গুলাম আলি ও কিসসা
অস্তনির্জন দত্ত
(উৎসর্গ: “GO TO HELL “ আহা ! সেই অপূর্ব সুরেলা ঘৃণা , যার ভেতর ডুবে যেতে যেতে মনে হয় ঘি মাখিয়ে তুলাইপাঞ্জি ভাত খাচ্ছি)
১.
“পারা পারা হুয়া পাহেরান এ জান”…
কি ভাবে যে শেকল নরম হয়, মাখামাখি হয়ে যায়, আমি তো বেঁধেই ছিলাম, খুব জোরে ধরতে চেয়েছিলাম, নরম আর
ফির জ্বর রেখে দিয়ে পারদ চলে গেল
চারুশীলা আমি তো তাপ ও মরচে আঁকড়ে উঠতে চেয়েছিলাম আর
“ ফির মুঝে ছোড় গয়া চারাগার”…
দেওয়ালে দাগ লেগে আছে, তেরা মহতাজ, ফাঁকা ফাঁকা শুকন
ক্যামন তন্তুজ যেন কাছে গেলে
আরো কুঁকড়ে ছুটে সরে যাবে, তাই ভিরান
পারা পারা হুয়া…
পাহেরান এ জান,
বুড়ো আঙ্গুলে নখ বেঁকে চেপে ছিল, পুরুষালি পা, বুনো, ঠোঁট চেপে ধরলে মরিচের গন্ধ পাওয়া যায়, আর চেপে ধরে দেখেছি, কিছু মাংস ঢুকে পড়ে, ছোট ছোট মৃদু সে প্রোটিন, অ্যামিনো, শেকলের স্বাদ ভেসে আছে…
…।
২.
“ঝাঁককার দেখা গলি মে কোই ভি আয়া না থা”
এই ভাবে ঘুম খানিকটা কাত হয়, দ্যাখে, গড়িয়ে যাওয়া গলিটি যখন সান্নাটা
কিছু খয়েরি পিন পড়ে যায়…
মনে হয় কেউ মুছে আছে, অনিঃশেষ, অপলক,
হাতের রেকাবিতে পাঞ্জিরি, শশা কুচি, অউর
“ভুল যানে কে সিভা অব কোয়ি ভি চারা না থা”
বোঝা যায় ভুলে যাওয়ার একটা গলি লাগে যা মূলত বেচরাগ ও শব্দহীন, ম্যাপল দিয়ে ঢাকা
পাতা গুলি উড়ছে, এই শীতের রাতে পাতাগুলি পড়ে আছে ভিজে জাইলেম নিয়ে
আর
পাতা মাড়িয়ে তুমি একদিন বেরিয়ে যাচ্ছ
কুয়াশায় সারিন্দা, প্রতি দেড় মেইল স্ট্রিট লাম্প গুলিতে কষাটে আলো ও সিম্ফনি
পার্কে বেঞ্চি গুলি
তাদের সুশীতল, বৃদ্ধ ও স্নেহশীল লাগে যেন বসতে দিয়ে উঠে চলে যাবে…
“ফাসলে আয়সে ভি হঙ্গে …
৩.
“ দিল মিলা অউর গম সানাস মিলা…”
চাপা ও গভীর কোনো তেষ্টা পায় এইখানে,
ভাবি জল উঠে আসবে… আর এল
অর্থাৎ উঠে আসার এক গতি আছে, তুমুল নলের নিচে ধরলে
সে জল ছড়ে বাইরে চলে যায়
অথচ শান্ত অ্যাকোয়াগার্ডের নিচে তুমি বললে গ্লাসনস্ত
অর্থাৎ ভরে আসার এক গতি আছে,
মাত্রাসম্মত, ফোঁটায় ধীর প্রাজ্ঞ ও টলটলে … পিঁলু !
অর্থাৎ “ সাদা পানিকা ইক গেলাস মিলা…”
তৃষ্ণার সামনে এই দ্বিপ্রহর নিরক্ষ ও মহান, এই গরম লাগা, ঘামাচি ফুটে ওঠার
কোন ছোট্ট চামড়া আর কাঠের ওপর টুল, একটি কাঁচের গ্লাস, ঢাকা দেওয়া ছিমছাম
গ্লাস ভরে আছে জল এই ফর্সা রাগ, জল খেলে পিলু মিশে যায়
৪.
“বে চ্যায়েন বহুত ফির না ঘাবড়ায়ে হুয়ে রাহে না…”
এই শীতের ফসল ও ফুলে ওঠা তুলোর ওপারে
তুমি ফর্সাও ক্রমশ
ছোট হয়ে আছ
কোন লুকানোর ভঙ্গি যা লেপকে আরো কুঁচকে দেয় ও শাদাকে আরো প্রবাহমানতা
অর্থাৎ
শাদা এমন একটি রং যা লেপ ছেড়ে মেঝেতেও পড়ে যায় কিছু,
এই সন্দেহ ও অসহায়তা
তোমায় লোম ও তুলোর নিচে ঢাকা দিয়ে রাখে আর অ্যানাটমি কাজ করে না
অর্থাৎ
মানুষ ঢাকা থাকলে তার মুখের ফিরৎটুকু দেখা যায় শুধু
বুঝতে পারি চলে যেতে হবে
দাঁত না মেজে, একবার পর্দা তুলে, পর্দা ফেলে
“পর্দে মে চলে যানা……”
৫.
“কাচ্চি দিবার হু ঠকর না লাগা না মুঝকো”…
এই কাঁচা আমি আমের কাছে পাই, যে দেওয়াল শান্ত ও সবুজ রাবারের, মুখে টকস্বাদ আনে, অর্থাৎ সে জিভ তখন বারণ করতে গিয়ে উন্মুখ ধ্বনাত্মক
শব্দ জুড়ে গমকে বাজে , আর সন্ধে নামলে
পিচ্চি ডাকটুকু শোনা যায়…
আমি পিছলে ছোট হয়ে যাই, হড়হড়ে, কোমরে তামার পয়সা ।
ফুল হয়ে ফুটে ওঠে, পিচ রাস্তায় পড়ে যায় ,
দেখি অফুরন্ত দুপুর, টায়ার নিয়ে নেমে পড়েছি, ছুটেছি , “ম্যায় তো আশিক হু”…
আর দিবানা না সেই সব দেওয়াল যা কোনদিন কাঁচা ও মাটির ছিল, ঘুঁটে ও
হিসু দেওয়া ছিল
টায়ার নিয়ে চলে যাওয়া ছিল দুপুর বেলায়, রোদের নিচে,
যা গোল আর যা চলতে শুরু করলে মিশে যায়…
৬.
“ ও আঁখওমেয় কাজল ও বালোমে গজরা…”
এই যে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলাম, সবেরে সবেরে
ঠাণ্ডা ফর্সা সিঁড়ি ধাপ ও কিনারগুলি
একে তুমি কাজল পরান বলবে না! বলবে না যে মেয়েটির মাথায় ভারা সেও
খোঁপা হয়ে গ্যাছে…
ভোরের এই গুণ, সে শ্রমকে নিম্ন বুনিয়াদি দেয়, বিন্দি ও চলন
আর,
হালকা তোমার রসুই থেকে ঘ্রাণ ভেসে আসে,
দেখি পোর্সিলিনের প্লেট, ভুনা, পারাঠা, পাঁচটি আঙুল ঘিরে সেজে
আঙুলে নখ, সুচারু মসৃণ ও মেহেদি আভ যথা “ হাথেলি পে উসকে হিনা মাহেকি মাহেকি…”
জলখাবার নাস্তা হয়ে যায়
মনে পড়ে সুপারমাক্স কোন এক ব্লেডের নাম,
এই ভোরবেলা যেখানে আলো এসে নৈঋত ভরেছে, “ ফিজা মাহেকি মাহেকি হাওয়া মাহেকি মাহেকি…“
যে স্নায়ুতে লাগে না, ধীর ঝুঁকে নখ কেটে চলেছি আমি…
৭.
“ আনে ওয়ালি রুতকা কিতনা খৌফ হ্যায় উসকি আঁখওমে…”
আমি এক করিডর দেখি পাতলা, জল ছেটানর মত ভীরু ওষুধের শিশিগুলি –
তাদের এক্সপায়ারি ডেট চলে এসেছে, সেইসব সিরাপ
যা খয়েরি, সন্ত্রস্ত চেপে আসা ও খৌফ ও অন্ধেরা
অর্থাৎ এক্সপায়ারি কোন এক ক্রমশ খয়েরি রঙ ঢালু ও তাকিয়ে থাকা,
এখন সেই বলয়ের বাইরে তোমার হাতে সারিন্দা,
তোমার বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে
আমার জল ডিঙিয়ে চলে যেতে ইচ্ছা করে, ভাবি পাঞ্জাবি পরলে আরও হালকা
হওয়া যাবে,
লাফিয়ে যাওয়া যাবে সহজে,
যেখানে অপার চর, ভেজা বালি, চিকচিকি মাছ
অর্ধেক হেলান দিয়ে দূর তাকিএ থাকা যাবে ব্রহ্মপুত্রের দিকে,
অলস ও পলকা, নির্বিকার দেখা যাবে
দু একটি নৌকা চলে, জল তাকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে…
“ যানে ওয়ালা দূরসে হাত হিলায়ে ভি ঘাবড়ায়ে ভি …”
৮.
“রাস্তে ইয়াদ নেহি রাহ নুমা ইয়াদ নেহি…”
শুধু মনে আছে ধুন্দলায়ি সিঁড়ি ,
আর
সেই হাতল ও দুধের সর ধরে নেমে আসা… আর ভোর
মাথা নিচু করে এলে ঘ্রাণে যা আরও ভোর হয়ে যায়
কিছু রিঠা ও গ্লুকোজ সমপরিমাণে গুলে থাকে…
ভোর ছিল,
সবে আঁচ না দেওয়া উনুনের পাশে
তুমি তাকে শস্য বলেছিলে, ঘুম থেকে উঠিয়ে দেওয়া
টিপে দেখতে চেয়েছিলে কতটা সেদ্ধ…
অর্থাৎ বিভ্রম ছিল, অতঃপর গলিটি
“ কুছ মুঝে আব তেরে গলিঁয়ো কে সিভা ইয়াদ নেহি…”
যেখানে কিছু কাগজ ফুল ঝরে পড়ে আছে, কিছুটা মিউনিসিপ্যালিটি, ছায়া
ও খুঁটতে থাকা স্মৃতি … স্মৃতি ব্যথা করে, নখ ব্যথা করে ওঠে হিনা জন্মায়, আফ্রিন
গলিকে রাস্তার বিশ্রামঘর মনে হয়…
৯.
“ মারিজ এ মুহাব্বত উনহিকা ফাসানা …”
এই খানে ওভেন, দুধ বসান হয়েছিল
ভুলে গেলে উপচে যাবে দম নিকালতে নিকালতে
আর
ভুলে যাওয়া হয়েছিল…অর্থাৎ
যে সময় মনে থাকে না সেখানে দুধ টোল খেয়ে যায়
কিছু লিপিড কুঁচকোয় , কিছুটা কেসাইন
যাকে তুমি বলেছিলে ত্রিবেণী সঙ্গম, বলেছিলে “ তুমহে দিল লাগানেকো
কিসনে কাঁহা থা”
অর্থাৎ পানীয় কমে
আর
অজয়ের ধারে তুমি দাঁড়িয়ে থাক, পায়ে রূপার হাঁসুলি
পায়ের পাতাও তো নদী, এইরূপে চ্যাটালো তাই বয়ে যায়
কখন খোয়াই ভাঙে …ঠোক্কর খায়, ঝুঁকে দেখি
“ আভি খা কে ঠোকর সামভালনে না পায়া “ পাথরে কিছুটা চামড়া উঠেছে, আঙ্গুলে
কিছুটা পাথর, যেভাবে মেহেন্দি ওঠে উজ্জ্বল নাতিশীতোষ্ণ বিবাহ সাজায়
ছোটছোট ফুট সাজায় কবুল, কবুল …
আহা “কে ফির খায়ি ঠোকর সামভালতে সামভালতে”
১০.
” হামনে হসরতকে দাগ আঁসুও সেধো লিয়ে “
জল ঝাপটে নেওয়ার আরজু এই, সাদা ও নরম চাপের তোয়ালে
যে শুশ্রুসায় সারা গালে পায়রা ওড়ায়
সামান্য লোশন ছোঁয়ালে সে আরও ডুবে যাবে চামড়ার ভেতর, ডানা ঝাপটাবে
অর্থাৎ,
শেভ করে উঠে বসে থাকা এক নির্ভার শোকপ্রস্তাব
যার ভেতর কবুতরগুলি গমগমে দানা খুঁটে নেয়
আর
যার সামনে চার বাই ছয় ফুটের ঘনত্ব, কিছু গাঢ় স্মৃতি ও শীতকাল
কার্বাডে রাখা থুতনি কার্বাড হয়ে আছে
একটু পর উঠে যাবে, জানালা খুলবে , আফ্রিন
জানলা খুলে ফেললে ঘর উচ্চারণ করে ফেলে, কথা বলতে চায়…অব
” আপ কি খুশি হুজুর বলিয়ে না বলিয়ে…”