সনেট সংখ্যা | অবিরাম কাটছো আশ্বাস | আশরাফ জুয়েল

অবিরাম কাটছো আশ্বাস
 
বিদীর্ণ মেঘের মুখে খসে পড়া বেদনার ছুরি,
আঘাতে আঘাতে মেঘ নিখিলের দিকে ছুঁড়ে পাপ।
অনলের বাহু থেকে ঝরে পড়ে চৈত্রের আভাস
জন্মান্ধের দীর্ঘশ্বাসে কেনো কাঁদে চোখের স্বভাব?
 
জানে না একথা বৃষ্টি, জানে শুধু মফস্বলী মেঘ
কীভাবে ঝরতে হয়, ঝরা মেঘ পোড়ে কোন ঘ্রাণে।
একাকীত্বের আগুনে কেনো পোড়ে হৃদয়ের সুতো?
কেনো মেঘ ঝরে পড়ে? কেনো জ্বালা ধরায় এ প্রাণে?
 
বর্ষার সন্ধ্যের মতো কাঁদে প্রাণ রক্তপাতের জের,
সন্দেহের বিষমাখা তীরে ছিন্নভিন্ন জলের দেহ।
সে মাটির চাহিদায় ঝরে মেঘ একাকী নির্জনে,
জলেরও আছে আয়ু, আছে ক্ষোভ অভিমান স্নেহ।
 
ছুরিতে কাটছো জল, অবিরাম কাটছো আশ্বাস,
জানো না তোমার বুকে হচ্ছে মায়াবী মেঘের চাষ।
 
 
 
যা দেয়নি ঈশ্বর, যিশু বা শিশু তা-ও দিতে পারে
 
অকস্মাৎ পৃথিবীর হাত ধরে নেমে এলো প্রেম,
ইন্দ্রধনু মায়া চোখে জমে আছে রতিক্লান্ত হেম।
বিস্মৃত প্রেমিক মুহূর্তের ভুলে, আমি এক শিশু,
জোয়ারের পায়ে চড়ে ফিরে আসে প্রাকৃতিক যিশু।
 
উচ্ছ্বসিত ঢেউয়ের তোড়ে ভিজে নগ্ন তটভূমি,
অরুণিমার এস্রাজে মনোগ্রাহী নূপুর তুমি।
ওষ্ঠপুটে রিনিঝিনি অরণ্যানী আঁকা দেহমন,
ঈশ্বর দেখিনি, দেখিনি ঈশ্বরের প্রেমকানন!
 
মায়ারতি বিভাবরী যাদুটোনা স্বচ্ছ অবয়ব,
অন্ধকারের সাগরে ভাসে ফসফরাসের শব।
দূরের ঢেউ ছুঁয়েছে আকাশ, খেলছে এক শিশু,
আমি নই আমি নই, সাথে তাঁর প্রথাগত যিশু।
 
অন্ধ নৃত্যে প্রেমিকার দিকে আমিতো সর্বসংহারে,
যা দেয়নি ঈশ্বর, যিশু বা শিশু তা-ও দিতে পারে।
 
 
 
জান্নাতুল ফিরদৌস
 
বিশ্বাসের ঘুড়িটা ঐ সরাবন তহুরার ঘোরে,
আকাশ নেই তবুও সুতাহীন নাটাইয়ে ওড়ে।
নেশার ঘুড়িতে হুর! বাতাসের শরীর ছাপিয়ে-
ভাসছি বোরাক হয়ে জান্নাতুল ফিরদৌসের দিকে।
 
যেতে যেতে পথ শেষে সম্ভ্রমের একাকী সঙ্গীতে
বসে আছে চাঁদ একা অন্ধকারে বিভ্রমে সম্বিতে।
সালসাবিলে সেরেছে স্নান রাত্রি, জল ছিপছিপে-
ভাসছি বোরাক হয়ে জান্নাতুল ফিরদৌসের দিকে।
 
তাসনীম, রাহ্বিকের স্বাদে ভাসে নদী স্রোতে ভাসে,
মিশকের, আম্বরের ঘ্রাণ খোঁজে কাকে শয্যা পাশে?
দুধ-মধুর সাগরে দিয়ে ডুব পাপ হয় ফিকে-
ভাসছি বোরাক হয়ে জান্নাতুল ফিরদৌসের দিকে।
 
ভাসছি বোরাক হয়ে জান্নাতুল ফিরদৌসের দিকে।
কোথায় সেই জান্নাত? কোনদিকে সেই ফিরদৌস?
 
 
 
সাদামাটা আদরের ঘ্রাণ
 
চোখের তারাতে অপস্রিয়মাণ রাতের আঁধার,
না লেখা চিঠির ভাঁজে জেগে আছে মুখছবি কার?
জোছনা জোয়ারে হাসে বিলম্বিত চাঁদের আকাশ,
ঠিকানা আড়ালে থাক, মনে আছে তার দূরাভাষ।
 
নেমে আসে রাত একা লুপ্তপ্রায় নদী জলবায়ু-
তোমাকে দেবোই আমি যতটুকু বেঁচে আছে আয়ু।
অচেনা রাতের বুকে ফুটে আছে শিউলির মিথ,
তুমিও আসবে বলো! খোলামেলা রাত বিপরীত।
 
স্রোতের আদরে কেনো হতাশার সুর বেজে চলে
যাবো আমি তার কাছে যূথচারী প্রেমের কৌশলে।
নৌকার নকশা ভুলে লুপ্তপ্রায় নদী তবে তুমি?
শিউলি ফুলের ঠোঁটে এঁকে রাখি ঘর আর ভূমি।
 
তখনো জোছনা শুধু সাদামাটা আদরের ঘ্রাণে,
ফোটাবে নতুন দেহ আমাদের শরীরে ও প্রাণে।
 
 
 
মেঘসংশয়
 
বৃষ্টিস্নাত সকালের খামে পাঠানো মতামতে
ধৃত অভিযোগ হয়ে আছো তুমি হৃদয়ের ক্ষতে।
উচ্চারিত হয় গান সেখানে পাখির মুখে মুখে
শোনাবে তোমাকে সুর-কোলাহল কণ্ঠের অশ্রুতে।
 
বর্ষার কদমঘ্রাণ, ভেজাশ্লোক জড়াবে তোমায়
খুঁজবে তুমিও চিঠি প্রেমিকের মৃত ঠিকানায়।
কোথায় প্রেমিক সেই কোথায় হারানো ডাকঘর?
মেঘের গিটারে ঝরে বৃষ্টি বোঝে না আপনপর।
 
কাঁদবে হৃদয় মন অতর্কিত মেঘের সংশয়ে
ভাবনার ভাঁজেভাঁজে আছো তুমি বিপন্ন-বিস্ময়ে।
পাখিরাও জানে শোক, গ্রহণের সব অনুযোগ,
উড়তে জেনেও থাকে বসে একা হয়ে মনোরোগ।
 
চিঠিও জানে ঠিকানা, ঠিকানাও জানে চিঠি কার,
বর্ষার আগ্রহে করো চাষ তুমি এ কোন আধার!

আশরাফ জুয়েল

প্রকাশিত বই চারটি। কবিতার বই তিনটি, গল্পগ্রন্থ একটি। প্রথম প্রকাশিত বই ২০১৫ সালে, “যুদ্ধ ছাড়া শুদ্ধতা অসম্ভব”। সর্বশেষ প্রকাশিত বই “রাষ্ট্রধারণার বিরুদ্ধে মামলা ও বিবিধ গল্প”

প্রকাশের অপেক্ষায় একটি উপন্যাস এবং একটি গল্পগ্রন্থ।


শেয়ার
সর্বশেষ সংখ্যা