ঘরবাড়ি | উম্মে রায়হানা

ই জিনিসটা গাড়ির ভিতরে খাইয়েন না আপা’ – ড্রাইভারের কথায় সংবিৎ ফিরে পেলো মুমু। সে খুব মন দিয়ে একটা জয়েন্ট রোল করার চেষ্টা করছিলো। পেপারের আঠার দিকটা ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারছে না। তাদের পিকাপ জাতীয় মিনি ট্রাকটা থেমে আছে।

ছাদের ওপরে বসে থাকা হেল্পার মাত্রই মুমুর পাশের জানলায় পা দিয়ে নেমে দোকানে গেছে। সেটা টের পেলেও তাকায়নি। দোকান একটু দূরে, পিছনে। আশপাশে অন্ধকারই। ড্রাইভারের কথার জবাব না দিয়ে সে তার আর ড্রাইভারের মাঝের সরু জায়গায় কায়দা করে বসে ঘুমাতে থাকা শুক্কুরকে বললো, ‘লাইটটা জ্বালান তো শুক্কুর ভাই।’ শুক্কুর ডাক শুনে উঠে গাড়ির হলদেটে আলোটা জ্বেলে দিলো। তাকে দেখে বোঝার কোন উপায় নাই যে সে মাত্রই ঘুমাচ্ছিলো। লাইট জ্বেলে দিয়ে সে আবার পেছনে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো । একটু আগে গাড়ীটা থামবার সময়ও একবার তার ঘুম ভেঙেছিলো, চোখ খুলে সাবধানে পরিস্থিতি যাচাই করে আবার ঘুমিয়েও পড়েছিলো।

মুমু পেপারের আঠার দিক খুঁজে পেলো। একটু আগে বানিয়ে রাখা উইড আর সিগারেটের মিশেল তামাকের কিছুটা রোলিং পেপারে ঢেলে, কাগজের তৈরি ফিল্টার বসিয়ে, আঠার দিকটা জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিপুণভাবে একটা জয়েন্ট রোল করলো সে। তারপর আরও একটা। না তাকিয়েও বুঝতে পারছে, ড্রাইভার পুরোটা সময় তার দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ মন দিয়ে দেখছে পুরো প্রক্রিয়াটা। রোল করা শেষ করে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো মুমু। তারপর সহৃদয়ভাবে বললো, ‘গাড়ির ভিতরে খাবো না, সামনে চলেন, এক পাশ কইরা গাড়ি রাখবেন, নাইমা খাবো।’

ড্রাইভার হয়তো এরকম সহজ সরল সমাধান ভাবেনি। একটু থতমত খেয়ে কী যেন বলতে চেষ্টা করলো। ঠিক তখন তার হেল্পার তার জানলার পাশে এসে ডাকলো- ‘কাকা’। মুমু এই ডাক শুনে হেসে ফেললো। তার মনে হলো, সে কাকা না শুনে ওস্তাদ শুনবে আশা করেছিলো। ট্রাকের হেল্পার মাত্রই ড্রাইভারকে ওস্তাদ বলে ডাকবে, এমন ধারণার ভিত্তি কী? সম্ভবত সিনেমা! শুধু সিনেমাও বলা যায় না, বাসে চলাচলের সময়ও এরকম শোনা যায়। কনডাক্টররা বা সুপারভাইজাররা ড্রাইভারকে ‘ওস্তাদ’ বলেই ডাকে। কলিগ হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি ব্যবহার হয় সাধারণত বসের মতন। গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলটা তাদের হাতে থাকে বলেই কি?  কিন্তু কাকা শুনে অবাক হওয়ারও কিছু নাই। হয়তো তারা আসলেই আত্মীয়, পারিবারিক না হলেও গ্রাম সম্পর্কের।

ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো, ‘আপা এইসব শিখলেন কই?

মুমু আমুদে গলায় বলে, ‘আর বইলেন না ভাই, বাপমা ইউনিভার্সিটি পাঠাইছিলো পড়ালেখা করতে। পড়ালেখা শিখছি আর নেশাপাতিও শিখছি। পড়ালেখা শিখলে নেশাপাতি শিক্ষা ফ্রি!’ বইলা হাসলো সে। জয়েন্ট রোল করে খুবই খুশি খুশি  লাগছে তার। আর একটু পরে সুন্দর একটা জায়গায় নেমে পট করা যাবে, এই চিন্তাটাই তো মহা আনন্দের!

ড্রাইভার বা হেল্পার কারো সাথেই মুমুর বেশি কথা হয়নি এর আগে। ভদ্রতা করে নামধাম জানতে চেয়েছে শুধু। এই কাজ শুক্কুর ভাইয়ের দায়িত্ব। দীর্ঘ একলা চলো জীবন যাপন করে মুমু কিছু জিনিস শিখে গেছে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে দোকানদার ইলেকট্রিশিয়ান মিস্তিরি মজুর ড্রাইভার দারোয়ান- মোট কথা শ্রমিক শ্রেণির যে সমস্ত পুরুষের সঙ্গে কথা না বললেও চলে তাদের সঙ্গে যত সম্ভব কম কথা বলতে হয়। এমন না যে সে এই মানুষদের ভয় পায়, কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে  দেখেছে, এরা মেয়েদের থেকে কমান্ড নিতে পারে না। একজন পুরুষ গার্জিয়ান তারা খোঁজে। মুমুর যেহেতু কোন পুরুষ গার্জিয়ান নেই, তাই তাকে বাথরুমের ফ্ল্যাশ বা ট্যাপ ঠিক করানো থেকে শুরু করে বাসা বদল সব একাই করতে হয়। এই জাতীয় লোকদের সঙ্গে যথেষ্ট মারমার কাট কাট হওয়ার পর সে ঠিক করেছে আর কথাই বলবে না। শুক্কুরের উপযোগিতা ঠিক এই জায়গায়।

শুক্কুরই এই ড্রাইভার আর গাড়ী ঠিক করেছে। এদের সাথে কত টাকার কন্ট্রাক্ট, কী সমাচার কিছুই মুমু জানে না। সে শুক্কুরের হাতেই পুরো খরচের টাকা দিয়ে দিয়েছে। শুক্কুর টাকাপয়সা একটু বেশি নেয়, কিন্তু অনেক ঝামেলা সে বাঁচিয়ে দেয়। মেজাজ ঠিক থাকার খরচ হিসেবে শুক্কুরকে দুই এক হাজার টাকা বেশি দিতে মুমুর গায়ে লাগে না।
এর আগে ঢাকার মধ্যে বাসা বদল করে দিয়েছে শুক্কুর। একবার মুমু খুব অসুখে পড়েছিলো। সে পুরানো বাসায় যেতেও পারেনি। সে তার বন্ধু শাওনের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলো। শুক্কুর একাই পুরানো বাসা থেকে নতুন বাসায় জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছে। কিচ্ছু খোয়া যায়নি। একটা প্রিয় মগ ভেঙ্গেছিলো কেবল। অবশ্য ওইগুলো বেশি দূর দূর ছিলো না, মোহাম্মদপুরের মধ্যেই। শেখেরটেক থেকে তাজমহল রোড।

এবারেই তারা প্রথম এত লটবহর নিয়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। যতই একা থাকুক মানুষ, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে জিনিসপত্র জমতেই থাকে। বিশেষত এক বাসায় বেশিদিন থাকলে এটা আরও বেশি হয়। মুমু সহজে বাসা বদল করতে চায় না। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে বাসা বদল করতেই হয়। এইবার বাসা বদল করতে হচ্ছে মহামারীর কারণে। কোভিড- ১৯ নামের কী এক ভাইরাস এসে দুনিয়াটা কার্যত অচল করে দিলো। মুমু চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলো আগেই। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ পেতে হলেও যা সব যোগাযোগ আর ঘোরাঘুরি দরকার হয় সেসবও আস্তে আস্তে কমে গিয়ে বেশ ঝামেলা হয়ে গেলো। জমা টাকা তলানিতে ঠেকছে, হাতে যে দুই একটা কাজ আছে তাতে যা আয় হচ্ছে তা এতই কম যে সে বাসা ভাড়াটাও ঠিক মতন দিয়ে উঠতে পারছে না। তাই বাসা ছেড়ে দিয়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে, আপাতত আপার বাসায় উঠবে, পরেরটা পরে দেখা যাবে।

ছেড়ে আসা বাসাটাকে যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন করে রেখে আসতে পারলো না। এই বিষয়টা নিয়ে একটু আফসোস হলেও পাত্তা দিলো না সে। আজকের দিনটা খুব হেকটিক গেছে। ব্যাংকে যেতে হয়েছে টাকা তুলতে। কোভিড এর জন্য সব জায়গায় কড়াকড়ি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে কাজকর্মে অনেক বেশি সময় লাগছে। শুক্কুর সকালবেলায় একটা ছেলে নিয়ে আসলো, সে সব গুছাবে। তাকে বাসায় রেখে মুমু ব্যাংকে গেছে। ফিরে এসে দেখে তাকে যা যা করতে বলা হয়েছে, সবই সে অল্প বিস্তর করেছে কিন্তু কোনটাই গুছিয়ে করেনি। ফ্রিজ বন্ধ করে রেখে গিয়েছিলো মুমু। পানি বের হয়ে ঘর ভেসে গেছে। এই ছেলে বারান্দায় বসে এক গাদা বিয়ারের বোতল নিউজপেপার দিয়ে মুড়ে পানি জমিয়ে রাখার ড্রামে তুলে রাখছে। তাকে বলা হয়েছিলো রান্নাঘরের প্লেট গ্লাস মগ নিউজপেপার দিয়ে মুড়তে, সে সব রাখার জন্য কাগজের কার্টন মুমুর কিনে আনার কথা। সে কার্টন কিনে এনেছে। কিন্তু এই ছেলে রাখার জায়গা পায়নি বলে রান্নাঘরের ক্রকারিজ কিছু কাগজে মুড়ে বাকি সময় বিয়ারের বোতলের পিছনে ব্যয় করেছে। মুমু হাসবে না কাঁদবে বুঝতে না পেরে ফোন করে কিছুক্ষণ শুক্কুরকে ঝাড়লো। তারপর নিজেই সব ক্রকারিজ কাগজ দিয়ে মুড়ে ফেললো। তখন বাজে বেলা বারোটার মতন। আর শুক্কুর এসে পৌঁছালো বিকাল তিনটায়।

তার হাতে অন্য একটা খ্যাপ ছিলো, মুমু তাকে সেটা ছাড়তে বলতে পারেনি।

শুক্কুর ঘুমাচ্ছে। গাড়ির ভেতরের লাইট বন্ধ, গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে। মুমু রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার স্মৃতি তাকে বলছে একটু পরই এমন একটা জায়গা আছে যার একদিকে একটা রিজার্ভ ফরেস্টের মতন, অন্যদিকেও ঘন গাছপালা। একটা ফুট ওভারব্রিজ আছে, সিঁড়ির নিচে চায়ের দোকানও। এত রাতে চায়ের দোকান খোলা পাওয়ার কোনো কারণ নেই, দরকারও নেই। সে  পাশে তাকিয়ে শুক্কুরকে একটু দেখলো। সারাদিন প্রচুর খাটাখাটি করেছে, প্রচণ্ড ক্লান্ত। কিন্তু এক্ষুনি ডাকলে তড়াক করে কাজে নেমে পড়তে পারবে সে।

‘সামনে বামে রাখেন তো ভাই, ওই যে ওভারব্রিজটার আগে রাখেন’ – মুমু ড্রাইভারকে ইন্সট্রাকশন দিলো। তারপর ‘শুক্কুর ভাই’ – বলে শুক্কুরের কানের কাছে একটা চিৎকার দিলো । শুক্কুর ধরফর করে ঘুম থেকে জেগে উঠেই হেসে ফেললো। তার হাসি দেখে মুমুও হাহা করে হাসিতে ভেঙ্গে পড়লো। তারপর বলল, ‘শুক্কুর ভাই লন, খাই গা’।  শুক্কুর গা দুলিয়ে নিঃশব্দে হাসলো। তার কালো চামড়ার মধ্যে দিয়ে সাদা দাঁত ঝকঝক করে উঠলো। মুমুর মনে হলো, সিনেমাওয়ালারা শুক্কুরকে দিয়ে অনায়াসে ক্যানিবাল ফিল্মে অভিনয় করাতে পারবে। এমন না, শুক্কুরের চেহারা খুব ভয়ঙ্কর! বরং উল্টাটাই, বেশ নির্লোভ সহৃদয় চেহারা তার। হাসিটা আকর্ণবিস্তৃত। পেটানো শরীর, কেঠো গঠনের, যে কারণে সে আধাটা সিট নিয়ে এক পায়ের সাথে অন্য পা পেঁচিয়ে একটু পাশ ফেরা মতন বসে দিব্যি ঘুমিয়ে পড়তে পারে। তার এই সরলতা দিয়েই তার চরিত্রে একটা অনন্যতা আরোপ করা সম্ভব। ক্যানিবালিজমের মতন সরলতাও একটা দুর্লভ বিষয়।

পিক আপের দরজা খুলে লাফ দিয়ে নামলো মুমু। তার পেছনে পেছনে শুক্কুরও।  রাস্তা ফাঁকা। যতদূর চোখ যায়, ধু ধু করছে- কোথাও কেউ নেই। মুমু হেঁটে হেঁটে পিকাপটার চারপাশে একবার চক্কর কাটলো। বেশ উঁচু হয়েছে জিনিসপত্র। বাধ্য হয়েই লো স্পিডে চালাতে হচ্ছে গাড়ি। যদিও চাইলেই হাইওয়েতে হাই স্পিড তুলে দেওয়া যায়। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা এতই কম, এতই পর পর গাড়ি আর মানুষের দেখা মিলছে, মনে হচ্ছে যেন একটা সাইন্স ফিকশন সিনেমার দৃশ্য। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরের প্রথম বৃষ্টিতে প্রকৃতি জেগে উঠেছে। এত সতেজ সব গাছপালা।

হেল্পার পুরোটা পথ বসেছে  ড্রাইভারের মাথার ওপর এতটুকু ছাদে। কী করে চলন্ত অবস্থায় ওখানে বসে থাকছে কে জানে! মানুষ কত কত রিস্কের কাজই না করে! বাঁশের মাচা বানিয়ে রঙ করার কাজ দেখলেও একই কথা ভাবে সে। কি অদ্ভুত রকম ঝুলে ঝুলে বিরাট বিরাট বাড়িঘর রঙ করে মিস্তিরিরা, কোন সেফটি মেজার নেই, কিচ্ছু না। মরে গেলে কোন ক্ষতিপূরণ নেই, তবুও কত লোক কাজ করে যাচ্ছে!

মুমু ফুটওভারব্রিজের নিচে, একটা বাঁধানো ফুটপাথে বসে পড়ে। জুলাই মাস। সবকিছু বৃষ্টিধোয়া। রাস্তায় বসতে অসুবিধা হচ্ছে না। পাশের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা জোনাকি আবিষ্কার করে খুব ফুর্তি লাগে মুমুর। সে খুব নিবিষ্ট মনে জোনাকি দেখতে থাকে। জোনাকিকে উর্দুতে বলে জুগনু। এটা তাকে বলেছে আলী। একটা গানের লাইনে সে শব্দটা প্রথম শুনেছে। গানের কথায় বলে, হামনে জুগনু জুগনু করকে, তেরি হিজর কি দীপ জ্বালাইয়ি হ্যায়। পুরো কথাটার অর্থ সম্ভবত দাঁড়ায়, আমি জোনাকির মতন আলো জ্বেলে জ্বেলে তোমার অভিসারের অপেক্ষা করেছি। হিজরি মানে যদি হয় যাওয়া বা আসা, তাহলে অভিসার কথাটা বেমানান অনুবাদ হয় না হয়তো। আলীর অপেক্ষায় জোনাকির মতন আলো জ্বেলে রাখবে না মুমু আর কোনদিন।

নাহ, আলীর কথা ভাবতে চায় না সে। আলীর কালো পাঞ্জাবি পরা দীর্ঘ শরীরের অবয়ব সে ভুলে যেতে চায়। পেছনে ফেলে আসা রাজধানীর মতন আপাতত অতীত হোক এখন সে। বেঁচে থাকলে রোমন্থন করাই যাবে, স্বমেহনের মতন। আলীর অস্তিত্বের মতন, আলীর আদরের মতন, আলীর বন্ধুত্বের মতন, আলীর ভালোবাসার মতন হঠাৎ ওর গায়ের গন্ধও মনে পড়ে যায় মুমুর। এক মুহূর্তের জন্য শিউরে উঠে সে; ভাবে, হ্যালুসিনেশন হচ্ছে!

‘আপা, ড্রাইভার কিছু কইছে?’ – শুক্কুরের কথায় মুমু হঠাৎ কনফিউজড হয়ে যায়, কী বিষয়ে কিছু বলবে ড্রাইভার! টাকা পয়সা বা কন্ট্রাক্ট? মুমু এইসব ভাবতেই চায় না। টাকা পয়সার হিসাব করা একটা প্যারার কাজ। হাই হয়ে যাওয়ার পথে এই সমস্ত টাকাপয়সার হিসাব নিয়ে আসার মতন বোকা তো শুক্কুর না। বরং সে অত্যন্ত প্রত্যুৎপন্নমতি।

মুমু জানতে চায়, ‘কী বিষয়ে?’

শুক্কুর মাথা চুলকে জয়েন্টটার দিকে দেখিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘এই যে জয়েন…’ মুমু হেসে ফেললো। শুক্কুর আগে কখনো পেপার দিয়ে রোল করে গাঁজা খায়নি। কল্কে দিয়ে অথবা সিগারেটের মধ্যে ঢুকিয়ে ‘ইশটিক’ বানিয়ে খেতো সে। আজকে আসবার সময় সে রোলিং পেপার নিয়ে এসছিলো। কিছু লাগবে কিনা জানতে চেয়ে ফোন করলে মুমু বলে দিয়েছিলো, কী নামের পেপার, কত দাম আর কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে। পেপার কিনতে তার কত দূর যেতে হয়েছে সেই গল্পও করেছে এসে। মুমু একটু রেগে ছিলো, বেশি কথাবার্তা হয়নি তখন আর। এমন একটা বোকা ছেলেকে কাজ দিয়ে বসিয়ে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট রাগারাগি করেছে। সব গুছিয়ে বাসা থেকে বের হতে রাত প্রায় আটটা বেজে গেছিলো। সে হিসাবে এখন বেশি রাত হয়নি, এগারোটা বাজে মাত্র। কিন্তু রাস্তাঘাট দেখলে মনে হচ্ছে নিশুতি রাত।

মুমু আরাম করে টান দিয়ে জয়েন্টটা শুক্কুরের হাতে দিতে দিতে বললো, ‘হ, কইছে, গাড়ির ভিতরে না খাইতে,’

শুক্কুর একটু অবাক হয়ে বললো, ‘ক্যান? গাড়ি কি এসি করা নাকি?’ তারপর হাত মুঠো করে মুঠোর মধ্যে মুখ লাগিয়ে কল্কে স্টাইলে জয়েন্টে টান দিলো সে।

মুমু বললো, ‘অনেকেরই গন্ধ সহ্য হয় না, গন্ধে নেশা হইয়া ড্রাইভার যদি এক্সিডেন্ট করে! এল্লিগা দূরে আইসা ধরাইলাম’ বলে জোরে হেসে উঠলো। শুক্কুরও হাসলো। শুক্কুর হাসলে কোনো শব্দ হয় না, কিন্তু তার চোখ মুখ সব হাসতে থাকে। গাঁজার ধোঁয়ায় নেশা হয়ে যাওয়ার কারণেই কিনা কে জানে, এক সেকেন্ডের জন্য মুমুর মনে হলো, শুক্কুর আসলেই ক্যানিবাল না তো! – মাথা ঝাঁকিয়ে চিন্তাটা সরিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় জয়েন্টটা ধরালো সে।

এই যে ঢাকার বাইরে চলে যাওয়া, বিষয়টাকে কীভাবে দেখা উচিৎ তাই নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে মুমু। সাত বছর ঢাকায় থেকে এখন ঢাকার বাইরে গিয়ে থাকা একটা কঠিন বিষয়। সবচেয়ে জটিলতা হতে পারে যে বিষয় নিয়ে তা হচ্ছে নেশা করা। নেশা ছাড়া সে থাকতে পারে না। গাঁজা, সিগারেট আর মদের মধ্যে প্রথমটা তার বিশেষ প্রিয়। ঢাকার বাইরে গাঁজা আর গাঁজা খাওয়ার জায়গা জোগাড় করা কঠিন হওয়ার কথা। রাত বিরাতে ছাদে উঠে বা বারান্দায় গিয়ে খেতে হবে হয়তো। তবে আপা বলেছে তাকে গেস্ট রুমটা ছেড়ে দেবে। এই বাসা নতুন নেওয়া হয়েছে। গেস্টরুম কেমন তা মুমু জানে না। সাথে যদি বারান্দা থাকে তাহলে বাঁচা যাবে। এবার যাওয়ার সময়ই একশো গ্রাম স্কোর করে নিয়ে নিয়েছে। এটা শেষ হলে কী হবে তা ভাবার এখন সময় না। লকডাউন দিয়ে দেয় কয়দিন পরপরই। হুট বলতেই ঢাকায় চলে আসা যাবে না। ঢাকার সাথে ঢাকার বাইরের তফাত এখনও আকাশ আর পাতালের।

মোহাম্মদপুরে থাকলে গাঁজা জোগাড় করা কঠিন কিছু না। রাস্তায় ঘোরাঘুরি করলেই কেনাবেচা দেখতে পাওয়া যায়। ঠিকভাবে এপ্রোচ করতে পারলেই হয়। এইভাবে বিহারি ক্যাম্পের মোহাম্মদ জুয়েল, মোহাম্মদ রাকিব আর মোহাম্মদ মিঠুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তার। এবারের একশো গ্রাম স্কোর জুয়েলের করা। শাওন বলেছে লকডাউন খুললেই ওকে দেখতে চলে আসবে। আসবার সময় না বললেও ও ভালো স্কোর করে নিয়ে আসবে। কিন্তু তারপরও বলে দিতে হবে। তাহলে শাওন আরও বেশি নিয়ে আসতে পারবে। অনির্দিষ্ট কালের নির্দিষ্ট পরিমাণ রসদ যত বাড়ানো যায়।

নানা কিছু ভাবতে ভাবতে পিকাপে উঠে বসে সে। শুক্কুর আগেই উঠে মাঝখানে নিজের জায়গায় বসে পড়েছে। মুমু দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই তার দিকের জানলায় পা দিয়ে ছাদে উঠলো হেল্পার। লুঙ্গি পরা লোকটাকে ওপরে উঠতে দেখে নিজের অজান্তেই চোখ সরিয়ে নিলো মুমু। লুঙ্গি সামলে সে যেভাবে জানলায় পা দিয়ে ছাদে উঠে গেলো তা দেখার মতন দৃশ্য হলেও চোখ সরিয়ে নেওয়ার শ্রেণিগত অভ্যাসে সে দৃশ্যটা দেখলো না। যদিও বাতাস নেই। কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পুরুষাঙ্গ দর্শনের আশঙ্কাও নেই তাই। সব মেয়েই কি এই আশঙ্কায় দিন কাটিয়ে দেয়? সব মেয়েকেই কি বাজার দোকানে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শের মতন অপ্রত্যাশিতভাবে পথে-ঘাটে পুরুষাঙ্গ দেখতে হয়? কিছু পুরুষের এক্সিবিশনিজম এরকম বিকট হয়ে ওঠা বেশ কমন বলেই সে জানে।

মুমু আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের একটা দিকে একটু একটু করে মেঘ জমছে। রাতের আকাশে মেঘ জমলে মেঘের চারপাশ কেমন যেন আলো হয়ে থাকে। একটু আগে তারা দেখা গেলেও সহসা বৃষ্টি নামবে বলে মনে হয় না। এই মেঘ জমতে সময় নেবে। বাতাস একটু থম ধরা। বৃষ্টি নামলে হেল্পার কী করবে? বসে বসে ভিজবে?

পিকাপ স্টার্ট করে। হাই হয়ে মুমু আলীর কথা ভাবতে শুরু করে।  আসবার আগে আলীর সঙ্গে ব্রেকআপ করে এসেছে। সচেতনভাবে মিউচুয়াল ব্রেকআপ হয়ে যেতো তাদের। কোন হার্ড ফিলিং ছাড়া। ভালো মেমোরিগুলো রিকল করতে পারবে ভেবেই এরকম স্বেচ্ছা বিচ্ছেদের পথ বেছে নিতে চেয়েছে তারা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিষয়টা বেশ ঘোলা হয়ে গেলো। সব সময় জীবনকে সহজ করতে চাইলেই জীবন সহজ হয়ে যায় না- এই উপলব্ধি প্রায়ই হয়। জীবনের একটা নিজস্ব গতি আছে। জীবনের নিজের গতিতে প্রেমগুলো হয়, প্রেমগুলো ভেঙ্গেও যায়।

মুমু আর আলীর প্রেমের গল্পটা মজার। অনেকদিন মোহাম্মদপুরে থাকতে থাকতে মুমুর সাথে আলীর দেখা হতে থাকে। আলীর সাথে দেখা হতে থাকে মুমুর। কারণ আলী জন্ম থেকেই মোহাম্মদপুরে থাকে। মোহাম্মদপুরেরই কোনো একটা রাস্তাতেই তাদের পরিচয় হয়ে যায় একদিন। নজরুল ইসলাম রোড থেকে নুরজাহান রোড যেতে পথে মীনা সুইটসের একটা দোকান পড়ে। সেই দোকানে আলীর সাথে চোখাচোখি হয় মুমুর। বাড়ি ফেরার সময় অথবা সিগারেট কেনার দোকান অথবা গলির মোড়ের কুকুরের প্রতি স্নেহ- এই সবের মধ্যে কোন মিলটার কারণে তাদের পরস্পরকে চেনা মনে হয়, তা নিয়ে পরে তাদের কথা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু মীনা সুইটসের ওইদিনের চোখাচোখির কথা দুইজনেরই বেশ মনে পড়ে। শেষ পর্যন্ত মীনা সুইটসকেই তারা তাদের প্রেম নাযিল হওয়ার স্পট হিসেবে মেনে নেয়।

আলীকে নিজের জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে আর না রাখার সিদ্ধান্ত মুমুরই। আলী বুঝদার ছেলে। মুমুর যুক্তিগুলো তার গ্রহণ না করার কোনো কারণ ছিলো না। কোভিড সিচুয়েশন হয়ে তাদের বিচ্ছেদের পথ প্রশস্ত হয়েছে। আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড যাকে বলে। নইলে এক এলাকায় থেকে দেখা হয়েই যেতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রেম হয়ে যাওয়ার পর তাদের আর পথে দেখা হয়নি। যোগাযোগ করেই বের হওয়া হতো। মাস ছয়েক তুমুল প্রেম করার পর মুমুর স্বভাবসুলভ সাফোকেশন শুরু হয়।  আলীকে স্পষ্টভাবে তার অনুভূতি জানিয়ে দিলে আলীও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ কমিয়ে আনতে থাকে। ভাবতে গিয়ে মুমুর এখন মনে হয়, হয়তো আলীর নিজেরও একই রকম বদ্ধ লাগতো। নইলে কে কার অনুভূতি এত সহজে ধরতে পারে! অবশ্য আলীর মধ্যে সম্মানবোধ জিনিসটা শুরু থেকেই ছিলো। সে কারণে তাদের দুই বছরের জার্নিটা আনন্দময় হয়েছিলো। আলী মুমুর মনকে শান্ত করতে পারতো, শরীরকেও।

ব্রেকআপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যোগাযোগ একদম শূন্যের কোঠায় চলে আসে। হঠাৎই গভীর একাকীত্ব মুমুকে গ্রাস করে। তার রাতে ঘুম হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এমন না সে আলীর সঙ্গে রাত্রে ঘুমাতো। আলী তার পরিবারের সঙ্গে থাকে। তাকে রাতে বাসায় ফিরতে হয়। কিন্তু সম্পর্কে থাকলে একা লাগে না।

আলীর সঙ্গে ব্রেকআপের পর একটা পিরিয়ড গেছে, পেইনফুল পিরিয়ড, প্রচণ্ড ক্র্যাম্পিং, ভয়াবহ ব্লিডিং- সেক্সের অভাবে কিনা কে জানে! প্রায় দুই বছর সুস্থ যৌনজীবনে থাকবার পর উপবাসে শরীরে রিঅ্যাকশন হতেই পারে।  তীব্র কোনো অনুভূতি ফেডআউট করতে হলেও বেশ কিছু সময় দিতে হয়।

কষ্ট হলেও অনেক মিস করলেও সময় দেবে বলেই ভেবেছিলো তারা। পরস্পরের সঙ্গে কথা না বলেই থাকছিলো দুইজনে, একই এলাকায়। মুমু রাত জাগছিলো, আলী কি ঘুমাচ্ছিলো? কে জানে!

ভালোই দিন যাচ্ছিলো, বিরহেরও একটা পিনিক থাকে তো! কিন্তু মুশকিল হয়ে গেলো, আলীরা তাজমহল রোডের পুরানো বাসিন্দা। পাড়া প্রতিবেশী সোসাইটি ইত্যাদি বিষয়-আশয় ছিলো। মুমু এইসব জানতো না। তাদের একসাথে চলাফেরার বিষয় নিয়ে এক সময় মুমুর কাছে একটা ফোন আসে। মুমু মোটামুটি আকাশ থেকে পড়ে। এই যুগেও এই রকম ফোন আসা সম্ভব তা সে চিন্তাও করেনি কোনদিন। আলীর মা মুমুকে ফোন করে অত্যন্ত স্নেহময়ী গলায় আলীর সঙ্গে মেলামেশা না করতে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে এই ফোনকলটার কথা আলীকে না জানাতেও অনুরোধ করেন। ওই সময় বিষয়টা অপমানজনক মনে হলেও এখন খুব ফানি মনে হয় ভাবলে। জীবনটা কি বাংলা সিনেমা নাকি? আলীর মা অবশ্য বুঝিয়েই বলেন। ওরা বিহারী, বাঙ্গালী পরিবারের সাথে সম্পর্ক করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। মুমু আলীর মাকে বলতে পারেনি, প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বিয়ের কথা তারা কেউই ভাবছে না। এ ধরনের সম্পর্ক বুঝতে পারার মতন মানসিক দশা ওই বয়সের, ওই জেনারেশনের, ওই কালচারের একজন মানুষের না থাকারই কথা। মুমু আলীর মাকে কথা দেয়, আর যোগাযোগ রাখবে না। যদিও এই সিদ্ধান্ত তারা নিয়েই রেখেছিলো। এরপর আর সম্পর্কটা চালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ মুমুর দিক থেকে অবশিষ্ট থাকে না। সম্পর্ক শেষ হয়েছিলো আগেই। কিন্তু এবারে বিরহ যাপনও কঠিন হয়ে গেলো মুমুর কাছে। সে আলীকে ভাবা, মিস করা পুরোপুরি বন্ধ করে দিলো। সুইচ অফ করার মতন না হলেও মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কায়দা সে জানে। বহু কষ্টে রপ্ত করেছে।

বাসা বদলের গোছগাছ করতে গিয়ে আলীর কয়েকটা জিনিস নিজের জিনিসের মধ্যে খুঁজে পেয়েছে সে। তার মধ্যে একটা জিনিস বেশ উইয়ার্ড। একটা কাদা আর রক্ত মাখা পাজামা। শেষ কুরবানীর ঈদে দুই তিনটা গরু কুরবানীতে অংশ নিয়ে মুমুর সঙ্গে দেখা করেছিলো আলী। ওই নোংরা পাজামা পরে আর ওকে ফিরতে দেয়নি মুমু। সে ঈদের গিফট হিসেবে আলীর জন্য নতুন পাজামা পাঞ্জাবী কিনে রেখেছিলো। ছাড়া পাঞ্জাবীটা পরে নিয়ে গেলেও পাজামাটা পড়ে ছিলো মুমুর ওয়াশিং মেশিনে। একবার কাচার পরও কাদা বা রক্ত পুরোপুরি দূর না হওয়ায় ওয়াশিং মেশিনের মধ্যে আবার রেখে দিয়েছিলো। পরে আর ধোয়ার সময় হয়নি।

এই পাজামাটা ফেলতে গিয়েও ফেলতে পারেনি মুমু। বাসা ছাড়ার জন্য সব জিনিসপত্র গোছগাছ করতে গিয়ে খুঁজে পেয়ে আরও কিছু কাপড়ের সঙ্গে রেখে দিয়েছে। এই পাজামাটা নিয়ে কী করা যায়? – এরকম একটা অর্থহীন চিন্তা করতে করতে মুমু ঘুমে ঢলে পড়ে যেতে থাকে। এক দুইবার শুক্কুরের কাঁধে হেলান দিতে দিতেও নিজেকে সামলে নিয়ে বিপরীত দিকে জানালায় মাথা রাখে সে।

গাঁজার নেশার কারণে তার সামনের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ-এর চিন্তা তার অবচেতনে ঘুমিয়ে পড়ে। সে ঘুমিয়ে না পড়ার চেষ্টা করতে করতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাতের রাস্তার অন্ধকারকে দুই ভাগ করে তাদের পিকাপটা ঢাকা থেকে দূরে, আরও দূরে এগিয়ে চলে। মুমু স্মিত মুখে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবে, এই রাস্তায় বহুবার চলা হলেও ঠিক সামনে কী আছে সে যেমন জানে না, সাতাশ বছর জীবন কাটিয়ে দিয়েও সামনের দিনগুলো সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই, নেই কোনো পরিকল্পনাও। আপাতত আলীর পাজামা নিয়ে ভাবতে গিয়ে সে একটা সমাধান পায়। এটা করাই যায়!

পুরানো কাপড় সাধারণত গরীব মানুষকে দিয়ে দেয় সে। মানবতার দেয়াল বলে একটা সুন্দর ব্যবস্থা হওয়ায় তার মতন মানুষদের অনেক সুবিধা হয়েছে। হাতের কাছে সবসময় গরীব মানুষ পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও পুরানো কাপড় দেওয়ার এপ্রোচ করতে তার বেশ লজ্জা লাগে। মানবতার দেয়াল হওয়ায় এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া গেছে। কিন্তু আলীর পাজামা মানবতার দেয়ালে দেবে না মুমু। ওটা পুড়িয়ে দিতে হবে। তার মনে আছে, একটা ট্র্যাভেল ব্যাগে তার ব্লাউজ আর মোজা রাখা আছে। হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে ওই ব্যাগেই গুজে রেখেছিলো পাজামাটা। ওটা খুঁজে বের করতে হবে।

হঠাৎই নেশার ঝিমধরা দশা থেকে জেগে ওঠে সে। শুক্কুরকে কনুই দিয়ে ঠেলা মেরে জাগায়, ‘শুক্কুর ভাই, ওঠেন, একটা কাজ আছে।’ কাজের কথায় তড়াক করে উঠে যায় শুক্কুর। মুমু ড্রাইভারকে বলে, ‘ওস্তাদ, একটু সাইড কইরা রাখেন।’ মুমুর মুখে ওস্তাদ শুনে ড্রাইভারের কী প্রতিক্রিয়া হলো তা দেখার জন্য আর পেছনে ফিরে তাকায় না সে।


উম্মে রায়হানা

ডাক নাম মুমু। জন্ম – ৬ অক্টোবর, ১৯৮৪। জন্মস্থান- ময়মনসিংহ শহর। পড়াশোনা- বিদ্যাময়ী স্কুল, মুমিনুন্নিসা কলেজ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি । জীবিকা- লেখালেখি/চাকরি । ইমেইল ঠিকানা – ummedotrayhana@gmail.com

শেয়ার
সর্বশেষ সংখ্যা