নয় দশকের মাঝে মাঝি লেখালেখির শুরু, নিয়মিত-অনিয়মিত লিখেছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। দু’ হাজার সালে বের হয় প্রথম কবিতার বই ‘রুটির শিস ও আশ্চর্য চিরাগ’। প্রায় পুরোটাই ওজন দরে বিক্রি হয়ে যায়, মুড়ির ঠোঙায় এর দু-একটি কবিতা পড়ে যারা আগ্রহী হয়েছেন, তাদের জন্য ওই বইয়ের দশটি কবিতা এখানে দেওয়া হলো। পেশাগত কারণে ঘোরাঘুরি বিভিন্ন দেশে আর লেখাও পাঠানো হয়নি কোনো পত্রিকায়, যদিও অনিয়মিত লেখা বন্ধ হয়নি আর বন্ধুরাও ভোলেনি শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে; এই বইমেলায় গুরুচণ্ডালী থেকে এক ব্যাগ নব্বই-এ আবার পাওয়া যাবে তার পরবর্তী লেখা নিয়ে একটি চটি বই – ‘যে বয়েস হরিণের নয়’। কলকাতা বইমেলায়, গুরুচণ্ডালির স্টলে আগ্রহী পাঠকেরা খোঁজ নিতে পারেন।
রুটির শিস
আমার অগ্নিনির্বাপক পিতা , মা সসাগরা এইমাত্র হেঁশেলে গেলেন আর
তাওয়ার উপর শিস দিয়ে উঠলো রুটি , যেন এতকাল ঘুমিয়ে কেবল ওই
রিন্ রিন্ শাঁখা ও পলার প্রতীক্ষায়
থেবড়ে যাচ্ছে সিঁদুরের টিপ্ , বিন বিন ঘাম
সিলেবাস শেষ করতে গিয়ে দেখি পিতৃদেব একটি সরু ল্যাডার বেয়ে
ক্রমশ আকাশ ছুঁচ্ছেন , তার উড়োচুল মিশে যাচ্ছে সাদা ধোঁয়ায়
চরাচর ধূসর হয়ে এলে ভেসে ওঠে পাগলা ঘণ্টি আর উর্ধ্বশ্বাস দৌড়
গৃহকোণে মুখোমুখি আমাদের ছোট পরিবার
নিভৃত ঘুমের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে অক্ষরকুচি , আগুনের আঁচ ও একটি
অগ্নিনির্বাপক গাড়ির মৃত ঘণ্টা
বেশি রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি
খুব রাতে আমার বাবার আত্মা নেমে যান বাগানের দিকে ; আমরা গোটা পরিবার তখন ঘুমে বিভোর। অসুস্থ চন্দ্রমল্লিকাটির দিকে তাকিয়ে থাকেন আর সন্ধান করেন অদ্ভুত দর্শন পোকাটির। দেখি তার সানাই বাদকের মতন ফোলা গাল , হাঁটু অব্দি হাফপ্যান্ট , আমাদের চোখাচোখি হতে হঠাৎ ব্যস্ততায় লুকাতে চান চুনের তুলি , যা দিয়ে টবের গায়ে রং করে তিনি এড়াতে চান পোকাদের , তারপর হঠাৎ সব কাজ ভুলে আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে ওঠেন , হলুদের পরের রং বিষণ্নতা
সারা রাত ঘন হয়ে আসা নক্ষত্রের নিচে দুজনে নিঃশব্দে ভিজে যেতে থাকি
এইখানে আমাদের গোটা পরিবার পাশ ফিরে শুই
তোমাকে চিনতে শিখি
পিঁপড়ের শ্রম নিয়ে তোমায় চিনতে শিখি
মহান খাবার এক ঢাকা থাকে শীতের ভিতর।
পড়েছে ধুলোর দাগ মেহগিনি সাবেক নক্সায়
গৃহস্থের যেটুকু সম্বল , উপরে সম্পূর্ণ নীল
স্যাঁতা ডাম্প, দেয়ালে মুখের ছবি , যতবার যেটুকু ভেবেছি
এখন দুপুর রাতে নিজেকে একান্তে বুঝে বিপরীত বাসনা করেছো !
নরম পাউরুটির ঘ্রাণে শুঁড়ে শুঁড়ে ব্যস্ততা ছড়িয়ে পড়ে পথে
সংসার সোনালী কিছু
তাহারা অপেক্ষা পায় বর্ষা ঋতু পথ
উঠেছে ঘুমন্ত সিধে চোখের পাতায়
সংসার সোনালী কিছু ধুলো রান্নাবাটি
তৃপ্তি পরমান্ন গুণ বেড়েছে ব্রাহ্মণী
নগরীর উপচার শিক্ষাদান শেষে
আমি ভীরু ভিক্ষুপুত্র তুলে ধরি শির
বগলে ধরেছি চেপে তালপত্রে পুঁথি
ক্ষুধা ভিন্ন অন্য কোনো শব্দ নেই তাতে
দুধের উতল গন্ধে গোষ্ঠে সন্ধ্যা ঘন
অন্দরের বার্তা কিছু এসেছে অবেলা
ফলে রাত ধড় ছিন্ন উত্তোলিত বাহু
ধরেছে আকাশ তাতে তারা বার্তা বয়
অপচয় ভোগ শব্দে প্রারম্ভিক ধ্বনি
এ বিদ্যা নিয়েছে টুকে সকল ছাত্ররা
আশ্চর্য চিরাগ
সূর্য অস্ত গেল পাটে ; ল্যাম্পপোস্ট ঘেঁষে
রাত জিভ উলটিয়ে শিস দেয় , যেন কিছুই হয়নি
চার চেয়ারের হাতল হেঁটেছে পথ
উনোনে নেমেছে খাদ্য, হাড়ি ঠেলে উঠে আসে জিন
বহু নিচে বেজে চলে আমাদের জাতীয়সংগীত
ঢোলে ঘুম , সিলেবাস এলোমেলো উড়ে চলে
চিরাগ চিরাগ বলে রাজপথ তুলে ধরে শিরে
ডানার অদ্ভুত শব্দে
ডানার অদ্ভুত শব্দে বৃক্ষ থেকে উড়ে যায় পাখি
ফলে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে পথে
উঠেছে সেও ভীরু বাদামের খোলার ভিতর
বিশীর্ণ শিরায় , সোনালী কীটের দাঁত নষ্টপ্রায়
শনশন হওয়ার ভিতর থামে শ্বাস ধুলো
আর না লেখা অক্ষর , যে খোঁজে সমস্ত রাত
কবরখানার মৃত গেট, বুনো ফুল, পেরেকে থেমেছে রক্ত
মহান যীশুর মুখ , স্বপ্নে আরও পবিত্র দেখায়
ফলত তোমাকেই বলি
দ্বিতীয়ায় ঈষৎ আনত , পিঠে চুল , লেগে আছে সদ্য স্নান
এমন পবিত্র দিনে যেকোনো নারীকে সহোদরা মনে হয়
শুনে ঘুরিয়েছো মুখ ,আহা শোনো তোমাকেই ভগ্নী বলি
পিঠে রাখি হাত, এই ভোর , শাঁখ ও শীতল কনিষ্ঠার পাশে
উচ্চারিত স্নেহপদ , এছাড়া না থাক কিছু
চন্দন গন্ধের সাথে কিছু দূরে থিম থাকে আয়ু
হাতে তার অসুখের তাপ
সন্তর্পনে উঠেছি একদা
সন্তর্পনে উঠেছি একদা পাহাড়ি ছায়ার উপত্যকায়
চেয়েছি তোমার বাতাসকে ছুঁতে , বৃষ্টির মতো ঈষৎ ক্লিষ্ট
ভেসেছে বাতাসে পতনের কাল ধুলায় অম্লে লতানে পুস্প
ঘিরে আছে পথ ভাঙা নুড়ি আর পাতার শব্দ
নেমেছ নগ্ন সামান্য স্নান দুহাতে জলের দারুণ হর্ষ
ছড়িয়ে পড়েছে খয়েরি পাতায় যেসব লিখেছি
ফেলে রেখে এই উপত্যকায় তুলো তুলো রোদ
বৃক্ষ শাখায় দূরে শাদা চুল পবিত্র প্যান
বেহালা বাজায় ঘুমের মধ্যে
বনতল থেকে যতদূর চোখ ফুলে ঢাকা পথ
ছড়ানো সূর্য
সে অতি শঙ্কিত প্রাণ
সে অতি শঙ্কিত প্রাণ, কখনো লুণ্ঠনে এলে বেড়ে দেয়
অন্ন ও ব্যঞ্জন
এই ভাবে আমার প্রত্যেক পাপ বাষ্পবিন্দু জমা হয়
থালার উপর ; মুঠো গ্রাস ক্রমে নিচু হয়ে আসি
আকাশের কাছে, শরীরে নিঃশ্বাস লাগে মৃদু নক্ষত্রের
দেখি ছায়াপথ ধরে একটি পিপীলিকা ভাত মুখে হেঁটে যায়
আমি ধীর সন্ন্যাসের কথা ভাবি
একটি বিশুদ্ধ পেঁপে গাছ
উঠোনে নেমেছে পেঁপে গাছ, বৃদ্ধ পিতামহী
যেন কোমর দুলিয়ে গালে ঠোনা মেরে বলে
কেমন শখের নাত-বউ কোল জোড়া ছেলে
তার বুক উছলে উঠছে স্নেহে , ফল এই
আমরা পেয়েছি সুখে নরম সবুজ স্তন
রোদে ক্রমশ শুকোতে থাকে হলুদ পাতারা
তবে শুরু রাজা যুদ্ধ খেলা…যখন থেমেছে
অসি হারিয়ে ফেলেছি কেউ অথবা ভেঙেছে
রাতে নীরবে ঝরেছে দুধ ক্ষতস্থান থেকে
জোৎস্নায় উঠোন ভেসেছে দুধে সাদা স্তন
ঠেকেছে মাথায় তার মুখ আকাশের গায়
যেন মৃত তারাদের বলেছে এসব কথা
যারা সব আমার অগ্রজ মৃদু মাথা নাড়ে
একটি বিশুদ্ধ পেঁপে খসে পড়ে অন্ধকারে
শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়