দ্বিতীয় দশকের নির্বাচিত কবিদের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারে এবার মধ্যমণি ছিলেন অমিত চক্রবর্তী। এই আয়োজনকে সাক্ষাৎকার না বলে আড্ডা বলাই শ্রেয়; অনলাইন আড্ডায় অংশগ্রহণকারীরা অমিতকে নানা প্রশ্ন করেছেন, তিনি উত্তর দিয়েছেন। বাকীরাও বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রাণখুলে মতামত দিয়েছেন। সেসব মতামত অবশ্যই সাহিত্য বিষয়ে, আলোচনাও স্বাভাবিকভাবেই অমিত চক্রবর্তীর কবিতা নিয়েই বেশি হয়েছে। অমিত প্রবাসে থাকেন। তার একমাত্র প্রকাশিত বই ‘আন্তোনিওর মেঘ’, প্রকাশক চৈতন্য। এই আড্ডায় অমিতের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন রুহুল মাহফুজ জয়, মারুফ আদনান, ফয়সাল আদনান, অনুপম মণ্ডল, হাসান রোবায়েত ও মোস্তফা হামেদী।
আমার মনে হয় বাংলা কবিতা যদি তার সাংস্কৃতিক মূলের দিকে অভিনিবেশ করে এতেই সামনে নতুন সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে পারব আমরা।
রুহুল মাহফুজ জয়: অমিত। শুভ সকাল। লুইভিলে এখন ঝকঝকে রোদ্দুরের সকালই থাকার কথা।
অমিত চক্রবর্তী: শুভ সন্ধ্যা জয়। লুইভিলে এখন আমি থাকি না। তবে ডেট্রয়টে আজ ঝকঝকে রোদ। যদিও টেম্পারেচার বিলো জিরো।
জয়: বাপরে! শীত উদযাপন করছেন? সাহিত্য নিয়া আলাপের আগে একটা বিষয় জানতে ইচ্ছা করছে। লুইভিলে থাকতেন, মোহাম্মদ আলী সংক্রান্ত কোন স্মৃতি আছে?
অমিত: মোহাম্মদ আলী সংক্রান্ত কোনো স্মৃতি আসলে নাই। লুইভিলে ছিলাম বছরখানেক কাজের উদ্দেশ্যে। তো যেদিন মোহাম্মদ আলী মারা গেলেন অইদিন আমি লুইভিলে ছিলাম। উনার বাসার অইদিকে গিয়ে হেঁটে আসলাম বিকেলে। স্মৃতি বলতে এতোটুকুই।
জয়: আচ্ছা। সাইডভিউ মিররে মেঘ আমার পড়া আপনার প্রথম কবিতা। মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই কবিতার একলা মেঘটা আসলে কে? আমার কাছে এই একলা মেঘটাকেই কবিতাটার কেন্দ্র মনে হয়।
অমিত: একলা মেঘটা মনে হয় অন্যমনস্কা, যিনি জানালায় দাঁড়ায় থাকেন, উনার নিঃসঙ্গতার প্রজেকশান। অথবা স্রেফ একটা মেঘও তো হতে পারে আসলে। গের্নিকার ষাঁড় যেরকম স্রেফ একটা ষাঁড়, গের্নিকার চিত্রশিল্পীর মতে…
জয়: তা হতে পারে। কিন্তু একলা মেঘকে পারসোনিফিকেশন করতে ভাল লেগেছে আমার।
মারুফ আদনান: এটা পাঠক বা দর্শকের ব্যাপারই তো।
অমিত: অবশ্যই।
জয়: আপনার বোর্হেসের জানালা আমার বেশ প্রিয় কবিতা। ম্রো যুবতীর সাথে বোর্হেসের জানালাকে রিলেইট করার ভাবনাটা কিভাবে এসেছিল?
অমিত: বোর্হেসের জানালা একটু মাল্টি-লেয়ারড, ফিরে তাকালে মনে হয়। যখন ম্রো যুবতী বা মাতামুহুরীর কথা আসে, তখন অই কবিতা কিন্তু একটা স্পেসিফিক সেন্টিমেন্ট আর জনগোষ্ঠী নিয়ে কিছু বলতে চায়। আবার যখন বোর্হেসের জানালায় যখন আমি তারে দেখি, তখন এই যে লোকালিটি বা স্পেসিফিক ব্যাপারগুলোর বদলে অই ম্রো যুবতীকে একটা ইউনিভার্সাল প্রতীক হিসেবে চিন্তা করা যায়। এইরকম চিন্তাভাবনা থেকেই আর কি লেখাটার শুরু…
জয়: আপনার বেশিরভাগ কবিতাই (আন্তোনিওর মেঘ পর্যন্ত) কি এই ইউনিভার্সাল ভাবনাকে প্রতিনিধিত্ব করে?
অমিত: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করে সম্ভবত। আন্তোনিয়োর মেঘ পাণ্ডুলিপির কবিতাগুলো দীর্ঘ সময়ে লেখা হলেও যখন একসাথে গোছালাম, তখন খুব অল্প কয়েকটা বিষয়কে আমি অই বইয়ের কেন্দ্র হিসেবে এস্টাব্লিশ করতে চেয়েছি। বৈশ্বিকতা এর মধ্যে একটি।
জয়: সেক্ষেত্রে আপনি মনে হয় সফল। ভাবনাটা এখনো কি একই রকম? আরেকটা উদাহরণ দেয়া যায়। অবসর কবিতায় যে কৃষকের কথা বলছেন, তা মনে হয়ে বাংলার কৃষক। আবার পামগাছ মনে করাচ্ছে অন্য গোলার্ধকে। আপনার সমগ্র কবিতা চিন্তা বা দর্শন এখানেই – বাংলা কিন্তু বৈশ্বিক?
অমিত: এরকমভাবে দেখা যেতে পারে। যদিও এটা চিরাচরিত ক্লিশে, তারপরো আমি নিজেকে প্রথমে বিশ্বের নাগরিক মনে করি, তারপর বাংলার। তো এই যে জাক্সটাপজিশন এটা আমার সারা বই জুড়েই ছড়িয়ে আছে।
জয়: আপনি বলছেন বালি মানে সৈকত আর সৌরস্নানের স্মৃতি। আপনার কাছে ঢাকার কবিতার স্মৃতি কেমন? কিসের সাথে তুলনা করবেন?
অমিত: ঢাকার কবিতা বলতে আলাদাভাবে কোনো স্মৃতি চিহ্নিত করার কথা ভাবি নাই অইভাবে। ঢাকা আমার কাছে একটা রহস্যময় ব্যাপার। বস্তুবিশ্বের যে ক্যাওস আমি অনুধাবন করতে পারি, এটাকে সবচেয়ে ভালোভাবে রিপ্রেজেন্ট করে ঢাকা। এই যে অসংখ্য মানুষ, কিসের পেছনে ছুটছে তারা যেন নিজেও জানে না। প্রতিদিন মাথা নিচু করে তারা কিন্তু ঘরে ফিরে আসছে, আবার অই ক্যাওসের মধ্যে মিলায় যাওয়ার জন্য, পরের দিন। আধুনিক মানুষের জীবনের যে ক্যাকোফনি, গতি আর হেঁয়ালি – ঢাকা আমাকে অইটার কাছেই নিয়ে যায় বার বার।
মারুফ: আপনার কোনো কোনো কবিতায় কয়েকজন চিত্রশিল্পীর নাম উল্লখ বা তাঁদের কাজের নির্দিষ্ট কোনো প্রবণতাকে লিংক করেছেন। ধরেন, ভ্যান গগ বললে কিন্তু তাঁর নির্দিষ্ট চিত্রশৈলীর ইমেজ মনে মনে ভেসে উঠে। এখানে আপনার নির্মিত চিত্রকল্পের সাথে ভ্যান গগের ছবির বা লাইফের একটা ইমেজ পাঠকের মনে ধরা দিচ্ছে। আপনি কি নিজস্ব চিত্রকল্পকে ঐ ইমেজের সাথে মেশাতে চাইছেন? এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
অমিত: আমি বরাবরই পেইন্টিং-এর প্রতি ফ্যাসিনেইটেড ছিলাম। যদি মেধা, ক্ষমতা থাকতো হয়তো চিত্রশিল্পীই হতাম আমি। আন্তোনিয়োর মেঘ-এ একজন আর্টমেইকার হিসেবে আমার যে বেড়ে ওঠা সেটাকে তুলে ধরতে চেয়েছি কোনোভাবে, অই দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে যারা আমার চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করেছেন, মুগ্ধ করেছেন – তাদের নানাভাবে ইনফিউজ করেছি আমার কবিতায়। ভ্যান গগ, রেনোয়া- এদের উপস্থিতি ফলত অইরকম চিন্তাভাবনা থেকেই।
ভাষা হলো কবিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পিলার। যেকোনো আর্টেরই আসলে।….আইডিয়া নির্ভর কবিতার যেইসব নমুনা আমরা দেখি, আমি খুব বেশি আনন্দে গ্রহণ করতে পারি নাই এখনো।
জয়: আপনার কবিতায় ঢাকা লাইফ কোন প্রভাব রাখে নাই?
অমিত: অবশ্যই রেখেছে। আমার কবিতার সারফেইস লেভেলে খুঁজতে গেলে এটা পাওয়া যাবে না। ইন ফ্যাক্ট আমার কবিতার সারফেইসে কিছুই নাই। কিন্তু ঢাকার এম্বিয়েন্স, অভিজ্ঞতা হয়তো আমি কমপ্লিটলি ভিন্ন কোনো চাবি দিয়ে বলেছি আমার কবিতায়। ঢাকার ভয়াবহ মাদকতা তো এটাকে স্বয়ং মারিওয়ানার ভ্যালি বানিয়ে দ্যায় আমার কাছে।
জয়: আপনার কবিতার যে জগৎটা, এইটা সৃষ্টির পেছনে মূল ভূমিকা কিসের, এডভান্স রিডিং না যাপন নাকি অন্যকিছু?
অমিত: যা কিছু আপনি বললেন, এইসবকিছুর সমন্বয়েই একটা জগত গড়ে ওঠে। যাপন তো দুই রকমের, সরাসরি ও অসরাসরি। আপনার যাপন ও আপনার আকাঙ্ক্ষা মিলেই গড়ে উঠেন আপনি। তবে মূল ভূমিকা আমার আইসোলেইটেড পার্সোনালিটির।
জয়: আপনার আইসোলেটেড পারসোনালিটি খেয়াল করি, ব্যক্তিগতভাবে আমার তা ভাল লাগে। ‘ফুল থেকেই ধারণা এসেছে টারবাইনের’ এই বিশ্বাসটা কিভাবে জন্মেছিল?
অমিত: এটা ঠিক বিশ্বাস না, আবার পোয়েটিক হেয়ারসেও না। তবে আমার পড়াশোনার কারণেই হোক বা পেশার কারণেই হোক নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক বলে ভাবতে পছন্দ করি আমি। আরো মনে করি বিজ্ঞান ও প্রকৃতি খুবি গাঢ়ভাবে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। তো সেখান থেকেই ফুল থেকে টারবাইনের ধারণা আসার ঘটনা আর কি।
জয়: আপনি তো বিখ্যাত একটা গাড়িপ্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ওখানে আপনার কলিগরা জানে, আপনি কবি?
অমিত: নট রিয়েলি। অল্প একদুইজন। আমিও চাই ব্যাপারটা এরকমি থাকুক।
জয়: যে অল্প দু’ একজন জানেন, তারা আপনাকে কিভাবে দেখে? প্রশ্নটা এই কারণে করা, এখানকার মানুষ আর ওখানকার মানুষের ‘কবি’ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিটায় কেমন ফারাক সেটা জানতে ইচ্ছে করছে।
অমিত: তারা আমাকে আল্ট্রা-প্রোগ্রেসিভ, বার্নি স্যান্ডার্সের এভিড সাপোর্টার হিসেবে দেখে। হাহা। অন এ সিরিয়াস নোট- আসলে বেশিরভাগ এর পক্ষে, যারা এই লাইনের লোক না, একজন আর্টমেইকার’কে কম্প্রিহেন্ড করা খুবি কঠিন। হাইপার-এডভান্সড ক্যাপিটালিজম একটা ক্রমাগত ইঁদুর দৌড় আসলে। একটা পর একটা চমৎকার মুলো আপনার সামনে ঝুলতে থাকবে, আর আপনি দৌড়াবেন। এই সিস্টেমটাই এমন যে একমাত্র আপনার উপরে যারা আছেন, অর্থ-সম্মান-প্রতিপত্তির দিক থেকে, তাদেরকেই আপনি প্রশংসার চোখে দেখবেন কেবল। মূলত, আমার অভিজ্ঞতায়, দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যটা বিশাল। এবং এর কারণটা সোশিও-একোনোমিক।
জয়: আপনার কবিতায় ইংরেজি শব্দের ব্যবহার নিয়ে অনেকেই ক্রিটিক করেন। কিছু কিছু কবিতার ক্ষেত্রে ক্রিটিসিজমটা যৌক্তিক মনে হয়েছে। যেমন একটা কবিতায় লিখেছেন…
“কনভোলিউটেড রাতের জানালায়
অচেনা মুখগুলো হাসছে সিনিক্যাল”
কিন্তু আমার কাছে কনভোলিউটেডের চেয়ে এর বাংলা শব্দগুলোর মধ্যে ‘কুণ্ডলিত’ এবং সিনিক্যাল শব্দের জায়গায় ‘কঠোর’ বা অন্য প্রতিশব্দ পড়তে বেশি ভাল্লাগতো। ভাষার এরকম ব্যবহার নিয়ে আপনার ভাবনা কি একই জায়গায় আছে?
অমিত: ভাবনা প্রতিনিয়তই বদলায়। আমি ধরে নিচ্ছি ইংরেজি শব্দের “অতি” ব্যবহার নিয়ে ক্রিটিক করা হয়েছে। কারণ ইংরেজি শব্দের ব্যবহার নিয়ে কেউ ক্রিটিক করলে সেটা আমি গ্রহণও করব না। হ্যাঁ, ফিরে তাকালে কিছু জায়গায় হয়তো কিছু শব্দ নিয়ে আবার ভাবা যেতে পারতো। অনেক সময় একটা লেখা, ফর্ম বা মোটিভও ডিকটেইট করতে পারে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার। আবার ব্যক্তিগত প্রেফারেন্সও আছে। আমি বেশ কিছু স্প্যানিশ শব্দও ব্যবহার করেছি আমার কবিতায়। সামনে অন্যান্য ভাষার শব্দও ব্যবহার করার ইচ্ছা আছে। আমি মনে করি যদি সিমলেসলি ব্লেন্ড করা যায় যেকোনো ভাষার শব্দই কবিতায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার আপনার প্রশ্নে ফিরে আসি। এই ক্রিটিককে আমি পজিটিভলি নিয়েছি। এবং ভবিষ্যতে আমার কাজে লাগবে এটা।
জয়: আমার মনে হয়, বিদেশী শব্দ ব্যবহার নিয়ে ফান্ডামেন্টালিস্ট হওয়া উচিত না।
মারুফ: কবিতায় ভাষা আর আইডিয়ার মধ্যে কোনটাকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন? কেনো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়?
অমিত: ভাষা হলো কবিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পিলার। যেকোনো আর্টেরই আসলে। আপনি যদি সিনেমার কথাই ভাবেন, যেখানে ভাষাটা আরেকটু ইন্ডাইরেক্ট তখন দেখবেন যে মহান পরিচালকেরা, তাদের সিনেমাকে আমরা সহজেই সনাক্ত করতে পারি তাদের “ভাষা” দিয়ে। ফেলিনি, তার সিনেমার ভাষা নির্মাণ করেছেন চরিত্রের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আর মুখভঙ্গি দিয়ে। যেখানে সার্কাসের কিছু মৌলিক উপাদান খুব প্রমিনেন্ট। আবার কুবরিক তার ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আলো, রঙ আর সঙ্গীতের ব্যবহার দিয়ে। কবিতার ভাষা, এর অন্তঃস্থ মেকানিজম, এইসবই নির্ধারণ করে একজন পাঠক কোন পর্যায়ে কবিতার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আইডিয়া সেই তুলনায় মুখ্য নয় আমার কাছে। আইডিয়া হলো উত্তরাধুনিক শিল্পের পিলার, যেখানে কিভাবে কমিনিউকেইট করা হলো তাঁর চেয়ে কি কমিউনিকেইট করা হল সেটাই জরুরি। আইডিয়া নির্ভর কবিতার যেইসব নমুনা আমরা দেখি, আমি খুব বেশি আনন্দে গ্রহণ করতে পারি নাই এখনো।
মারুফ: আইডিয়া যদি উত্তরাধুনিক শিল্পের পিলার ধরে নিই, তবে অর্থহীনতা নির্মাণকেও কি উত্তরাধুনিক আচরণ ধরে নেয়া যায়?
অমিত: অর্থহীনতা তো চিরন্তন একটা বিষয়, মানুষের জীবনের। যে জীবন আমরা যাপন করছি, এর অর্থ নিরুপন কি করতে পেরেছে কেউ? এটা মানুষের চিরন্তন অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত। তাই কেবল উত্তরাধুনিক আচরণ হিসেবে আমরা অর্থহীনতাকে ধরতে পারি না।
মারুফ: ধরেন বিমূর্ত চিত্রকলা আর আইডিয়া ভিত্তিক চিত্রকলার কথা?
ফয়সাল আদনান: আইডিয়া নির্ভর কবিতা বলতে ঠিক কি বোঝায় অমিত? মানে দুই-একজন কবির কথা কি আমরা বলতে পারি বা তাদের কাজ যা মূলত আইডিয়া নির্ভর?
অমিত: আইডিয়ানির্ভর কবিতা সম্পর্কে বলতে গেলে এক বন্ধুর বলা একটা পুরাতন এনালজির কথা মনে পড়ল। যেমন চিন্তা করো একজন বসে কোক খাচ্ছে, হঠাৎ কোকের বোতল দেখে মনে হল এটার সাথে নারীর শরীরের অনেক মিল, ফলে লেখা হয়ে গ্যালো কবিতা এই আইডিয়াকে কেন্দ্র করে। উদাহরণ দেয়া থেকে আপাতত বিরত থাকলাম।
ফয়সাল: একমত তোমার সাথে অমিত। অনেকে এই প্রবলেমটাকে ভুলভাবে আইডেন্টিফাই করে, ইমেজের ক্লান্তিকর ব্যবহার বলতে চায় আমার কাছে মনে হয় নাই কখনো এটা একটা ইমেজ ডিপেন্ডেন্ট স্ট্রেইন, বরঞ্চ যে কথা কবিতা ছাড়া বললেও চলে আসলে, সেইটাই কবিতা ‘করে’ বলতে চাওয়ার বিপদ।
সময়োপযোগিতা, বা সময়কে তুলে ধরার ব্যাপারটা আর্টের জন্য হয়তো দরকারি। কিন্তু তারচেয়ে বেশি জরুরি আমার মনে হয় মানুষের জীবনের চিরন্তন অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা।
মারুফ:
‘এমন সূর্যের নিচে হুট করে কাউকে মেরে ফেলা যায়।’ এখানে আমি সময়কে নিখুঁতভাবে পাই। কবিতায় সময়োপযোগিতাকে কিভাবে দেখেন?
অমিত: সময়োপযোগিতা, বা সময়কে তুলে ধরার ব্যাপারটা আর্টের জন্য হয়তো দরকারি। কিন্তু তারচেয়ে বেশি জরুরি আমার মনে হয় মানুষের জীবনের চিরন্তন অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা। মহৎ শিল্পকর্ম যা কিছু আমি এক্সপেরিয়েন্স করেছি, দেখেছি জীবনের কোনো এক মুহূর্তে আমি অই শিল্পের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছি, ওর ইভেন বেটার, শিল্প আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। শরতের রাতে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমার আকাশের দিকে তাকায় মনে হয়েছে যে এই আকাশ ভ্যান গগের আঁকা। তবে একজন শিল্পী একিসাথে তার সময় এবং তাঁর পূর্বসূরীদের প্রতিনিধি।
মারুফ: আর্ট এ্যাকটিভিস্ট হিসেবে কবিদের ব্যাপারে একটা কথা মাথায় হঠাৎ হঠাৎ আসে। তা হলো কবিদের (সবার কথা বলছি না) কোনো কারণে দৃশ্য শিল্পের ব্যাপারে অভিরুচি খুব একটা স্ট্যান্ডার্ড না। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
অমিত: অন্যদের ব্যাপারে জানি না। তবে আমার মনে হয় একজন আর্টমেইকারের জন্য সব ধরণের শিল্পের অভিজ্ঞতা নেয়ার দরকার আছে। দরকার আছে তাদের সংহতি আর পার্থক্যকে চিহ্নিত করার।
ফয়সাল: হেই অমিত! কি অবস্থা মেইট? অনেকদিন কথা হয় না তোমার সাথে। কেমন আছ?
অমিত ফয়সাল। এইতো মেইট। বেঁচে আছি। কি অবস্থা?
ফয়সাল: চলছে আমারো। বিয়ে করেছ কিছুদিন আগে শুনলাম, ফ্রম ওয়ান ভেটেরান টু এনাদার, হাউ আর ইউ এক্সপেরিয়েন্সিং দ্য চেইঞ্জ? অবভিয়াসলি একজন পোয়েটের কাছে এই প্রশ্নটা…
অমিত: স্টিল ট্রাইয়িং টু ফিগার দ্যাট আউট। দেখা যাক কি হয় সামনে…
ফয়সাল: হা হা, খুবই অমিতের মত আন্সার হলো, এনিওয়ে, গুড লাক উইথ দ্যাট। অনেকদিন কোন নতুন লেখা পড়ি না তোমার, সব এমন লুকিয়ে রাখা কেন?
অমিত: লেখার গতি খুব স্থিমিত আসলে। যাও অল্পকিছু লেখা আছে সেসব এখনো কম্পোজ করি নাই। আর সত্যি কথা বলতে অনলাইন মাধ্যমে শেয়ার করতে কিরকম বিবমিষা লাগে ইদানিং।
মারুফ: এখন একটু ঘরোয়া আড্ডা লাগছে। এতোক্ষণ চাপের উপর চাপ ছিলো।
ফয়সাল:
আমি তো সিরিয়াস কথাবার্তা বেশি পারি না, তাই হালকা করে দিলাম নিজের সুবিধার জন্য।
মারুফ: হা হা
ফয়সাল: বিবমিষার কারণটা বুঝি, সে নিয়ে আলোচনায় যেয়ে সময় ক্ষেপন না করি।
অমিত: মাচ এপ্রিশিয়েটেড…
ফয়সাল: পলিটিক্সের কথা বলছিলে, বার্নি স্যান্ডারসের এভিড সাপোর্টার, বার্নিকে আমারো অনেক পছন্দ। কিন্তু ট্রাম্পকে স্ট্যান্ডার্ড না ধরেই বলো তোমার কি ধারণা যে ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ডকে আমেরিকা লিড করতে চায় তাকে লিড দেয়ার ক্ষমতা বা প্লানিং বার্নির ছিল? আমার অন্তত হিলারির সাথে বিতর্কগুলোতে ওকে আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড মনে হচ্ছিলো।
অমিত: বার্নির একটা ফ্রেইমওয়ার্ক ছিলো, আমেরিকা’কে সে কিরকম দেখতে চায়। এবং তাঁর ইন্টেনশানও ছিলো। আমি মনে করি সে যেইসব বিষয়ের কথা বলেছে- ফ্রি কলেজ এডুকেশন, ফ্রি মেডিকেল, মিনিমাম ওয়েজ- এইগুলা সবি ভ্যালিড প্রশ্ন এবং বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এইসব বিষয়গুলো বর্তমান। এখন, ফ্রি-মার্কেট ইকোনমির সাথে এইসবের গভীর কনফ্লিক্ট আছে। যেটা আল্টিমেইটলি আমরা দেখেছি শেষ পর্যন্ত। আমার কখনো মনে হয় নাই কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার আর ভৌতিক হাসি ছাড়া অই বিতর্কগুলোতে হিলারির আর কোনো অবদান ছিলো। ফ্যাকচুয়াল, পাসুয়েসিভ বিতর্কে হিলারি বার্নির সামনে দাঁড়াতেই পারে নাই।
ফয়সাল: তুমি তো ইউরোপে ছিলা বছরখানেক, আর এখন আমেরিকা। ইকোনমি আর কালচার মিলায়ে বড় কি পার্থক্য দেখছ?
অমিত: অনেক বড় পার্থক্য। তারা একটা সোশালিস্ট ডেমোক্রেসিতে বসবাস করছে। অলসো কালচারাল আইডেন্টিটিটা অনেক তীব্র ইউরোপে। আমেরিকা তো আসলে হাজার সংস্কৃতির মিশেল। এইখানে ক্যাপিটালিজম আর ফ্রি মার্কেট ইকোনোমিই কালচারকে ডিফাইন করে। যেটা অবভিয়াসলি হলো ক্রমাগত পুনঃআধুনিকীকরণ। অনেকটা আইফোনের মতো আর কি। এক বছর পরেই সবকিছু পুরাতন হয়ে যায়। ফলত নতুন মুলো গজায় উঠে, সবাইকে দৌড়ানোর জন্য।
ফয়সাল: ওদের লিটারেচারে এইটা কিভাবে এফেক্ট করতেছে তোমার এক্সপেরিয়েন্সে, এই যে বছরোয়ারি, পিরিয়োডিকালি দৌড়ঝাঁপ?
অমিত: তাদের লিটারেচারটাকে আমি একটু পশ মনে করি। অনেকটাই বড় বড় মেট্রপলিটানকেন্দ্রিক। তারা আধুনিক মানুষের জীবনের কোনানড্রাম নিয়ে বেশি ডিল করে। তবে সত্যি বলতে আমি একজন আউটসাইডার এখনো, ওদের সাহিত্য নিয়ে বলতে হলে আমার আরো সময় দিতে হবে, যেটা আমার পরিকল্পনায় আছে।
ফয়সাল: একটা রেলেভেন্ট নিউজ শেয়ার করি, লিট ফেস্টে কি পরা লাগবে, একটা সংবাদমাধ্যম তা শিখাইতেছে, তো এই অবনক্সাস শিক্ষা-দীক্ষা নিয়া আপনারা কি বলেন, আপনারা কে কি পরিয়া সাহিত্য করেন? অমিত তুমি কি পরে কবিতা লেখো?
অমিত: হা হা হা
ফয়সাল: শুনে ভালো লাগলো অমিত। আমেরিকাকে আমি বেশ মনযোগ দিয়ে লক্ষ্য করি। ওদের কবিতা নিয়ে আমার আগ্রহের ব্যাপারে টুকটাক কথা বোধহয় হয়েছিলো তোমার সাথে। তোমার রিসার্চ পড়ার আগ্রহ থাকলো।
অমিত: লিখবো সামনে এই বিষয়ে যতটুকু পারি।
ফয়সাল: পলিটিক্যালি, ফিলসফিক্যালি এবং ইকোনমিক্যালি যতটুকু জানি তোমাকে, তুমি লিবারেল। নন-লিবাররেল যারা তাদের কবিতা বা সাহিত্যকে উপভোগ করতে কি কোন অসুবিধা বোধ করো? যেমন এজরা পাউন্ড ঐপাড়ে বা আল মাহমুদ এই পাড়ে?
অমিত: শিল্পীসত্তা আর ব্যক্তিসত্তাকে যতটুকু পারি সেপারেট করে পড়ার চেষ্টা করি আর কি। একজন শিল্পির এজেন্ডা যখন ব্যক্তিগত হয়ে যায় তখন আমার কাছে সেটা এক্সেপ্টেবল না আর। পাউন্ড আর মাহমুদ, দুজনের কবিতা পড়তে আমি কখনো এই সমস্যার মুখোমুখি হই নাই।
ফয়সাল: হালের কিছু রিলেটেবল ইস্যু চলে আসে যেমন ধরো কেভিন স্পেসি, একটু পেছনে গেলে উডি অ্যালেন, দুজন ভীষণ প্রিয় পারফরমার, এদের মুভি দেখতে গেলেও কি এমনটা পারবা এখন?
অমিত: মনে হয় না। দুজনি আমার প্রিয়। তাদের ঘটনা শুনে আমি আহত হয়েছি। কিছু কিছু সীমানা অতিক্রম করা কঠিন।
লাতিন নিয়ে পক্ষপাত আছে। কারণ উপনিবেশকতা থেকে শুরু করে সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারা আমাদের অনেক কাছাকাছি।
ফয়সাল: তোমার কবিতা ফলো করছি অনেকদিন। সো দেয়ার ওয়াজ নো সারপ্রাইজ ফর মি ইন ইওর ফার্স্ট বুক। কিন্তু এর পরে কাজ নিয়ে কি ভাবছ?
অমিত: এর পরের কাজটা ভিন্নতর কিছু করার চেষ্টায় আছি। ফর্ম ও থিমেটিক্যালি। কিছু চিন্তা ভাবনা আছে, আপাতত একটা আকৃতি দাঁড়াক, দেখা যাক কি হয়।
ফয়সাল: গ্রেট। তোমার তো অনেক পড়ালেখা, হিংসনীয় রীতিমত। কিন্তু লাতিনের প্রতি কি একটু পক্ষপাত আছে? কেন?
অমিত: লাতিন নিয়ে পক্ষপাত আছে। কারণ উপনিবেশকতা থেকে শুরু করে সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারা আমাদের অনেক কাছাকাছি, কিন্তু তাদের সাহিত্যের যে উল্লম্ফন সেটা আমরা আমাদের এখানে তো দেখি না। আমেরিকান-ইউরোপিয়ান সাহিত্যের চাইতে তাদের সাথে আমি বেশি সংলগ্নতা অনুভব করি।
ফয়সাল: আমার অবশ্য এশিয়ান সাহিত্য একটু একটু ধরছে আজকাল, ধরো মুরাকামি, পামুক কিংবা অমিতাভ ঘোষ!
অমিত: মুরাকামি, পামুক দুইজনি আমার প্রিয় লেখক। এশিয়ান সাহিত্য আরো পড়ার আছে আমার। ভবিষ্যতে।
ফয়সাল: পামুকের স্নো নিয়ে তোমার সাথে একদিন আড্ডা দিতে চাই আমি। এমেজিং পিস।স্নো নিয়ে কিছু বলো ব্রিফলি?
অমিত: হ্যাঁ, স্নো নিয়ে অনেক কথা বলা যায়। স্নো’কে আমি দুইভাবে দেখি। পলিটিক্যাল ড্রামা এবং একইসাথে সাইকোলজিক্যাল। পামুক এর লো টেক্সচারড, নম্র টোন যেন পুরো উপন্যাসকে আরো বেশি উৎকর্ষ দেয়। কি যে গ্রিম এর ব্যাকগ্রাউন্ড। সাদা-কালো, ঠাণ্ডা একটা এম্বিয়েন্স। বিশদে কথা হবে কোনো এক সময় এটা নিয়ে।
ফয়সাল: লাস্ট প্রশ্ন করেই যাই, এমেরিকান বিয়ার কেমন লাগতেছে, ইউরোপিয়ান বিয়ারের পাশে কি নিতান্তই মেলো না?
অমিত: নাহ্ তা ঠিক না। লোকাল প্রোডাক্ট আছে, প্রতিটা স্টেইটের কিছু কিছু সিটিতে, সিগ্নেচার ব্রিউয়িং। ভালোই লাগে আমার। স্পেশালি গ্রান্ড র্যাপিডস, মিশিগানের কিছু তো খুবি ভালো।
অনুপম মণ্ডল: অমিত, ভালো আছেন?
অমিত: অনুপম, এইতো। কেমন আছেন?
অনুপম: ভালোই! আমি আপনার লেখালেখির শুরুটা জানতে চাইছি । কখন কিভাবে শুরু হলো?
অমিত: লেখালেখির শুরুটা হঠাৎ করেই, অন্যান্য দশজনের মতো। তবে পেছনে তাকালে, আমার যেটা মনে হয় যে অনেক কম বয়স থেকেই আমার সেনসিটিভিটিটা গ্রো করেছে একটু প্রিম্যাচিউরলি। কম বয়সেই আমি চারপাশের অনেক খল আর কুৎসিত বিষয়গুলো বুঝতে শিখেছি, অনুভব করেছি। এইসবকিছুর থেকে রিলিফ পাওয়ার জন্যই হয়তো লেখালেখির শুরু হয়, যেখানে আমার নিজের জগতে আমি একটা আইসোলেশানের মধ্যে ডুবে যেতে পারি।
অনুপম: কোন বই বা বইয়ের লেখক অনুপ্রেরনা বা প্রভাব হিসেবে কাজ করেছিলো কি? বা এখনও কারো প্রভাব রয়ে গেছে বলে মনে হয় কি?
অমিত: জীবনানন্দ দাশ আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। কবিতাবিষয়ক সব আগ্রহ ট্রিগার করেছেন উনি। আর কার প্রভাব আমার মধ্যে রয়ে গেছে সেটা তো আপনারা বলবেন। খুব বেশি প্রমিনেন্টলি আমি সনাক্ত করতে পারি না কাউকে।
অনুপম: আপনার কবিতায় রঙের ব্যবহারটা খুব দেখা যায়। ভালোলাগা থেকেই? কোন দূর্বলতা রয়েছে রঙের প্রতি? নাকি তারা আসতেই চেয়েছে?
মারুফ: এই প্রশ্নটা আমিও রেডি রেখেছিলাম।
অমিত: প্রিয় পরিচালক কুবরিকের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলাম তার ভাষা উনি নির্মাণ করেন রঙ, আলো আর সঙ্গীত দিয়ে। রঙটা এলিমেন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। রঙকে আমি বিভিন্ন মুড ধরার ক্ষেত্রে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। যেমন স্যাফায়ার আকাশ, পার্পল মেঘ- ইত্যাদি।
অনুপম: আপনার কবিতা নিয়ে একটা সমালোচনা করেছিলাম! আমি চেয়েছিলাম আমার সমালোচনার সমালোচনা করুক! হয়নি! এখন আপনার কাছে তার একটা উত্তর চাইছি। মনে আছে! না হলে প্রসংগটা আবার বলতে পারি। কিছুটা অনুবাদ কবিতার কাছাকাছি বলেছিলাম!
অমিত: আমার মনে আছে অনুপম। নিজের বইয়ের সমালোচনা নিয়ে বেশি কিছু বলা তো মুশকিল, শুধু এটুকু বলতে পারি যে আপনার কিছু অব্জারভেশান আমার কাজে আসবে সামনে। অনুবাদ কবিতা ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন এইখানে? যে উপাদানগুলো বিদেশি? নাকি ভাষা এক ধরনের মধ্যবর্তী আর দুর্বল, যেরকম আমরা অনুবাদ কবিতার ক্ষেত্রে দেখি?
অনুপম: উপাদান। আমি ঠিক আপনাকে ধরতে পারি না।
অমিত: আচ্ছা। উপাদানের ক্ষেত্রে আমাদের যাপন অভিজ্ঞতার দূরত্ব আর আমার সিলেকশন প্রসেস কিছুটা কাজ করেছে হয়তো। আগের কোনো এক প্রশ্নে বলেছি যে আমার মোটিভ ছিলো জাক্সটাপজিশন আর কাউন্টার-ইন্টিউটিভ চাবি বা উপাদান ব্যবহার করার। যেখানে আমার কৃষকেরা পাইপ খাবে, মানুষেরা হ্যাট পড়ে ঘুরবে। কিন্তু এরা তো আমার চিন্তাজগতের প্রোজেকশান মাত্র। একটা গ্রন্থের লক্ষ্যই হয়তো নির্ধারণ করে দেয় সেটা। সেক্ষেত্রে আপনার যোগাযোগ করতে না পারার ব্যাপারটা আমারই ব্যর্থতা আসলে লিখিয়ে হিসেবে।
অনুপম: না না তা নয় হয়তো! কবির কাজ নয় পাঠককে বুঝিয়ে দেয়া।
মারুফ: এখন যদি আপনি নতুন করে আপনার বইটি করেন তবে কিছু কি পরিবর্তন আনবেন? হলে তা কী?
অমিত: কবিতা তো অন্তঃহীন এডিটের মধ্যে দিয়ে যায় আসলে, আমার জন্য। মাঝে মাঝে বইয়ের কিছু কবিতা পড়ে আমার মনে হয়, যদি এই একটা ছোটো জায়গা এডিট করা যেত তাহলে হয়তো ভালো হত। তো যা কিছু পরিবর্তন সবি অই ছোটোখাটো এডিট আর কি। এছাড়া যেসব কবিতা আছে, তাদের ক্রম- এইসব কোনোকিছুই পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না।
মারুফ: আচ্ছা। অর্থহীনতা নির্মাণ বিষয়ে আপনি বলেছেন মানুষের অর্থহীনতা আজন্ম। আপনাআপনি অর্থহীন বিষয়ের জন্ম আর অর্থ তৈরি হতে থাকা বিষয়ের অর্থ লোপ করা কি আলাদা ব্যাপার নয়? আপনার মত কী?
অমিত: উত্তরাধুনিকতা বিষয়ে অই কথা উঠেছিলো। আমার পয়েন্ট ছিলো যে, অর্থহীনতাকে শুধু উত্তরাধুনিকতার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়তো ঠিক না। অর্থ তৈরি হতে থাকা বিষয়ের অর্থ লোপ করা অবশ্যই ভিন্ন। মর্ডানিস্টরা এই ধরনের প্রবণতাকে প্রমোট করেছে। এইটা এক ধরনের পথ, যেখানে আর্ট মূলত একটা অর্থকে পৌঁছে দেয়ার চাইতে অনুভূতি সৃষ্টি করার দিকেই মনোযোগী।
মারুফ: সিনেমার কথাও বললেন আগে। বিশেষ কোনো সিনেমা কি আপনার লেখাকে প্রভাবিত করেছে? ইভেন জীবনানন্দও তো সিনেমা থেকে তাঁর কবিতার বিষয় খুঁজে নিয়েছেন। যদি করে তবে কোন সিনেমা?
অমিত: সিনেমা অবশ্যই আমার লেখাকে প্রভাবিত করেছে। স্ট্যানলি কুবরিকের এ ক্লকওয়ার্ক ওরেঞ্জ, আলফ্রেড হিচককের বার্ডস, তারকোভস্কির নস্টালঘিয়া। আমার কবিতায় সরাসরি রেফারও করা হয়েছে- করোভা মিল্কবার, আলফ্রেডের পাখি ইত্যাদি চাবির দ্বারা। কখনো প্রভাবটা অসরাসরি। ক্লকওয়ার্ক ওরেঞ্জের অই ট্রিটমেন্ট- যেখানে ভায়োলেন্সের দৃশ্য দেখানো হয় অ্যালেক্সকে আর শোনানো হয় তাঁর প্রিয় বেথোফেন- অই রকম অসংখ্য সিকোয়েন্স আছে যেটা আমাকে আর্ট ফর্মের বিভিন্ন প্রবণতা, পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছু লেখালেখিতে এক ধরনের কাউন্টার-পার্সপেক্টিভ জাত চিত্রকল্প আমরা দেখি। যেমন- হাতের টোকায় আকাশ খুলে যাচ্ছে- যেটা হাত দিয়ে জানালা খোলাকেই কাউন্টার-পার্সপেক্টিভ দিয়ে দেখায়। এই প্রবণতা আগ্রহোদ্দীপক এবং সম্ভাবনাময়।
মারুফ: আচ্ছা, আমার শেষ প্রশ্ন। জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা কবিতায় মেটাফোর আর চিত্রকল্প ব্যবহারের ধরনে যে বিশালতা নির্মাণ হয়েছে এর মধ্য থেকে আলাদা করে সর্বশেষ এক বা দুই দশককে কি খুঁজে পাওয়া যায়? গেলে তা কীভাব?
অমিত: আমার পাঠে, সাম্প্রতিক বাংলা কবিতায় মেটাফোর ও চিত্রকল্প নির্মাণে কিছু প্রবণতা দেখা যায়। প্রথমত গোথিক, পরাবাস্তব মেটাফোর ও চিত্রকল্পের একটা ট্রেন্ড আমরা লক্ষ্য করি যেটা ডাইনি, রাক্ষস ও প্রেতপুরী এইসবে ভরা। দ্বিতীয়ত, আরেকটা পর্যায় দেখা যায় যেটা ভরা অকল্পনীয় মেটাফোর ও চিত্রকল্পে ভরা, যেমন আকাশে উড়তে থাকা গোরুদের ছায়া পড়েছে কাজলা দিঘির জলে। এই দুই প্রবণতাই ব্যক্তিগতভাবে আমি গ্রহণ করতে কমফোর্টেবল না। অতি সাম্প্রতিক কিছু লেখালেখিতে এক ধরনের কাউন্টার-পার্সপেক্টিভ জাত চিত্রকল্প আমরা দেখি। যেমন- হাতের টোকায় আকাশ খুলে যাচ্ছে- যেটা হাত দিয়ে জানালা খোলাকেই কাউন্টার-পার্সপেক্টিভ দিয়ে দেখায়। এই প্রবণতা আগ্রহোদ্দীপক এবং সম্ভাবনাময়।
ফয়সাল: মারুফের প্রশ্নের উত্তর থেকেই আসছি একরকম। এই যে উদাহরণটা তুমি গ্রহণ করছ বললা এই কাউন্টার ন্যারেটিভের তো কম্যুনিকেশন খুব কম এখন পর্যন্ত। তদুপরি আমার কাছ এগুলোকে জোর করে কবিতা করা মনে হয়। তোমার মতামত আরেকটু ডিটেলে জানতে চাই।
অমিত: আসলে সবকিছু প্রয়োগের উপর নির্ভর করে। একের পর এক এই ধরণের এক্সপ্রেশনে ভরা কবিতা ক্লান্তিকর হয়ে উঠে। তারোপর এই ধরনের বাক্যের মূল উদ্দেশ্য হয় চমক সৃষ্টি করা তখন সেটা বিবমিষাকর। যদি ভাষার আন্তঃরসায়ন খুলে দিতে পারে এইরকম এক্সপ্রেশন তখনই সেটা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে, পাঠক হিসেবে আমার জন্য। যেরকম তুমি বললে, এই ধরনের উদাহরণ খুবি কম, এটা একটা ডেভেলপিং ট্রেন্ড। এখনি এটাকে পর্যালোচনা করার সময় আসে নাই আসলে। কিন্তু আমাদের অব্জার্ভ করা উচিত এই ধরনের প্রবণতা শেষ পর্যন্ত কিসে দাঁড়ায়।
ফয়সাল: বাংলা কবিতায় এখন দুই ধরনের কবিদের দেখা যায়। একদল হারেরেরে কবি, আই মিন, ‘কারো কিচ্ছু হচ্ছে না’ আর আরেকদল ‘উফ দাদা যা লিখছেন’। এই দু’দলের কোনটাতেই তুমি পড়ো না বলে জানি। তোমার অব্জার্ভেশন কি বর্তমান ও আগামীর বাংলা কবিতা নিয়ে?
অমিত: আশির উল্লম্ফনের পরে বাংলা কবিতা একটা গ্রাজুয়াল ডিক্লাইনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। টানা গদ্য, সুরিয়েল, ম্যাড়ম্যাড়ে ন্যারেটিভে ভরা কবিতা অসংখ্য লেখা হয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে কিছু ভিন্নতা আকৃতি পেতে শুরু করে। কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করে যে তথাকথিত কবিতার বাইরে ভিন্ন কি করা যেতে পারে বাংলা কবিতায়। এর কিছুটা প্রতিফলন, কিছু পরিবর্তন আমি দেখতে পেরেছি বর্তমানের কবিতায়। এখন এটাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার পথ পুরোপুরি খোলা। আবার আমরা পেয়েছি ফেইসবুক সাহিত্য। ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আমরা অনেক মাথায় তুলেছি ইহাকে, কিন্তু সত্যি বলতে গারবেইজ সাহিত্য প্রোমোট করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও এর সফলতা অস্বীকার্য। সামনের কবিতা কোথায় যাবে এটা নির্ধারণ করতে এই অনলাইন সাহিত্য মাধ্যমকে আমরা কিভাবে ব্যবহার করব এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে আমার বিশ্বাস।
অনুপম: অমিত, তিরিশ থেকে আজ পর্যন্ত আপনার প্রিয় কবি কারা? ( যদিও এইটা একটা ক্লিশে প্রশ্ন। বহু ব্যবহারিত। বহুজনকেই এই প্রশ্ন করা হয়েছে। এবং আমার ধারণা এইটার সঠিক উত্তর খুব কমজনই দিতে পেরেছেন। অধিকাংশের উত্তরে রাজনীতি ও বন্ধুনীতি ঢুকে পড়েছে। তবু…
অমিত: জীবনানন্দ দাশ, সমর সেন, উৎপলকুমার বসু, বিনয় মজুমদার, জয় গোস্বামী, শঙ্খ ঘোষ, আবুল হাসান, সিকদার আমিনুল হক, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, মাসুদ খান, জুয়েল মাজহার, শামীম কবির, মজনু শাহ, দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু, মুজিব মেহদী। সাম্প্রতিক সময়’কে বিবেচনার বাইরে রাখা হল আপাতত। তাদের আরো পড়ে দেখার দরকার রয়েছে।
অনুপম: ধন্যবাদ অমিত। আপনি আমার অতি প্রিয়। একটু বেশি লিখবেন। আপনার কবিতা আমাকে প্রশান্তি দেয়। ভালো থাকবেন।
হাসান রোবায়েত: আপনাকে মাঝেমাঝে অনুবাদ করতে দেখা যায়। এটা কি শখ করেই করেন নাকি কোনো তাগিদ থেকে?
অমিত: অনুবাদ অনেকটা শুরু হয়েছিলো লাস্টবেঞ্চ নামক একটা ম্যাগাজিন এর অনুরোধে। তো করতে করতে মনে হলো এটা করার কয়েকটা ভালো দিক থাকতেও পারে। তারপর বেশ কিছু অনুবাদই করেছি, করছি।
রোবায়েত: ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন কি?
অমিত: ইংরেজি থেকে বাংলায় খুব কম। অক্তাবিয়ো পাস-এর কিছু কবিতা করেছিলাম। আর রাসেল এডসন এর। চার্লস বুকাউস্কির কিছু কবিতাও করেছিলাম। মনে পড়ল।
রোবায়েত: আপনার টেক্সটের লিরিক্যাল ব্যালান্স আমার বেশ প্রিয়। এবং অনেকটাই মেলানকোলিক মনে হয়। কিন্তু আপনার জিয়োগ্রাফি ঠিক আমাদের জিয়োগ্রাফি হয়ে ওঠে না। যেমনটা হয় না লাতিন বা ইয়োরোপের। এইটা আমার মত। এইটা আপনার কবিতার ক্রাইসিস মনে হয়? সম্ভবত এই জন্যই অনুপম আপনার টেক্সটকে অনুবাদ-ঘেঁষা বলছিলেন।
অমিত: নাহ্, ক্রাইসিস মনে হয় না। আমি যে বাস্তবতায় বসবাস করছি সেটা আমার অধিকাংশ পাঠকের কাছে এলিয়েন হলে আমাকে পাঠকের বাস্তবতায় নিজেকে নিক্ষেপ করতে হবে এইরকম অবলিগেশন ফিল করি না। যেইরকম প্রবাসী কবিরা তাদের গ্রাম বাংলার স্মৃতি দিয়ে তাদের কবিতা “সম্বৃদ্ধ” করেছেন অইরকম লক্ষ্য আমার নাই। তাছাড়া কবিতার রিয়ালিটি তো এগজিস্টিং রিয়ালিটির বাইরের বস্তু।
রোবায়েত:
‘শূন্য গমক্ষেতের উপর
উড়তেছে একটা কালো হ্যাট
অস্তিত্বের অসহনীয় মৃদুতা’
যেমন ‘পরস্পরে’ প্রকাশিত এই লেখাটার শেষ লাইনটা আমাকে কুন্ডেরার unbearable lightness of being এর কথা মনে পড়ায়। এটাকে কীভাবে দেখেন?
অমিত: এটা লিটারেলি কুন্ডেরার অই নোভেলের কভারের দৃশ্যকেই আপতিত করা হয়েছে কবিতায়। শেষ লাইন অনুবাদ করলেও দেখবেন যে এটা অই নোভেলের নাম। এইটা এরকমের একনোলেজমেন্ট বলতে পারেন। তো এই ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃতভাবেই আমি করে থাকি। শুধু এই কবিতায় না, আমার অন্যান্য অনেক লেখাতেই দেখতে পাবেন লক্ষ্য করলে।
একটা পাণ্ডুলিপির লক্ষ্যই নির্ধারণ করে দ্যায় শিল্পীর মোটিভ আর পদ্ধতি। নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টাই থাকবে আমার পরবর্তী পাণ্ডুলিপিতে।
রোবায়েত: আমার পড়াশোনার আসলে খুব লজ্জাজনক অবস্থা অমিত দা। তাই হয়তো অনেক খেয়াল করা সম্ভব হয় না। লেখকের ইমাজিনারি এগজিস্টেন্স থাকবেই। সেইটা মূলত তার জগতও। কিন্তু ভূভাগ, প্রতিবেশ এইসব রিপ্লেসমেন্ট বাংলাকবিতায় এর আগেও ঘটেছে। যেমন করেছেন রবীন্দ্রনাথ যেমন করেছেন জীবনানন্দ। একটা উদাহরণ দিই। ইয়েটস এর
O CURLEW, cry no more in the air,
Or only to the water in the West;
Because your crying brings to my mind
passion-dimmed eyes
এটার পাশে পড়া যাক
হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে-উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে!
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে!
the water in the West; হয়ে যাচ্ছে ধানসিঁড়ি নদী, passion-dimmed eyes হয়ে যাচ্ছে ‘বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ’। এই যে জিয়োগ্রাফিকে রিপ্লেস করা হচ্ছে বাংলার নিজস্ব স্বাদের কাছে সেইটা কেন যেন বেশি আপন মনে হয়। যেখানে আপনার টেক্সট অনেক দূরের লাগে। এই দূরত্ব কাটানোর কোনো ইচ্ছা কি আপনার আছে?
অমিত: লোকালাইজেশান। হ্যাঁ, হাসান এটা আমার চিন্তাভাবনায় আছে। একটা পাণ্ডুলিপির লক্ষ্যই নির্ধারণ করে দ্যায় শিল্পীর মোটিভ আর পদ্ধতি। নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টাই থাকবে আমার পরবর্তী পাণ্ডুলিপিতে।
মোস্তফা হামেদী: একজন লেখকের জন্য ভূ-বাস্তবতা কতটা জরুরি?
অমিত: এটা লেখকের সিলেকশন প্রসেসের উপর নির্ভর করে। লেখকের হোলিস্টিক ভিশন থাকাটা আমার কাছে অধিকতর জরুরি মনে হয়। তার শিল্পদৃষ্টি এবং কিভাবে তিনি সেটা কনভে করবেন এটাই তাকে পরিচালনা করবে ভূ-বাস্তবতা নির্বাচনের দিকে।
হামেদী: সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কবিই প্রবাসজীবন যাপন করেও কাব্যচর্চায় রত আছেন। একটা ভিন্ন ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বসে কবিতা রচনায় কী ধরনের ক্রাইসিস আপনি/আপনারা ফিল করেন?
অমিত: সবচেয়ে বড় হচ্ছে নিজের ভাষার সাথে দূরত্ব। সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক- সব ক্ষেত্রেই তো আমি আউটসাইডার, এই আইসোলেশানটাই সবচেয়ে কষ্টদায়ক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপরের ভাষায় যখন কথা বলতে হবে আপনাকে জীবিকার জন্য, খুব সহজেই অনুভব করবেন আপনার ইনফিরিয়রিটি। এই ক্রাইসিসটা মূলত ব্যক্তিক, যেটা সাহিত্যেও ট্রান্সলেইট হয় আর কি। এইজন্যই মনে পড়ে স্বামী-স্ত্রী যারা ফসলের মাঠে কথা বলছে আমার ভাষায়, তাদের তো সুখীই মনে হয় দূর থেকে, আমার।
হামেদী: উত্তর ঔপনিবেশিক চিন্তা ও তৎপরতার জায়গা থেকে অনেকে সাহিত্যকে দেখেন। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি এই বাস্তবতার শিকার। বাংলা কবিতা এই ধরনের চিন্তা কতটা সংহত হয়ে উঠছে? এবং এই ধরনের তৎপরতাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
অমিত: এই বাস্তবতা এড়ায় যাওয়ার না। আমি লাতিনের প্রসঙ্গে বলেছিলাম যে ঔপনিবেশকতা থেকে শুরু করে অনেক দিক থেকে ওরা আমাদের কাছাকাছি ঐতিহাসিকভাবে, কিন্তু তাদের সাহিত্যের যে উল্লম্ফন সেটা আমাদের সাহিত্যে দেখি নাই। বাংলা কবিতায় এই ধরনের চিন্তা সংহত হয়ে উঠেছে অনেক, এমন আমার পর্যবেক্ষণে ধরা পরে নাই এখনো। এই ধরণের চিন্তাভাবনা লাতিন সাহিত্যকে প্রভাবিত হয়েছে। তারা ফিরেছে তাদের মূলের দিকে, তাদের প্রকৃতি, তাদের ম্যাজিকাল রীতিনীতি, ভুডু, রাজনৈতিক ও সামাজিক নিষ্পেষণ- এই সবকিছু থেকে তারা গ্রহণ করেছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ। ফলে তাদের সাহিত্য হয়ে উঠেছে ম্যাজিক্যাল, ডার্ক, স্যাট্রিরিক আর বুদ্ধিবৃত্তিক, একই সাথে মানবিক। আমার মনে হয় বাংলা কবিতা যদি তার সাংস্কৃতিক মূলের দিকে অভিনিবেশ করে এতেই সামনে নতুন সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে পারব আমরা।
জয়:
অমিত, শেষে একটা মন্তব্য করতে চাই। কবিতা নিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার কোন লম্ফঝম্প নাই। আপনার এই কোয়াইটনেস অনুকরণীয়। ভাল থাকবেন। আমাদের সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ।
অমিত: আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শুভেচ্ছা।