রফিকুন নবী-এর সাক্ষাৎকার ।। আলাপকারী: রাজীব দত্ত

গত বছর (২০১৬) সেপ্টেম্বরের এক দুপুরে টোকাইখ্যাত কার্টুনিস্ট রফিকুন নবী বা রনবীর মিরপুরের বাসায় হাজির হয়েছিলেন কবি-চিত্রকর রাজীব দত্ত। টোকাই প্রসঙ্গ তো বটেই, নিজের কার্টুন দর্শন ও চিন্তা সম্পর্কেও গল্পের ডালপালা মেলে দিয়েছিলেন রনবী। বাংলাদেশের কার্টুনের ইতিহাসও উঠে এসেছে এই আলাপে। সামাজিক-রাজনৈতিক দর্শন তো রয়েছেই- মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে কার্টুন কেমন ভূমিকা রেখেছে, তাও জানা যাবে এই কথোপকথনে।

Ronobi-auto


সিগনেচার করতাম আর নবী লিখে। সেটার বাংলা হয়ে গেলো রনবী। লোকে মনে করে এটা সাংঘাতিক একটা ছদ্মনাম। এটা ছদ্মনাম না, সিগনেচার।


রাজীব দত্ত: আপনি তো পাকিস্তান আমলে মানে ছাত্রাবস্থায় পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই কার্টুন আঁকছেন?

রনবী: আঁকতাম। তবে পত্র-পত্রিকায় না, এটা ডিফিকাল্ট ছিলো। পলিটিক্যালি ব্যাপারটা কঠিন ছিলো। আমরা তো আঁকতেই চাইতাম কিন্তু পত্রিকা ছাপানোর সাহসটা করতো না। কার্টুনিস্ট হবো বলে নয়, দেশাত্ববোধ থেকেই আঁকতাম, দেশে তখন একটার পর একটা আন্দোলন চলছিলো।আন্দোলনকে ফিল করার জন্যই শিল্পীরা ছবি আঁকতো। কার্টুন দিয়ে আমাদের সম্পৃক্ততা ছিলো। মিছিল সাজাতে কার্টুন আঁকতাম, পোস্টারের মতো।মিছিলে সবার হাতে হাতে কার্টুন থাকতো একটা করে।এভাবেই আমাদের কার্টুন আঁকা শুরু, স্পেশালি আমার। পরবর্তীতে মাসিক আর পাক্ষিক পত্রিকায় (যেমন-সতীর্থ সন্ধানে) কিছু কিছু কার্টুন ছাপানো হয়।

রাজীব: এগুলো কি আন্দোলনের ছবিগুলোই?

রনবী: না। ওগুলো রম্য পত্রিকা ছিলো। ওরা অনুরোধ করলো পলিটিক্যাল নয়, হাস্যরসাত্মক কার্টুন দরকার। এভাবে আস্তে আস্তে কার্টুনের প্রতি একটা মোহ তৈরি হলো। বহুদিন মোহটা ছিলো। কখনোই একজন কার্টুনিস্ট হওয়ার মতো সিরিয়াসলি কার্টুন করিনি। ছবি আঁকার পাশাপাশি শিক্ষকতার পাশাপাশি আনন্দ নিয়েই করেছি।

6.-Rafiqun-NabiTokai-1987

রাজীব: পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলের সময় কার্টুন আঁকার কারণে কোনো পলিটিক্যাল প্রোবলেম কি ফেইস করেছেন?

রনবী: যেহেতু কার্টুন মিছিলে থাকতো, অনেক পাবলিকের ভেতরে সেহেতু তেমন সমস্যা হতো না।তবে একটা সাবধনতা তো ছিলোই আমাদের। শুধু যে আমি আঁকতাম তা না অনেকে আঁকতো ফলে মিশে যেতো। এটা আমরা অবশ্য করণীয় হিসেবে করতাম আর কি।ভয়ভীতি নিয়ে ভাবতামও না।তারণ্য ছিলো বিধায় বিপদ হলে হবে এরকম একটা ভাব ছিলো।

রাজীব: আপনি টোকাই শুরু করেন ১৯৭৮ সালে। টোকাই শুরুর কি কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড আছে?

রনবী: ঐরকম কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নাই। তবে এই ছেলেগুলো সবসময়ই ছিলো এখনো আছে। বৃটিশদের সময়ের আন্দোলন থেকে পাকিস্তান আমলের আন্দোলনে এই ছেলেগুলোর অংশ গ্রহন ছিলো। দেখে মনে হয় যেনো একই ছেলে গুলো এখনো আছে। এই একটা ভাবনা আর পরবর্তীতে ভাবলাম সেমিট্রিক মতোন কিছু করা যয় কিনা।

রাজীব: ঊনসত্তরের একটা ছবি আছে।

রনবী: ঊনসত্তর তো পাকিস্তান আমলে, বৃটিশ আমলেও- মনে হয় যেনো একই ছেলেরা এখনো আছে।ওরাই যেনো, একই ফেইস। এই একটা ভাবনা আর একটা ব্যাপার, পরে মনে হলো যে সেমিট্রিক মতোন কিছু করা যায় হয়তো। সাপ্তহিক বিচিত্রা থেকে যখন বলা হলো যে রিগুলার কার্টুন দিতে হবে, ঐ সময় বিদেশ থেকে ফেরত এসে একটু খোলা মনে ছিলাম, তখন ভাবলাম যে- ঠিক আছে করি। আর তেমন ব্যস্ততাও নাই, এক শিক্ষকতা ছাড়া আর কিছু করছিলামও না। ভাবলাম, অনুরোধ করছে যখন করা যায়।তো কী করতে হবে? টোকাই’র যে ছোট বাচ্চা, এটা দিয়ে আগেও নাম ছাড়া কিছু কার্টুন করেছিলাম।

রাজীব: ‘টোকই’ নামটা বাদে?

রনবী: ‘টোকাই’ নামটা তো ৭৮ সালে দিলাম।এর আগে ছোটখাটো অনেক কাজ করেছি।যাদের আমরা স্ট্রিট বয় বলছি- কাগজ টুকায়, ওরা আবার কেউকেউ সাঙ্গাতিক ইন্টেলিজেন্ট এবং ছটপট উত্তর দিয়ে দিতো, অনেক চিন্তা ভাবনা মাথায় ঘোরে পাশাপাশি দুষ্টামীও করে ওরা, দুষ্টামীর মধ্যেই যে কথাগুলো বলতো তা খুব ইন্টারেস্টিং।ওদের সাথে রিগুলার কথাবার্ত্তা বলতাম। তখন আমি নালন্দা পাড়ায় থাকতাম। তখন ভাবতাম ওদেরকে নিছু একটা করা যায়।৭৮ সালে হঠাৎ করে মাথায় ঢুকলো যে একটা সেমিক কার্টুন করা যেতে পারে। সেখানে মূখ্য চরিত্র থাকবে এই পিচ্চি ছেলে যার ছোট মুখে বড় কথা।আবার খুব একটা টকেটিভও না। সিরিয়াস ঘটনাকে হালকাভাবে উপস্থাপন, আরো মিনিংফুল করা। এই দিয়ে টোকাই শুরু। তো নাম দিলাম ‘টোকাই’। প্রথমে নামটা ছিলো ‘টোকা মিয়া’। পরে আবিষ্কার করলাম যে টোকা মিয়া নামে পাড়াতেই একজন আছে। বেশ বয়েসী মানুষ। সেজন্য ওটা দেইনি। টোকনও দিয়েছিলাম। পরে ভেবে দেখলাম টোকন মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা আদুরে নাম হয়ে যায়। সেটাও দিলাম না। এইভাবে করতে করতে টোকাই হয়েছে। ন বাদ দিয়ে টোকায়, টোকাইনা এরকমও ভেবেছিলাম। মনে হয়, আরে! টোকাইনা মানে ওকেই মনে হবে কুড়িয়ে পাওয়া। তা তো না, ও টোকায়। সেখান থেকেই টোকাই। ওইভাবে ঠিক করলাম। তারপরে টোকাই শুরু হলো। কন্টিনিউয়াস চললো টোকাই। সাথে অন্যান্য কার্টুনও ছিলো। যেমন সুখনের ঢাকা দর্শন। এরকম কিছু কার্টুন সিরিজ করেছিলাম পাশাপাশি। ওটাও জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে টোকাইয়ের মতো না।

IMG
টোকাই আঁকার খসড়া

রাজীব: সুখনের বয়স কত ছিলো? ওর পারিপার্শ্বিকতা?

রনবী: সুখন গ্রামের ছেলে। তরুণ, ২০-২২ বছরের। সে ঢাকায় আসে। ঢাকাকে সে কেমন দেখছে, এই ছিল বিষয়। ঢাকাকে দেখা মানে রাজনীতিকে দেখা, ঢাকাকে দেখা মানেই হলো সামাজিক কর্মকাণ্ড দেখা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দেখা, অভাব-অনটন দেখা। এইভাবে সুখনের চোখে তখনকার সমকালীন ঢাকা দর্শন।

রাজীব: কিসে আঁকতেন স্যার ওইটা?

রনবী: বিচিত্রাতে। বিচিত্রা তখন একচেটিয়া করেছিল এইটা। তখন আমি অন্য পত্রিকায় চাইলেও দিতে পারতাম না। দৈনিক বাংলায় শুরু করেছিলাম আরেকটা। প্রথম পাতায় ছোট করে ছাপা হতো। এই তিন রকমের কার্টুন একসাথে করতাম।

রাজীব: দৈনিক বাংলার ওইটার নাম কি ছিলো?

রনবী: ওইটার নাম ছিলো না কোন। সংবাদভিত্তিক ছিলো।সপ্তাহের আলোচিত সংবাদ যা ছিল, সেগুলা নিয়ে রস করা। কার্টুন করা।

রাজীব: স্যার, টোকাইয়ের যে ফর্মটা, খুব ইজি একটা ফর্ম। কোন পূর্ব ভাবনা ছিলো ওইটার পেছনে?

রনবী: পূর্ব ভাবনা বলতে ওইরকম কিছু ছিলো না। তবে আমি ভাবতাম প্রতি সপ্তাহে যখন বেরোবে ওকে সহজেই যেন চেনা যায়। সেজন্য একটা সহজ ফর্মে আঁকতাম। বারবার নানান কাড়িকুড়ি করে আঁকলে সেটার চেহারা পরিবর্তন হতে পারে।যার জন্যে ওর একটা লুক দিয়েছিলাম। ওটা স্টাডি করেই আঁকা। ওরা লুঙ্গিই পড়তো। এরপর হাফপ্যান্ট ধরলো। ইদানিংকালে তো জিনস পরে ওরা। যেই ছেলেটাকে মাথায় নিয়ে কাজ করেছি, ও ছিলো ওইরকম পেট ফোলা, লুঙ্গিটা বাঁধতে পারতো না সব সময়। হাতে ধরে রাখতো। যাই হোক, এইভাবেই টোকাই তৈরি হয়েছে। যাতে চট করে কেউ দেখলে চিনতে পারে।

রাজীব: তখন তো এরশাদ টোকাই নামটা চেইঞ্জ করে পথকলি নাম দিতে চাইছিলেন

রনবী: হ্যাঁ, এইটা একটা স্ট্যান্টবাজি। বলেছিল আমি যাতে টোকাই আর না আঁকি। বক্তৃতায় বলেছিল। আরো সুন্দরভাবে ভাবা উচিত এদেরকে নিয়ে। এই অর্থে হয়তো বলেছিলেন। তাদেরকে পথকলি নাম দিয়েছিলেন। তো উনি একটা ট্রাস্টও করেছিলেন বোধহয়; পথকলি ট্রাস্ট। এইটা নিয়ে আমার কোন যায় আসেনি। প্রকারান্তরে এইটা বরং আরো ভালোই হয়েছিল। এরপর থেকে পাবলিকের অনেক রকম চিঠিপত্র আসা শুরু হয় পত্রিকায়। টোকাই যেন বন্ধ না হয়। টোকাই তো আর বন্ধ হয়নি।

রাজীব: বিচিত্রার পর স্যার আর কি কোন পত্রিকায় এইটা কন্টিনিউ করছিলেন?

রনবী: বিচিত্রা বন্ধ হয়ে যাবার পর সাপ্তাহিক ২০০০ শুরু হলো। শাহাদাত চৌধুরী এবং তার টিম ওটার দায়িত্ব নিলেন। আবার অনুরোধ করলেন টোকাই আঁকতে। টোকাইকে দিয়ে প্রচ্ছদ করেই ওটার শুরু হয়েছিল। ২০০৯ সালের পর এটা বন্ধ হয়ে গেলো, মানে আমি আর টোকাই আঁকিনি।

ARTIST AND TOKAI
আর্টিস্ট এবং টোকাই

রাজীব: জনকণ্ঠে কি আঁকতেন? ছোটবেলায় দেখতাম।

রনবী: জনকণ্ঠে যেটা আঁকতাম ওটা টোকাই না। দৈনিক বাংলায় যেরকম আঁকতাম, ওরকম। ঈদ বা স্পেশাল ইস্যুগুলোতে বড় কার্টুন বের হতো। এমনও হয়েছে, ফুল পেইজ কার্টুন দিয়ে করা হয়েছে।

রাজীব: তো ওখানে টোকাইটা রিপিট করেননি?

রনবী: কখনো-সখনো করেছি। বিশেষ সংখ্যাগুলোতে।


মনে হয় না আর টোকাই আঁকবো। অনেক পত্রিকা এখনো আসে। কিন্তু আমার ওই স্পেলটা আর নাই। ছবি আঁকার মধ্যে এতোটা ঢুকে গেছি, অন্যদিকে মন টানে না। করার মজাটাও আর নাই। মানুষের সহ্যক্ষমতা অনেক কমে গেছে। কোনটা থেকে কি রিয়্যাকশন হবে, ভাবাও যায় না। 


রাজীব: টোকাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন কেন?

রনবী: অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ ওরা (সাপ্তাহিক ২০০০) যেন কেন ছাপা বন্ধ করে দিলো। আমি পাঠাতেই থাকি, ওরা ছাপে না। আমি খেয়াল করিনি। তো অনেকেই বললো, আরে! এখন আপনার টোকাই দেখি না। আমার তো জানা ছিলো না। পরে চার/পাঁচ সপ্তাহ খেয়াল করে দেখলাম, আসলেই তো আর টোকাই ছাপছে না! তখন দেয়া বন্ধ করে দিলাম। তারপরে আর করিইনি টোকাই। অন্য কাজেও ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ছবি আঁকা চিত্রকলায় বেশি মনোযোগী হয়ে গেলাম। চিত্রকলায় মনোযোগ সব সময় ছিলো, সব সময়ই তো ছবি আঁকতাম। তখন আরকি পূর্ণ মনোযোগী হলাম।

রাজীব: আপনার তো স্যার টোকাই নিয়ে আলাদা শো আছে, চিত্রকলা নিয়েও।

রনবী: হ্যাঁ, ওইটা অবশ্য কার্টুন ছিলো না। ওইটা ছিলো টোকাইকে নিয়ে একেবারেই চিত্রকলা। ওয়াটার কালারের কাজ ছিলো। সেটা ছিলো টোকাইয়ের সারাদিন। টোকাই সারাদিন নানান অ্যাক্টিভিটি দেখে মানুষের, নানান ঘটনা ঘটে, এসব অভিজ্ঞতা আঁকা হয়েছিল। সেই শো ভালো রেসপন্স পেয়েছিল। পাবলিক প্রদর্শনীটা গ্রহণ করেছিলো। এইটা আমার জন্য কি বলবো, উদ্দীপ্ত হবার মতো একটা ঘটনা ছিলো। অনুপ্রেরণা ছিলো। যার কারণে পরে আমি ওয়াটার কালারে আরো বহু কাজ করেছি।

রাজীব: কয়টা ছবি ছিলো টোকাই রিলেটেড?

রনবী: প্রায় শ’খানেক।ফুলস্কেপে।

রাজীব: সংকলন তো স্যার চিত্রকেরটাই। আরো কি আছে?

রনবী: না, চিত্রকেরটা তো এক্সিবিশনের ক্যাটালগের মতো।

রাজীব: কত বছর পূর্তিতে যেন ছিলো ওটা? ভুলে গেছি।

রনবী: বারো বছর পূর্তি বোধহয়। মনেও পড়তেছে না। যাই হোক, অতো পূর্তি-টুর্তি নিয়ে ভাবা হয় নাই। একটা এক্সিবিশন করা যায় কীনা, এটা নিয়ে ভাবনা ছিলো। টোকাই নিয়ে অবসর পাবলিকেশন্স থেকে তিন পর্বের একটা বই বের হয়েছিল।

IMG_0004

রাজীব: নতুন করে কিছু প্ল্যান আছে টোকাই নিয়ে?

রনবী: না। মনে হয় না আর টোকাই আঁকবো। অনেক পত্রিকা এখনো আসে। কিন্তু আমার ওই স্পেলটা আর নাই। ছবি আঁকার মধ্যে এতোটা ঢুকে গেছি, অন্যদিকে মন টানে না। করার মজাটাও আর নাই। মানুষের সহ্যক্ষমতা অনেক কমে গেছে। কোনটা থেকে কি রিয়্যাকশন হবে, ভাবাও যায় না। আগে কিন্তু মানুষ বেশ সহনশীল ছিলো। অনেক ধরনের সাজেশন্সও দিতো, বিষয় নিয়ে। টোকাই তো এমন ছিলো, যেন সবকিছু জানে। জানুক বা না জানুক বলে ফেলে। রাজনীতি, সমাজ, বিজ্ঞান, দর্শন, সিনেমা সবকিছু সম্পর্কে সে বলে ফেলে; সহজ চিন্তা দিয়ে। এইটাই ছিলো ওর চারিত্রিক গুণাবলী। এইভাবেই আমি ওকে তৈরি করেছি। ওভাবেই কথা সাজাতাম। কাউকে ওকে প্রশ্ন করতে হতো। যে প্রশ্ন করে, সিরিয়াস প্রশ্ন করে। কিন্তু ও উত্তর দেয় ফ্লুইটি প্লাস হিউমারাস। এখন মনে হয় এভাবে ভাবা যাবে না। এখন তো অনেক অনেক ঘটনা ঘটছে। চাইলে টোকাই করা যায়। কিন্তু আমাদের চারপাশের যে সমস্যাবলী, সেসব তো একই জায়গায় আছে। মানুষের মানসিক অবস্থা আছে আগের মতোই। আগে ঘুষ বাবা খেতো, এখন ছেলে খায়। তখনো রাস্তাঘাটে ছিনতাই হতো, এখনো হয়। তখনো মশা ছিলো, এখনও আছে। মশা আমার খুব প্রিয় সাবজেক্ট ছিলো। একটাই পরিবর্তন দেখি, তাও নেতিবাচক। মানুষের মানসিক পরিবর্তন। ছোট ছোট বাচ্চাদের পিটিয়ে মেরে ফেলে। এগুলা নিয়ে কি কার্টুন করা যায়? যায় না। দিজ আর ভেরি টাচি সাবজেক্ট। কি এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। এগুলা নিয়ে আঁকলে, একটা-দুটা করা যাবে। কিন্তু মনোটোনাস। আমিও খেয়াল করছিলাম, আমার টোকাইয়ের সবকিছুতে একটা একঘেয়েমিপনা চলে আসছে। সেজন্যে আস্তে আস্তে সরে এলাম।

রাজীব: কিন্তু এটার তো ডিমান্ড আছে।

রনবী: হ্যাঁ। ডিমান্ড আছে। কলকাতা থেকে বইও বেরিয়েছে। এখন যেটা ভাবছি, যতগুলো টোকাই এঁকেছি, তার ভেতর থেকে বাছাই করে নির্বাচিত টোকাই সংকলন করবো। তিন/চার পর্বে। অনেক তো। এর সাথে অন্য কার্টুনগুলা নিয়েও কাজ করবো। টোকাই যদি তিনটাতে শেষ করতে পারি, অন্যটায় রাখবো বাকীগুলা।

রাজীব: সুখেনের ঢাকা দর্শন যেটা করলেন, ওইটা?

রনবী: ওইটা দুই বছর এঁকেছিলাম। আশির দশকে স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনের সময় একটা ক্যারেক্টার তৈরি করেছিলাম। ওর নাম হলো ভোটার আলী। ভোটের কারণেই করা। তার ভোটের ভাবনা প্রকাশ হতো সেই কার্টুনে।

রাজীব: ওটার রেসপন্স কেমন ছিলো?

রনবী: রেসপন্স ভালোই ছিলো। মজার মজার কথা বলতো।

রাজীব: ভোটার আলী আর সুখনের ঢাকা দর্শন সম্পর্কে আগে জানতাম না। আজকেই প্রথম জানলাম।

রনবী: সাপ্তাহিক ২০০০ আর জনকণ্ঠের আর্কাইভ ঘাটলে পাওয়া যাবে অইটা।

রাজীব: কতদিন করছিলেন স্যার, অইটা?

রনবী: ওটা বেশিদিন না। ভোটও শেষ, ভোটার আলীও শেষ। ভোটের পরে কি ঘটছে সেগুলা নিয়ে আবার ভোটার আলীর মন্তব্য, মানে একজন ভোটারের ভোট ভাবনা ছাপা হয়েছে অল্প কিছুদিন।

রাজীব: টোকাইয়ের আগে একটা নির্দিষ্ট ভাবনা নিয়ে অনেকটা সময় নিয়ে ধারাবাহিক কোন কাজ তো ছিলো না। নাকি?

রনবী: ওইভাবে কেউ করেনি। আমি অবশ্য নিশ্চিত জানি না। মনে হয় না ছিলো। এটা তো ড্রইংটা মূল ছিলো না, মূল হলো কথা। নীতিকথা তৈরি করা, সাবজেক্টটা ধরা, কোন সাবজেক্ট দিয়ে প্রশ্ন করানো যায় এগুলা সব সাজাতে হতো। তখন ব্যাপারটা স্পন্টেনিয়াস ছিলো। যা ভাবতাম, সাবজেক্টগুলা মাথার মধ্যে সবসময় ঘুরঘুর করতো। আমার বিশ্বাস এখন বসলেও আর ওইরকম হবে না। ওই ফ্লো-টা তো এখন আর নাই।

IMG_0003

রাজীব: স্যার, বাংলাদেশের টোটাল কার্টুনকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

রনবী: অতো তো দেখি না। সবাই এখন দেখি রাজনৈতিক কার্টুন করে। অনেকেরই ড্রইং-ট্রইং বেশ ভালো। রাজনীতি, তারপরে ব্যক্তি এগুলা আসে। রাজনীতির ব্যক্তি যারা তারা।

রাজীব: আপনার টোকাইয়ের সাথে অন্যদের কার্টুনের যেটা পার্থক্য মনে হইছে আপনার কাছে, সবাই পত্রিকার খবরটা আঁকে। আপনার টোকা্ই স্বাধীন।

রনবী: হ্যাঁ। সবারটা তো পত্রিকার পত্রিকার এডিটোরিয়াল ইচ্ছা-অনিচ্ছার সাথে যুক্ত থাকে। টোকাই যেমন স্বাধীন। আমি যা কিছু করবো, স্বাধীন। এটা হচ্ছে সোশিও পলিটিক্যাল, সোশিও ইকোনমিক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে তো। আমি যা ভাববো, তাই। এখানে এডিটোরিয়াল কোন আদেশ-নির্দেশ ছিলো না।

রাজীব: বাকীদের ফ্রি-স্ট্যান্ড নাই, আপনার যেরকম ছিলো।

রনবী: রাজনৈতিক কার্টুন আঁকতে গেলে এই স্বাধীনতাটা থাকতেই হবে। পত্রিকার নিজস্ব একটা পলিটিক্যাল ভাবনা থাকে, সব পত্রিকারই। একটা সাইড থাকে, সাইডটা ফলো করার একটা ব্যাপার থাকে। মানে সব পত্রিকারই একটা রাজনৈতিক আইডিওলজি থাকে এবং সেই আইডিওলজি কোন না কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। কার্টুন আঁকতে গেলে তখন কার্টুনিস্টকেও সেই ভাবনার সাথে যেতে হয়।

রাজীব: এটা তো সমস্যা।

রনবী: আমি যখন কাজ করেছি। কোন এডিটর আমাকে কিছু চাপিয়ে দেয়নি। স্বাধীনতা দিলেও ওই পত্রিকার পলিটিক্যাল ভাবনা কি, আমি ওইটা নিয়ে কখনো ভাবিনি। দলীয় ভাবনার বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা নিয়ে কাজ করেছি। অবশ্যই সেখানে আমি একটা জিনিস সবসময় রাখার চেষ্টা করি, সেটা হলো সেল্ফ সেন্সরশিপ। আমি জানি যে আমার কতটুক যেতে হবে। যে বিষয় বিতর্কিত, সংবেদনশীল, যা  মানুষকে আঘাত করতে পারে তা না করা। করলেও এমন প্রচ্ছন্নে করা, যেটা বুঝতে বুঝতে সপ্তাহ শেষ হয়ে যাবে। সেরকম কিছু কাজ যে করা হয়নি, তা না। এসব করার পেছনে ওই ব্যাপারটা থাকে, সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। রাজনৈতিক কার্টুন করতে গেলে কিছু স্টেরিও আছে। সাথে এডিটোরিয়ালের ভাবনা ম্যাচ করে কাজ করা বেশ কঠিন। তো এই কাজটা আমাদের এখানে বেশ কয়েকজন ভালো করে। তবে সমাজ আর রাজনীতি নিয়ে পাবলিকের যে ভাবনা, তা অতটা আসে না। ক্যারিকেচার হচ্ছে। যাদের নিয়ে কার্টুন করা হচ্ছে, তাদের ফেসটা সুন্দর আঁকা হচ্ছে। এই কার্টুনগুলা বেশ মজার হয়। কিন্তু সোশাল পারসপেক্টিভগুলা অফ আছে। হয় হয়তো কোন পত্রিকায়, আমি জানি না। চোখে পড়ে না।

RANOBI

রাজীব: উন্মাদের কার্টুনিস্টরা?

রনবী: মনে হয় না। তবে উন্মাদ তো তরুণ অনেক কার্টুনিস্ট তৈরি করেছে। অনেককে দিয়ে কাজ করিয়েছে ওদের পত্রিকায়। আর এতকাল ধরে একটা পত্রিকা চলছে, এটা বড় ব্যাপার। এই একনিষ্ঠতা হাবীবের আছে বলেই চললো। ও কোন বিশ্রাম নেয় না। পত্রিকাটা বের করার পেছনে ওর একটা প্যাশন কাজ করে বলে আমার মনে হয়। না হলে এতদিন চলতো না। আরো কিছু পত্রিকা বের হয়েছিল তখন। কার্টুন নামেই একটা পত্রিকা বের হয়েছিল। ওগুলো বেশিদিন চলেনি।

রাজীব: আমাদের এখানে স্যার কার্টুনের যে হিস্ট্রি, তা ওইভাবে ডকুমেন্টেশন হয় নাই।

রনবী: হয় নাই মানে কেউ লিখে নাই। আমি একটা লিখেছিলাম একজনের অনুরোধে। প্রেস ইন্সটিউটের নীরিক্ষা নামে একটা পত্রিকা ছিলো। ওইটাতে একটা আর্টিকেল ছিলো। পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস না। কিন্তু কার্টুন চর্চা ইত্যাদি নিয়ে একটা লেখা ছিলো।

রাজীব: কবের দিকে স্যার এটা?

রনবী: অনেক আগে। বহুকাল আগে।


তখন দেশ-ভাবনা ছিলো নিজের দেশ তৈরি করতে হবে অন্যদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে। তফাৎ আছে অনেক। এখন নিজের বিরুদ্ধে নিজেকে কথা বলতে হচ্ছে।


রাজীব: আমাদের জয়নুল আবেদীন থেকে শুরু করে কামরুল হাসান, সবাই কার্টুন আঁকতেন।

রনবী: হ্যাঁ। সবাই কার্টুন এঁকেছেন। কিন্তু আত্মীকরণ যে ব্যাপারটা থাকে, ওইরকম করে কেউ নেয়নি। কার্টুন নিয়েই থাকবে ওরকম কেউ ভাবেনি। সেটা আমিও করিনি। আমি অনেক কার্টুন করেছি কিন্তু কার্টুনিস্ট হওয়ার চেষ্টা করিনি। আবেদীন স্যার করেছেন, কাজী আবুল কাশেম করেছেন। কাজী সাহেব কিন্তু সিরিয়াসলি কার্টুন আঁকতেন। দোঁপেয়াজা নাম। তারপরে কামরুল হাসান কিছু ভালো কার্টুন করেছিলেন। একাত্তরে তো তার বিশাল কাজ ইয়াহিয়াকে নিয়া ওইটা। তারপরে স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনে তার বিশাল একটা কার্টুন আছে। কার্টুন মানে ড্রয়িংই। একজন আর্টিস্ট মানেই তো সমাজ সচেতন মানুষ। ছবি আঁকলেই তো আর্টিস্ট হয় না। দেশ, কাল, মানুষ, সমাজ এগুলো নিয়ে যদি ভাবনা না থাকে, জ্ঞান না থাকলে, কাজ না করে শিল্পী হিসাবে পরিপূর্ণতা পাওয়া কঠিন। সমাজ কিন্তু আর্টিস্টদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর্টিস্টরা কি বলে, তা ছবিতেই হোক বা কার্টুনে মানুষ সেটা দেখতে চায়।

রাজীব: আপনারা এবং শিশির স্যার পর্যন্ত সোশ্যাল যে কানেশকনটা ছিলো; পেইন্টিং দিয়ে না হোক কার্টুন দিয়ে, তা এখনকার আর্টিস্টদের মধ্যে পাওয়া যায় না।

রনবী: আমি অবশ্য এই স্টাডি করিনি। আছে কি নাই। আর্টিস্টদের এটা একটা স্বভাব। থাকতেই হবে। আবার অনেকেই আছে অ্যামেচার।

রাজীব: বেশিরভাগই অ্যামেচার।

রনবী: হ্যাঁ। বেশিরভাগই। যারা ছবি আঁকার সাথে সম্পৃক্ত আর যারা শুধুই কার্টুন আঁকে তাদের ফিলিং কিন্তু তফাৎ হবার কথা। যারা ছবি আঁকে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই তাদের সবকিছু নিয়ে স্টাডি করতে হয়। সেই স্টাডিটা কাজে লাগে। এখন যারা অ্যামেচার, তারা তো সুন্দর আঁকার দিকে ভাববে না। আর এখন তো প্রযুক্তি আছে তাদের সামনে। তাতে আঁকার দিকটা ভালো হয়। কিন্তু অন্য আর্টিস্টদের মতো সবকিছু মাথায় থাকে কীনা, এটা আমার জানা নাই। কিন্তু দেখেছি জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী যাদের দেখেছি তাদের ভেতরে অন্যরকম রাজনৈতিক সচেতনতা ছিলো। তাদেরকে অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে। সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও মানে আর্টিস্টদেরও অনেক ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে। পুরা পাকিস্তান সময়টা। জয়নুল স্যার, কাশেম সাহেবরা তো আরো আগের নানা ঘটনা যেমন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকেও শিক্ষা নিয়ে নিয়ে কাজ করেছেন। তাদের যে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, সব তারা প্রয়োগ করেছেন। তখন যে দেশাত্মবোধ ছিলো, এই সময়ের অনেকে তা বুঝতে পারবে না যে কি যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে আমরা পাকিস্তান আমলটা পাড় করে আসছি। একাত্তরের পর থেকে তো নিজ দেশ, নিজেরাই সব। এখান থেকে আবার ব্যথা বলি, যন্ত্রণা বলি, ভাবনা বলি, যন্ত্রণা বলি, চিন্তা বা দুঃশ্চিন্তা বলি সবই ভিন্ন ধরনের। আজকের তরুণ প্রজন্ম ঠিক যে ভাবনাগুলো করবে বা যেইভাবে তাদের চলন সেটাকে আগের সাথে মেলালে কিন্তু হবে না। অত্যন্ত আধুনিকতার মধ্যে দিয়ে তারা যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত বলি, ভাবনাগত বলি সবকিছু অন্যরকম। সেজন্য তাদের স্টাডিও ভিন্ন। এখন দেশ-ভাবনা হচ্ছে নিজের দেশ। তখন দেশ-ভাবনা ছিলো নিজের দেশ তৈরি করতে হবে অন্যদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে। তফাৎ আছে অনেক। এখন নিজের বিরুদ্ধে নিজেকে কথা বলতে হচ্ছে। আর আগে কথা বলতে হয়েছে কলোনিয়াল লোকদের বিরুদ্ধে। এখন নিজেরাই নিজেদের সম্পদ নষ্ট করে ফেলছি। ভাল যদি কিছু করি তো নিজেদেরই ভালো করছি। সবটাই হলো একেবারে আপন। একেবারে নিজস্ব। আমার বিশ্বাস, এখনকার ছেলেরা দেশটাকে বদলাবে।

রাজীব: স্যার, বাইরের দেশের কার্টুনের সাথে আমাদের কার্টুনের তুলনা করলে আমাদের অবস্থানটা কেমন?

রনবী: এটা তো কখনো ভাবি নাই। কিন্তু আমরা তো আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে খুব একটা কার্টুন করি না। এমনকী ভারতের ওরাও কিন্তু আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কার্টুন আঁকে। ড্রয়িং দিক দিয়ে যদি বলি, একই ড্রয়িং আরো দেখা যায়। অনেক দেশের মতো আমাদের এখানেও আধুনিক কার্টুন ড্রয়িং নিয়ে কাজ হচ্ছে। গ্লোবাল একটা যোগাযোগ হয়েছে তো আমাদের, আমরা তো আগে অত কিছু দেখতে পেতাম না।

IMG_0002

রাজীব: এটার কি বাজে প্রভাব পড়ে? দেখা যায় ইন্টারনেট ব্রাউজ করে অনেক সময় আইডিয়া নিয়ে নেয়।

রনবী: হ্যাঁ, হতে পারে।

রাজীব: মৌলিকতাটা কমে যাচ্ছে।

রনবী: বড় কথা হলো কাজ হচ্ছে। কাজ হচ্ছে এবং অনেক কাজ হচ্ছে।

রাজীব: কার্টুনের জন্য কোন ইনস্টিটিউশন দরকার ছিল কিনা?

রনবী: থাকলে তো ভালোই হতো। ড্রয়িং যে কতভাবে করা যায়, অন্তত সেটা তো শিখতে পারতো। একাডেমিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে।

রাজীব: আপনার স্যার প্রিয় কার্টুনিস্ট আছেন কেউ?

রনবী: সে তো অসংখ্য।কার্টুন দেখা শুরু করেছি ছেলেবেলায়। সেটি ছিলো বিদেশী। ডেভিড লো, রিকি এদের কার্টুন।এরপর ইন্ডিয়াতে তো অনেকেই ছিলেন। আবু আব্রাহাম, চণ্ডী লাহিড়ি এরকম অনেকেই। পাকিস্তানের খুব বিখ্যাত একজন কার্টুনিস্ট ছিলেন। ও-ই একমাত্র তখন পলিটিক্যাল কার্টুন আঁকতো। তবে ও সব সময় ইন্ডিয়ার সমালোচনা করতো। নাম আজিজ। কারণ পাকিস্তান সরকারের হয়ে কাজ করতো।

রাজীব: পাকিস্তান আমলে ব্যানার বাদে ডিরেক্ট পত্রিকার জন্য কার্টুন আঁকছিলেন, সরকারের সমালোচনা করে?

রনবী: আঁকছি তো। ফোরাম পত্রিকায়। রেহমান সোবহান, কামাল হোসেন তারা পাকিস্তান আমলে একটা ইংরেজি পত্রিকা বের করতেন। নাম ছিলো ফোরাম। ওই পত্রিকার প্রচ্ছদটা কার্টুন দিয়ে হতো। এটা বছর দেড়েক সময় প্রকাশ হয়েছে।

রাজীব: কত সালের দিকে এটা?

রনবী: এইটা ৬৯ এর মাঝামাঝি থেকে ৭০; না ৭১ এর ২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত বের হয়েছিল। আর বের হয়নি।

রাজীব: ওইটার আগে কি স্যার আমাদের নিজস্ব কোন পত্রিকা ছিলো, যেটা কার্টুনকে প্রমোট করতো?

রনবী: না। ওইভাবে না। হাস্যরসাত্নক কার্টুন ছিলো। ওইভাবে পলিটিক্যাল কার্টুন ছিলো না। সচিত্র সংবাদ নামে হাসির কার্টুন হতো। সেখানে সিনেমার সুভাষ দত্ত আঁকতেন। তারপরে জামির নামে এক ভদ্রলোক আঁকতেন। তারপরে আমাদের এক বছর বয়সের সিনিয়র কালাম মাহমুদ ছিলেন। তিনি বেশ সফল কার্টুনিস্ট ছিলেন। দুই পত্রিকায় দুই নামে আঁকতেন। একটায় তিতু নামে, আরেকটায় কালাম নামে। পুরা নাম মনে নাই, অরূপ নামে একজন হলিডেতে আঁকতেন। সেটাতে পলিটিক্যাল কার্টুন থাকতো।

রাজীব: ফোরামে কি স্যার আপনি নিজের নামে আঁকতেন?

রনবী: হ্যাঁ, নিজের নামেই আঁকতাম।

TOKAI NIYE PAINTING

রাজীব: পলিটিক্যাল কোন হ্যারাসমেন্ট ফেইস করতে হইছে?

রনবী: না। ওইটা নিয়া কোন ঝামেলা হয় নাই।

রাজীব: তখন বয়স কত ছিলো আপনার?

রনবী: বেশি না। নতুন মাস্টার। চাকরীতে তিন/চার বছর হবে ঢুকেছি আর্ট কলেজে। পরিণত বয়সই ছিলো বলা যায়। তখন তো অল পাকিস্তান পলিটিক্যাল বিষয় নিয়েই কথাবার্তা হতো।

রাজীব: রনবী নামটা কি স্যার টোকাই থেকে শুরু?

রনবী: না না না। আরো আগে থেকে। হাস্য-রসাত্নক কার্টুন যখন আঁকতাম, তখন থেকেই।

রাজীব: আপনার এই নামটাই তো গণমানুষের কাছে বেশি পরিচিত।

রনবী: তখন সিগনেচার করতাম আর নবী লিখে। সেটার বাংলা হয়ে গেলো রনবী। লোকে মনে করে এটা সাংঘাতিক একটা ছদ্মনাম। এটা ছদ্মনাম না, সিগনেচার।

রাজীব: স্যার, এটুকুই।

রনবী: আচ্ছা। ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে লিখে নিও।

9b82939b2a1e45f9b897bc64e55d5658-597a48ac6be00

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading