আত্মচরিত
নিষ্প্রয়োজনে
আমি
ছোট নাম লেখাতে গেছি
নিজ প্রয়োজনে
আমি
নক্ষত্রের দেনা
বিষ-প্রয়োজনে
আমি
সাপ ও বেদেনি
দুহাতে দুধের ছানা, বেপরোয়া মুঠোয় মুঠোয়
সম্পূর্ণ ফুটেও নারী ক্ল্যাসিক্যালি অস্ফুট__
সুতরাং, আজ আমাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো—
আমি কি কবি ছিলাম? সাপুড়ে ছিলাম? নাকি ছিলাম যা, তাই?
শিস্-প্রয়োজনে
আমি
হাওয়া-ধাক্কা দিচ্ছি
বসন্ত-জঙ্গলে গাছদেবতার
কে আমি? বিখ্যাত কেউ? কী ছিলাম? গুরু কেউ? লঘু ঢেউ?
ঝরনার বাথরুমে শাওয়ার ছিলাম?
সুহাসিনীর ড্রেসিং টেবিলে আয়না ছিলাম?
গুপ্তকথা হচ্ছে, আদতে সেই রাক্ষসদের ছেলে,
যোগ্যতা, নিজের মুখে জোছনারাত অনুবাদ করতে পারি,
এর বাইরে
বুদবুদ পর্যায়ের কবিতা
কথা হয়, মীমাংসা হয় না
মনে এত ছিটমহল
নিয়তই, মীমাংসার ভান করে, সান্ত্বনাসূচক
বারান্দায় ছুটে আসে সাঁওতালি রাতের মাদল;
ছাদে উঠে গুনে গুনে দেখি
কাছে ও দূরের প্রেক্ষিত, সম্পর্ক, আলো
অন্ধকারে আলো গুনে যাওয়াই ভালো জমকালো
নিজেকে মুঠোয় নিয়ে খেলাটাই খেলা!
খেলা হয়, জয়-পরাজয় মীমাংসা হয় না
মনে এত প্রতর্ক প্রহরা
চারিদিকে শুধু শব্দে শব্দে ভরা
কী তুরীয় খরা!
দ্যাখো একটি প্রাণপণ বাক্য হয় না
ফলে, যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে, হচ্ছে না এমন কী তা?
মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে কালিদাসের মেঘ
রবীন্দ্রনাথের পাখি
কিন্তু ধরাই যাচ্ছে না, কোন ফাঁকে, আড়ালে-আবডালে উড়ে যাচ্ছে
(রোদ-উৎসবে পুড়ে যাচ্ছে দালিচিত্রে গলে যাচ্ছে)
আমার ডানাময় দিন, অমীমাংসিত স্বপ্ন
এমনকি বুদ্বুদ পর্যায়েই, কবিতা
ছোট্ট কবিতা
তুমি যেন ঠিক কার মতো?
একটি ছোট্ট পাখির বাচ্চা
অথবা বাচ্চার মা’র মতো?
তুমি যেন ঠিক কার মতো?
যার মতো আর দেখিনি কাউকে
স্মরণী-কুসুম, তার মতো?
তুমি তবে ঠিক তার মতো?
কার মতো, কার মতো?
যার মতো আর দেখিনি আগুন
পুড়িয়ে বাঁচায়, তার মতো?
যার মতো আর ভাবিনি কাউকে
তার মতো, তার মতো?
যার বেশি কেউ দূরেরও নয়
তার মতো, তার মতো?
আমার ভুলের সমান
কত কী যে লেখা যায়!
ভূগোল মাস্টার
এই আকাশ আমার পিতা
মাটি আমার মা
আমি তাদের সন্তান, ঐ দিগন্ত
কিন্তু ভূগোলমাস্টার বলছেন—
কয়েকদিন পর, নতুন আরেকটি কবিতা লেখামাত্রই
আমি সেই আগের কবিতার খালা
তারপর আরো কবিতা লেখা হলে অনেক আগের কবিতাকে
কবিতা যখন ছাপা হয়, অন্যেরা পাঠ করে
তখন তো সেই আগের কবিতা অনেকটা অচেনা হয়ে পড়ে
আমার পুরোনো কবিতাগুলো পড়তে গেলে মনে হয়
এরা সেই বাল্যবন্ধু, যাদের নামই প্রায় ভুলে গেছি
দেখলেও চিনতে কষ্ট হবে (কাউকে কাউকে তো চিনবই না)
তার মধ্যেও ঠিকই চিনে ফেলব, আমার কোন কবিতাটি খুব জেদি ছিল
কোন কবিতাটি সেই মেয়ে, ক্লাস নাইনে উঠেই যে-বিষ খেয়েছিল প্রেমে
হয়তো সেই কামরাঙা কবিতাটির নাম ছিল পাতাবাহার
চরম পরিস্থিতি
ক্ষুধার্ত বাচ্চাদের জন্য আমি কী করতে পারি?
যদি ঘনজঙ্গলে যাই
বাঘিনীর খপ্পরে পড়ি (হায়)
বাঘিনী যদি আমাকে থাবায়, খায়
তখন, দুধ হয়ে পৌঁছুতে পারি
মা-বাঘিনীর স্তনের বোঁটায়
বন-পর্যটকই একদিন মনোযোগ দেবে
পড়ে থাকা কঙ্কালে, আমার হাড়ে
ওই যে বাঘিনী আসছে
এইবার, যেকোনো মুহূর্তেই, ক্ষুধার্ত বাচ্চারা
জঙ্গলে কবিতা লিখতে আসা আমাকে
খেয়ে ফেলতে পারে
সন্ধ্যায়, প্রজাপতি ঢুকে পড়ে ঘরে
বাক-স্বাধীনতা ছাড়া
তোমার মধ্যে আমি আমাকে দেখতে পাই—এই হচ্ছে প্রেম!
আয়নার সামনে দাঁড়ালেও আমি আমাকে দেখতে পাই
কিন্তু কাচের সঙ্গে আমার কোনো প্রেম হয় না
হাসলে, আয়নার মধ্যে আমি আমার হাসি দেখতে পাই
কাঁদলে, আয়নার মধ্যে আমি আমার কান্না শুনতে পাই না
আয়নার ভেতর থেকে কোনো শব্দই আসে না
আয়নার মধ্যে বরং এক অমানবিক পৃথিবীর ছবি দেখা যায়—
তাকালেই, আমার বাম চোখ আয়নার মধ্যে ডান চোখ হয়ে যায়
বাম হাত ডান হাত হয়ে যায়, বাম পা ডান পা হয়ে যায়
আমি সরে গেলেই, আয়না থেকে আমার সব সরে যায়
আলো ছাড়া আয়না নিজেই উধাও, অন্ধকার আমাকে দেখাবে কি?
তাই কাচের সঙ্গে কোনো প্রেম হয় না, তোমার সঙ্গে হয়
তোমার মধ্যে আমি আমাকে দেখতে পাই, অন্ধকারেও পাই
আমি হাসলে তুমিও হাসো, তুমিও কাঁদো, শব্দ শুনতে পাই
আমার ডান-বাম সবসময় তোমার কাছে ডান-বামই থেকে যায়
আমি সরে গেলে আয়নায় প্রতিবিম্বিত আমিও সরে যায়
শুধু পারদ লাগানো, বস্তুত ফ্রেমে বাঁধানো কাচ পড়ে থাকে
অথচ সামনে থেকে সরে গেলেও তোমার মধ্যে আমি থেকে যাই
তুমি কেমন তাকিয়ে থাক—আমি কখন ফিরব সেই অপেক্ষায়!
এই লোডলেডিং বেচাকেনাকালে তোমাকে আমার আলো মনে হয়
আয়নার মধ্যে নিজেকে দেখা আমার শ্বাস-প্রশ্বাস শোনা যায় না
আর তোমার মধ্যে আমার বুকের ধ্বনিসমগ্র কীরকম আছড়ে পড়ে
সে আমি নিজেই শুনেছি বলে আয়নার সঙ্গে আমার ভাব হতে পারে না
তোমার সঙ্গে হয়, তোমার সঙ্গেই দ্যাখো কেমন অটোমেটিক বিনিময়
আমার জ্বর হলে তোমার শরীরেও একটু গরম গরম ভাব জমা হয়!
শহীদ কাদরীর সঙ্গে একবার দেখা
জঙ্গল দেখলেই মনে হয়, ঐ জঙ্গলের একদম ভেতরে একটা জাদুঘর আছে। অসংখ্য গাছে গাছে ভরা অবিরাম পাতায় পাতায় হাওয়া-বাতাসের অর্কেস্ট্রা আর অগণন পাখিতে পাখিতে নরম পালকে পালকে ডিসপ্লে করা গ্রিনমিউজিয়াম। এই পৃথিবীতে যতগুলো জঙ্গল আছে, প্রায় প্রত্যেকটা জঙ্গলের মধ্যেই একটা করে জাদুঘর আছে।
জাদুঘরে, গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে মরচেধরা অনেকদিন আগের একটা বাইসাইকেল। সেই সাইকেলটা কার গো, কার? যথা অপরিণামদর্শী কৌতূহলে, জঙ্গলে প্রবেশ করিয়া যে বালক আর কোনওদিনও ফিরে আসিল না, তার? জংলিপনায় স্নাতকোত্তর আমি, জঙ্গল দেখলেই বুঝতে পারি—এই জঙ্গলের ভেতরে একটা জাদুঘর আছে। বাইসাইকেল আছে। বালক-পুরুষ ফিরতে না-পারার জনশ্রুতি আছে।
জনশ্রুতির অধিক রহস্য, সেটাই ধরিত্রী, সেটাই অবলীলা চৌধুরীর লাবণ্য; লাবণ্যের ভেতরে মিশিমিশি আফ্রিকা, ঘনান্ধকার আমাজান—সাহস করে একবার ঢুকে পড়লেই জাদুঘর পর্যন্ত পৌঁছে যাবার প্রেরণা পাওয়া যাবে। ক্লান্ত সাইকেল গাছে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে এবং সম্ভবত আমার আর কোনওদিনও ফিরে আসা হবে না… হবে না
এ অঞ্চলে এটাই সত্য, জঙ্গলে হারানো পুরুষ শেষপর্যন্ত কিংবদন্তি হয়ে যায়।
কিন্তু ওই যে বললাম, ভাষার সমস্যা! ভাষায় আমি জোছনা দেখাতে পারছি না, সূর্যাস্ত দেখাতে পারছি না, যুদ্ধ দেখাতে পারছি না, রক্ত কতটা লাল দেখাতে পারছি না, বাতাসের বেআদব আচরণ দেখাতে পারছি না! এমনকি আমার মন এখন কতখানি অবাধ্য যে সে আমার ঘরেই থাকে না, প্রতিদিন একই রাস্তায় একই দিকে যায়—মনোগমনের এ বর্ণনা লিখে বোঝানো অসম্ভব! অ্যাবসার্ড!! কারণ, ভাষা শিল্পকে যতটা সমর্থন করে বা শিল্পীকেও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে পারে কিন্তু শিল্প ও শিল্পীর মধ্যে যেটুকু প্রচ্ছন্ন দূরত্ব, যতটা লৌহবেদনা—ভাষা তা কখনোই স্পর্শ করতে পারে না।
কতটা নির্মম, দুর্ভাগ্যপীড়িত, যদি বলো, এই ভাষাতেই আমাকে লিখে জানাতে হবে সেই প্রচ্ছন্ন দূরত্বের গল্প, লৌহবেদনার ইতিকথা? মন-আনমনা, বাক্য যেন ভাব বুঝল না, বাক্য বিরাট বিট্রে করে বসল। অথচ, কুয়োর মধ্যে চৈত্র মাসের মহাজোছনা গড়াগড়ি যায়…
আমি সিরিয়াস পাঠক। পড়তে পড়তে পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা এগিয়ে যাই, তাকিয়ে দেখি গল্পের মধ্যে সোনার ঢেঁকি—পাড়ের শব্দও শুনি। ঠিক তক্ষুনি, পর্দাজুড়ে দৃশ্যমান, হাঁক দিয়ে চলে যাচ্ছে দইঅলা বলে একটা চরিত্র, আমি তার পিছু পিছু এগিয়ে যাই কয়েক পৃষ্ঠা, হঠাৎ সামনে পড়ে পোড়ো রাজবাড়ি, রাজবাড়িটা ভাঙা ভাঙা এবং ভৌতিক! ভীতিলুব্ধ সিঁড়িতে একটা প্রজাপতি, আমি প্রজাপতিকে লক্ষ করে উপরে উঠতে থাকি। প্রত্নকোঠার ছাদের কিনারে গিয়ে বলি, ‘প্রজাপতি, তোমার আত্মজীবনী আমি মুখস্থ করতে চাই’, শুনেই ডানাঅলা এই প্রায়পাখিটি উড়ে যায়। এবার আমিও উড়তে থাকি প্রায়পাখিটির সঙ্গে, পৃষ্ঠার পরে পৃষ্ঠা, বাক্যের পর বাক্য, শব্দের পর শব্দ, প্রয়োজনীয় নৈঃশব্দ্য; প্রজাপতি, আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? তুমি কি কোনো বংশীবাদক, সুরের ফাঁদে ষড়যন্ত্র করছ? ট্র্যাপ করে পাহাড়ের দিকে টানছ?
রহস্যপুর গল্পের তেইশতম পৃষ্ঠায় সেই হাইডআউট লোকেশন, পাঠক যেখানে অসহায়, দুরু দুরু-সন্ত্রস্ত কিন্তু এগিয়ে যেতে উৎসাহী। প্রতিষ্ঠিত অন্ধকারে মুখোমুখি এক মায়াবী অধ্যায় : আলো হয়ে প্রকাশিত নারী। নারীর সর্বাঙ্গে সদম্ভ আগুন, অহোরাত্র নারীকে পড়তে গিয়েই আগুনে পুড়তে হয় এই নিয়তি নির্ধারিত বলে, মন পুড়ে যায়। পোড়া মন চিকিৎসাধীন, নার্সও দেখতে প্রায়নারী, বেতন-ভাতায়।
আমি রহস্যপুর হাসপাতালে শুয়ে আছি, গল্পের মাঝামাঝি কোনো পৃষ্ঠায়। খুবই জানি, সুস্থ হলেই আবারও সেই ষড়যন্ত্র, প্রজাপতির। হয়তো আমারও খুব ইচ্ছে করবে, তার ডানার খোপের অন্ধকারে রঙ মেখে ঘুমিয়ে থাকি, জাগি। বোঝাই তো যাচ্ছে, এরপর গল্পে একটা খুন এসে যাবে। টিকটিকিরাও জানাচ্ছে, চিরকালই খুনের প্রেরণা নারী। সিরিয়াস পাঠক আমি, হিটলিস্টে আছি, সুতরাং খুন হয়ে যাব– এই ভয়ে অসুস্থ থাকি। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে (জন্মদোষে) নার্স ও নারীর আন্তঃপার্থক্যটুকু ধরার চেষ্টা করছি, পড়ার চেষ্টা করছি আমার পোড়ামন চিকিৎসাধীন।
খাদ্য বাসি হয়ে গেলে তা ফেলে দিতে হয়, খিদে পূরণ হয় না। একটি নাটক দেখলাম মঞ্চে, মনে হলো, নাটকের দল বাসি খাদ্য খাওয়াচ্ছে বলে দর্শকের বমি বমি ভাব হচ্ছে। অর্থাৎ বাসি খাদ্য খাওয়া যায় না। জীবন টাটকা চায়। জীবন সুস্থ থাকতে চায়।
আসি যাই ঝিনেদায় থাকি তো ঢাকায়, কী আসে যায় এহেন থাকা-না থাকায়! আসি যাই ঝিনেদা-ঢাকায় যেন বা তেরশো কোটি আলোকবর্ষ দূরে সেই গ্রাম যার কাশফুল ফোটা নদীতীরে আমি জন্মালাম নাকি জন্মই নিইনি শুধু জন্মাবার ভঙ্গি করে রক্তাপ্লুত ধাত্রীমার হাতে পৌঁছলাম অথবা পৌঁছনোর ভঙ্গিতে লেখার মধ্যে ঢুকে পড়লাম, এককথায় লেখালেখি হয়ে গেলাম, বর্ণমালা হয়ে গেলাম, শব্দ-বাক্যের খেলা আর ধুলার ভেতরে জাগলাম, ঘুমোলাম; লেখায় এত লাম লাম লাম হলে লেখা পড়া যায়? যায় না! লেখা কি তেমন আয়না—যার মধ্যে তুমি নিজের মুখটি দেখতে পাবে, নিজের ঘুমটি ঘুমিয়ে নিতে পারবে? লেখা কি তেমন শয্যা? লেখা কী রে ভাই? লেখার মাজেজা কি এই নয় যে, যে লিখেছে সে তার সাম্রাজ্যে সম্রাট ও একা? আমি কি কোনো একার কথা লিখছি? ত্রিভুবনে একজনই একা নাকি অনেকে একা? একাদের সংখ্যা কত, একারা থাকেই বা কোথায়? সেই তো শুরুর কথাই ঘুরে ফিরে আসে, কথা বসে, কথা খায়- দায়; তেরশো বছর ধরে আসি যাই ঝিনেদায়, কতকাল ফেরি চলে পদ্মায়; দুপুরে বা সন্ধ্যায়, সময় উড়িয়ে দেয় ঢেউ নদীর হাওয়ায়, তাই গান গাই, গান আমাকে গায়—নদীর কুল নাই কিনার নাই, নাই রে…
ওম সম্মেলন
প্রেম হলে সেই পাখি, যার সোনালি ডানা ছুঁয়ে দেখবার সৌভাগ্য পাওয়া চাই। যার একটি মায়াবী পালক খসিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। প্রেম সেই পাখি, যার চোখের মণিতে সামুদ্রিক নৌকার মাস্তুল দেখা যায়। যার মসৃণ গ্রীবায় নিঃসন্দেহে রোমিও-জুলিয়েট মঞ্চস্থ হতে পারে। প্রেম সেই পাখি, যার ঠোঁট দেখলেই প্রতীয়মাণ হয়- একজন একা মানুষের আত্মজীবনী কী ভয়ঙ্কর পিপাসার্ত! বীভৎস!
যখনই কেউ প্রেমে পড়ে মানে সেই পাখিতে পড়ে। তখন সে প্রেমরূপ পাখির ডানা ছুঁতে চায়। কারণ, তার অবচেতন মন প্রার্থনা করে ডানার নিচে আত্মগোপন। একুশ শতকের যন্ত্রণায় জ্বলেও প্রেমে এরকম আত্মগোপন এখনো উঠে যায়নি। কিন্তু হঠাৎ কোনো পাখি যখন উড়ে যায়, ডানার নিচের ওমে যে আত্মগোপনকারী সে ধপ করে পড়ে যায়। নিঃশব্দে শব্দ হয়, ধপাস! অর্থাৎ পাখি উড়ে গেলেই প্রেম উড়ে যায়। সেই প্রেম সেই পাখি আর সন্ধান করেও পাওয়া যায় না। এরপর যত পাখি চোখে পড়ে, সব অন্য পাখি। কোনোভাবেই আমি ভুলতে পারি না, সেই পাখি কোথায় গেল- যার অপরিসীম ডানার নিচে একদিন আত্মগোপনে ছিলাম, ওম সম্মেলন করেছিলাম!
আজ যেসব পাখি ওড়াউড়ি করছে, ডালে বসে আলস্য ভাঙছে- এরা তো জানেই না যে, প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করলেও আমি আত্মগোপনে থাকতে ভালোবাসি। ফলে, এখন আমি বুঝতেই পারছি না, কোন পাখিটার ডানার নিচে ওম সম্মেলন সফল হবে, সার্থক হবে?
কোন পাখিটা উড়বে না আর, স্বভাব ভেঙে?
যে কেউ যখনই প্রেমে পড়ে, বুঝতে পারি, আমিও তার সঙ্গে প্রেমে পড়ে গেছি। প্রেমিক তো এতদিন উথালপাতাল ছিল, হাওয়ায় ভাসমান ছিল, তার সঙ্গে আমিও উথাল-পাতাল হয়েছি, হাওয়ায় ভেসেছি। নিজের বুক থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল কী পরিমাণ, তা টের পাচ্ছিলাম প্রেমিকের বুকের রক্তক্ষরণ দেখে। মেয়েটিকে মনে মেখে ছেলেটি যেমন বোকা, যথেষ্ট আউলা এবং অক্ষরজ্ঞানহীন। চিঠি লিখতে পারে না, মেসেজ পাঠাতে পারে না। আমারও ভীষণ নিরক্ষর নিরক্ষর লাগে। প্রেমিক ছেলেটির বুকে শুধু কম্পন আছে, চোখে আছে পিপাসা। কেউ প্রেমে পড়লেই আমার বুক কাঁপে, স্তব্ধতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ শুকিয়ে যায়। নির্ঘুম রাত্রির জানালায় বসে শিঁস দেয় কাজলডাঙার পাখি। কেউ প্রেমে পড়লেই সেই শিশ সে শুনতে পায়, আমিও পাচ্ছি। দ্যাখো, মৎসাগন্ধা নদীর ধারে আছে কুঁড়েঘর। সেই ঘরে কেউ নেই, কেউ নেই? আছে। প্রেম আছে, প্রজাপতি আছে। অপেক্ষা করছে বুকের মধ্যে সেই নদী, কুঁড়েঘর! । ছেলেটি .যখন বর, মেয়েটি কি কবুতর?
