ডাক্তার বন্ধুর সাথে বসে গল্প করছিলাম। জিজ্ঞেস করছিলাম চিকিৎসকরা রোগীর আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঠিক কতটুকু ঘনিষ্ঠ হয়? বন্ধু জানালো, খুব বেশি হয় না। তবে তাদের মাঝে একটা সম্পর্ক থাকে যাতে মনে হয় ডাক্তার খুব আন্তরিক এবং তার ফলে চিকিৎসকের প্রতি রোগীর স্বজনদের আস্থা বাড়ে। ভাবছেন সিনেমার কথা বলতে গিয়ে এসব কেন বলছি? বলছি এ কারণে যে, কখনো কখনো সিনেমাতেও চিকিৎসকদের গল্প থাকে। আর এও থাকে রোগীর স্বজনদের গল্প। আর হাসপাতাল মর্গ এসবের কথা তো আমরা হর হামেসাই দেখি। এমনই এক ছবি সম্প্রতি আমার দেখা হলো। বলতে গেলে এক বসায় হুট কোনও বিরতি না দিয়েই দেখা শেষ করে ফেললাম।
এক বসায় দেখার অবশ্য বেশ কয়েকটি কারণ আছে। তার মধ্যে একটি হলো নাসিরুদ্দিন শাহ। হ্যা, নাসিরুদ্দিনের মতো অভিনয় শিল্পী যেখানে থাকে তা ভালো কিছুই হয় সাধারণত। তো এই ছবিটা কেমন? যেহেতু বলিউডি ছবির চেনা মসলাদার কোনও ছবি এইটা না, তাই এই ছবি কিছুটা ভিন্ন রকম হওয়ারই কথা। সে কারণেই একটু মনযোগ দেয়া যেতে পারে ছবিটায়। নাসিরুদ্দিন ছাড়া যদি হিসেব করি, তাহলে খোঁজ নিতে পারি এই ছবিতে নায়ক কে? হ্যা এইটা একটা ভালো প্রশ্ন বটে। তবে এইখানে ঠিক এই উত্তর আপনি পাবেন না। ছবি দেখতে দেখতে আপনার মনে হবে এই ছবির আসলে নায়ক হচ্ছে একটা পেশা। আরো গভীরে গিয়ে যদি দেখেন তাহলে বলা যায় সময়। যদিও সময় সব সময়ই কেন্দ্রীয় চরিত্র, কেউ তা বুঝে আর কেউ বুঝে না। আর পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে এই ছবিতে নাসিরুদ্দিন শাহ্’র পাশাপাশি আছেন কালকি কোচি। কালকি’র সাথে যেহেতু নাসিরুদ্দিনের বয়সেরও বিশাল তফাৎ, একই সাথে যেহেতু ছবির শিরোনামটাও অনেকটাই রোমান্টিক ধাঁচের তাই ছবি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
বেশ কিছুদিন আগে এমনই আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো ছবির ট্রেলার দেখে। ছবির নাম ‘ওয়েটিং’। বাংলায় যাকে সরাসরি বলে দেয়া যায় ‘অপেক্ষা’। আসলে অপেক্ষার চেয়ে অপেক্ষা কখন শেষ হবে তাই এই ছবির অন্যতম বিষয়ও।
ছবির গল্পকে এক কথায় বলা যায় একটি হাসপাতালের ছোট্ট অংশ। যা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত স্বল্পোন্নত ও অনুন্নত হাসপাতালগুলোর প্রায় নিয়মিত একটি গল্পের মতো। যেখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী চিকিৎসকরা অধিকাংশই মুখে একটা মেকি ভাব নিয়ে বসে থাকেন। আর নিজেদের এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে চান না কখনোই। যার পক্ষে একজন সিনিয়ার চিকিৎসক তার জুনিয়ারকে বলে থাকেন- a little bit of faking will make you do yourjob better… আমরা এমন এক মেকি জগতে বাস করি। যেখানে সর্বোচ্চ আস্থার স্থল চিকিৎসরাই মেকি, সেখানে আমরা তখন হাওয়ার দিকে ছুটি। ভাবি হয়ত অন্য কোথাও অন্য কিছু পেয়ে যাবো। তাই একজন নিরীশ্বরবাদ মানুষকেও দেখা যায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। সে যদিও জানে এবং মানে Faith is a great coping device.
এইগুলো ছবি নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় বলেই বলা। নইলে একজন অবসরপ্রাপ্ত নিঃসঙ্গ অধ্যাপকের চরিত্রে অভিনয় করা নাসিরুদ্দিন শাহ্ কে নিয়েই গল্প করা যেতো। যেমন এখনো গল্প করা যায় বলিউডের তথাকথিত ফর্মুলা ধারার ছবির বাইরের এই রকম ছবি নিয়ে কথা বলাই যায়। বরং তা’ই স্বাভাবিক।
এইসব স্বাভাবিক গল্পের মাঝে এবার কিছু তথ্য দেয়া যেতে পারে। ছবিটা ভারতের কোচি প্রদেশে টানা ৩০ দিন শ্যুট করে শেষ করে দেয়া হইছে। ছবির বাজেটও ছিলো তুলনামূলক কম। দুবাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয় ছবিটি। ছবি মুক্তির আগে কোনও একটি টিভি সাক্ষাৎকারে পরিচালক অনু মেনন জানিয়েছিলেন ছবিটি তার খুব কাছ থেকে দেখা একটা অভিজ্ঞতার আলোকে নির্মিত। ফলে বুঝতেই পারছেন বাস্তবতা এর চেয়ে নাটকীয়। কারণ আপনি জানেন, যেসব নাটক আপনি কখনো কল্পনাও করতে পারেন না বাস্তব তারচেয়ে মাঝে মাঝে নির্মম ও সত্য।
এইসব পার্শ্ব চরিত্রের মতো করে মূল চরিত্রের কথা বলতে গিয়ে ভুলেই গেছি যে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করা কিছু মানুষ ও তাদের চরিত্রও চমৎকার ফুটে উঠেছে। কালকি যে ভালো অভিনেত্রী তা এখানে আবারো প্রমাণিত। যা এতক্ষণ কোনও ছুতো ধরেই বলতে পারছিলাম না।