সাকিয়া সিরিজ ।। জয়ন্ত জিল্লু

                যেভাবে সাকিয়া সিরিজ লেখা হলো

এক.

কবিতা নির্দিষ্ট দিকে দৃষ্টি তাক করানোর মতো কারবার। কবির কাজ ওই তাক করানো পর্যন্তই শেষমেষ। দৃষ্টি কতটুকু ভেদ করে দ্রষ্টব্যে, তা কবির জানার কথা নয়। কবি পুকুরে ঢিল ছোঁড়েন, তারপর ঢেউ কূলে আছড়িয়ে পড়ল কিনা, তাও কবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ না। বরং আন্দোলনটাই গুরুত্বপূর্ণ। কবির কাজই আবহ তৈরি করা, চূড়ান্ত কিছু তৈরি করা নয়। কবিতাকে আমি একটি চমকপ্রদ বিষয় হিসেবে দেখি। হঠাৎ চমকে যাওয়া কেবল কবিতাতেই সম্ভব। এই সম্ভব বিষয়টা তৈরি হয় শব্দের ব্যঞ্জনা ও প্রণোদনা থেকে। শব্দ তো সবার হাতেই এক, কিন্তু ভিন্ন হয়ে ধরা দেয় ব্যঞ্জনায়। তেমনি একটি শব্দ ভালোবাসা। হিসেব করে দেখলে এই শব্দটার বেশ ওজন। যদিও আদিতে মনে হতে পারে শব্দটা হালকা চালের, বাটি চালানের মতো ফুঁ দিলেই হবে; কিন্তু সহজাত এই শব্দটাকে মহার্ঘ্য করে তোলা কঠিন বৈকি! এই কথার অবতারণার পেছনের দায়টা হচ্ছে—এবার আমার কাব্যগ্রন্থটা ওই শব্দ ভালোবাসা নিয়ে।

 

দুই.

সাকিয়া সিরিজ এর কবিতাগুলো প্রেমের, ভালোবাসার কিংবা বিরহের। বইটা একেবারে নির্মোহ গোত্রের অনুভূতির নির্যাস। আমি কবিতাগুলোকে একটি মেটাফিজিক্যাল ভ্রমণ হিসেবে দেখি। সাকিয়া এখানে চরিত্র, উপলক্ষ্য। একটি চরিত্র দাঁড় করানো কঠিন কাজ, তাও কবিতায়। এই কাজটা আমি করেছি। প্রেমের একটা চরিত্র আমি এতে আবিষ্কার করেছি। বিষয়টা শুরুতে আমাকে ধাক্কা দিয়েছিল। সেই ধাক্কার অনুরণন-ই মূলত এই সাকিয়া সিরিজ। কবিতাগুলো ঘোরের মধ্যে লেখা, জোর করে কবিতা করে তোলার কোনো প্রয়াস এতে নেই! তাই কবিতাগুলো নিতান্ত সাদামাটা ও নির্মোহ। ছন্দের কবিতাগুলোতে যথেষ্ট যতিলোপ (Elison of pause) ও অসমপার্বিক করা হয়েছে জ্ঞাতসারে। এ-ক্ষেত্রে ছন্দের বাইরে কবিতা হয়ে উঠল কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

 

তিন.

একটা প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে সবাই করে, সাকিয়া কে? এই প্রশ্নটার উত্তর কবিতায় আছে। তাই ব্যক্তিগত উত্তর এড়িয়ে গেলাম। আমি মনে করি না, এই প্রশ্নটার একটা জুৎসই উত্তর জরুরি। বরং জরুরি বিষয় হচ্ছে সাকিয়া সিরিজের কবিতা হয়ে ওঠা। কোনো কারণে কবিতা হয়ে-না-ঠলে তার ব্যর্থতার দায় কবিকে বয়ে বেড়াতে হবে। আমি কবি হিসেবে প্রচণ্ড কষ্ট, কিংবা কবিতা লিখতে না-পারার যন্ত্রণা বয়ে বেড়াই; সাকিয়া সিরিজও একটা যন্ত্রণা। বইটা প্রকাশ হয়ে গেল, অথচ এখনও আমার মনে হয়, বইটাতে একটাও কবিতা নেই!

 

চার.

সাকিয়া সিরিজ হাতে লেখা, নিজের হাতের একটা মহাফেজখানা তৈরি হলো, এটা মনে করে নিজের একটা আলাদা সুখ আছে। কিন্তু ভয়ও কম না। ভুল-ত্রুটি থাকাটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয় হবে বইতে। তার উপর সবগুলো কবিতা এক বসাতে লেখা। প্রথম পাণ্ডুলিপি হারানোর পর এই সিরিজের কবিতাগুলো নন-এডিটেড ফরম্যাটে চলে গিয়েছিল। মূল বইতে সেই আদি ভার্সনটাই রাখা হয়েছে। কেন না, আমি খেয়াল করে দেখলাম—এ কবিতাগুলোর মধ্যে একটা ইনোসেন্স আছে। সেটাকে আর নষ্ট করলাম না।

 

পাঁচ.

কৃতজ্ঞতা অনেককে জানাতে হয়। বিশেষত কবি স্বরূপ সুপান্থকে। আমি পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলার পর ভরসাও হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু স্বরূপ দা আমাকে অভয় দিলেন। তাই সাকিয়া সিরিজে এগিয়ে এলাম। এর বাইরে কবি মুয়িন পারভেজ, কবি রুবেল সরকার, বন্ধু সাইফুল হক ও বন্ধু মখছুছ চৌধুরী আমাকে পাণ্ডুলিপি গোছাতে বেশ সাহায্য করেছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

 

ছয়.

প্রেমের কবিতা লেখা একটা কঠিন কাজ। আমি ঠিক কঠিন কাজটাই করলাম। কবিতা তো অনেকভাবে হয়। সাকিয়া সিরিজ কোনো-না-কোনোভাবে কবিতা হয়ে উঠুক। এইটুকু হয়ত চাওয়া। এই তো!

                — জয়ন্ত জিল্লু



                    সাকিয়া সিরিজ থেকে ৫টি কবিতা

 

Sakia-Series-1

Sakia-Series-2

Sakia-Series-3

Sakia-Series-4

Sakia-Series-5

 



সাকিয়া সিরিজ

প্রকাশক: তৃতীয় চোখ

প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত

মূল্য: ১৫০ টাকা

শেয়ার