১
ভুল ছত্র সাজাই। ভুলগুলা ছাড়া পায়া ওয়ালটজ নাচে। ভাবরে ঠিক কতখানি সুপ্ত রাখলে কবিতা হবে বুঝতে না পাইরা পায়চারি করে শব্দ থেইকা ঊনআশি কদম দূরে। বারান্দা দিয়া আসা আলোর উৎস ফ্লুরোসেন্ট বাতি না সোডিয়াম?- এগুলা ভাইবা কি স্বপ্রদত্ত শাস্তি থেইকা রেহাই পামু নাকি? ছায়া তো আন্ধারেও নিজেরে বুইনাই রাখতেছে আম্মার উলের সোয়েটারে আফসোসের মতন। জানি এই মুহূর্তে আরো এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার ঘরে কেউ অন্ধকারেই ফিল করতেছে- কোজি – আর তাদের সবকিছু “হওয়া” থেইকা ঠিক দুই মিনিট, তিন শব্দ, দশ একক এক্যুরেসি আর বিশ একক দীর্ঘশ্বাস দূরে। কিন্তু- এখন-এই মুহূর্তেই এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার একটা ঘরে নিবিষ্ট “না হওয়ারা” পরম সত্য- সত্য – আহা-
এই করুণতম বোধ একটা গুলিবিদ্ধ চড়ুইয়ের মতন তির্যক আকস্মিক গতিতে নৃত্যরত উচ্ছ্বল একটা ইস্তানবুলিয়ান তরুণীর মগজে আঘাত হানে। এমনে বাড়তে পারে বয়স। যখন আমরা সময় নিয়া বলদের মত অংক করি।
ভাই ও বোনেরা, এই বইলা বিদায় নিবো যে কালকে একটা শিশুরে দেখছি তারাগুলা গুড়া কইরা গিলা ফেলতে চাইতেছে।
বয়ামে
কিছুটা
জমায়া
রাইখা।
২
বোকামি আর পোড়ামূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছ সূর্যপথ বরাবর, সময়কে শোবার ঘর ভেবে-
আমার বদ্ধঘরের জানালা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পাকা ফল, আলোর টুকরো। যদিও জানো- কিছু নাই এই তল্লাটে চারশত বিরাশি বছর ধরে, কেবল এক মহুয়া ছাড়া-
চাঁদ ও পাহাড় গিলে খেয়ে যে গান গেয়ে চলে -জন্ম, আবহাওয়া ও মৃত্যুবিহীনতার- শূন্যে ঝুলে ঝুলে।
অতিসুখ বা ক্লেশ তো একইরকমে আমাদের আজন্ম বানায়, আমৃত্যু বানায় -বায়ুর মত ছড়িয়ে পড়ি সময়ে যেন দলিলের অধিকার আছে আলো ও শূন্যতায়।
আমাদের দেখা হয় হাটবাজারে; যেখানে আমি জলবায়ু কিনতে গেছি আর তুমি নিরাসক্তি। বিদায় নিলেও কেউ কি অদেখা রয় কবিতায়? সকলেই বেজন্মা। আর রাখাল একটা রাজা, রাজা একটা কবাট, কবাট একটা জোয়ার, জোয়ার একটা অশ্বত্থ, অশ্বত্থ একটা নীলফুল- ফুলের মধ্যিখানে আমায় নিয়ে বসে তুমি পাপড়িগুলো টেনে দিচ্ছো উত্তপ্ত চুলের উপর- পাকস্থলি থেকে পা গুলিয়ে উঠে সুবাসে।
কবির মুখে রীতিমত পায়ে পেরেক ঠুকে দাঁড়িয়ে থাকে পর্দা, চাবুক, লজ্জা ও পুরনো মাছেরা। কবির মুখে রীতিমত পায়ে পেরেক ঠুকে দাঁড়িয়ে থাকে মেঘ, চাদর, লালফুল ও একদিনের শিশু।
শহরের সকল কাঁচ ভেদ করে করে ঢুকে যাবো নীলতিমি আর পাইনবন নিয়ে, যেন জোয়ারে পাঁচদিন হলো ভেসে গেছে সভ্যতা।
কবিতা সহস্র পেরেকে আবৃত থাকে যার গা গজিয়ে ঘাসফুল, পা গজিয়ে মায়াবী সরীসৃপ। এর সুবাসে বেঁচে থাকো- হে লোক হে নারী! একটু বোসো ভুতুড়ে আলখাল্লার পাশে আযানে ভর দিয়ে। মোটরকার কেবলই বেয়ে যাবে সময়ে আর ফুলের মধ্যের সুবাসে আমি এখন ব্যক্তিগত জলবায়ু নিয়ে।
পাপ ও পূণ্য আমার ও অন্যের। পাপ ও পূণ্য অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের। বায়ু , গান, ফুল ও মানুষের তরে কোন ‘অথবা’ নাই।
৩
একটি অব্যবহৃত গিটার পা দুলিয়ে ভয়ার্ত শিশুর মতো বসে আছে; করুণ চোখে। দেয়ালের উপর আঁকা কতগুলা স্টিকম্যান পাঁচটা বাদ্যযন্ত্র হাতে নিয়ে নৃত্যরত। ক্লাস ফাইভে আঁকা রেখার চিত্র কী সোজা! আর এই চিত্রগুলাও তো ‘সরলরৈখিক’ই। ‘সরলরৈখিক’-এর মতো এমন অনেক শব্দ ভুলভাল বোধন বা ব্যবহারে ভারী হয় বাতাস। তারপর ঘূর্ণিবায়ুর মতো কুয়াশার মাঝ থেকে আমরা আপনজনদের জড়িয়ে ধরি। হাহাকার তাতে বাড়ে। এই জড়িয়ে ধরা আসলে সেই করুণ যার অনুনাদে শূন্যের মাঝ দিয়ে কোমল শব্দ আগমনের ভ্রম জাগে। মেসোপোটেমিয়াতেও বোধহয় সত্য ছিলো এগুলো। যদিও কিছু মানুষ ফাঁপা বুকের। শীতের পাতার মর্মর ধ্বনি অনেকেই ভায়োলিনে ধরতে চেয়েছে যেমন আমার দেয়ালে আঁকা আছে চেরিফল ও পাখির ছবি। কখনো আমি জীবন্ত পাখি থেকে মুখ সরিয়ে ছলোছলো চোখে তাদের দিকে চেয়ে থাকি। আম্মাকে বলি সিল গেলে দিতে একটিমাত্র জানালা।
৪
সময় একটি কাশবন; যাকে অধিকার করে আছে মেঘ, ফুল, শীত ও শূন্যতা। ইতিহাসে হাত দিয়ে ও কল দিয়ে ধান কেটেছে যারা তাদের পরষ্পর দূরবর্তী ভাবে কেউ কেউ। হেসে উঠতে উঠতে আমিও এক জাদুঘরে ঢুকে যাই; স্তব্ধ মূর্তি হয়ে। এ স্থান, এ বোধ- উভয়কেই বলা যায় চলমানতা।
ঘরসজ্জার জন্য দেয়ালে আঁকা পাখি এখন রক্তাক্ত। ব্যর্থ মানুষেরা একগাদা লালের মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে আঁকে পা ও পাখা। এই বিচ্ছিন্নতার মাঝে সমুদ্র ঢুকে যাবে? পাহাড়ের উপর যাদের বাড়ি তাদের মতো আমাদের ধুলোপড়া রক্তের মাঝেও নিয়মিত পাঁচবেলা সমুদ্র ঢুকে যাবে?
বোলো না সমুদ্র একটি ধাঁধা আর ধাঁধা একটি ফুল। ইতোমধ্যে গাছের প্রতিটি পাতায় আয়না, মার মুখজুড়ে আয়না, নিজ করতলে আয়না। ধরে নিতে দাও সমুদ্রে কোন আয়না নাই। যাতে লেখা যায় আয়নার কথা এমন কোন কাগজ নাই, কালি নাই।
কুয়াশাকে আলো ভেবে ডুবে থাকা অপরাধ কিনা এ নিয়ে নিজের সাথে যুদ্ধ করা ভালো না অন্যের? ঘূর্ণিবায়ুই বাপের ভালোবাসা, তীব্রবর্ষণই নিশ্চল পাহাড় আর আমাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে দাও প্রেমিক; ভেসে যেতে যেতে পাথুরে খনিতে।
৫
সবই মাংসল। মনে হয় রংধনুতে কৈমাছের কাঁটা ও তর্জনীর চামড়া লেগে আছে। পুকুরপাড়ে বসে থাকা নিরীহ কালো মেঘকে তোমার ছেলে সশব্দে ফেলে দেয়। ঝপাৎ! ঝুম! হুম- আরো কত শব্দকেই বৃষ্টির সাথে মিলিয়ে ফেলো। আমার সারাবেলা কেন মনে পড়ে ফাইভ পাশ বন্ধুর কথা আর তার প্রেমিকা কে হতেপারে- এমন বিমূর্ত ছবি। গোলাপ ফুলগুলো নিজস্ব মত নিয়ে পাপড়ি চিরে ফেলছে, বানাচ্ছে ফুলের পিঠা। কিছু আন্দোলনের আমরা কেবল পাশ দিয়ে হেঁটে যাই আর কিছু বিদ্রোহে ঢুকে পড়ি। অংশগ্রহণ আমাদের শুধু মনে করিয়ে দেয় ফুটন্ত কান্নার ঘ্রাণ। পাগুলো মিশে গেছে কবে রাস্তাগুলো ধরে পাঁচশত মাইল জুড়ে সাতশত মাইলের নিচে। পাগুলো নীল হয়ে গেছে তোমার আর গায়ে গজিয়েছে সুমেরুর তুষার। নিমন্ত্রণ করেছি তোমাকে ও তোমাদের, আমার এমন কোন প্রেমিককে যে আনতে পারে দুর্লভ গোলাপ- কালো- আর গমগম করে তা নিয়ে কথা বললে অন্যমনস্কতায় আমার খালি কালো মেঘের কথা মনে পড়ে। আর এমন বৃষ্টি নামে কাঁচের মত যার আয়নায় নগর দেখি- মুক্তাগাছার মণ্ডা, ল্যুভ, গ্যেটিসবার্গ। মন লেগে যায় যখন দেখি বারান্দায় বসে তুষার কাঁধে নিয়ে কেউ ফুলের পিঠা খাচ্ছে ; তাতে ঘাইহরিণীর ঘ্রাণ। সবই মাংসল।
৬
উষ্ণবর্ণের বায়ু… আর খুদমুড়িগুলো কেবলই ভাঙা শিমুলফুল বা রক্তকণিকার সাথে সহাবস্থান করছে লাল রঙে। সময়, হাতঘড়ি, পেন্ডুলাম, ও কিছু সরীসৃপের পিচ্ছিলতা নিয়ে কত কথা! তবু মাংসের মাঝে সবচেয়ে বেশি গেঁথে আছে বর্তমানে আটকে যেতে না পারার বেদনা। আর এ বেদনা এমনই হাসির পাত্র- হলুদ কাগজে ‘বর্তমান’ লিখে পিন দিয়ে গেঁথে ফেললে- সে সূচ ত্রিশূল হয়ে ঊরুসন্ধিতে ফোঁটে। আর আমি ও ত্রিশূল আধো অন্ধত্বে মিলে মিলে যাই যখন নরম শিশু সে বেদনা ছিঁড়ে ছড়িয়ে দেয় পাথরে ও স্রোতে। উষ্ণবর্ণের বায়ু… কি রাগত উত্তাল ঘূর্ণির মত পাক খেতে খেতে বিলুপ্ত ক্যালেন্ডারের মাঝ দিয়ে ছুটে চলে! সে দৃশ্য আমি আঁজলা করে তুলে বুড়ো বাপ বা মেয়েশিশুটির চোখে রাখতে পারি না, নিজস্ব দৃশ্যের অভাবে। ত্রস্তমনে তিরানব্বই পাওয়া স্কুল বালিকাটির মতো আরো বিশুদ্ধতার আকাঙ্ক্ষায় বিলুপ্ত ক্যালেন্ডারকে নতুন নাম দিতে চাই। নতুন। আর যে নাম দেই- শিমুল কাঁটা- রঙ পেন্সিল- খেলাঘর বা রাইফেল- তা খালি ‘ক্যালেন্ডার’ হয়েই কানে বাজে। ছড়িয়ে পড়ে প্রত্যেক ওয়েল পেইন্টিং, ফোন ও কম্পিউটার স্ক্রিনে। যার থেকে সমুদ্রচিৎকারে দূরে সরতে গিয়ে শুধু একটি বেয়োনেট হয়ে আমি পুত্র বা প্রেমিকের কাঁধে বিঁধে থাকি।
৭
আমার তল্লাট থেকে মানসচক্ষে দেখি একটি আনন্দিত ওয়ার্বলার পাখি। মৃদু অস্বস্তি গোপনীয় দানবের মতো রস খুঁজে ফিরে, বলতে চায় প্রাণের জন্য গতি নিতান্ত প্রয়োজনীয় আজও। একটি ধীরতম ফার্নিচার থেকে তবু ভেসে আসে জলপদ্মের গন্ধ, যেন টলমলে পুকুরের ভিজেমাটি এখানেই থেকে গেছে তিনশত যুগ-
কেউ দেখতে চায়নি বলে অনন্য পুষ্পেরা পরেছিল অদৃশ্যের কাপড়।
ঘন অরণ্যের মধ্যবিন্দুতে একটি গৃহস্থালি আছে কোথাও; সেখানে সন্ধ্যেবেলায় গান হয়; তাতে অংশ নেয় আদিম গম্ভীর এক বৃক্ষের শিকড়। প্রতিনিয়ত ধুলো মেখে ডানাভাঙা পাখির মতো অসংলগ্ন গতিতে সকলে খুঁজে ফিরছে তাকে; অনভ্যস্ত লোকালয়, তার স্নানঘাট আর ফেরাপথে প্রথমবারের মতো কবিদের অনুসন্ধানে মিছিল হতো; প্রয়োজনীয় ট্রামের বদলে; আর সুসংবদ্ধ হলিডে হতো বাতিল।
ওয়ার্বলার পাখিটি নিজস্ব জগতে করুণ অর্কেস্ট্রা তুলে জিজ্ঞেস করে ডানাভাঙা মানুষদের কথা-
মহাকাল ধরে অরণ্য ভেঙে ভেঙে অরণ্যেই ফিরে আসে যারা, পরিচিত ঘ্রাণ তারা কি আজ খেয়ে ফেলেছে স্বজাতিরই ভয়ে; বানোয়াট জলদস্যু ফিরে আসে বার বার নিত্যাকার স্বপ্নে?
প্রতিবাদ ও হাহাকার নক্ষত্রের পথে ছড়িয়ে দিতে সকাল ও রাত হাত ধরাধরি করে স্থান বদল করে রোজই। করুণ ডাক শুনে শুনে সম্মিলিত প্রতীক্ষা করি দিগন্তের সাথে; ব্যক্তিগত পাখিকে দেব আদিম ও নতুন বাড়ি ফেরার সুসংবাদ।
৮
জানালার গ্রিল দিয়া মুখ বাড়াইলে দেখি লুকায়িত শিল্পী হলুদ রং ঢাইলা দিতেছে ক্যানভাসে। ডাইল্যুটেড ইয়েলো। রঙের সাথে মিলায় অনুভূতির পরিবর্তন হইতে হয়। খালি হৃদয়ের একদম মাঝ বরাবর একলার প্রেম থাকে। তারে কোন পরিবর্তনই ব্যাখ্যা করার সুযোগ হয় না কোনদিন। যেমনঃ কোন সন্ধ্যার পর ঠাশ ঠাশ কইরা সব বাড়ির কবাট পরে একসাথে। চারপাশে বন্ধ দরজা দ্বারা বেষ্টিত হইয়া অতিষ্টভাবে ফিরা যাই হায়ারোগ্লিফিক্সের আগে। সকল ব্যক্তিগত হৃদয় গইলাই পড়ে। হারায় যায় সমষ্টির মাঝে? সাইক্লোনের পিঠে চইড়া উষ্ণ গন্ধের মধুকূপী ঘাস থাইমা- আসে।
৯
আঙুলের কাছাকাছি কোন বস্তু থেকে শুরু। কিন্তু একটি দুমড়ানো হার্ডকাভার, মশকীর ফুল আর শীতার্ত কাকতাড়ুয়ার কথা বলে তোমাকে নিয়ে যাওয়া যায় দূর ও অস্থিরতায়। যে উদ্ভট জগৎ আমাকে স্বপ্নে তাড়া করে বেড়ায় তাতে মন খারাপ থাকে সারা দুপুর ও সন্ধ্যা। জানালা ধরে এমনভাবে থাকি যেন পাগুলোও উঠে যাচ্ছে- আর টুশিমণি আমায় দেখে ভাবছে একটা বানর। আমাকে নিরাপদ ভেবে ফেলার আগে আবার স্বপ্নে ঢুকে যাই কাকের চোখ কেটে কেটে। ওখানেও আমার মন খারাপ থাকে সারা দুপুর ও সন্ধ্যা। আঙুলের কাছাকাছি কোন বস্তু থেকে সমাপ্তি। খাটের মধ্যবর্তী খালে ভেসে যাওয়া পরিবার। তার চারপাশে গজিয়ে ওঠে ক্রিস্টমাস ট্রিজ। ওদের চারপাশে সহপাঠিনীদের গুম করে নিয়ে আসি হাত ধরে গান গাইতে।
উৎক্ষিপ্ত হই কোন সম্মানী ভাস্কর বা ভাস্কর্যের পাশে।
জলের বারান্দায় টানানো সমস্ত ছবিতে হাত বুলিয়ে শেষে ঝুড়িতে তুলে রাখি চেরিফল কিছু। একটি শিশু ব্যাগভর্তি ব্যাঙাচি নিয়ে ছুটে চলে যেন পাখি, যেন দৈত্যের জাদুকরি কার্পেটে ভর দেয়া তার পা।
আঙুলের কাছাকাছি কোন বস্তু থেকে শুরু হয়।
১০
না জেনেশুনে কেবল বিতস্তার পাড় ধরে হাঁটি। অতঃপর দেখি কতগুলো লালাভ পাহাড়ের সারি দাঁড়িয়ে আছে হাত ধরে। মিষ্টতা ছাওয়ার মুখে পলিথিনের মতো কুঁকড়ে যাই রোগগ্রস্ত এক বুড়ো পতঙ্গের ধারণার সামনে। সহস্র দিন ধরে এমনই তো পৃথিবী বানিয়েছি আমরা কেবল নিজেদেরই জন্য। মেসোপটেমিয়া থেকে আমি ওই আদিবাসী গ্রামে উঠে আসবো আর মাঝে থাকবে না কোন যোগসূত্র; কলঙ্কিত স্মৃতির। চিরকাল অনেকেই হেঁটেছে মরুভূমির পথে যেহেতু পলায়নের জন্য তপ্তধুলার মতো ভালো কিছু হয় না।
শহরের চান্দ্রতাপ মিস করছি; শব্দ বিনিময় দূরে সরিয়ে বিলুপ্ত শীতে কাঁপাতো আমাদের। এর মধ্যে কেউ হতে চাইতো রহস্যময়- উঁইপোকার সাথে আমি হেসেই কূল পাই না। চাদরের মতো মেলে ধরলেও যাদের মুখ গলিত মোমের মত আকারহীন লাগে, রহস্য আরোপের কারবার দেখলে মনে হয় বলি, “আকাশের গায়ে ঢালবা নাকি তুমি- নীল রঙ? উইথ আ বটল?”
আমার বিতস্তার পাড়ে কেউ আসে না। শান্ত তো এমন লাগে নিজেকে যেন মাতৃগর্ভের পরিচয় পেয়েছি। কিন্তু এই শান্তিজল আমার সিজোফ্রেনিয়া আর গর্ভমধ্যে তো চিরকাল বয়ে চলেছে বিগ্রহ- যা আমাকে ফিরিয়ে নিচ্ছে কিছু নীল রঙের দিকে। আর পাখির হাড়ের মতো হালকা বোধ রজঃপাতের মতো জমাট লাল হলে ভুল ভাষায় কথা বলতে ফিরে যাবো।
সব নক্ষত্রই নোংরা আলো দেয়, দূরবর্তী সবার সাথেই কথা বলে চলি আর থামলেই দেখি বিতস্তা। এই পেন্ডুলাম যদি কেড়ে নিতে পারো তবে নক্ষত্র দেবো, নিচে থাকবে ধোঁয়ার ঘ্রাণ, তাতে জিলেপির ভাগ আছে। জানি তুমি শ্যাওলার ঘ্রাণ মেখে গুল্মের সাথে যুগ্ম কবিতা লিখে এসেছো, তবে আমি আর বিব্রত বোধ করতে পারি না। বিলাসি বারান্দা থেকে গোলাপি আলোর মিলিয়ে যাওয়া দেখে যতগুলা বোধ জমা হয়েছে পৃথিবীর বুকে, তার পুরোটা বহন করেছি।
এই পেন্ডুলাম কেড়ে নাও যদি- নক্ষত্র দেবো- তাতে লালাভ পাহাড়- বিতস্তা।