হানযালা কে? | অনুবাদ : লাবিব ওয়াহিদ

আনুমানিক ১৯৭৫ সাল থিকা ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত নাজি আল-আলি এমন সব কার্টুন আঁকছেন, যেগুলার ভিত্রে দিয়া টের পাওয়া যায় ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের যন্ত্রনাময় জীবনের জটিলতা’গুলা। এইসব কার্টুন আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক। আর, এই কার্টুনগুলার প্রত্যেকটার মধ্যেই হানযালা নামের যে রেফিউজি বাচ্চাটারে দেখবেন, সে আজকের দিনেও ফিলিস্তিনি জনগনের লড়াইয়ের একটা প্রতীক, যে লড়াইয়ের উদ্দেশ্য ইনসাফ আর আত্ম-নিয়ন্ত্রনের অধিকার।   

হানযালার স্রষ্টা নাজি আল-আলী

নাজি আল-আলি লেখছেন: “হানযালা নামের বাচ্চাটা আমার সিগনেচার, আমি যেখানেই যাই সবাই আমার কাছে তারে নিয়া প্রশ্ন করে। গাল্‌ফ-এ বসে আমি এই বাচ্চাটারে জন্ম দিছি এবং জনগনের সামনে তারে উপস্থাপন করছি। তার নাম হানযালা এবং সে জনগনের কাছে এই ওয়াদা করছে যে, সে নিজের প্রতি সৎ থাকবে। আমি তারে এমন একটা বাচ্চার মতো করে আঁকছি, যে সুন্দর না; তার চুল হেজহগের* লোমের মতো, যে তার কাঁটাকে কাজে লাগায় অস্ত্র হিশাবে। হানযালা এমন কোনো বাচ্চা না যে নাদুশ-নুদুশ, হাসিখুশি, রিলাক্সড কিংবা আদরের দুলাল। সে খালিপায়ে হাঁটে, রেফিউজি ক্যাম্পের বাচ্চারা যেমন হয়। এবং সে একটা আইকন, যে আমাকে ভুল করা থেকে আটকায়। যদিও নেচারের দিক দিয়ে সে রাফ, কিন্তু তার গা থেকে এম্বারের গন্ধ আসে। সে তার দুই হাতকে শরীরের পেছন দিকে নিয়ে যুক্ত করে, যেটা তার প্রত্যাখ্যানের সিম্বল। সে আমাদের সামনে আমেরিকান পন্থায় বাতলানো সমাধানগুলা প্রত্যাখ্যান করে। 

হানযালা দশ বছর বয়সী হয়ে জন্মায়, এবং তার বয়স চিরকাল দশ বছর থাকবে। এই বয়সেই আমি আমার স্বদেশ ত্যাগ করি, আর যেদিন হানযালা ফিরবে সেদিনও তার বয়স থাকবে দশ বছর, এবং এরপর সে আবার বড় হওয়া শুরু করবে। প্রকৃতির নিয়ম তার ওপর খাটে না। সে ইউনিক। সবকিছু আবারও স্বাভাবিক হবে যেদিন স্বদেশভূমি ফিরে আসবে।

আমি তাকে গরিব মানুষের সামনে প্রেজেন্ট করছি। এবং তার নাম রাখছি হানযালা, তিক্ততার সিম্বল** হিশাবে। শুরুতে সে একটা ফিলিস্তিনি শিশু ছিল, কিন্তু তার সচেতনতা সময়ের সাথে বেড়ে ওঠে, প্রথমে জাতীয় পর্যায় এবং তারপর বৈশ্বিক ও মানবিক পর্যায়ে পৌঁছায়। সে একটা সিম্পল বাচ্চা হইলেও সে টাফ, এবং এ কারণে মানুষেরা তাকে আপন করে নেয়, আর ভাবে সে তাদের সচেতনতাকে প্রতিনিধিত্ব করে।”


ফুটনোট :

১। হেজহগ, hedgehog – সজারুজাতীয় প্রাণিবিশেষ

২। হানযাল নামের গাছ থেকে হানযালা নামের জন্ম। এই গাছের ফল তিতা, কেটে ফেলা হইলে আবার গজাইতে থাকে, আর শেকড় থাকে অনেক গভীরে। 


নাজি আল-আলীর আঁকা কয়েকটি হানযালা কার্টুন


লাবিব ওয়াহিদ

কবি, অনুবাদক

শেয়ার