প্রশ্ন: আপনার কার্টুন আঁকার শুরুটা কিভাবে?
আরাফাত করিম: ছোটবেলায় অল্প-স্বল্প কার্টুন, কমিক ক্যারেক্টার আঁকতাম। কিন্তু প্রফেশনালি বা সিরিয়াসলি কার্টুন আঁকা শুরু হয় চারুকলায় ভর্তি হবার পর থেকে। চারুকলায় কোচিং করার সময় একবার জয়নুল গ্যালারিতে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন এক্সিবিশন দেখে কার্টুন আঁকতে আগ্রহী হয়ে উঠি – সিদ্ধান্ত নিই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবো। ২০১০ সালে টিআইবির প্রতিযোগিতায় কার্টুন পাঠাই এবং ফার্স্ট প্রাইজ উইনার হই। তারপর অই বছরই একদিন বাপ্পি ভাই (ওয়াহিদ ইবনে রেজা)আমাকে উন্মাদে নিয়ে যান। অবশ্য তার ৪/৫ বছর আগেই তিনি আমার আঁকা কার্টুন দেখে উন্মাদে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। তবে তখন তা আর হয়ে ওঠেনি। যাই হোক, তো প্রথমবার উন্মাদে যাওয়া তার সাথেই। পরিচয় হলো দ্য লেজেন্ড আহসান হাবীবের সঙ্গে। দিনটা স্বপ্নের মতো ছিলো। আমার আঁকা স্কেচবুক দেখালাম। বস অইদিনই উন্মাদের পরের ইস্যুর জন্য একটা ফিচার আঁকতে দিলেন। আমিও হয়ে উঠলাম উন্মাদ টিমের একজন। এভাবেই শুরু হলো আমার কার্টুন আঁকার যাত্রা।
প্রশ্ন: কখন মনে করলেন এটাকে পেশা হিসেবে নিবেন? এ পেশার অভিজ্ঞতা কি রকম?
আরাফাত: উন্মাদের ঢোকার পরই বুঝতে পারলাম যে, নেশাটাকে পেশা হিসাবে নিতে পারছি। উন্মাদের সুবাদে কার্টুন রিলেটেড অনেক কাজের সাথেও যুক্ত হলাম। আঁকান্তিস, ক্যারিকেচার, কার্টুন এক্সিবিশন, কমিক্স একে একে যুক্ত হতে থাকলাম আরো বেশিভাবে। একাডেমিক কাজের পাশাপাশি এটা অন্য স্বাদের আরেক জগত। দুইটাই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ ও মজাদার।
প্রশ্ন: আমাদের এখানে কাটুন আঁকায় কি কি সমস্যা ফেইস করতে হয় একজন আর্টিস্টকে?
আরাফাত: আমার আসলে মাথায়ই আসে না, কার্টুন আঁকলে কেন একজন আর্টিস্টকে বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে? একজন আর্টিস্টের সবকিছু আঁকার স্বাধীনতা আছে, অন্তত কার্টুন আঁকার ক্ষেত্রে তো অবশ্যই। আমার মনে হয়, কার্টুন জিনিসটাকে অনেকেই হালকা মনে করে এবং কার্টুন আঁকলে নিজেদের ওজনও হালকা হয়ে যাবে। এমন কোন ভয় কাজ করে হয়তো। হাহাহা
প্রশ্ন: আঁকার সময় কোন কোন বিষয়কে প্রায়োরিটি দেন?
আরাফাত: কার্টুন আঁকার ক্ষেত্রে স্যাটায়ার বিষয়টাকে তো অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়, কিন্তু তার সাথে অবশ্যই কনসেপ্ট বা কোন কোন মেসেজ থাকাটা আবশ্যক। অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থহীন কার্টুনও বিরাট শক্তিশালী হতে পারে।
প্রশ্ন: আপনার পছন্দের আর্টিস্ট কে কে? আমাদের এখানে বা বাইরে? তাদের কোন কোন দিক আপনাকে টানে?
আরাফাত: পছন্দের আর্টিস্ট আসলে এতো অল্পে বলা সম্ভব নয়। অনেক আর্টিস্টের, আবার বিশেষ কিছু কাজ পছন্দের। তাই এই বিষয়ে এভাবে বলা কঠিন। তবু আপনাকে ধন্যবাদ যে, এই প্রশ্নে আপনি কার্টুনিস্ট ও আর্টিস্টকে আলাদা করে দেননি। নাহলে হয়তো আবার বিতর্ক শুরু হতো। হাহাহাহা
প্রশ্ন: আমাদের এখানে একাডেমিতে কার্টুন শেখানো হয় না। বিষয়টা কিভাবে নেন? কতটুক দরকার এটার?
আরাফাত: আসলে যদি না শেখানো হয়, তাহলেও তো বসে থাকার কিছু নেই। নিজে নিজেই শিখতে হবে। আমাকেও তো একাডেমি কার্টুন আঁকা শেখায়নি। তবে একাডেমি এমন কিছু জিনিস শেখায়, যা দিয়ে আপনি অন্য সব কিছুই শিখতে পারবেন। আমি সেই আর্ট সেন্স বা শিল্পজ্ঞানের কথা বলছি। এটা অবশ্য নিজেকেও একটু খুঁজে নিতে হবে।
প্রশ্ন: আমাদের এখানে কমিকস অইভাবে দাঁড়ায় নাই। কারণ কি হতে পারে এটার?আর এখন যারা এ মাধ্যমটা নিয়ে কাজ করছেন, তাদেরকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আরাফাত: আমাদের এখানে কমিক্স অইভাবে দাঁড়ায়নি কারণ কমিক্স নিয়ে হয়তো আগে “অই”ভাবে ভাবা হয়নি। তবে এখন অনেকেই কমিক্স পছন্দ করছে, এর সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আমরাও বেশ কিছু কমিক্সের সাথে কাজ করছি। বাংলাদেশে এসব ক্ষেত্রে যারা লেজেন্ড তারা আমাদের উৎসাহ দিচ্ছেন, সহযোগিতা করছেন। আর কমিক্স করছে যারা, তাদের মূল্যায়ন করতে পারি আমি আমার স্বল্প অভিজ্ঞতা দিয়ে। আর আমি যেটুকু বুঝি তা হলো – এর মূল্যায়ন আমরা তখনই করতে পারবো, যখন একটি কমিক্স তৈরির পেছনের পুরো গল্প আর কষ্টটাকে বুঝতে পারবো।