সাম্যের স্বাধীন কবিতা সম্পর্কে কয়েকটা কথা ।। সৈকত দে

12631557_1002835219759407_8248638940889541357_nবিগত রাইফেলের জন্য সমবেদনা বইটি পড়েছি খুব স্থির হয়ে কেননা এই কবির প্রথম কবিতার  বই সম্পর্কে উচ্চাশা আছে আমার। সাম্য রাইয়ান আমার পছন্দের মানুষ। তাঁর দ্রোহ, সম্মিলিত প্রকাশনা বাঙ্ময় এবং নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ‘বিন্দু’ ছোটো কাগজটি আমাকে টানে। তাঁর সুবিমল মিশ্র সম্পর্কিত গদ্যের বইটি আমি গত বছর পড়েছিলাম। আরেকটু বিশদ হতে পারতো কাজটা, এই কথা আমি তাঁকে জানিয়েওছি। মূলত, দার্শনিকতা আর চর্চার জায়গা থেকে সুবিমলের প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার ধারণা আমাকে অনেক বছর ধরেই প্রাণিত করে এবং সাম্যের লেখা ও যাপনের ইতিহাসে যা তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্ত করেন আমার ভালো লাগে, এতোটাই যে ‘কমরেড’ ডাকতে ইচ্ছে করে।পুরস্কারমনস্কতা থেকে তাঁর কবিতাগুলোও অনেক দূরবর্তী।

প্রথম কবিতা বইয়ের অনেক কবিতা বিমূর্ত।তা সত্ত্বেও কবিতার আন্তরতাপ টের পাওয়া যায়।আমাকে যদি এক বাক্যে বলতে বলা হয়,সামগ্রিকভাবে বইটি আমার ভালো লাগেনি।এটা নিছকই ব্যক্তি সৈকত দের সৎ অভিমত।আমাকে যারা জানেন তারা বুঝবেন এ কথা ‘উদ্দেশ্য’হীন। এই অভিমতটিকে খুব বেশি জরুরি মনে করার কারণ নেই।

শাদা প্রজাপতি- নামের কবিতাটা একটা সম্পূর্ণ কবিতা।’বহুদূর মাঠ পেরিয়ে মেয়েটা জ্বলন্ত মোমবাতি’ হয়ে যাবে’- এই ধরণের বেশ কয়েকটি বাক্য আছে, যা কিনা মনের অনেক ভেতরে এমন কিছু অনুভূতি তৈরি করে যার রিভিউ হয় না,যেমন- ‘বাস্কেট,বোকা বলের সহোদর’ বা ‘জীবনকে মনে হয় ছায়াশীতল মিউজিয়াম’।

বলে রাখা ভালো,এইবার বাংলা একাডেমি বইমেলা বর্জনের সিদ্ধান্তের জায়গা থেকে আমি বইমেলা যাইনি (এবং পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে কোনোদিন যাবো না। ফলে সাম্য রাইয়ানের বইটি আমি পিডিএফ আকারে পড়েই এই মন্তব্যটুকু করেছি,সুযোগমত বইটি সংগ্রহ করে আরেকবার পাঠের ইচ্ছে থাকলো। কেননা, কবিতা রচনার মুলে কবির যে সততাটুকু আছে তা খানিক বিরল বটে।

 

‘বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা’ বই থেকে তিনটি কবিতা:

মহাকোলাহল

পূর্বরাতের ভয়াবহ মৃত্যুভাবনা পকেটে নিয়ে ঘুরছিলাম রাতে। দেখি, মানুষের কতো বিচিত্র জীবন; সানাই বাজাচ্ছে বিয়ের। বলুন তো, জীবনের ফলাফল কী? টোপর পরে বন্ধুদের সাথে একটা ছেলে হাসছে। টোপর পরে বন্ধুদের সাথে একটা মেয়ে কাঁদছে। বৃক্ষহীনতার ফলাফল জানা আছে আপনার? আমি মাতাল হলেই যতো দোষ! এতোগুলো কাগজের পিঠে চেপে বসেছি তো বাড়ি যাবো বলেই। আমি কি তুচ্ছ ফড়িঙ? কোথাও কোনো অন্ধকার নেই কেন এতো রাতেও বুঝিনা কী যে হলো মানুষগুলোর। পথে পথে পথঘাটে কোনো তীব্র নারীগাছ নেই কেন? আমার খুব দৌড়াতে ইচ্ছে করে। মাথায় ইতোমধ্যে দৌড় শুরু হয়েছে, শিরা-উপশিরা পাগল হয়ে যাচ্ছে; আমি স্থির হচ্ছি; এভরিওয়ান ইজ আ ক্রিমিন্যাল! কতো বৈধ অবৈধ প্যাকেট-বোতল শূন্য থেকে ভেসে শূন্যে চলে যাচ্ছে। আমার যেন কাকে ডাকতে ইচ্ছে করছে গোপনে। মুঠোভর্তি তেঁতুল আর নুন নিয়ে আমার যেন কোথায় যেতে ইচ্ছে করছে! কেন আমার আবার জন্ম হলো পৃথিবীতে, কেউ কি জানে? তোমার বাড়ি তো বহুদূর— তবে আপেলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে কোত্থেকে? তুমি কি আমার পাশে — আছো — কাছাকাছি কোথাও, বৃষ্টির আড়ালে। এই দিন তো পুরোটাই উষ্ণ ছিলো আজ, কেন এভাবে বৃষ্টি এলো?

 

বৃষ্টিগন্ধা

হাতের তালুতে সহজ বেদনা লিখি;
লিখে রাখি ভারাক্রান্ত মন। সত্য শ্রী
জেনেও কেউ তো মুখ লুকিয়ে বাড়ি ফেরে,
যারা শুকনো বৃক্ষের মতো নির্বিকার
নির্লিপ্ত হাতঘড়ি। কোথায় জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিন
অস্ফুট কণ্ঠস্বর! কাছে আছি। যতো হয়।
অনেক ছোবল লুকিয়ে হাতের তালুতে রেখে
হাসিমুখ এঁকে হেটে যাই বৃষ্টিগন্ধা ঠিকানায়!

 

হরিণীর নাভি

বোবারা তাক করে আছে নিঃসঙ্গ হাসিফল।
জারুল বৃক্ষ জানে
করতলে তপ্ত হচ্ছে বালু
মরহুম সূর্যবতীর চোখে ঘাই হরিণীর নাভি

পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা সূর্য
ক্ষিপ্ত হলে রোদের তীব্রতা বাড়ে!
নাভির ভেতরে তার লুকায়িত বন
বেলিফুলের ঘ্রাণ, মুখরিত সকালে

শেয়ার