ইচক তাঁর নিজের ননসেন্স কবিতাগুলি গোছাতে গোছাতে নবীন কবি হিজলকে বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত বেঁচে থাকলে আমাকে মাথায় তুলে রাখতেন।
হায়! তিনি আজ নেই।
আমি এই কবিতাগুলি
স্বর্গে তাঁর জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
হায় হিজল! মহাকবি মাইকেল কি স্বর্গে বিশ্বাস করতেন?
হিজল: বিশ্বাস না করলেও, উৎকৃষ্ট সুরা সম্ভবত সমঝদার মহাকবিকে বহুকাল আগেই স্বর্গের সবচেয়ে মনোরম স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে।
মাইকেল আমাদেরও স্বাগত জানাবেন, সমঝদার হিসেবে।
ইচক: মনে হয় ভাইভা নেবেন।
‘মেঘনাদ বধ’ কাব্য মুখস্থ রাখতে পারলে তিনি আমাদের ফেলতে পারবেন না।
হিজল: আন্নহম ইচক, আপনি এক কিংবদন্তি, শাহবাগওয়ালা! তিনি আপনাকে ফেলতে পারবেন না, আমরাও আপনার সাথে যাব স্বর্গে, মাইকেল সনে।
ইচক: সেসবের হিসেব মাইকেল করবেন না।
তিনি বলবেন, শোনাও তোমার কবিতা।
আমি কবিতা শোনাব।
অশ্রুঅন্ত বধূ
মূলত সৌন্দর্যে মুগ্ধ এই সে কন্যা যাকে খুঁজেছি অন্তরে নিরুদ্ভব একান্তি অনুদ্ভব সকান্তি সচলা মোহমনোমুগ্ধকর সহস্র শতাব্দির বিনম্র অভগ্ন তপস্যার সাতি শতুদ্র আলাম্পনার জ্যোতিস্তব্ধ উপ্সার সানন্দি অপ্সরা অনাকাঙ্ক্ষার ভৌত প্রতিলাপে জগস্যার কেন কার্তি অকত্যাপার্তি রাতবহুবভ কেমচন্যার রত্রুপর পারক্তির বত্রুপর্ব রহস্যের সমীক্ষার শত্রুপঞ্চ জীবনের অশ্রুঅন্ত বধূ।
কবিতা শুনে মাইকেল জিজ্ঞেস করবেন, কোন ভাষায় লেখা কবিতা?
ইচক-এর নিজ ভাষায় লেখা শুনে মাইকেল বলবেন, গুলতানি মারার জায়গা পাও না! অনেক সংস্কৃত ও তদ্ভব শব্দ আত্মসাৎ করে নিজের বলে চালাচ্ছ! ভাষা কোনো মানুষ একা একা বানাতে পারে না।
ভাগ হিয়াছে। কে আছ, এদের বের করে দাও।
মাইকেল ইচকদের কোনো কথা আর কানেই নেন না। পৃথিবী যে মিথ্যুক ও প্রবঞ্চকে একদম ভরে গেছে, এমন গুজবে এতদিন কান না দিলেও, এখন বিশ্বাস করে ফেলেন।
পাশেই রবীন্দ্রনাথ বসে আনমনে চিরতার রস পান করছিলেন।
মাইকেল তাঁকে বলেন, সুরা পানই যদি না করবা, কী হেতু তুমি স্বর্গে আগমন করলা?
রবীন্দ্রনাথ বললেন, আপনার উষ্ণ সাহচর্যের লোভে।
ওদের তাড়িয়ে দিয়ে ভালই করেছেন। বিশেষ করে ওই নাড়ুটা…
মাইকেল বললেন, ওর কবিতাটা জম্পেশ ছিল, বলো তো কী ছন্দে লেখা ছিল কবিতাখানা! নেশার ঘোরে ওদের তাড়িয়ে দিলাম। তুমি তো নেশা করোনি, আমাকে থামাতে পারতে…
রবি বললেন, কারো কাছে কখনও ওর নিন্দা করিনি, চাইনি নিজেকে ছোট করতে। বাইরে বাইরে ওর প্রশংসাই করেছি। শুনেছিলাম আমার গান ও বিকৃত করে গায়।
বিশ্বাস করিনি।
আজ স্বর্গে ঢুকবার সময় যখন বিকৃত স্বরে আমার গান গাইছিল, তখন বিশ্বাস করলাম, নাড়ুটা সবই পারে। ও আপনার হাতে ন্যায্য শাস্তি পেয়েছে। পাবেই তো, এমনকি ইংরেজ বেটারা আপনার নলেজের নীচে চাপা পড়ে গেছে মারা। এই নাড়ু ইচক না ফিচক মস্তিষ্ক-প্রসূত ভাষা আপনার কাছে প্রকাশ করতে গিয়ে ওর সব জাড়িজুড়ি ফাঁস করে দিতে বাধ্য হলো…
মাইকেল বললেন, তোমার ঈর্ষা দেখে মনে হচ্ছে ওর পেটে সত্যিই কিছু বিদ্যে আছে। বিদ্যেসাগর মশাই, আপনি তো আর নেশা করেন নাই, যান না বের হয়ে ইচক ও ওর দলবলকে ডেকে আনুন। আমি ওদের পান করাব আর করাব, ওরা খুশি হয়ে ওদের পেটে থাকা সব বিদ্যে আমার সামনে ঝেড়ে ফেলতে বাধ্য হবে। তখন স্বর্গ ও মর্ত্যের সকল শাস্ত্র মন্থন করে এমন এক মহামহাকাব্য আমি লিখে ফেলব যে ধন্যধন্য করে স্বর্গের সব অপ্সরা আমার পায়ে লুটিয়ে পড়বে। কী! এ-কথা শুনে মুখ তোমার শুকিয়ে যাচ্ছে! ভাল ছেলে রবি!!! তুমি তো এসবের মাজেজা বুঝবে না… হা হা হা।
০৩ অক্টোবর ২০২৩
ইচক দুয়েন্দে
ইচক দুয়েন্দে-এর জন্ম ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে। পিতার কর্মসূত্রে শৈশব ও কৈশোরে থেকেছেন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়।
তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় পদ্মাপাড়ে অবস্থিত রাজশাহী নগরীতে কেটেছে।
কৃষি খামার পরিচালক, গ্রন্থ প্রকাশক, সম্পাদক, প্রুফরিডার, অনুবাদক ও ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন।
প্রকাশিত বই: টিয়াদুর (মহাগপ্প), লালঘর (বড় গল্প) এবং We Are Not Lovers (ইংরেজিতে রচিত উপন্যাস)।