রাসেল রায়হানের সঙ্গে সাত কবির কবিতালাপ ।। প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় দশকের নির্বাচিত কবিদের সঙ্গে কবিতা এবং সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে ধারাবাহিক আলাপচারিতা চলছে। এসব আলাপচারিতা ওই ব্যক্তি-কবি ও তার কবিতা যেমন স্থান পাচ্ছে, তেমনি উঠে আসছে বাংলা কবিতার স্বরূপ, কাঠামো, ভাষার ব্যাপারগুলোও। এসব আলাপচারিতা এক প্রকার আত্মানুসন্ধান। সেই আত্মানুসন্ধানে রাজীব দত্ত, হাসান রোবায়েত, হাসনাত শোয়েব এবং শাহ মাইদুল ইসলামের পর এবার আলাপ জমেছিল রাসেল রায়হানের সঙ্গে। রাসেলের সঙ্গে কবিতালাপে ছিলেন রুহুল মাহফুজ জয়, মোস্তফা হামেদী, হাসান রোবায়েত, হুজাইফা মাহমুদ, শামশাম তাজিল, হাসনাত শোয়েব ও শিমন রায়হান।



অবশ্যই কিছু চাপিয়ে দেওয়া উচিত না। সেটা আর কবিতা থাকে না, প্রেসক্রিপশন হয়ে যায়।



রুহুল মাহফুজ জয়

রাসেল, শুরুতেই জানতে চাই কবিতা লিখো কেন?

রাসেল রায়হান

কবিতা লিখি কেন, এর সহজ এবং একমাত্র উত্তর হলো, অন্য কিছু পারি না আমি। আর সামান্য বিশদের রহস্য হলো, আমি আসলে সামনাসামনি কথাবার্তা গুছিয়ে বলতে পারি না। মুখের উপরে সরাসরি অনেক কিছু বলতে পারি না। কবিতায় সেগুলি নিরাপদে বলে দেওয়া যায়। কবিতা রহস্য চায়। সেটা আরও সুবিধা। রহস্য ভাঙলে ভয়াবহ সব জিনিস পাবা।

জয়

তুমি অন্য কিছু পারো না, এটা কি মেনে নেব? শুরুতে গল্প লিখতা। এখনো লিখো। আমি জানি একটা উপন্যাসও প্রকাশ হচ্ছে।

রাসেল

অন্য কিছু মানে লেখালেখি ছাড়া কিছু। সাহিত্যের সব শাখা নিয়েই একই মত আমার। এর মধ্যে কবিতায় বেশি আড়েঠাড়ে বলা যায়।

জয়

কখন, কেন মনে হইলো কবিতাই লিখতে হবে?

রাসেল

এইটা একটা ঘটনা। আমার তো শুরু গল্প দিয়ে। ছাপাও হইছে গল্প। স্কুললাইফ থেকেই আমি জানি লেখক হব। এই করেই খাব একদিন। তো তখন গল্প লেখা শুরু করলাম। দৈনিক গল্প ছাপল, রহস্য পত্রিকা ছাপল। এর মধ্যে একটা পত্রিকায় দেখি একদিন ঘোষণা আসছে, তারা একটা কবিতার প্রোগ্রাম করবে। সেখানে কবিতা পাঠ করবে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা কবিরা। ওখান থেকে দশটা কবিতা কবি আসাদ চৌধুরী বাছাই করবেন, সেটা ছাপা হবে। আমিও নাম লিখিয়ে ফেললাম। বাছাই দশটার একটা আমার ছিল। তার আগে আমার একটাই কবিতার বই পড়া, বনলতা সেন। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের ঘটনা। তার আগে কবিতা আমার কাছে ফালতু জিনিস মনে হতো। আসলে বুঝতাম না দেখেই অমন মনে হতো। ঐ ঘটনা আমায় কবি বানিয়ে দেয়। নইলে হয়তো আর কবিতাই লিখতাম না কোনোদিন। ওর পর থেকে শুরু হলো আমার কবিতা পড়া। চোখ বন্ধ করে পড়ে কবিতা পড়ে গেছি। যা পাইছি, তাই পড়ছি।

জয়

তোমার কবিতার ঝোঁক গল্পের দিকে থাকে। প্রকাশিত দুটি বইয়ের কবিতাতেই সেই প্রবণতাটা আছে।

রাসেল

গল্পের দিকে ঝোঁক আছে, কিন্তু অনেক কবিতাতেই নেই আবার। যেগুলিতে আছে, সেগুলি নিয়েই বলি…

…আমি চাই পাঠক আমার লেখাটা পড়ুক, এবং বুঝুক সহজেই। তো গল্প রাখলে পাঠক প্রথম পাঠের মজা পায়। কিন্তু গভীর পাঠ করলেই ভিতরে অন্য জিনিস পাবে। ঐ জিনিসটা বোঝানোর জন্যই এই আশ্রয়। সহজভাবে বোঝানোর জন্য। যে কবিতাগুলিতে গল্পপ্রবণতা পাইছ, সেগুলির জন্যই এই উত্তর।

জয়

তোমার কবিতার বড় প্রবণতাই গল্প বলার ঝোঁক এবং শেষদিকে চমক দেয়া।

রাসেল

আমার সাহিত্যের কোনো প্যাটার্নেই অ্যালার্জি নাই। আমি সাহিত্য থেকে নিতে চাই আনন্দ, দিতেও চাই আনন্দ। এইটা মাথায় রেখেই আমার সমূহ পাঠ এবং লেখা।

জয়

তারপরও আমার মনে হয়, তোমার কবিতায় বৈচিত্র্য কম। বক্তব্যধর্মী। গদ্যের মতো। এইরকম কেন?

রাসেল

এইটা তো তোমার মনে হয়। তুমিই কারণ বলতে পারবা। আমার মনে হইলে কারণটা আমি বলতাম।

জয়

পাঠকের মনে হওয়াটা কি ডিনাই করবা?

রাসেল

আলাদা আলাদা পাঠককে তো আমি তার মত ঠিক করে দিতে যাব না। আমি বড়জোর তার কৌতূহল মেটাতে যেতে পারি। তাও সব কৌতূহলও মেটাব না। কিছু রহস্য থাকা ভালো। কারও মনে হলে সে আমায় না পড়ুক। যাদের মনে হয় না, তারাই পড়বে শেষ পর্যন্ত।



ঐ যে হাইলি পোয়েটিক, ঐটাই ফ্যাক্ট। ইমেজ, গল্প—এইগুলা অপ্রধান।



জয়

তোমার কবিতা সরল বাক্যের আখড়া, এত সারল্যের কবিতা কি টিকবে মনে করো?

রাসেল

সরল বাক্যের আখড়া, শুনতে ভালো শোনায় না। তাও বলছি, আমি যেমন, আমার কবিতাতে তার ছাপ পড়বেই। কবিতার জন্য বোধে গুরুত্ব দিই আমি। ওইটা ঠিক থাকলে সরল-গরলে কোনো ঝামেলা নাই আমার। আমি জটিলতা চাই কবিতার বোধে, ভাষায় না। সেটা নিজের লেখার ক্ষেত্রে। অন্যেরটা তার স্বাধীনতা।

মোস্তফা হামেদী

সারল্য কবিতার জন্য সমস্যা কি না?

জয়

হামেদীর মতো আমিও জানতে চাই, সারল্য কবিতার জন্য সমস্যা কি না? এবং অবশ্যই কবির ব্যক্তিত্ব তার কবিতায় ছাপ ফেলবেই। আমি জানতে চেয়েছিলাম, অতি সারল্যমাখা কবিতা টিকবে কি না?

রাসেল

টেকা-না টেকার ব্যাপার আমি জানি না। যেহেতু বিষয়টা ভবিষ্যৎ নিয়ে, উত্তরটাও ভবিষ্যৎই দিক। আমি আনন্দ চাই, পাচ্ছি। না টিকলে আমার ক্ষতি নাই কোনো।

জয়

তুমি জানো, জনপ্রিয়তা মানহীনতার দিকে ধাবিত করে। তবুও কেন জনপ্রিয় হইতে চাও?

রাসেল

আমি কোথায় বললাম যে জনপ্রিয় হতে চাই? আচ্ছা, এবার বলছি, চাই। মার্কেজও জনপ্রিয়। তার মতো ‘মানহীন’ হলে ক্ষতি কী?

হামেদী

সাহিত্য জনপ্রিয় হয় কখন? আপনার অবজার্ভেশন কী এই ব্যাপারে?

হাসান রোবায়েত

আমার ধারণা, সারল্য বা জটিলতা কবিতার ইউনিট অব মেজারমেন্ট হইতে পারে না। কবিতা নিজেই হয়ে ওঠে।

রাসেল

সেটা আলাদা প্রসঙ্গ। আমি শুধু ‘জনপ্রিয়তা মানহীনতার দিকে ধাবিত করে’—এইটারে ভুল মনে করি। এজন্যই তার উদাহরণ টানা।

একমত রোবায়েত। থ্যাংকস।

জয়

মার্কেজ বিশাল এক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ল্যাটিন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যে সাহিত্যরুচি, তা কি বাংলার আছে?

রাসেল

সাহিত্যরুচি! লেখক কি শুধু ভালো রুচির মধ্যে বসে ভালো ভালো লেখা পয়দা করবেন? কাউকে কাউকে ভালো সাহিত্যরুচি তৈরি করার দায়িত্বও নিতে হয়। কিন্তু জনপ্রিয়তা শব্দটার সঙ্গেই তো ‘জন’ আছে। পাঠক আর তার পাঠরূচি তো তার বাইরে না। দু:খজনক যে, আমি সেই সুযোগের সামান্য অংশীদার হতে চাই।এইটাই এটার উত্তর। পাঠকের রুচিতে না লিখে আমি আমার রুচির লেখা পাঠককে পড়াতে চাই। আমার রুচির লেখা পাঠককে পড়তে বাধ্য করতে চাই।

রোবায়েত

জয় ভাই সম্ভবত রাসেলের টেক্সটে ন্যারেটিভের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছে। অর্থাৎ খুব সাদামাটা ন্যারেটিভ শেষ পর্যন্ত কবিতা হয়ে ওঠে কি না! আমরা তো সেগুলোকে প্যারাবল, অনুগল্পও বলতে পারি। এমন কিছু কি জয় ভাই?

জয়

অনেকটাই, রোবায়েত।

জনপ্রিয়তার সূত্র ধরেই একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাইতে চাই। আমাদের বাংলাদেশ বিবেচনায় কাশেম বিন আবু বাকার জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তার জন্য যে কোন রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে তিনি এখন বিশ্ব মিডিয়ায়। কী বলবা?

রাসেল

আমি জনপ্রিয়তার উদাহরণ হিসেবে মার্কেজ-বোর্হেসকে নিই। কাশেম বিন আবুবাকার না।

হাসান

মজার ব্যাপার হলো মার্কেজ-বোর্হেসও আমাদের দেশের এলিট পাঠকের কাছে জনপ্রিয়।

রাসেল

হ্যাঁ, রোবায়েত।

বিশ্ব মিডিয়ার বিষয়টা নিয়ে বলছি… এতদিন কাশেম বিন আবুবাকার কই ছিলেন? গত ১০ বছরে আসা তার কোনো বইয়ের নাম আমার জানা নাই। তার মানে উনি আলোচনাতেই নাই। বাইরের মিডিয়া তবু তাকেই কেন বেছে নিল? তার চরিত্রদের মতো চরিত্র সত্যিকারে বাংলাদেশে নাই। আমার স্ত্রী মাদ্রাসার, সেই সূত্রে আমি এই লাইনের জীবন-যাপনও কিছুটা জানি। বরং এখানকার মুসলিম মানসিকতা ধরতে পারছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাকে নিয়ে তো হয়নি। এটাই সন্দেহজনক। কিন্তু আমি সন্দেহের বিষয়টা পাবলিকলি বলতে রাজি নই। অনেক কিছুই তো বলা যায় না। উচিতও না। এটাই কোনোদিন পারলে সাহিত্যে বলব আমি।

জয়

বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে এই যে রাজনীতিটা, কাশেম সাহেবকে মানদণ্ড হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয়া, এর ক্ষতি কতখানি?

রাসেল

একটু যোগ করছি। বাইরের মানুষ কাশেম বিন আবুবাকার পড়বে, তারপর ভাববে বাংলাদেশের মুসলিমরা এমন। কিন্তু আসলে তেমন নয়। সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপিত হবে বাংলাদেশ, দেশের মানুষ।

জনপ্রিয় লেখক নিয়ে আরেকটা জিনিস বলতে চাই, শুনবা?

জয়

অবশ্যই।

রাসেল

এইসব জনপ্রিয় লেখকের ৪০-৫০ হাজার বই বিক্রি হয়। সেখান থেকে লাভ গোনে প্রকাশক। আর সেই লাভের একটা অংশ দিয়ে বই হয় সিরিয়াসদের, যাদের বই বিক্রি হয় সামান্য। এটা অস্বীকার করা যায় মুখে মুখে; মনে মনে না।

জয়

সাহিত্যক্ষতি বিষয়ে বলো নাই।

রাসেল

আচ্ছা। সাহিত্যক্ষতি হলো, যেসব মানুষ কিছু পায়, পরের পথিকরা তাকে উদাহরণ আর আদর্শ হিসেবে নেয়। উদাহরণ আর আদর্শ হিসেবে কাশেম বিন আবুবাকাররা সাহিত্যের জন্য ক্ষতিকর। অন্তত আমি যে সাহিত্য পছন্দ করি, তার ক্ষেত্রে। তবে একটা ব্যাপার, কাশেম বিন আবুবাকারের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নাই। তাকে আমি সমীহ করি। একজন পাঠকের মন জয় করাই বিশাল ব্যাপার, সেখানে এত এত! আমার আপত্তি বিদেশি মিডিয়ায় বাংলাদেশের সাহিত্যিক হিসেবে তাকে নেওয়াতে।

জয়

আবার তোমার কবিতায় ফিরি। ন্যারেটিভ নির্ভর কবিতার ঝুঁকি কতখানি, একজন কবির জন্য?

রাসেল

কোনো নির্ভরতাতেই ঝুঁকি নেই, যদি সেটা কবিতা হয়ে ওঠে।

রোবায়েত

রাসেলের কবিতার সবচে বড় সমস্যা [আমার পাঠে] সম্ভবত ও যে রহস্যের কথা বলতে চাইলো শুরুর দিকে। ওর কবিতায় সেটার লেয়ার খুব সারফেস লেভেলের। একবার বা দুই বার পড়লেই সেই পাজল পাঠক সলভ করে ফেলে। তো সেক্ষেত্রে ন্যারেটিভ কবিতার একটা ঝামেলা থেকেই যায় বোধ’য়। যেমন ‘বিব্রত ময়ূর’ এর প্রথম কবিতাটা একদমই ন্যারেটিভ নয়, এই জন্যই ঐটা আমার প্রিয় কবিতা ‘বিব্রত ময়ূরের’।

রাসেল

রাজনীতিবিদের মতো শোনালো কথাটা। তারা বলে জনগণ এটা চায় না। অথচ তারা জনগণের ব্যাপারটা বোঝেই না। আপনি বরং আপনার কথা বলেন। মানে ‘পাঠক রহস্য ধরে ফেলে’ না বলে বলেন, ‘আমি ধরে ফেলছি।’ পুরো পাঠককূলের দায় নিতে আমি আপনাদের এক-দুইজনকে দেবো না। আপনার হয়ে প্রশ্নটা করেন, প্লিজ।

রোবায়েত

আমিই পাঠক এ ক্ষেত্রে। এইটা তো আমারই অবজার্ভেশন রাসেল।

রাসেল

আমি এমন পাঠকও চিনি যারা আমায় জিজ্ঞেস করে এটা কী বললেন, কী মানে এর? আর আপনি যদি বুঝেই ফেলেন, আপনি নিশ্চিত আমি যে রহস্য আড়াল করে রাখছি সেটা আপনি ধরতে পারছেন?

রোবায়েত

এই বিষয়ে আমি উত্তর না দিই রাসেল। কেমন পরীক্ষা পরীক্ষা দিচ্ছি মনে হচ্ছে!

রাসেল

আমিও তো পরীক্ষাই দিচ্ছি। আমি আসলে উত্তর চাচ্ছি না আপনার কাছে। এই প্রশ্নটাই আমার উত্তর। দেখছেন, আপনি প্রশ্নটা দেখলেন। ভিতরের উত্তরটা দেখেননি!

রোবায়েত

আমি নিজে অন্তত বুঝি বলেই এমনটা প্রশ্ন করেছি, রাসেল।

রাসেল

রোবায়েত, জিনিসটা আপেক্ষিক। আমি কি ভাবছি, সেটা যদি আপনি বলেন যে বুঝছেন, সেটা মেনে নেওয়াটা একটু জটিল। বাদ দেন, পরীক্ষা নিতে পারব না!

রোবায়েত

পরীক্ষাও নিতে পারেন চাইলে। হা হা!

রাসেল

না না! মাথা খারাপ! আমার পরীক্ষাভীতি আছে। সিরিয়াসলি। শুধু দেওয়া না, নেওয়াও। এই কারণেই সিরিয়াসলি টিচার হই নাই।

রোবায়েত

আপনার ভাবনাটা জরুরী না রাসেল। পাঠক হিসেবে আমি কী ভাবলাম সেইটাই জরুরী। আমার অন্তত টেক্সটের ব্যাপারে এমনিই ধারণা।

রাসেল

না, রোবায়েত। আমি যা লিখছি সেইটা আবিষ্কারের চেষ্টা করবে পাঠক। ‘কিন্তু সবটা বুঝবে না বুঝবে না বুঝবে না!’

রোবায়েত

আপনিই মাঝে মাঝে বলে, ‘পাঠককে এত অল্প বুদ্ধির ভাবাটা বোকামি।’

রাসেল

পাঠক আমার চেয়ে বুদ্ধিমান। কিন্তু বুদ্ধিমান মানে কি তারা আমার সব বুঝতে পারবে? ধরেন, আমি বুদ্ধিমান পাঠক। আমি কি একজন বোকা লেখকের সব বুঝব? বুঝব না। আমি বরং তার ভাবনার কাছাকাছি যেতে চাই। কাছে যেতে চাই। শেষ করতে পারি না যাওয়া। এইটা সম্ভব না বোধ হয়। মানুষ তো, কোনো শর্ত মানে না তারা, কম্পিউটারের মতো না আরকি। সুতরাং শেষ সিদ্ধান্তে আসতে পারি না।

…আচ্ছা, হুজাইফা, আমি তোমাকে আপনি বলতাম, না তুমি? আগে এইটা ক্লিয়ার কোরো।

হুজাইফা মাহমুদ

তুমি বলবেন অবশ্যই! তুইও বলতে পারেন।

রাসেল

না থাক। আপাতত তুমিতেই থাকি।

জয়

তুমি তো সব্যসাচী। সব্যসাচীর ঠ্যালা কী? সুবিধাটাই বা কী?

রাসেল

সব্যসাচী, এইটা কথাসাহিত্য ছাপা হলে বোলো। তখন ঠ্যালাও বুঝব।

জয়

গল্প তো ছাপা হইছে অনেক।

রাসেল

নাহ। তবে দুয়েকটা গল্পে মুগ্ধ পাঠক পাইছি। সেটা আরও গল্প লেখার আগ্রহ বাড়ায়। এইই। ঠেলা বুঝতে পারার জন্য বইটা চাই। উপন্যাস আসলে আরেকবার নিয়ো সাক্ষাৎকার।

জয়

আচ্ছা। আমরা প্রতিটা সাক্ষাৎকারেই প্রসঙ্গটা তুলেছি। আমাদের মূলে ফেরা দরকার। বাংলাদেশের কবিতার মূল কী, তোমার মতে?

রাসেল

আমি আসলে এই প্রশ্নের উত্তর জানি না, জয়। আমার জ্ঞান সত্যিই কম। সত্যি জানি না।

জয়

তোমার মতটা আমি জানতে চেয়েছি। আর তুমি জানো না, সেটাও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না। বিতর্ক এড়াতে চাইলে ভিন্ন ব্যাপার।

রাসেল

বাংলাদেশের কবিতার মূল হলো আবেগ, বোধ। সব জায়গার কবিতারই প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন হয়। এটা আসলে পরিবেশ, আবহাওয়া, স্থানিক, সাংস্কৃতিক কারণে।

হুজাইফা

রাসেল ভাই,আসেন আমরা কিছু সহজ সরল আলাপ করি। কঠিন কথা আমার মাথায় খেলেনা…

রাসেল

আমারও একই অবস্থা!

হুজাইফা

কাছাকাছি সময়ে আপনার দুইটা বই বের হল।এই দুইটার মাঝে পরিণত বা উৎকর্ষতার বিচারে আপনি কোনটাকে আগায়ে রাখবেন?

রাসেল

আমি দুটিকেই সমান দূরত্বে রাখব। উৎকর্ষতার বিচারেও, অনুৎকর্ষতার বিচারেও। এর মধ্যে বিব্রত ময়ূর আমার প্রিয়, কারণ সেটা প্রথম পাণ্ডুলিপি ছিল। সেটা প্রিয়। কিন্তু এটুকুই।



আমি আগে আবেগাক্রান্ত হই, তারপর সেটা প্রকাশের আইডিয়া খুঁজি। যেটার আইডিয়া পেয়ে যাই, সেটা লিখে ফেলি। আমার কাছে মনে হয় কবিতা ‘কবিতাপ্রধান’ হওয়া উচিত।



হামেদী

দুইটার মধ্যে কোনো বিশেষ পার্থক্য বা সম্পর্ক আছে কিনা? নাকি দুইটা বই একই মলাটে থাকতে পারত?

রাসেল

পার্থক্য নিশ্চয়ই আছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের বোধ, অনুভূতিশক্তি চেঞ্জ হয়। দুইটার কবিতা দুই সময়ের। দুই বাচ্চা আলাদা আলাদাভাবে সফল হলে আমরা নিশ্চয়ই আক্ষেপ করব না, হায় কেন তারা একসাথে ভূমিষ্ঠ হলো না।

হামেদী

ন্যারেশনের কোনো ভিন্নতা আছে কি না?

রাসেল

এইটা পাঠক দেখুক। কী ভিন্নতা আছে, সেটা তারাই দেখুক। এমনিতেই আপনারা মোটামুটি প্রমাণ করে দিচ্ছেন যে সরল, গাল্পিক, রহস্য সহজেই খোলাসা হয়। এরপরে যদি এসবও বলে দিই, বাকি থাকল কী!

হুজাইফা

অনেকেই একেকটা বইকে একেকটা স্টেশন হিসেবে দেখেন।অর্থাৎ এক বইয়ে এক রকম কাজ করার পর তিনি বাঁক বদল করেন। অন্য বইয়ে যান ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে, ভিন্ন কাজ নিয়ে। আপনার সেরকম কোনো লক্ষ্য ছিল কি না?

রাসেল

প্রথম দুই বইয়ে ছিল না। আর জোর করে বাঁক বদলের পক্ষে নই আমি। জিনিসগুলি সাবলীলভাবে ঘটে বলে আমার ধারণা। আমার আদৌ বদল হলে সেটা সাবলীলভাবেই হোক।

হামেদী

আমার তো মনে হয়, একটা আরেকটার সম্পূরক। আপনার কী মত?

রাসেল

সম্পূরক মানে তো একটা না হলে অন্যটার পূর্ণতা পেত না। সেক্ষেত্রে এটা একটা বৈশিষ্ট্য হতে পারে। হয়তো বিব্রত ময়ূর আমার কাছে পূর্ণ মনে হয়নি দেখেই সুখী ধনুর্বিদ লেখা। এটাও পূর্ণ মনে হয়নি। আরেকটা আনছি, জুনের দিকে। দেখি, এটায় যদি পূর্ণতা পায়!

হামেদী

তাইলে তো ট্রিলজি পাচ্ছি আমরা।হা হা হা!

রাসেল

যদি পূর্ণতা না পায়, তাহলে ‘অসীমোলোজি’ পাবেন। সম্ভবত পূর্ণতা পাবে না। যা বলতে চাই, তা বলতে এই একজীবন যথেষ্ট নয় আমার, হামেদী ভাই।

হুজাইফা

একটা সময়, সম্ভবত তিরিশের দশকে এই বিতর্কটা ছিল, কবিতা আইডিয়া প্রধান হবে, না আবেগ প্রধান হবে? এই বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখেন?

রাসেল

আমি আগে আবেগাক্রান্ত হই, তারপর সেটা প্রকাশের আইডিয়া খুঁজি। যেটার আইডিয়া পেয়ে যাই, সেটা লিখে ফেলি। আমার কাছে মনে হয় কবিতা ‘কবিতাপ্রধান’ হওয়া উচিত।

হুজাইফা

হা হা হা ভাল বলেছেন! কবিতায় আইডেন্টিটি নিয়ে কথা সবসময়ই হয়ে থাকে। মানে, বাংলা কবিতায় বাংলাদেশের জিওগ্রাফিকাল এবং কালচারাল আইডেন্টিটি থাকা না থাকা, এসব নিয়ে কী ভাবেন?

রাসেল

অবশ্যই থাকে। তবে সম্পূর্ণ না থাকাই ভালো। এখন সেই যুগ নেই। এখন বিশ্ব হাতের মুঠোয়। সহজেই অন্য দেশ পড়তে পারবে। সুতরাং সেটা মাথায় রাখাও বাধ্যতামূলক। অস্বীকার করার উপায় নেই, এখন পৃথিবীই আলাদা একটা দেশ হয়ে উঠছে। তবে নিজের আইডেন্টিটি থাকবে। এটাও অটোম্যাটিক। যে সময়, পরিবেশ আপনাকে দিয়ে একটা লেখা লিখিয়ে নেবে, সে কি নিজেকে অবহেলার সুযোগ দেবে? দেবে না!

হামেদী

সমসাময়িক বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে বাংলা কবিতার সিগনেচার হয়ে উঠার শর্তগুলি কী হতে পারে বলে মনে হয় আপনার?

রাসেল

কোনো শর্ত নাই, হামেদী ভাই। শুধু চোখ খুলে দেখো, বন্ধ করে ভাবো, অনুভব করো, তারপর যা মনে আসে মনে রাখো। অত:পর লিখতে প্রস্তুত মনে হলে লিখে ফেলো। এইটা আমার পদ্ধতি।

হুজাইফা

আমার কাছে মনে হয়েছে,শীল্পের উপর যেকোনো চাপানো জিনিসই শুদ্ধ না।

রাসেল

অবশ্যই কিছু চাপিয়ে দেওয়া উচিত না। সেটা আর কবিতা থাকে না, প্রেসক্রিপশন হয়ে যায়।

হামেদী

শিল্পের উপর ঈ-কার চাপানোও শুদ্ধ না!

হুজাইফা

আমার কাছে মনে হয় আমাদের সাম্প্রতিক সময়ের কবিতা খুব বেশি ইমেজপ্রবণ হয়ে উঠেছে। এর থেকে বের হওয়া বা বিকল্প কিছু খোঁজার সময় কি এসেছে?

রাসেল

আমি যা করা উচিত মনে করছি, করছি। আপনি আপনার মনে হওয়া মতো করবেন, আরেকজন তার মনেরটা। তাতে কী হয়, বৈচিত্র্যটা থাকে। পাঠকও বিভিন্ন টেস্ট পায়। তবে আমার কাছে খুব ইমেজপ্রবণ মনে হয় না। এর বাইরেও আছে।

হুজাইফা

বাইরে তো অবশ্যই আছে। কিন্তু অন্যান্য টুলসের চেয়ে ইমেজের ব্যবহার একটু বেশিই লাগে।

রোবায়েত

প্রশ্নটা মূলত রাসেল আর হুজাইফা দুই জনকেই। ইমেজের প্রব্লেমগুলো কী আসলে?

রাসেল

হতে পারে। আমি আসলে কবিতা বুঝি। কবি যদি কবিতা প্রকাশের জন্য ইমেজকে উৎকৃষ্ট ভাবেন, সেটাই করা উচিত। বিষয়টা সাবলীল। যারটা সাবলীল না, তারটা কবিতা হয়ে উঠবে না।

ওহ, রোবায়েত, আপনার প্রশ্নের উত্তরটাও দিয়ে দিলাম মনে হয়।

রোবায়েত

হুজাইফা, কিছু বলেন। ইমেজের সংকটগুলো কী কী?

হুজাইফা

এই বিষয়টার সাথে আমার এখনো বোঝাপড়া চলছে। আমি এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না, আসলে কেমন হওয়া উচিৎ।তবে আমাদের সাম্প্রতিক কবিতা নিয়ে আমার কিছু খটকা আছে।ইমেজ সংক্রান্ত।

রাসেল

সেইটা তোমার সাক্ষাৎকারে বইল। আমার এসবে সমস্যা নাই। আমি চাই কবিতা। জীবন্ত এবং সতেজ কবিতা, সে যেভাবেই হোক।

রোবায়েত

আবার একটু রাসেলের টেক্সটের কাছে যাই।

ইমেজ আসলে কবিতার প্রাণ মনে হয় আমার কাছে। এক অধরা জগৎকে সে টাচ করতে পারে। যেটা অন্য কোনো টুলস পারে বলে আমার মনে হয় না। সেক্ষেত্রে ইমেজের বিকল্প হইতে পারে উইজডোম। সেইটা আবার প্রকাশ করা ঝামেলা, আর সবার সেটা আসেও না সহজে। কবি হলেই যে উইজডোম থাকবে এমনটাও না। আসলে রাসেলের টেক্সট এই জায়াগায় একটা সেতু বানাতে পারে মনে হয়। ওর টেক্সটে ইমেজের ভার বেশ কম। এক ধরনের ন্যারেটিভের মধ্য দিয়ে ও ওর জগতটাকে প্রকাশ করে।

রাসেল

এর উত্তর বোধ হয় দিছি। আমার ইমেজে আপত্তি নাই, ‘নিরিমেজ’-এও নাই। ছন্দেও নাই, অছন্দেও নাই। উইজডমেও নাই, অনুইজডমেও নাই। কবিতা বহুভাবেই হতে পারে। কবিতা হলেই হলো। আমার কিছু না বলেও কবিতা লেখার ইচ্ছা ছিল, যেমন মূকাভিনয়। যেমন কোনো কথা না বলে বোঝানো, স্রেফ ইশারায়। কিন্তু সেটা সাবলীল হচ্ছে না দেখে করছি না। হয়তো কোনোদিন পারব না, আবার পারতেও পারি। দেখা যাক।

রোবায়েত

আমার অবশ্য কিছু টুলসে আপত্তি আছে। হা হা!



বাংলা কবিতার ধারায় আমার কবিতা সংযোজন করল ‘রাসেল রায়হানের কবিতা’। আপাতত এটুকু মত দেওয়া যায়। মাত্র তো শুরু।



হুজাইফা

ইমেজ ছাড়াও প্রাণবন্ত কবিতার কল্পনা আমরা করতে পারি। আমাদের সামনে জীবন বাবুর ‘আট বছর আগে একদিন’ আছে। ওই অর্থে ইমেজ বলতে গেলে নাই-ই এটাতে।কিন্তু কী সজীব কবিতাটা!

রাসেল

রোবায়েত, টুলসগুলো জানার কৌতূহল হচ্ছে।

রোবায়েত

ওইটাও ইউয়োরোপিয়ো চিন্তাধারা। এক ধরণের আউটসাইডার হয়ে ওঠা, হুজাইফা।

হুজাইফা

আরেকটা ব্যপার আছে এখানে। কবিতাটি গল্পপ্রধান। কিন্তু একে ন্যরেটিভ বলতে পারবেন না। হাইলি পোয়েটিক!

রোবায়েত

মজার ব্যাপার হলো ওই কবিতার টার্নিংপয়েন্ট একটা ইমেজ। ‘অদ্ভুত আঁধারে যেন তার জানালার ধারে উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে।’

রাসেল

আপনাদের আলোচনা থামান। আমার দিকে মনোযোগ দেন।

রোবায়েত

হা হা!

রাসেল

ঐ যে হাইলি পোয়েটিক, ঐটাই ফ্যাক্ট। ইমেজ, গল্প—এইগুলা অপ্রধান।

হামেদী

বাংলা কবিতার ধারায় আপনার কবিতা নতুন কী সংযোজন করল, রাসেল?

রাসেল

বাংলা কবিতার ধারায় আমার কবিতা সংযোজন করল ‘রাসেল রায়হানের কবিতা’। আপাতত এটুকু মত দেওয়া যায়। মাত্র তো শুরু।

হুজাইফা

রাসেল ভাই, আপনার উপন্যাসে বা কথাসাহিত্যে কোন শ্রেণিটাকে উপজীব্য করে নিচ্ছেন?

রাসেল

আমার উপন্যাসের উপজীব্য হলো আমার দেখা মানুষ। আমার শোনা মানুষ।

হুজাইফা

গ্রাম/শহর/শহুরে মধ্যবিত্ত?

রাসেল

তিনটাই। উচ্চবিত্তও। কারণ, আমি কিছু উচ্চবিত্ত দেখে ফেলছি এর মধ্যে। তবে এই উপন্যাসে গ্রাম নাই। মফস্বল আর শহর।

হুজাইফা

ইদানিংকার গল্প উপন্যাস পড়া হয়? কারা ভাল লিখছে আপনার দৃষ্টিতে? কয়েকজনের নাম সাজেস্ট করবেন!

রাসেল

আমি গল্প-কবিতা– কোনো ক্ষেত্রেই কারো নামই উচ্চারণ করব না। সরি, হুজাইফা। অন্যান্য বিষয়ে কথা হোক।

জয়

তোমার বলার মাধ্যমে যদি কাউকে আবিষ্কার করা যায়, সেটা তো ভালো। নাম বলা শুধু রাজনৈতিক না।

রাসেল

তবে গল্প-উপন্যাস পড়ি। আমি যা-ই লিখি, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি পড়া গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

হুজাইফা

আমি নিজে পড়ার জন্য সাজেস্ট করতে বলছিলাম আরকি!

হামেদী

আমিও চাই শর্টকাট সাজেশন

রাসেল

সমস্যা হলো, মানুষ এটাকে রাজনৈতিক বানাবে। তাছাড়া সব নিয়ে কথা না বলাই উচিত। হুজাইফা, এটা আমি তোমাকে বলব, আলাদা। যদি পড়তে চাও।

কারো নাম বলব না আমি। এই একটা জিনিস এড়িয়ে যাব, প্লিজ।

জয়

মানুষ কি করবে, তা নিয়ে তুমি ভাবিত কেন?

রাসেল

মানুষ করা তো বলিনি। আমি বলতে চাই না। আমি পড়ি অনেককে। কাদের পড়ি, সেটা শুনতে চাও, হুজাইফা?

হুজাইফা

হ্যাঁ, তাও বলতে পারেন। সমসাময়িক কাদেরকে পড়েন আপনি?

রাসেল

আমার সময়ের মাহবুব ময়ূখ রিশাদ, তানিম কবির, মেহেদী উল্লাহ, শামস সাঈদ, এদের বই পড়ছি লাস্ট কদিনে। সাব্বির জাদিদ আর মোসাব্বির আহে আলীর বইটা পড়তে চাই। এছাড়া কথাসাহিত্যে সমসাময়িক (আমার সময়ের) আর কারও মনে পড়ছে না। মনে আসলে বলব। এর আগে জাকির তালুকদার, সুমন রহমান আগে পড়ছি। এখানে সব বই আসা’দেরটা।

রাসেল

ওহহো, বিধান সাহার মুক্তগদ্যের বইটা অসাধারণ ছিল।

শামশাম

কবিতা পড়েন না, রাসেল?

রাসেল

প্রশ্নটা গদ্য নিয়ে ছিল তো!

রাসেল

ওহহো, খালিদ মারুফ!

জয়

‘এসো বটগাছ’ বিধানের?

রাসেল

হ্যাঁ

হুজাইফা

শুকরিয়া রাসেল ভাই!

শামশাম

খালিদ মারুফের কথা আজ নিয়ে দুইদিন শুনলাম আপনার মুখে। নাম নেয়া ভাল, তাতে অন্যের আগ্রহ জাগে।

রাসেল

কিন্তু হয়তো এমন কেউ আছে যে সত্যিই আমায় ভালোবাসে। থাকে না? নাম বলতে গেলেই তার নামও হয়তো বলতে হবে। সেটা অসততা। বরং নাম না-ই বলি। এজন্যই এড়াই।

শামশাম

এড়ানোই ভাল। তাতে ভালোবাসা অটুট থাকে।

জয়

নাম নেয়া আর ভালবাসা ব্যাপারটা আমরা আলাদা করতে পারি না কেন? ভালবাসা ব্যক্তিগত, নাম নেয়া সাহিত্যগত।

রাসেল

নামের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। আমি খালিদ মারুফ ভাইয়ের কথা অনেকবার পাবলিকলি বলছি, উনি একবারও পাবলিকলি বলেন নাই, যদিও উনি আমার কবিতা পছন্দ করেন, ওনার ভাষ্যমতে। দেখলাম, ঐটাই ভালো। বলা সম্ভব হয় না, জানি। ভালোবাসা ব্যাপারটা আলাদা ব্যাপার। আমি তাদের নাম জোর করে নিয়ে অশ্রদ্ধা করতে চাই না। আর না নিয়ে আঘাতও দিতে চাই না।

শেয়ার