এশিয়ার রাজনীতিতে সম্প্রতি সবচেয়ে অভিনব যে প্রচারণার ধরণটা দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে সিনেমাপ্রীতি। হ্যাঁ, অদ্ভুত হলেও সত্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে এইটা প্রথম চোখে পড়েছে। কাছাকছি সময়ে (বাংলাদেশের নির্বাচন ডিসেম্বরে হলেও ভারতের নির্বাচন হলো এপ্রিল-মে মাসে) হলেও ভারতে নির্বাচনের আগেই বেশ কিছু একইরকম ছবি চোখে পড়লো। দেশ-বিদেশ মিলে সবার আগে যেই ছবিটার প্রতি আগ্রহ হইছিলো সেইটা ‘হাসিনা: এ ডটার্স টেল’। আমার দুর্ভাগ্য সময়-সুযোগের অভাবে ছবিটা আমি হলে গিয়ে দেখতে পারিনি। পরবর্তিতে বেশ কিছু বন্ধুদের কাছে ছবি সম্পর্কে জেনে আর এই ছবি দেখার জন্য ডেস্পারেটও হতে পারিনি।
একইরকম আগ্রহ ছিলো ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে নিয়ে নির্মিত ছবি ‘দ্য এক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ নিয়াও। একটা সময় এই আগ্রহও দমে যায়। অনলাইনে আছে কি না খুঁজতেও ভুলে গেছি ছবিটার কথা। হয়ত হাতের কাছে পাইলে, হাতে সময় থাকলে দেখেও ফেলতে পারি এইরকম আরকি। একই অবস্থা ‘হাসিনা: এ ডটার্স টেল’-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অথচ এই ছবিটা (হাসিনা) নিয়া আরও বেশি আগ্রহ থাকার কথা ছিলো।
সে যাই হোক, এইরকম নির্বাচন পূর্ববর্তী বেশ কিছু ছবি ভারতে মুক্তি পাইছে। এর মধ্যে শিবসেনার মতো কট্টর রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে’র বায়োগ্রাফি নিয়া নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর অভিনয় করা ছবিও আছে। এসবে আগ্রহ তৈরি হয়নি। আগ্রহ তৈরি হইছিলো ‘মাসান’খ্যাত ভিকি কুশাল অভিনীত ‘উড়ি: দ্যা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়া। ভালো প্রিন্ট আসার পর দেখলাম।
এই ছবি নিয়া আসলে খুব বেশি কিছু বলার নাই। কিন্তু যেহেতু বলতে শুরু করছি কোনওভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ তো বলতেই হয়। নইলে লিখতে বসার অপমান হয়। এইরকম একটা ঘটনা শেয়ার করা যায় এই সুযোগে। ২০০৫ সালে আমি তখন ময়মনসিংহে। পরিচিত এক বড় ভাই তার বইয়ের দোকান উদ্বোধন করবেন। তার আগে তিনি পোলাপানদের কাছে এই দোকানের ব্র্যান্ডিং করতে একটা কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন। পুরস্কার বিতরণি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও সভাপতি অধ্যাপক যতীন সরকার। অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তৃতা করতে যেয়ে জাফর ইকবাল বললেন, যতীন স্যারের সামনে আমার অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করা মানায় না। আর যেহেতু শিক্ষকতা করি, প্রস্তুতি ছাড়াও ৪০ মিনিট অনায়াসে গল্প করার অবস্থা সবসময়ই থাকে। ফলে কথা বলতে শুরু করলে ততক্ষণ বলতে পারবো। ‘উড়ি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়াও আমার অবস্থা সেইম। বলতে শুরু করছি বলে কিছুক্ষণ তো বলতেই পারবো। কিন্তু আদতে তা সেই সিনেমা নিয়া বলা তেমন হবে না। আর এই ছবি নিয়া এত বলারও নাই। মূল ঘটনা হইলো কাশ্মিরী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শায়েস্তা করার একটা সেনা অভিযানের গল্প। যেখানে সেনা অভিযান পরিচালনাকারীর চরিত্রে অভিনয় করেছে ভিকি কুশাল। তার অভিনয় দেখার জন্যই কেবল ছবিটা দেখতে শুরু করছিলাম। সে হিসেবে তাকে উৎরে যাওয়া বলা যায়। এই ছবিতেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর চরিত্র একাধিকবার অন স্ক্রিন আসছে। আর এইরকম একটা ঘটনাকে সারা ভারতেই বীরত্ব হিসেবে দেখানোর মূল যে কারিগর হিসেবে তাকে উপস্থাপন করানো হইছে। এইটাও মূলত: তাই একটা রাজনৈতিক সিনেমা। যেইটা ভিকি কুশালের জন্য একদিক দিয়া মন্দ, একদিক দিয়া ভালো। মন্দ এই অর্থে, নির্বাচনী প্রপাগান্ডার যে কোনও ছবিই যে শেষ পর্যন্ত শিল্পের বিচারে টিকে থাকে না, সেইরকম ছবিতে নিজেকে প্রমাণ করতে চাওয়া এক প্রকার বোকামিই। এই বোকামি ভিকি কুশাল করলেন। অপরদিকে এই ধরনের ‘ফর্মুলা টাইপ’ ছবিতেও ভিকি অভিনয় করলেন। যদিও ভিকি আরও এইরকম ছবিতে অভিনয় করছেন, কিন্তু সেগুলোতে তাকেই বেশি পাওয়া যায়। চরিত্রগুলো তার মতো হয়ে উঠে। যা উপভোগ্য ছিলো। কিন্তু উড়িতে ঠিক তারে ততটা পাওয়া যায় না।