খুব আলস্য না থাকলে একটানা একাধিক ছবি কম দেখা হয়। দিনে একটাই বেশি দেখা হয়। ভালো না লাগলে তো তাও দেখা হয় না। ব্যতিক্রমও হয় এমন, ছবি দেখলাম তা ভালো লাগে নি। তখন আরেকটা ছবি দেখি। ফলে ভালো না লাগা প্রথম ছবিটার কথা ভুলিয়ে দেয় দ্বিতীয় ভালো লাগা ছবিটা। এরকমও হয়, মাঝেমাঝেই। তবে খুব যে নিয়মিত, তা কিন্তু না। তবে এমন খুবই কম হয়, যে কয়েকদিন আগে দেখলাম একটা ছবি। আবার এর মাঝে অন্য ছবিও দেখলাম। সবগুলোই ভালো। কিন্তু কয়েকদিন আগের ছবিটা বা ছবিটার কিছু দিক মাথা থেকে যাচ্ছে না। সারাক্ষণ মাথায় থাকছে। এমন ছবি দেখলে ভাল্লাগে। সম্প্রতি তেমন ছবি দেখলাম ‘ফটোগ্রাফ’।
এই ছবির শুরু থেকেই সমস্ত মনযোগ কেড়ে নিয়েছেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি। অধিকাংশ বাণিজ্যিক বা বড় বাজেটের ছবির ক্ষেত্রে এই রকম মনযোগ কেড়ে নেয়ার মতো এক বা একাধিক শিল্পী থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিচালক নিজেও এই রকম মনযোগ কেড়ে নেন। যেমন সম্প্রতি ঝ্যাং ইমু’র ছবি ওয়ান সেকেন্ড-এর ট্রেলার দেখে মনে হলো এখানেও পরিচালকই মনযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন। ‘ফটোগ্রাফ’ ছবিতেও তেমন মনযোগের পাত্র নওয়াজুদ্দিন। কিন্তু দারুণ বিষয় হলো নওয়াজুদ্দিনকে অতিক্রম করে এই ছবিতে আমার মনযোগ কেড়ে নিয়েছেন সানিয়া মালহোত্রা। হ্যাঁ, আমির খানের সুপারডুপার হিট ছবি ‘দঙ্গল’-এর ছোটবোন ববিতা চরিত্রে অভিনয় করা সানিয়া। বলা যায় ছবির মূল চালিকাশক্তিই মিলোনি চরিত্রের সানিয়া।
রিতেশ বাত্রা’র রচনা ও পরিচালনায় আমরা আগে লাঞ্চবক্স দেখেছিলাম। লাঞ্চবক্স ছবিতেও ইরফান খানের সাথে স্ক্রিন শেয়ার (একই দৃশ্যে না থেকেও অর্থে বলা) না করেও কি দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন নিমরাত কৌর । ফটোগ্রাফ ছবিতে সানিয়া মালহোত্রা আরও অনেক বেশি শক্তিশালী চরিত্রে। তার চরিত্রও আরও অনেক বেশি গভীর। অভিনয়ের জায়গাও তারই বেশি। আর এতসব চ্যালেঞ্চ সানিয়া জিতলেন কি অসাধারণ। হ্যাঁ, আমি এটাকে জয়ই বলবো। কারণ, যেখানে নওয়াজুদ্দিনের মতো পর্দা কাঁপানো, সমালোচক-প্রিয় অভিনেতা থাকেন, একই সিনেমায় এমনকি একই দৃশ্যেও, তখন তার জন্য নিজের ও স্বাভাবিক অভিনয় করাটাও চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। একটা অলিখিত অবাঞ্ছিত চাপ থাকে সহঅভিনয় শিল্পীর ওপর। এই চাপটা মোটেও প্রভাব ফেলে নি মিলোনির চরিত্রে। দেখে মনেই হয়েছে, এই মিলোনি সত্যিই অনেক ইন্ট্রোভার্ট, অনেকটা চাপা। ধীরে কথা বলেন, চলেনও ধীরে। কিন্তু লক্ষ্যে অটুট।
মূলতঃ আমার যে মুগ্ধতা, তাতে সানিয়া মালহোত্রাকে নিয়ে অনেক কথাই বলা যাবে। তবে এই ছবি দেখে একটা অনুমান আমি করতে পারি। সেটা হলো, এই যে ইরফান খানের অভিনয় দুনিয়াব্যাপী সমাদৃত, ভারতের এমন কোনও নারী নাই যাদের অভিনয় এমন সমাদৃত। নায়িকা আছে, যারা জনপ্রিয়। কিন্তু কেবল অভিনয়ের প্রশ্ন তুললে আপনি কার কথা বলবেন? বিদ্যা বালান? টাবু? ইংলিশ ভিংলিশের শ্রীদেবী! এদের অভিনয় একটা দীর্ঘ জার্নির পর যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, ‘ফটোগ্রাফ’-এ একই জায়গায় যেন এসে দাঁড়িয়েছে সানিয়া। আপনি হয়ত দ্বিমত করবেন, বলবেন নওয়াজুদ্দিনের কি কোনও ভূমিকাই নাই? বলবো আছে, নওয়াজুদ্দিন কেবল তাকে এত দুর্দান্ত অভিনয় করার জন্য তাতিয়ে দিয়েছেন। এর জন্য তারও বাহবা পাওয়াই উচিত।
টানা অস্থিরতা, ব্যস্ততার মধ্যে দুইভাগে ছবিটা দেখেছিলাম। মনে হয়েছে ভুল হয়ে গেছে, আবার দেখা উচিত। একটানা। এবং পারলে ফোন বন্ধ করে, বাতি নিভিয়ে বাইরের শব্দকে উপেক্ষা করেই দেখা উচিত। এই ছবির মাধ্যমে রিতেশ বাত্রা ওয়ান্টেড পরিচালকের লিস্টে উঠে গেলো। আশা করি তার নাম আপনাদেরও মনে থাকবে।