সনেট সংখ্যা | হিজল জোবায়ের’র কবিতা

ন হন্যতে
 
রৌদ্রঝলসিত চারণভূমির ঘাসে
নগ্ন তুমি- শুয়ে যেন খোলা তলোয়ার,
ফুল ভ্রমে প্রজাপতি নরম বাতাসে
ধীর উড্ডয়নে নামে ও বুকে তোমার
 
গোপন নিশানাগুলো চিনে নিতে চাই
কোথায় লবণ-খাড়ি, কোথায় আগুন,
সুখের মতন কোনো ব্যাধি আর নাই;
সুখ, তুমি ব্যাধি হও- কুন ফায়া কুন
 
তুঁতপোকা, তুমি হও নরম রেশম-
গভীর দিনের শেষে বিষাদ-সুন্দর;
ন হন্যতে, ন হন্যতে, অয়ি বিহঙ্গম,
আমি হই বিষে নীল, কী ভীষণ জ্বর!
 
যেদিকে তাকাই- দেখি, প্রিয় সেই মুখ
আমার হয়েছে সখি, সুখের অসুখ।
 
 
 
কতো দূর যাওয়া যাবে
 
কোথায় তোমাকে পাবো, কতো দূরে যেতে হবে আর?
অরণ্য-প্রান্তের হাওয়া থির হয়ে আছে যেই দেশে,
দাবানলে পুড়ে গেছে আদিগন্ত কাছিম-পাহাড়,
সেই দেশে তুমি গাও, দগ্ধ-ডানা পাখিদের শিসে?
 
কোথায় চলেছ পাখি, কতো দূর বলো যাওয়া যায়?
যে দিকেই যাও তুমি শেষাবধি পশ্চিমেই যাওয়া-
গোধূলিসূর্যের নিচে রক্তলাল কসাইখানায়,
তোমার লহুর নুন চেটে খায় রাক্ষুসে হাওয়া।
 
আমার যাবার নাই, লুট হলো মরু-কারাভান
ভাঙা লণ্ঠনের মতো উঠে আসে ক্ষীণপ্রভ চাঁদ,
চক্রব্যূহে নিনাদিত অন্তহীন লোহার বাগান,
ডাকে ঘৌল, বেড় দিয়ে ধরে মেঘ, ছায়ার গরাদ।
 
আগুন-হাওয়ার লীলা শেষ হলো, কিছু আর নাই,
মায়া-মারীচের বনে ছাই ওড়ে, ওড়ে শুধু ছাই।
 
 
 
বেনামী
 
এ আমার নাম আমি বলবো না শোনো,
বলবো না কভু আমি কী আমার নাম,
বলবো না বলবো না কোনোদিনও জেনো
পিতা-মাতা, কোথা বাস, কেনবা এলাম।
 
আমি কী একলা নাকি! কালের মান্দাস-
আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে এসেছে এখানে,
আমার পেছনে আছে সারিবদ্ধ লাশ;
হত্যা যারা করে গেছে শুধু তারা জানে-
কী তাদের নামধাম, কিবা পরিচয়,
কোন অপরাধে তারা হয়ে গেছে ফৌত,
খোদার বাদশাহী আর নাই দুনিয়ায়
মানুষই সেজেছে আজ মালেকুল মউত
 
এ আমার নাম নাই, বেওয়ারিশ লাশ,
কবর মেলেনি তাও করিনি বাহাস।
 
 
 
কুহক
 
তোমার সমুদ্রে আজো ভাসে মবিডিক
হার্ট ক্রেন ফিরে এসো, হায় হার্ট ক্রেন
পিঠে জ্বলে ফসফরাস আলোরও অধিক
রাতের সাগরে একা— জন্মান্ধ সারেঙ
 
তোমার লবণ-স্মৃতি, অশ্রু-অহিফেন
ডুবন্ত শরীরে জমে ওঠা আকরিক
বিপুল তরঙ্গে ভেঙে টাবু ও টোটেম
এসো হেম-প্রত্নদেহী, এসো আক্ষরিক!
 
সমুদ্রে ঝড়ের মতো মবিডিক ভাসে
রাতের চাঁদের চেয়ে অত্যুজ্জ্বল, সাদা!
তুমিও কুহক নাকি হার্ট ক্রেন, ধাঁধাঁ?
পানির ফোয়ারা ছুঁড়ে দিয়েছো আকাশে?
 
চেয়ে দেখি ভোজবাজি, পলকে উধাও
হার্ট ক্রেন, মবিডিক যাও ফিরে যাও।
 
 
 
বেহাগ
 
উড়ে যায় মাঠ-পোড়া প্রান্তরের ঘাস
ধূমল বাতাসে ভাসা তীব্র হরিয়াল;
শ্রান্ত, আনত ঘোড়ার মতন আকাশ—
থেকে নামো, হে মন্থর সোনালী বিকাল
 
গভীর বনের পথে দ্বিধাতে আড়াল
অদেখার সাথে দেখা হলো অনায়াস,
কিছু কথা, নীরবতা, বাকিটা খেয়াল
ঝিম-ধরা স্বরভাঙা পাখির কোরাস
 
গারো পাহাড়ের খরা-কবলিত গ্রামে
আমার বিপন্ন মুখ হলুদ পাতায়—
ছেয়ে গেছে; অস্তরাগ— সন্ধ্যা নামে ক্রমে
আগুন জ্বালিয়ে যায় নিদাঘ চিতায়
বিষমোক্ষণের দিনে— বাতাসে বেহাগ

হারিয়েছি বিষদাঁত, ছোবলের দাগ।


হিজল জোবায়ের

প্রকাশিত কবিতার বই :
আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল (২০১৫, চৈতন্য)

ধুলা পবনের দেশ (২০১৮, মেঘ)


শেয়ার