে নিজেদের লজ্জার ভেতর।
♦♦
মারিও পায়েরাজ
জন্ম ১৯৪০,গুয়াতেমালার চিমালতিনানগোয়। ছাত্রজীবনেই গুয়াতেমালার লেবার পার্টিতে যোগ দেন। এরপর কিউবায় থাকাকালীন মার্কসবাদী দার্শনিক-কবি-গদ্যকার মারিও পায়েরাজ, গুয়াতেমালার “গরীব গেরিলা দলে” ( people’s guerrilla army) যোগ দেন এবং অন্যতম প্রধান গেরিলা নেতা হয়ে ওঠেন। পরে সংগঠন পরিচালনায় রণকৌশলগত পার্থক্যের কারনে তিনি সেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে এসে “বিপ্লবী অক্টোবর” নামে একটি নতুন সংগঠন গড়েন। ১৯৯৫ সালে মেক্সিকো সিটিতে আত্মগোপনে থাকাকালীন তিনি প্রয়াত হন। তাঁর যা কিছু ছিল তা দূরবর্তী একটি গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়,কিন্তু কিছু দিন পরে কবর থেকে সেসব লোপাট করে দেয় সমাজবিরোধীরা, আজও তা ফিরে পাওয়া যায় নি। তিনি গুয়াতেমালার অন্যতম সেরা লেখক ও কবি হিসেবে পরিচিত। গুয়াতেমালা অরণ্যের বিপ্লবী গেরিলাযুদ্ধ নিয়ে লেখা তাঁর গ্রন্থ “The days of jungle” (“বিষুব অরণ্যের দিন”) বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছে।
তাম্বোরিলো
অরণ্যে যে লড়াই চালাতে চায়
তাকে তাম্বোরিলো ফুলের কাছে পাঠ নিতে হবে
কোনো জেনারেলই তার শত্রুপক্ষকে ঘেরাও করতে পারবে না।
হলদে কুঁড়ির কর্তৃত্ব নিয়ে
প্রত্যেক ফেব্রুয়ারিতে এর আক্রমণ শুরু হয়
এবং বসন্তে ফুটে ওঠে সম্পূর্ণ ফুল
তারপর পশ্চাদপসরণ করে রুটমার্চের কোনো শব্দ ছাড়াই।
♦♦
হন্ডুরাস
জোসে লুই কোয়েসাদা
জন্ম ১৯৪৮। কোয়েসাদা ১৯৭৪ এ তাঁর প্রথম বই প্রকাশের পর পরই হন্ডুরাসের বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান কবি ও লেখকদের সঙ্গে নিয়ে সমাজ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৮০ সালে হন্ডুরাসের ইউনিভার্সিটি অব হন্ডুরাস পোয়েট্রি পুরস্কারে ভূষিত হন এই স্বনামখ্যাত কবি।
দুরারোগ্য প্রেম
তোমার নাম দৈনিক কিংবা সাময়িকপত্রে
প্রকাশিত হয় না।
তোমার নামে কটুক্তির গন্ধও মেলে কদাচিৎ।
কে-ই বা বেদনার গল্প শোনায় তোমার কথা ভেবে,
ভিনদেশিরা মনেই রাখেনি তুমি আছ,
কিন্তু আমি তোমায় অনুভব করি
হন্ডুরাস, আমার সংকীর্ণ গিরিখাত, আমার নিয়তি, আমার শিকল।
আমার ঠোঁট থেকে এই উষ্ণ পানপাত্র সরিয়ে নিও না,
জানি তোমার কটুগন্ধ আছে,
তবু তোমার থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন কোরো না!
♦♦
নিকারাগুয়া
আর্নেস্তো কার্দেনাল
জন্ম ১৯২৫। নিকারাগুয়া তথা লাতিন আমেরিকার স্বনামখ্যাত কবি আর্নেস্তো কার্দেনাল মার্তিনেজ। তিনি একজন ধর্মযাজক হয়েও নিকারাগুয়ার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিপ্লবের ধর্মতত্ব বা লিবারেশন থিয়োলজির অন্যতম জনক তিনি। সান্দানিস্তা বিপ্লবের পর কার্দেনাল নিকারাগুয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। এই মার্কসবাদী ধর্মযাজকের সঙ্গে পোপ দ্বিতীয় জন পলের বিরোধ বাধে, কার্দেনাল যাজক হিসেবে গুরুত্ব হারান। পরে সান্তানিস্তা সরকারের, সরকার পরিচালন ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করে মন্ত্রীত্বও ছেড়ে দেন কবি।
তোতাপাখিরা
আমার বন্ধু মাইকেল হন্ডুরাস সীমান্তের
উত্তর সোমোতোর একজন সেনা অফিসার,
তিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি কিছু
বে-আইনি তোতার খোঁজ পেয়েছিলেন
যেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চোরাচালান হবার জন্য
অপেক্ষা করছিল, সেখানে গিয়ে ইংরিজি বুলি শেখানো হবে।
*
সেখানে ১৮৬টি তোতাপাখি ছিল
যার মধ্যে ৪৭টি তখনই খাঁচার ভেতর মারা গিয়েছিল।
যেখান থেকে তাদের ধরা হয়েছিল সেখানে
তিনি ওদের ফিরিয়ে নিয়ে আসছিলেন
কিন্তু সেই লরি এসে যেই প্রবেশ করল সেই সমতলে
*
ঐ পর্বতমালার কাছে, যেখানে ছিল তোতাদের বাসা
(সমতলভূমির পিছনেই দাঁড়িয়েছিল বিরাট পর্বতসারি)
পাখিগুলো উত্তেজিত হয়ে উঠল, শুরু করল ডানা ঝাপটাতে
ধাক্কা দিতে লাগলো খাঁচার গায়ে।
*
যখন খাঁচাগুলো খুলে গেল
তারা ঠিক যেন তীর বৃষ্টির মতো ছুটে গেল
সোজা তাদের পাহাড়গুলোর দিকে।
*
আমার মনে হয় বিপ্লব ঠিক এই কাজটাই করে :
সে খাঁচা থেকে আমাদের মুক্ত করে
যেখানে ওরা আমাদের ইংরিজি বুলি শেখাতে ফাঁদবন্দি করেছিল
সেখান থেকে সে আমাদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনে
যেখান থেকে আমাদের উৎখাত করা হয়েছিল,
তাদের সবুজ পাহাড়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেয় তাদেরই সবুজ তোতাসাথীরা।
*
কিন্তু সেখানে ছিল আরো ৪৭টি, যারা নিহত হয়েছে।
♦
গিয়াকোন্দা বেল্লি
বেল্লির জন্ম ১৯৪৮ সালে নিকারাগুয়ার মানাগুয়ায়। উচ্চশিক্ষিত এবং বিত্তবান পরিবার থেকে আসা নিকারাগুয়ার একজন গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবী তিনি। বেল্লি ১৯৭০ এ সামোজা স্বৈর সরকারের বিরুদ্ধে নিকারাগুয়ার সান্দানিস্তা ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্টের নেতৃত্বে শুরু হওয়া জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। বিপ্লবের পরেও তিনি একজন সাহসী গণতান্ত্রিক কন্ঠ হিসেবে সমালোচনা করেছেন সরকারের অনৈতিক কার্যকলাপের।
হরতাল
আমি একটা হরতাল চাই যেখানে আমরা কেউ ঘরে থাকব না।
এ হবে কাঁধ, মাথা, চুলের হরতাল,
শরীরে শরীরে জন্ম নেবে যে হরতাল।
আমি একটা হরতাল চাই
শ্রমিকের ঘুঘুপাখির
চালকের ফুলের
কারিগরের শিশুর
চিকিৎসকের মায়ের
আমি একটা বিরাট হরতাল চাই
যাতে এমনকি থাকবে প্রেমও
একটি হরতাল যাতে সব কিছু স্তব্ধ হয়ে যাবে
ঘড়ি কারখানা
নার্সারি ইউনিভারসিটি
বাস হাসপাতাল
রাজপথ বন্দর
এ হবে চোখের, হাতের, চুম্বনেরও হরতাল,
এমন একটি হরতাল যেখানে নিষিদ্ধ থাকবে শ্বাস চলাচল
একটি হরতাল যেখানে নীরবতার জন্ম হবে
স্বৈরাচারীর পলায়নরত পায়ের শব্দ শোনার জন্য।
♦
জ্যাসপার গার্সিয়া লাভিয়ানা
নিকারাগুয়ার স্পেনীয়-রোমান ধর্মযাজক, কবি জ্যাসপার গার্সিয়া লাভিয়ানার জন্ম ১৯৪১ সালে। তিনি গ্রামের কৃষক ও দরিদ্র জনসাধারণের ভেতরে কাজ করতে গিয়ে অবর্ণনীয় শোষণ অত্যাচার প্রত্যক্ষ করে সেসবের প্রচন্ড সমালোচক হয়ে ওঠেন। লিবারেশন থিয়োলজিতে বিশ্বাসী লাভিয়ানাকে সামোজার ন্যাশানাল গার্ড দুবার গোপনে হত্যার চেষ্টা চালায়। তিনি দেশত্যাগ করে কোস্টারিকায় পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। এখানে এসে তাঁর পরিচয় হয় দেশত্যাগী সান্দানিস্তা ন্যাশানাল ফ্রন্টের বিপ্লবীদের সঙ্গে। তিনি তাঁদের চিন্তা ও আদর্শের সাথে নিজের ভাবনার মিল খুঁজে পান এবং FLSN এ যোগ দেন। কিন্তু ১৯৭৮ সালে কোস্টারিকা সীমান্তে সান্দানিস্তা গেরিলা বাহিনীর যে ইউনিটে তিনি ছিলেন, সেটি বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়, লাভিয়ানা নিহত হন। বিপ্লবের পরে নিকারাগুয়ার খ্যাতনামা কবি আর্নেস্তো কার্দেনালের তত্বাবধানে তাঁর লেখাপত্র ও কবিতাগুলি সংকলিত হয়।
সরোবরে ধ্যান
নদীতীরে ধ্যানস্থ এই তোমার থেকে আমি অনেক দূরে
সুরচ্যুত স্বরলিপি বাঁধছি এখন আবার সুরে সুরে
অবিরাম ঢেউ বুনছি নিবিড় শব্দ পুরে ছন্দে এবং ভাষায়
যেমন ছিল সেই সে লিপি পেলাম ফেরত তরঙ্গরা আসায়
সরোবর ফের পাঠ বলে যায়
জল নাচিয়ে ফেনায় ফেনায়
আবার বলে এবং আবার কন্ঠে তুমুল সেই অবিরাম নাম
মুক্তি মুক্তি মুক্তি মুক্তি মুক্তির সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম!
অনুবাদক পরিচিতি
মৃন্ময় চক্রবর্তী : জন্ম- ১৯৭৬। অনুবাদক মূলত কবি-গদ্যকার এবং চিত্রশিল্পী। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : বেঁচে থাকার স্বপ্নগুলি ( ২০০৪), এই মৃগয়া এই মানচিত্র ( ২০০৮)। পাঁচালি কাব্য: ভুখা মানুষের পাঁচালি ( ২০০৯)। সম্পাদিত গ্রন্থ পুস্তিকা : রাত্রির কঠোর বৃন্ত থেকে, মানিক শতবর্ষপূর্তি শমীবৃক্ষ, নির্মোহ রবীন্দ্রনাথ ( শমীবৃক্ষ)। সম্পাদিত পত্রিকা: মাটির প্রদীপ।