গডেস অভ অ্যামনেশিয়া: বিস্মরণের জানালায় দাঁড়িয়ে | মাজেদা মুজিব

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সাহিত্যে নারীদের চিন্তার বৈচিত্র্য যেভাবে আসার কথা ছিল, তা মূলত আসেনি। কেন নানামুখী চিন্তার প্রবেশ ঘটা যুক্তিযুক্ত ছিল, সে প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়-বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে চিন্তার জায়গাটি প্রধান ছিল, তা অবশ্যই অর্থনৈতিক সাম্যবাদের সঙ্গে নারীপুরুষের সাম্য। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল বাংলার মায়েরা বাংলার মেয়েরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। একটি দেশের জাতীয় যুদ্ধের ক্ষেত্রে যখন মেয়েদের এ মর্যাদা দেওয়া হয়, তখন সে দেশের প্রতি প্রত্যাশা বেশি থাকা বাহুল্যবিশেষ নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রেক্ষিত হিসেবে কোনো সামন্ততন্ত্র প্রধান হওয়ার কথা ছিল না, রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়ানোর আগে এর মূল চিন্তার জায়গায় ছিলো সাম্য। প্রধানত ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি এবং রাজনীতিতে ধর্মের প্রসঙ্গ গুরুতরভাবে উঠে আসার কারণে একাত্তর পরবর্তী সময়ের নারীরা এ বৃত্তের বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে শেখেনি, আদতে করতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া এদেশে চর্চিত পুরুষতন্ত্র ‘অশিক্ষিত’ নারীদের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, ‘শিক্ষিত’ নারীদেরকেও চিন্তায় কোণঠাসা করে রেখেছে। নারীরা ভাবে পুরুষের মগজ দিয়ে। বাংলাদেশে সব স্তরে ফেমিনিজম যেভাবে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তা হয়নি। একটি প্রচলিত আলাপ আছে, বাংলাদেশে যে ফেমিনিজমের চর্চা হয় তা মূলত এলিট ফেমিনিজম এবং যারা এই এলিট ফেমিনিজম চর্চা করেন তারা সাধারণ ও নিম্নবর্গের কর্মজীবী নারীর অধিকার খর্ব হলেও তাদের পাশে বিশেষ দাঁড়ান না। অর্থাৎ ফেমিনিজম একটি শ্রেণিকেন্দ্রিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে, এমনটি বলা যায়। নারীর আর্থসামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে সব ক্ষেত্রেই ফেমিনিজম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলতি পুঁজিবাদী বিশ্বে যেহেতু অর্থনৈতিক সমান্তরাল ব্যবস্থার আওতায় সবাই পৌঁছাতে পারছেন না, সেহেতু এভাবে বলা যায়- এলিট শ্রেণির নারীর জন্য ফেমিনিজম যেমন তার অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয়, তেমনি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবর্গের নারীর জন্যও তাদের অবস্থান থেকে দরকারি। ফেমিনিজম এমন এক ফেনোমেনন যা নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই সমান প্রযোজ্য। এমনকি কোনো একজন ‘শিক্ষিত নারীবাদী’ যে দৃষ্টিকোণ থেকে নারীর অধিকার চান, যে ভাষায় চান, তার যেমন দরকার আছে, তেমনি একজন গার্মেন্টসকর্মী তার কাজের জায়গায় অনুকূল পরিবেশ পাবেন, তার ভাষায় তিনি বলতে পারবেন, এরও সমান বা ততোধিক দরকার আছে। যার দেখা আমরা পেয়ে যাই আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদিরের ‘গডেস অভ অ্যামনেশিয়া’ উপন্যাসে।

একজন সাধারণ নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসটির একটি বড় অংশ। নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ পর্বে এটিই শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সময়। এখনো সে আন্দোলনের সময়কে সোনালী সময় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন দুজন নারী, যারা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। মুক্তাদির এ দুজন নারীকে গডেস অভ অ্যামনেশিয়ায় তুলে আনেন এবং প্রধান চরিত্র দাদীর কাছে দুজন নারীই তার জীবদ্দশায় দেখা শক্তি ও সাহসের প্রতীক হিসেবে হাজির হন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুজন নারীর প্রবেশ এবং শাসনক্ষমতায় তাদের অধিষ্ঠিত হওয়ায় একজন প্রান্তিক নারী হিসেবে দাদী যে অন্তর্গত প্রেরণা ও শক্তি অনুভব করেন, তা তার মধ্যে ইতিপূর্বে আর ছিল না। এমনকি তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা, গণমানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তৈরি হওয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা যেন দাদীর ইচ্ছারই এগিয়ে যাওয়া। যেন তিনি এতজীবন ধরে নারীর যে অবস্থান দেখতে চেয়েছেন, তারই চূড়ান্ত প্রতিফলন এটা। সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মতো সদ্য স্বাধীন একটি দেশে, ধর্মের বেড়াজাল ছিন্ন করে, সামাজিক ট্যাবুকে পেছনে ফেলে যেকোনো নারীর পক্ষে ক্ষমতার সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহন করা অবশ্যই সহজ ছিল না। মুক্তাদির এভাবে বলেন, “শত শত বছর ধরে এই ভূখণ্ড শাসন করেছে কোনো না কোনো পুরুষ। দাদী আজন্ম জেনে এসেছে নারীর কাছে দেশ মানে বাপের বাড়ি, স্বামীর ভিটা। রান্নাঘরে তার মসনদ। উঠান হলো তার দরবারঘর। এর বাইরে তার কোনো ক্ষমতা নাই। বাইরের পৃথিবী রাতে দেখা স্বপ্নের মতো। দেখা যায় কিন্তু অস্তিত্বহীন ।” (পৃ. ৩৩) এবার দাদী অস্তিত্বহীনতা থেকে বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস পান। এটাকে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশে প্র্যাকটিসিং নারীবাদ হিসেবে দেখা যায়, যারা তত্ত্ব জানেন না, তত্ত্বের ধার ধারেন না, জীবনটাই তেমন করে সাজিয়ে নেন। তেমনই এক চরিত্র দাদী। নব্বইয়ের দশকে দাদী গ্রামে বসে পত্রিকা পড়ছেন। রেডিও শুনছেন। গণমাধ্যম দাদিকে চিন্তার দিক থেকে পাল্টে দিচ্ছে। মানসিকভাবে দুই নেত্রীর কাছাকাছি এসেছেন দাদী। যেন তারা আত্মীয়। তাদের উত্থান যেন দাদীরও উত্থান। বাংলাদেশের নারীরা যে প্রতিকূল অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে এদেশের নারীর অবস্থান বিবেচনা করলে এবং উত্তরণের জন্য রাজনীতির দুই নারীই প্রধান উদাহরণ হিসেবে আসেন। এই অনুভূতি গুরুত্বপূর্ণ, “যেই দেশ একজন নারীর শাসনে চলে, সেই দেশে এখন থেকে নারীদের আর কোনো ভয় নাই।”(পৃ. ৩৫) জনমনে একজন নারীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো ভীতি ও একইসঙ্গে আনন্দের এক অবিমিশ্র অভিজ্ঞতা। প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী কে বা বিরোধীদলীয় নেত্রী কে, তিনি কত সালে ক্ষমতায় আসেন মুক্তাদির এসব বিষয়কে এড়িয়ে সাধারণ মানুষ তাদের আলাপে যেভাবে তাদের পরিচয় দেন, সেভাবেই দিয়েছেন। এটা তিনি সচেতনভাবেই করেছেন। আমরা দেখব প্রথম প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পরই দেশে ঘূর্ণিঝড় হয়। প্রধানমন্ত্রীর রিলিফ কার্যক্রম যখন টিভিতে প্রচার করা হয়, তখন এক পুরুষকণ্ঠে ভেসে আসে, “মাইয়া মানুষ দ্যাশ চালালি তো খোদার গজব নাইমবই। ক্যাবল তো মাত্র শুরু। দ্যাহোই না দ্যাশ কোনে যায়্যা খাঁড়া অয়!”(পৃ. ৪৩) এই দৃষ্টিভঙ্গি যেমন আছে, তেমনি নারীর প্রতি কিংবা রাজনৈতিক প্লাটফর্মে সত্যিকার ভোট ও গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থনও এদেশের মানুষের আছে। উপন্যাসের প্রথমেই আমরা দেখব, দাদীর বড় ছেলে নিহত হচ্ছে। মুক্তাদির সে মৃত্যুকে এতটা আচ্ছন্ন করে বর্ণনা দিচ্ছেন, মনে হবে সে মৃত্যু একটা হঠাৎ মৃত্যু- যেমন করে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস মুক্তিযুদ্ধে মারা যাওয়া পুত্রের মৃত্যু বর্ণনাকে অপঘাত বলছেন। নব্বই দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রাণ উৎসর্গ করা থেকে শুরু করে এদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন ও গণমানুষের চাওয়ার জায়গায় এখনো গণতন্ত্রই প্রধান। উপন্যাসে বড় পরিসরে দাদীর মতো চরিত্র ভাবতে পারছেন বাংলাদেশের রাজনীতি একটি সহনশীল গণতান্ত্রিক প্লাটফর্মে দাঁড়াতে যাচ্ছে।

প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নামমাত্র নারী শাসক এসেছে, নারী হিসেবে তাদের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল তার কিছুই পূরণ হয়নি, বিষয়টি শুধু এভাবেও বিবেচনা করা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ যে প্রগতিশীল স্বপ্ন দেখেছিল, নারীশাসনের এই সময়ে এসেও তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির গডেস অভ অ্যামনেশিয়ায় যে বিস্মরণ দেখাতে চান, তা মূলত মানুষের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা থেকে দূরে সরে যাওয়ার ও স্বপ্নভঙ্গের একজাতীয় যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবিও বটে। নদীভাঙনে যে বাড়ি ভেঙে গেছে বলে যুবক নির্ঘুম রাত কাটিয়ে বাড়ির পথে ছুটছে, সে বাড়ি আসলে আছে কি নাই এবং থাকা না থাকার যে যন্ত্রণা নিজের ভেতর পুষে রেখেছে, নব্বই পরবর্তী এদেশের মানুষও তাদের প্রত্যাশাকে এমন দোদুল্যমান রেখেছে। “দুই হাজার ছয়ের সেই রাত থেকে দুই হাজার আঠারো, মাঝখানে বলার মতন উল্লেখযোগ্য কিছুই হয়তো আর ঘটে নাই।”(পৃ. ১৫২) এটা শুধু এক যুবকের উপলব্ধি নয়, এটা গত দুই দশকের বাস্তব চিত্রও। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার জায়গায় কিছুটা এগুনো ছাড়া মানুষের কথা বলার অধিকার থেকে শুরু করে প্রায় সব অধিকারই খর্ব হয়েছে। গডেস অভ অ্যামনেশিয়ায় আমরা নব্বই দশকের একটি নির্বাচন দেখি। সে নির্বাচনে জনসাধারণের অংশগ্রহণ ও উদ্দীপনা উল্লেখ করার মতো। স্বাধীনতার পর এত বিপুল আশা ও আকাঙ্ক্ষার নির্বাচন আর হয়নি। নির্বাচনে সাধারণের অংশগ্রহণ দেখেই অনুমান করা যায় এদেশের মানুষ কতটা ভোট ও গণতন্ত্রপ্রেমী। অ্যামনেশিয়ার দেবী আসলে যা কিছু ভুলিয়ে দিতে চায়, তা এদেশের মানুষের অধিকার না পাওয়ার যন্ত্রণাই। বিপুল ব্যক্তিগত যন্ত্রণার বাইরেও দাদী যেমন করে ভাবতে পারেন, এদেশে নারীর শাসন আর সব নারীর মুক্তির কারণ হবে, নব্বইয়ে যে গণতন্ত্রের কথা আকাশেবাতাসে ভেসে বেড়াত, তা মানুষ নিজের করে পাবে, এদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ তো তা-ই ভাবে!

গডেস অভ অ্যামনেশিয়ায় ৮০-৯০ দশকে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। বিদ্যুৎ, রেডিও, টিভি ইত্যাদি অনুষঙ্গ যোগ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে, আছে কিছু জনপ্রিয় গানের প্রসঙ্গও এবং সেই সঙ্গে মুক্তাদির একটি কিশোরপ্রেমের গল্পও উপন্যাসে প্রবেশ করিয়েছেন, যেটিকে আপাত অর্থে সাহসী সংযোজন বলেই মনে হয়েছে। আমাদের সাহিত্যে, বিশেষ করে ফিকশনে কিশোর প্রেমকে সামনে আনার সাহসিকতা(!) প্রায় কেউ দেখাতে চান না। স্কুলগামী ছেলে-মেয়ের প্রেম, চিঠি চালাচালি, লাভ মেকিং, বিরহ ইত্যাদি বেশ অনায়াস ভঙ্গিতেই এসেছে এ উপন্যাসে। আমাদের এখানে স্কুলপ্রেম খুব কমন ব্যাপার হলেও সাহিত্যে বিষয়টি বিরলপ্রায়। কিন্তু যে ভার বিগত কিশোর-কিশোরীরা বয়ে বেড়িয়েছে, তার দাম বাংলা উপন্যাস দিল কই! ‘এইখানে এই তরুর তলে/ তোমার আমার কৌতুহলে’ মুক্তাদির কিছুটা দাম দিয়েছেন বৈকি! গডেস অভ অ্যামনেশিয়াকে যতটা র ফিকশন মনে হয়, এর চেয়ে বেশি আত্মজৈবনিক মনে হয়, কিংবা এমন করেও বলা যায়- আত্মচরিতের বলয়ে গডেস অভ অ্যামনেশিয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বড় হওয়াকালীন এক ঘটনার ফিকশন রূপ, যেখানে মুক্তাদির রাজনৈতিক আলাপকে কিছুটা সহনশীল করার অভিপ্রায়ে উত্তম পুরুষের কৈশোরকালীন প্রেম-বিরহ-প্রকৃতি-সম্পর্ক আর জীবনের বৈভব দেখাতে চেয়েছেন। এছাড়া উপন্যাসে বর্ণিত সকল ঘটনাকেই দেখা হয়েছে জনসাধারণের দৃষ্টিকোণ থেকে।

এ তো গেলো ব্যক্তি হিসেবে আমি কেমন করে উপন্যাসটির সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি সেই আলাপ। উপন্যাসের ফর্মের জায়গায় গডেস অভ অ্যামনেশিয়া একটি বিশেষ অবস্থান পেতে পারে। উপন্যাসের কাহিনি ছাড়াও এর বয়ানভঙ্গি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। একটা নির্দিষ্ট টাইমফ্রেমের মধ্যে কথা বললেও একটা সময় থেকে আরেকটা সময়ে সুইচ করাটা মুক্তাদির খুব মুন্সিয়ানায় করেছেন। ন্যারেটরের বর্তমান ও অতীতে যাতায়াত, কাহিনি বলা বা এগিয়ে নেওয়া ছিল খুবই অনায়াস। পাঠকের ওপর মনযোগের চাপ প্রয়োগ না করেই ঔপন্যাসিক কাজটি করতে পেরেছেন। খুবই কবিতাগন্ধি শুরুতে যে দেবীর আগমন, গডেস অভ অ্যামনেশিয়া নাম যেখান থেকে, সেই দেবীর এ উপন্যাসে বিশেষ কাজকারবার আপাত না থাকলেও পাঠান্তে বোঝা যায়, তার কত দরকার ছিল! উপন্যাসটিকে উম্মে ফারহানা বলেছেন ‘বিস্মরণের দেবীর স্মৃতি জাগানিয়া আখ্যান’। আমিও সুর মিলয়েই বলব, বিস্মরণের বিরুদ্ধে স্মরণের লড়াই। কিন্তু এই স্মরণ কী? বিস্মরণই বা কিসের? আমাদের যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, নারীর অবস্থান, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, হারিয়ে যাওয়া প্রেম, ভেঙে যাওয়া মন থেকে ভেঙে যাওয়া নদী, দরদ, বড় পরিবার, মানুষের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর দ্রুতগামী প্রাযুক্তিক বাঁকবদলের সমুখে দাঁড়িয়ে অতীত আর বর্তমানের এক সেতু রচনাই কী বিস্মরণের বিরুদ্ধে স্মরণের লড়াই?

সাইকোলজিতে স্মৃতি-বিস্মৃতি বলে একটা ব্যাপার বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। সেখানে স্মৃতির একটা গাণিতিক চেহারা আছে। বলা হয় শিক্ষণ-বিস্মৃতি=স্মৃতি। উপন্যাসের কাজ শিক্ষণে না, এইটা বরং অকাজ। কিন্তু যখন পড়া শেষে তাকাতে হয়, তখন মনে হয়, আমরা যারা নব্বইয়ে বড় হয়েছি, আমাদের জন্য স্মৃতির পুনরুৎপাদন এ উপন্যাসের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমরা অনেক কিছুই ধারণ বা পুনরুৎপাদন করতে পারি না। এগুলো Retention Amnesia ও Recall Amnesia; কিন্তু কিছু অনুষঙ্গ আছে যা সেইসব বিস্মরণ হওয়া স্মৃতির কাছে আমাদের নিয়ে যায়, সান্নিধ্যের মাধ্যমে আবার স্মরণের জানালা খুলে দেয়। তেমনই এক বই গডেস অভ অ্যামনেশিয়া। ব্যক্তি আমি কেমন করে উপন্যাসটার সাথে এক্ট করি, এটাই একটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় পাঠক হিসেবে আমার কাছে৷ উপন্যাসটা একরকম ধনুকের ছিলার মতো স্থিতিস্থাপক শক্তি, আপনাকে টেনে টেনে বহু পুরাতন স্মৃতির ভেতর নিয়ে যায়, সেই স্মৃতির শক্তিতে সামনে এগিয়ে যেতে! আর কী চাই?


গডেস অভ অ্যামনেশিয়া’র প্রকাশক চন্দ্রবিন্দু

শেয়ার