শেখ হাসিনা, অড্রে হেপবার্ন এবং একজন হেলাল হাফিজ | সাক্ষাৎকার: তুসা

ঢাকা:

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক করুণ পথিকের সঙ্গে দেখা। ভাঙা দেয়ালের উপরে বসা একটা পাখির সঙ্গে কি সব বলার চেষ্টা করছেন। দুঃখের অজস্র শ্লোক তার ঝুলিতে ভরা। এগিয়ে যেতেই তিনি ঘুঁরে দাঁড়ালেন। চোখে তার বিষাদের গহীন বিস্তার, দুঃখের নিখুঁত চিত্র তার শরীরে আঁকা। যেন জন্মাবধি তার ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো। এমন দুঃসময়ে তিনি বললেন ‘একদিন কোকিলেরো সুসময় ছিলো, আজ তারা আমার মতোই বেশ দুঃসময়ে আছে।’  নিউজনেক্সটবিডি ডটকম এর সংবাদকর্মী তুহিন সাইফুল কান পেতে শোনার চেষ্টা করলেন চৈত্রাগুনে জ্বলে যাওয়া তার বুকের গেরস্থালি। মন্বন্তরে কেটে যাওয়া রজতজয়ন্তী শেষে আজ থাকলো সেই আলোচনা। যেখানে দুঃখের আরেক নাম হলো হেলাল হাফিজ।


এটা আমার সরল স্বীকারোক্তি। কোনো ভনিতা নেই এখানে। জিগোলো হিসেবে বেশ কয়েক বছর আমি জীবিকা নির্বাহ করেছি।


তুসা: কেমন আছেন?

হেলাল হাফিজ: শারীরিকভাবে তো আমি অসুস্থ। চোখে সমস্যা। এর সাথে আছে শারীরিক কিছু জটিলতা। তবুও ভালোই আছি। দেশের ষোল কোটি লোকের মধ্যে আট কোটি লোকের চেয়ে তো ভালোই আছি। সুখে আছি, স্বচ্ছলতায় আছি। এটাও কম না। আর পড়াশোনা ও লেখালেখিটা ঠিকমতো করতে পারছি না অসুস্থতার কারণে। ভেবেছিলাম এবার বইটা করবোই করবো। তিন বছর ধরে বলছি, আগামীবার বইটা করবোই। কিন্তু মনমতো ম্যানুস্ক্রিপ্ট তৈরি হচ্ছে না। ফলে বইটাও আলোর মুখ দেখছে না। এর মানে এ বইমেলাতেও বইটা আসছে না। আরেকটু সময় লাগবে। গত একটা বছর আমার শুধু অসুখেই কেটেছে। এরই মধ্যে টুকটাক লিখছি। গোটা তিরিশেক কবিতা তো তৈরি হয়েই আছে। আর পঁচিশ তিরিশটা কবিতা হয়ে গেলেই বইটা করে ফেলবো। এটা আগামী একবছরে করবো আরকি। আমার দ্বিতীয় মৌলিক কবিতার বই। 

তুসা: ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ বইয়ে আপনি যে যৌবনের কথা বলেছেন, সেই যৌবনের স্মৃতি কতটা মনে পড়ে? 

হেলাল হাফিজ: হ্যাঁ, মিস করি সে সময়টা। এখন কবিতাগুলো যখন পঠিত হয় বা উদ্ধৃত হয়, তখন তো অতীত দিনের কথা মনে পড়েই। সময়টা তখন ছিল অন্যরকম। এ ভূখণ্ডে তখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা ঘটে। গণ অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পরে দেশ গড়ার যে লড়াই, সবকিছুই মনে পড়ে। সময়টা তখন ছিল স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের বেদনার। দুটোকেই আমি ধরতে চেষ্টা করেছি। প্রকৃত কবির কাজ কিন্তু মানুষকে শুধু স্বপ্ন দেখানো না, স্বপ্নভঙ্গের যে বেদনা সেটাও মানুষকে দেখানো। আর আমার যৌবনের সময়টা নানা কারণে খুব রসালো। আমার বন্ধুভাগ্য ভাল ছিল। বন্ধু বলতে আমি মেয়ে বন্ধু বোঝাচ্ছি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় যখন নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় লিখে ফেললাম, তখন তো রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে গেলাম। মেয়ে বন্ধু পেতে এ জনপ্রিয়তা আমাকে সাহায্য করেছে।

তুসা: অনেকের লেখায় বহু নারীদের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্টতার কথা পড়েছি…

হেলাল হাফিজ: সব নারীবন্ধুদের সাথে আমার সম্পর্ক যে বিছানা পর্যন্ত গড়িয়েছে, তা কিন্তু না। আবার কারো কারো সাথে তা গড়িয়েছে। উভয়ের সম্মতিক্রমে যতদূর আমরা যেতে পেরেছি। আমার কখনো আপত্তি ছিল না।

তুসা: এর আগে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন যে, অবস্থাসম্পন্ন গৃহিনীরা আপনার সঙ্গ পেতে পছন্দ করতেন?

হেলাল হাফিজ: বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকায় তখন আমার অর্থের কিছু অভাব ছিল। তো এটাকে ইংরেজিতে বলে জিগোলো (Gigolo)। খাঁটি বাংলায় বললে পুরুষ পতিতা। সমাজে এটা সবসময়ই ছিল। বিত্তশালী কিছু নারী থাকে, মহিলা থাকে, তারা সংসারও করে। কিন্তু কোনো কারণে হয়তো সুখি না সংসারে, কিংবা সুখি, এরপরও সময় কাটে না। তাদের টাকারও অভাব নাই। তো তারা হচ্ছে একজন কবি বা সেলিব্রেটির সঙ্গ পেতে চায়। তাদের স্বামী হয়তো বিদেশে গিয়েছে, কিংবা শহরেই আছে, কাজে ব্যস্ত। ছেলেমেয়েরাও যার যার কাজে ব্যস্ত। এভাবে একটু সময় কাটানো আরকি। সবক্ষেত্রে এ সম্পর্ক বিছানা পর্যন্তও গড়ায় না। তবে সেটাও দুই-এক ক্ষেত্রে হয়েছে। চা খেয়েছি, দুটো কবিতা শুনিয়েছি, টেবিলের ওপরেই হয়তো দুজনে দুজনের হাত ধরে বসে আছি, গল্প করছি। এটাও তো একটা আনন্দ। নির্মল আনন্দ। এখানে দোষের কিছু নাই। আমার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় চুমো পর্যন্ত গড়িয়েছে। দুই একটা ক্ষেত্রে এটা একেবারে চূড়ান্ত মুহূর্ত পর্যন্ত গেছে। এটা আমার সরল স্বীকারোক্তি। কোনো ভনিতা নেই এখানে। জিগোলো হিসেবে বেশ কয়েক বছর আমি জীবিকা নির্বাহ করেছি। ধরো, বিদায়ের মুহূর্তে একটা খামে করে পনের হাজার টাকা দিয়ে দিল। আজ থেকে পঁচিশ-তিরিশ বছর আগে পনের হাজার টাকা কিন্তু অনেক টাকা। খরচ করার জায়গা নাই। কিন্তু যিনি দিচ্ছেন তার কাছে এটা কোনো টাকাই না। তার দরকার আসলে সঙ্গ। আর এটা হয় কি, একজনের সাথে পরিচয় হলে এ লিংকটা আস্তে আস্তে বাড়ে।

তুসা: আপনার লেখালেখির জীবনে এই নারীদের প্রভাব কতটুকু?

হেলাল হাফিজ: আছে। কিছু কবিতা হয়তো লিখতে পারতাম না এ ঘটনাগুলো না ঘটলে। এদের কাছ থেকে কবিতার রসদ আমি সংগ্রহ করেছি। আবার অর্থের চিন্তাটাও আমাকে করতে হয়নি। একসঙ্গে কয়েকমাস চলার মতো টাকা আমি এক-দুজনের সাথে আড্ডা মেরে পেয়ে গেছি। তাই ওই সময়টাতে আমি লিখেছি। যদিও আমি খুবই কম লিখেছি। একটাই বই লিখেছি। সেটা আমি খুব মমতা দিয়ে লিখেছি। দুর্বল কবিতাও হয়তো আছে, তবু আমি চেষ্টা করেছি, বইটা হাতে নিয়ে যেন পাঠক আমাকে খুঁজে পায়। আমার মমতাটা, আমার কাঙালপনাটা যেন পাঠক খুঁজে পায়।

তুসা: ওই সময়ে যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়, তাদের কারো সঙ্গে কি এখনো যোগাযোগ আছে? 

হেলাল হাফিজ: তারা তো এখন বুড়ো হয়ে গেছে। অনেকেই নানি-দাদি হয়ে গেছে। অনেকে মারাও গেছে। ফলে দেখা হয় না আর। আমি পুরুষ মানুষ হয়েও তো কোথাও যেতে পারি না তেমন। মানে শরীর আর কুলায় না। মেয়েদের শরীর তো আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ তাদেরকে দুটি বা তিনটি মানুষকে জন্ম দিতে হয়। আর নারীর ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেয়া মানে নতুন প্রাণ ফিরে পাওয়া। এতে শরীর নষ্ট হয়। কিন্তু মাতৃত্বের আনন্দে তারা এটা করে আরকি। 

তুসা: আপনাকে ঘিরে হেলেন নামে এক নারীর গল্প শোনা যায়…

হেলাল হাফিজ: হ্যাঁ আছে, আমার কবিতাকে, চিন্তাকে বেশ প্রভাবিত করেছে। সত্যি বলতে কি, আমি ভালোই বাসতাম তাকে! প্রেমের সম্পর্কই ছিল। কিন্তু নানা কারণে শেষ পর্যন্ত এটা পরিণতি লাভ করেনি। আমার প্রথম প্রেম কিন্তু হেলেন নয়। আমার প্রথম প্রেম সবিতা সেন। ওনার প্রেমে প্রথম আমি পড়েছি ফোর কিংবা ফাইভে পড়ার সময়ে। এটা কেমন প্রেম? এ প্রেমটা হচ্ছে, তার মধ্যে আমি আমার মাকে খুঁজে পেয়েছি। আমি যেহেতু খুব অল্প বয়সে মাতৃহীন হই, ফলে সবিতা দিদিকে দেখলেই মনে হতো, উনিই আমার মা। আমার মায়ের কোনো স্মৃতি আমার মস্তিষ্কে ছিল না। যখন আমি বয়োপ্রাপ্ত হলাম, তখন সবিতা দিদিকে নিয়ে আমার মধ্যে দুই ধরনের অনুভূতি তৈরি হতো। একটা তো তার মাতৃরূপ আছেই। আরেকটা তাকে নিয়ে একটু অন্যভাবে চিন্তা করা আরকি। ওইসময়ে একমুহূর্তে তাকে ভাবতাম মা, পরমুহূর্তেই ভাবতাম প্রেমিকা। সবিতা দিদিকে নিয়ে এ রকম একটা মিশ্র অনুভূতি আমার জীবনে ছিল। কয়েক বছর আগে উনি  মারা গেছেন। কিন্তু তার প্রতি আমার ভালোবাসাটা সবসময়ই ছিল।


না। হেলাল হাফিজ হয়ে আর জন্মাতে চাই না। এজন্ম তো হয়েই গেছে। আমার বরং খুব আগ্রহ এবং আখাঙ্ক্ষা একটি নারী জীবনের জন্য।


তুসা: আপনার কোনো প্রেমই পরিণতি পায়নি। এই যে একা একা জীবনকে দেখলেন, কোনো আফসোস আছে?

হেলাল হাফিজ: এখন ভাটির বয়স, পড়ন্ত বেলা, শারীরিক চাহিদার চেয়েও এখন যেটা বেশি প্রয়োজন, তা হচ্ছে সঙ্গ। কথাগুলি, অনুভূতিগুলি একটু শেয়ার করতে পারলে ভালো লাগে। শারীরিক চাহিদাটা তো আর সারাদিন থাকে না। এটা একটা বয়স পর্যন্ত থাকে। মধ্যযৌবন পর্যন্ত এটার প্রয়োজনও বটে। এটা দুই কারণে, একটা হচ্ছে বংশবৃদ্ধি, আরেকটা হলো, সুস্বাস্থের জন্য যৌনতা খুবই প্রয়োজন। আমাদের তো রক্ষণশীলতা আছে, কিন্তু যৌনতাও ভাত-মাছের মতো জরুরি একটা বিষয়। কিন্তু আমরা তো জীবনকে ভোগ করতে পারি না। ধরো, তোমার চমৎকার একটা মেয়েবন্ধু আছে। কিন্তু যৌনতা উপভোগের জন্য নির্জন কোনো স্থান নেই। কারণ যে বাড়িতে তোমরা থাকো, সেখানে মা-বাবা-ভাই-বোন একসাথে থাকো। তোমার হয়তো আলাদা কোনো রুমও নেই। তো তাদেরকে ডিঙিয়ে তোমার পক্ষে এটা করা তো সম্ভব নয়। এরপরও যৌনতাটা একটা বয়স পর্যন্তই আনন্দের, মজার এবং প্রয়োজনীয়ও বটে। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সের ভালোবাসায় যৌনতার বাইরের যে ভালোবাসা, তা দরকার। এখন এ পড়ন্ত বেলায় এসে মনে হয়, সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল না। একজন সঙ্গিনী থাকলে ভালো হতো। হয়তো তখন আরো বেশি অসুখিও হতে পারতাম। কিন্তু সঙ্গের জন্য মনটা কাঁদে এখন। যেটা মধ্যযৌবন পর্যন্ত কাঁদেনি। তখন ভাবিনি, একদিন এরকম বয়স বেড়ে যাবে, অচল হয়ে যাবো, তখন একজন পাশে থাকলে কত ভালো লাগবে।

তুসা: যদি স্রষ্টার কাছ থেকে আরেকটা জীবন চেয়ে নিতে পারেন, ওই জীবনের পড়ন্ত বিকেলেও কি এমন হতাশা থাকবে?

হেলাল হাফিজ: না। হেলাল হাফিজ হয়ে আর জন্মাতে চাই না। এজন্ম তো হয়েই গেছে। আমার বরং খুব আগ্রহ এবং আখাঙ্ক্ষা একটি নারী জীবনের জন্য। পুরুষ জীবন তো দেখলাম। আমি একটি নারী জীবন চাইতাম। আমি যেন একটি মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করি। নারী জীবনের অভিজ্ঞতা ও স্বাদগ্রহণের খুব আগ্রহ আমার। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন যেটা করলাম, রুটিন ছাড়া, অগোছালো এবং পরিকল্পনাহীন একটা জীবন কাটল, এ ভুলটা বোধহয় আর করতে চাইব না। চেষ্টা করবো সে জীবনে যেন সময়ের অপচয় না হয়। ঠিক সময়ে ঠিক কাজটা করবো। একটা নারীজীবন পাওয়ার ইচ্ছা আমার। সেটা তো সম্ভব হবে না আর মনে হয়। 

তুসা: নারী জীবনের কথা বলছিলেন, কিছুদিন আগেই আপনার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন এক নারী…

হেলাল হাফিজ: হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী আমাকে চায়ের নিমন্ত্রণ করেন। বেশ অনেকক্ষণ কথা হলো তার সাথে। খুবই আন্তরিকতার সাথে উনি বলেছেন চিকিৎসার যা খরচ তা উনি বহন করবেন। আমি এজন্য কৃতজ্ঞ তার কাছে। আমি তো রাজনৈতিক কোনো দল করি না। একজন কবি হিসেবে উনি যে সম্মান আমাকে দেখিয়েছেন, আমি এজন্যে খুবই আনন্দিত, গর্বিত। ওনাকে কিন্তু আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পেয়েছি। আমার এক বছরের বড় তিনি। উনি জন্মেছেন ১৯৪৭ সালে, আমার জন্ম ৪৮ সালে। ওনাকে আমার পছন্দ ছিল কেন? আমরা যখন তোমার মতো তরুণ, তখন রোমান হলিডে নামের একটা ছবি ছিল। অড্রে হেপবার্ন ছিল ওই সিনেমার নায়িকা। হেপবার্ন দেখতে-শুনতে একবারে হ্যাংলা-পাতলা, খুবই চমৎকার দেখাতো। তো, শেখ হাসিনা আপা ওই সময় এরকম হ্যাংলা-পাতলা ছিলেন। চমৎকার সুন্দরী। ওই যে বঙ্গবন্ধুর কোলে মাথাটা দিয়ে একটা ছবি আছে না? ওরকম লিকলিকে। তো উনি যখন ক্যাম্পাসে যেতেন, আমিও তো খুব দুষ্ট ছিলাম তখন। পেছন থেকে চিৎকার দিয়ে বলতাম, ওই যে অড্রে হেপবার্ন যায়। উনি তখন আনন্দের সঙ্গে ঘাড় ফিরিয়ে মার দেয়ার ভঙ্গি করতেন। তখন আমরা খুব দুরবস্থায় ছিলাম, বিশেষ করে কবিরা। তখন আপা আমাদের আদরও করতেন খুব। মাঝেমাঝে দশটাকা-বিশটাকা দিতেন নাস্তা করার জন্য। 

তুসা: প্রধানমন্ত্রীর কি এ স্মৃতিগুলো মনে আছে? 

হেলাল হাফিজ: আছে, আছে। বাংলা একাডেমি পুরস্কার যখন পেলাম, মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যখন আমার দেখা হলো, আমি উঠেই ওনাকে সালাম দিয়েই বললাম, আমার অড্রে হেপবার্ন কেমন আছে? এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে তার সব স্মৃতি মনে পড়ে গেছে। তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন। আমরা পাঁচ মিনিটের মতো কথা বললাম। 

তুসা: বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কি ওনাকে নাম ধরে ডাকতেন? 

হেলাল হাফিজ: তখন তো এক বছরের যারা বড়ো, তাদেরকে খুব সম্মানের চোখে দেখা হতো। আমি আপা ডাকতাম। খুবই সম্মান করতাম। 


বাংলা একাডেমি পুরস্কার যখন পেলাম, মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যখন আমার দেখা হলো, আমি উঠেই ওনাকে সালাম দিয়েই বললাম, আমার অড্রে হেপবার্ন কেমন আছে?


তুসা: সেসময়টা কেমন ছিল?

হেলাল হাফিজ: আমার তো বর্ণাঢ্য জীবন। আমি ছিলাম তৎকালীন ইকবাল হলে, এখন যেটা সার্জেন্ট জহুরুল হক হল। আমি হলে ছিলাম আট বছর। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে আমি দৈনিক পূর্বদেশ নামে একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করি। অবজারভারে বাংলা কাগজ ছিল এটি। তখনো আমি ছাত্র। আমি হল ছাড়লাম ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে। তখন কিন্তু হলে নিয়ম-কানুন ছিল। এরপরও আমি আট বছর থাকলাম নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতাটার জন্য। এ কবিতাটা আমাকে রাতারাতি তারকাখ্যাতি এনে দেয়। 

তুসা: আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। আপনাকে তো ইতিহাসের সাক্ষী বলাই যায়। 

হেলাল হাফিজ: আমি যেহেতু কোনো সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না, একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে, বা একজন কবি হিসেবেই সেই সময়টাকে দেখার চেষ্টা করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি লিখেছি, ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ কিন্তু আমি তো কখনো মিছিলেও যাইনি। একজন কবির কাজ হলো তার সময়ের তার জনগোষ্ঠির আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদাগুলো শনাক্ত করা, এবং সেভাবে কবিতা লেখা। আমিও তাই করেছি।

শেয়ার