কষ্টে আছি, আইজুদ্দিন…
কিশোর বয়সে ঢাকায় বেড়াইতে আইসা দেয়ালে দেয়ালে লেখাটা দেখছিলাম। দেখছি আর ভাবছি, এই আইজুদ্দিনডা কেডা? সে নিজেই কষ্টে আছে, সেইটা মেট্রোপলিসের দেয়ালে দেয়ালে জানাইতেছে? নাকি আইজুদ্দিন বিশেষ কেউ, যারে মানুষের কষ্টে থাকার কথা জানানো হইতেছে? এইখানে কমন ব্যাপারটা হৈলো ‘কষ্ট’। অই বয়সে অত তলানিতে যাইতে পারি নাই। এইটাই সত্যি। অইটা যে ট্যাগ-গ্রাফিতি, অই বিষয়েও কোনো জ্ঞান তখন ছিলো না। কিন্তু অই লেখাটার প্রতি আগ্রহ আছিলো। এখন বুঝি, ‘কষ্টে আছি, আইজুদ্দিন’ ট্যাগলাইনটার অনেক প্রকার মিনিং হৈতে পারে। সেইসব মিনিংয়েরও আবার হরেক রকমের লেয়ার থাকবে। এই ‘আইজুদ্দিন’ হৈতে পারেন বাংলাদেশের আপামর খেটে খাওয়া মানুষ। যারা পলিটিক্যাল দূষণের শিকার হৈয়া নিম্নজীবন কাটাইতেছে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এই ‘আইজুদ্দিন’ হৈতে পারেন দিকভ্রান্ত যুবসমাজের প্রতিনিধি। বাংলাদেশ রাষ্ট্র তো কখনোই তার সন্তানগো দায়িত্ব নেয় নাই। এই ‘আইজুদ্দিন’ হইতে পারে প্রেমে ব্যর্থ প্রেমিকদলের কেউ। গ্রাফিতির সাধারণ যে ক্যারেক্টারিস্টিক, ‘কষ্টে আছি, আইজুদ্দিন’ টেক্সটে তার সবটারই ব্যাপক উপস্থিতি ছিলো। এখানে রাজনৈতিক লেয়ারটা তো অবশ্যই উপস্থিত। যদি সেইটা ব্যর্থপ্রেমের বার্তাও হয়, অইটা গ্রাফিতিই। গ্রাফিতির ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, আর্টের এই ফর্মটা শুরুই হইছিল প্রেম থিকা। সেইটা পম্পেইয়ে এক সুন্দরী গণিকার প্রেম থিকা হোক বা ১৯৬৭ সালে ফিলাডেলফিয়ার ঘটনাতেই হোক। এক প্রেমিক শহরের অলিগলিতে এক তরুণীর প্রতি প্রেমের বার্তা ছড়ায়ে দিতে টেক্সট গ্রাফিতির আশ্রয় নিছিলেন।
কয়দিন আগে ইউটিউবে আইজুদ্দিন সাহেবের একটা ইন্টারভিউ দেখলাম। মানে, কষ্টে আছি আইজুদ্দিনের আইজুদ্দিনই। তো যেইটা বুঝলাম, উনি গ্রাফিতি করবেন উদ্দেশ্য নিয়া সারা বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে ওনার যন্ত্রণার কথা লিখেন নাই। গ্রাফিতি জিনিসটা কি, অইটা তিনি জানেন না। ব্যাপারটা না জাইনাও তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সফল গ্রাফিতির জনক। এইটা একটা বার্তা দেয় যে, গ্রাফিতি কি তা না জাইনাও গ্রাফিতি আর্টিস্ট হওয়া যায়। প্রথমে দরকার আর্টিস্টের মনন ও রাজনীতি সচেতনতা। লগে দরকার একখান সংবেদনশীল হৃদয়। আইজুদ্দিন সাহেব জানাইছেন, উনি একজন ফ্রিল্যান্স সাইনবোর্ড-ব্যানার আর্টিস্ট। প্রেম কইরা বিয়া করছিলেন এক ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েরে। অই বউ আইজুদ্দিনের আর্থিক দৈন্য মেনে নিতে পারেন নাই। অভাব-অনটনের সংসার আর আইজুদ্দিনরে ফেলায়ে অ্যামেরিকা চলে গেছেন। সেই কষ্ট এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্যায়ন, দুর্নীতি ইত্যাদির কারণে পাবলিকের যে সাফারিংস, সেইসব তিনি প্রকাশ করতে চাইলেন। এবং কষ্টের কথা কইতে তিনি উন্মুক্ত দেয়াল বেছে নিলেন। ৯৭ থেকে ২০০২-০৩ পর্যন্ত তিনি প্রায় সারা দেশে ঘুরছেন আর ‘কষ্টে আছি আইজুদ্দিন’ লিখে দেয়াল ভরিয়েছেন। যা মানুষের নজরে পড়েছে।
এগুলা ছাড়াও ঢাকার দেয়ালে-দেয়ালে তো কত রকমের পলিটিক্যাল চিকা, আর্টওয়ার্কই দেখছি। সেসবের বেশিরভাগই দলীয় রাজনীতির শ্লোগান। ততদিনে বুঝছি গ্রাফিতি স্ট্রিট আর্ট হইলেও স্ট্রিট আর্টমাত্রই গ্রাফিতি না। গ্রাফিতিতে মারাত্মকভাবে স্যাটায়ার উপস্থিত থাকে। সেসব স্যাটায়ার সংবেদনশীল মনুষ্যকূলের হৃদয় বিদীর্ণ করে। ভাবনার খোঁড়াক যোগায়। ক্ষমতার প্রশ্নবিদ্ধ চর্চাকে চোখে আঙুল দিয়া দেখায়ে দ্যায়।
ধান ভানতে গিয়া শিবের গীত গাইতেছি। আমি লেখমু ব্যাঙ্কসির দেশের গ্রাফিতি নিয়া, কথা শুরু করলাম আইজুদ্দিনরে নিয়া। তয় প্রাসঙ্গিক। তার দুইটা কারণ। প্রথমত, গ্রাফিতি জিনিসটার সাথে আমার পরিচয় হৈছিলো এই ‘আইজুদ্দিন’র মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, যখন আমি নিজের দিকে ফিরে তাকাই— নানাভাবেই অই গ্রাফিতির ‘আইজুদ্দিন’র সাথে নিজেরে রিলেট করতে পারি। একজন সাবল্টার্ন, ব্যর্থ প্রেমিক, কষ্টে থাকা দেশান্তরি মানুষ। ‘আইজুদ্দিন’ যে গ্রাফিতি সেইটা বুঝলাম অনেক পরে, ২০১২/১৩’র দিকে, যখন ঢাকার দেয়ালগুলিতে সুবোধের আবির্ভাব হৈলো। হ্যাঁ, ‘সুবোধ, তুই পালিয়ে যা’র কথাই বলছি। এত তীব্র সংবেদনশীল গ্রাফিতি বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত আর আঁকা হয় নাই।
তয় সুবোধের চাইতেও শক্তিশালী গ্রাফিতি বাংলাদেশে হইছে ২০১৮ সালে, স্কুল ছাত্রদের সড়ক আন্দোলনের সময়। ওরা কোনো দেয়ালে সেসব গ্রাফিতি করে নাই। করছে ব্যানারে, ফেস্টুনে, লাইসেন্সহীন, ঠিকঠাক কাগজপত্রহীন সরকারি কর্মকর্তা- পুলিশদের গাড়িতে, রাস্তায়। স্প্রে দিয়া, সিগনেচার পেন দিয়া সেসব গ্রাফিতি টেক্সট ওরা লিখছে। ‘ক্ষমতা চুদি না’, ‘পুলিশ চোদার টাইম নাই’, ‘পুলিশ, তোমার লাইসেন্স কই?’, ‘পুলিশ চোরাই গাড়ি’, ‘চোর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় চোর’, আমরা না হয় আন্দোলনের নামে সস্তা পাবলিসিটি করতেছি, কিন্তু আপনারা গত ৪৭ বছরে কোন বালডা ছিঁড়ছেন?’, ‘কমরেড, রাজনীতিমেধায় লাথি মারছে… রাজা আছে নীতি নাই, নেতা চোদার টাইম নাই’ ইত্যাদি টেক্সটের শ্লোগান নিশ্চিতভাবেই গ্রাফিতির চরিত্র ধারণ করে।
ওদের শ্লোগানের এই ভাষা, টেক্সটের এই ভাষারে তখন সুশীল আওয়ামীরা আক্রমণ করে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। অশ্লীল আখ্যা দিয়েছে। গ্রাফিতি জিনিসটাই তো সকল প্রকার সুশীলতারে আক্রমণ করে। গ্রাফিতি আর্ট মুভমেন্টের চরিত্রই এমন। সড়ক আন্দোলনে ব্যবহৃত এই টেক্সটগুলি বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকার, সরকারি সংস্থাগুলিরে কাঁপায়ে দিছে। যে কারণে এই টেক্সটগুলির ছবি এখন আর ইন্টারনেটে সার্চ দিয়া পাওয়া যায় না। গায়েব করে দেওয়া হইছে। যে কারণে এসব টেক্সট আরো গুরুত্ববাহী গ্রাফিতি হয়ে উঠছে।
আমার মতন ব্যক্তি উদ্যোগে যারা সড়ক আন্দোলনের অই গ্রাফিতিগুলার কিছু সংগ্রহে রাখছেন, তাদের কারণে একেবারে হারায়ে যায় নাই। নতুন এই শতাব্দীতে, নানান উপায়ে তথ্য-উপাত্তরে নষ্ট করা আর ফেইক বানায়ে দেওয়া যায়। যখন সোশাল মিডিয়ার প্রভাবের সকল কিছুরে গুজব বানায়ে দেবার প্রক্রিয়ায় ফ্যাসিবাদি সরকারের একটা উইং-ই সক্রিয়, খবরকে ম্যানিপুলেট করা যখন ডালভাত, তখন আস্থার জায়গা হয়ে উঠতেছে এই গ্রাফিতিশিল্প। রাজনীতি আর আন্দোলনে লোকজনরে সহজে রিলেটও করতেছে। বাংলাদেশে যখন কথা কওয়ার নানান ঝামেলা তৈয়ার হইছে, অই সময়টাতেই— খেয়াল করলে বুঝবেন, গ্রাফিতির কাজও বাইড়া গেছে। যেইটারে আমি বিরাট ইতিবাচক অর্থে দেখি। বাংলাদেশে যখন গ্রাফিতির বিকাশ ঘটতেছে, অই সময়েই আমি ইংল্যান্ডে চলে আসি। গ্রাফিতির বিরাট এক জগতের লগে পরিচিত হই।
গ্রাফিতির লগে সোশা-পলিটিক্যাল ব্যাপারটার তীব্র প্রেম আছে। অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের লিগা সৃষ্ট সামাজিক অস্থিরতা, বর্ণবাদের লগেও গ্রাফিতি আর্টের গভীর সম্পর্ক। ব্যাপকভাবে গ্রাফিতি আঁকা শুরু হইছিল নিউইয়র্কের সাবওয়েতে; গেলো শতকের সত্তর দশকের শুরুতে। সাবওয়ের প্রতিটা স্পেইস, ট্রেনের বহির-ভিতরাঙ্গের সবখানে নানা ফর্মে গ্রাফিতি আঁকা শুরু হইছিল। যেইটা এক প্রকারের ভ্যান্ডালিজমই ছিলো। কারণ পাবলিক প্রপার্টি নষ্ট হইতেছিল। এই ভ্যান্ডালিজম, তীব্র পলিটিক্যাল বার্তার কারণে খুব শিগগিরই গ্রাফিতি নিষিদ্ধ একটা আর্টফর্মে রূপ নেয়। হিপহপ এবং ইলেকট্রা মিউজিক কালচার গ্রাফিতির উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছিলো। আরেকটা কারণ বর্ণবাদ। নিউইয়র্ক সাবওয়েভিত্তিক গ্রাফিতি আর্টিস্টদের বেশিরভাগই ছিলেন ব্ল্যাক। হিপহপ মিউজিক করা মানুষগুলিও।
ব্রিস্টলকে ইংল্যান্ডে গ্রাফিতির রাজধানী বলা যায়। নিউইয়র্কে সাবওয়েভিত্তিক গ্রাফিতি কালচার গড়ে ওঠার সময়টায় ওখানে একজন বৃটিশ আর্টিস্ট ছিলেন। যিনি থ্রিডি নামে পরিচিত। থ্রিডি আশির দশকেই ইংল্যান্ডে ফিরা আসেন, আস্তানা গাড়েন ব্রিস্টলে। বন্দরভিত্তিক অন্যতম প্রাচীন এই নগরেও তখন হিপহপ মিউজিকের উত্থান হয়। বারে, পাবে ডিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ে। এরই সমান্তরালে গ্রাফিতির চর্চাও বাড়ে। থ্রিডির সঙ্গে আরো ক’জন আর্টিস্ট যোগ দেন। আশির দশকের মাঝামাঝি বৃটেনে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে সামাজিক নৈরাজ্য শুরু হয়। আর এই নৈরাজ্যই গ্রাফিতি আর্টিস্টদের ব্যাপকভাবে উস্কায়ে দেয়। সারা ব্রিস্টল ভরে ওঠে স্ট্রিট আর্ট আর গ্রাফিতিতে। এবং এই চর্চা হগল বৃটিশ মুলুকে ছড়ায়ে পড়ে, সাধারণ মানুষের মনোযোগ কাইড়া লয়। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা ছড়ায়ে দেবার অভিযোগে ১৯৮৯-এ পুলিশ গ্রাফিতি আর্টিস্টদের বিপক্ষে একটা অপারেশন চালায়। অপারেশন অ্যান্ডারসন। অই অপারেশনে থ্রিডি, ইংকি (Inkie)-এর মতন প্রথম সারির বৃটিশ গ্রাফিতি আর্টিস্টরা গ্রেফতার হন। অই অপারেশন অ্যান্ডারসন আশলে গ্রাফিতি আর্টের উপকারই করছিল। কেননা, অই সময়েই ব্রিস্টলে বেড়ে উঠছিলেন দুনিয়ার গ্রাফিতি আর্টরে বদলায়ে দেওয়া লোকটা— যার নাম ব্যাঙ্কসি (যদিও ব্যাঙ্কসি একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি নাকি গ্রুপ অব পিপল এইটা নিয়া সন্দেহ আছে, বিবিধ মতামত আছে। অনেক গবেষকই মনে করেন ব্যাঙ্কসি মূলত একজন ব্যক্তি, যার আশল নাম রবিন ব্যাঙ্কস। ব্যাঙ্কস থেকেই ব্যাঙ্কসি হৈছে।) তখন তিনি কিশোর। চৌদ্দ-পনের বয়েস। ব্যাঙ্কসি ৮৯-৯০ এর দিকেই গ্রাফিতি আঁকা শুরু করছিলেন। ওনার আঁকা বিখ্যাত গ্রাফিতিগুলার একটা এরকম— দুইজন পুরুষ পুলিশ চুমা খাইতাছে। এইটা আঁকা হইছিলো ব্রাইটনের ট্রাফালগার স্ট্রিটে। ঘুইরাফিরা এই আর্টিস্টের গ্রাফিতিতে পুলিশ আসছে। এখনো আসে।
পুলিশের চাইতেও ব্যাঙ্কসির গ্রাফিতিতে বেশি আসছে শিশুরা। যুদ্ধের কারণে শিশুরাই যে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এই ব্যাপারটা তিনি বারবারই বলতে চাইছেন। এক কিশোরি বুকে বোমা জড়ায়ে আদর করতেছে। এই চিত্রটা কেবলই মনে পড়ে আমার। অইদিন ফেসবুকে ব্যাঙ্কসির নামে অনেকগুলা গ্রুপের একটায় দেখলাম চার্লি চ্যাপলিনের দ্য ডিক্টেটর ছবির একটা দৃশ্যরে স্টিল ইমেজ বানাইয়া টেক্সট মোডিফাই কইরা লিখছে, ‘আর্ট ইজ নট ক্রাইম’। চ্যাপলিনের সিনেমা মানেই তো ডার্ক হিউমারে ভরা পলিটিক্যাল বার্তা। গ্রাফিতির কাজও একই ধাঁচের। সেই হিসাবে আমি চ্যাপলিনের সিনেমাগুলিরে সিনেমাটিক গ্রাফিতি বলতে চাই। গ্রাফিতিরে ইংল্যান্ডসহ অনেক দেশেই এখনো নিষিদ্ধ বা ক্রাইম অফেন্স হিসাবেই দেখা হয়। আইনত নিষিদ্ধ। যে কারণে প্রতিবাদের এরকম ভাষা ব্যবহার করতেই হয়।
বৃটেনে প্রথম আসি ২০১৯-এর মে মাসে। লন্ডনে এক হপ্তা, কার্ডিফে চার দিন কাটায়ে যাই ব্রিস্টলে। এই নগরে বাস ঢোকার সাথে সাথে বিস্মিত হৈতে থাকি। যেদিকে চোখ যায়, কিছু না কিছু আঁকা। রঙে রঙে ভরপুর। এমন কোনো রাস্তা নাই, দেয়াল নাই, যে রাস্তাটা আর দেয়ালটা খালি। কতরকমের যে ছবি সেসব দেয়ালে আঁকা, ইয়ত্তা নাই! যে রেস্টুরেন্টেই খাইতে গেছি, বাইরের দিকে দেয়ালজুড়ে রঙের খেলা। এমনকি বাড়িগুলার সামনে রাখা কাউন্সেলের বিনবাক্সতেও দেখছি পলিটিক্যাল বার্তা দেওয়া গ্রাফিতি! স্ট্রিট আর্ট আর গ্রাফিতি ব্রিস্টলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হৈয়া গেছে। এই নগররে অহন আর স্ট্রিট আর্ট, গ্রাফিতি ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। এসব আর্টওয়ার্ক মুইছা ফেলাইলে ব্রিস্টল য্যানো ল্যাংটা হৈয়া যাবে। সারা দুনিয়া থিকা যেসকল পর্যটক ব্রিস্টলে বেড়াইতে আসেন, তাদের বড়ো একটা অংশের উদ্দেশ্য থাকে স্ট্রিট আর্ট দেখা। গ্রাফিতিগুলা দেখা। যে কারণে নেলসন স্ট্রিট, ফ্রগমোর স্ট্রিট, স্ট্রোকস ক্রফট, দ্য এম শেড মিউজিয়াম, ইস্টন (ব্রিস্টলে ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকা), বেডমিনস্টার, ইত্যাদি এলাকায় মানুষের ভিড় লাইগাই থাকে। কারণ এসব এলাকারে নির্দ্বিধায় ওপেন এয়ার আর্ট গ্যালারি বলা যায়।
প্রত্যেক বছর জুলাইয়ে ব্রিস্টলে ‘আপফেস্ট’ নামে স্ট্রিট আর্টের একটা প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পুরা দুনিয়া থিকা আর্টিস্টরা আসেন। দর্শকরা তো আসেনই। সত্যি-সত্যিই ব্যাপারটা একটা উৎসবে রূপ নেয়। করোনা-পরবর্তী সময়ে এই ফেস্টিভাল যে আরো কাঙ্ক্ষিত হৈয়া উঠবে, তা এখনি বইলা দেওয়া যায়।
ব্রিস্টল সবসময়ই বৃটিশ স্ট্রিট আর্টিস্টদের তীর্থস্থান আছিলো। তারপরেও ব্রিস্টলের স্ট্রিট আর্ট, গ্রাফিতির রাজধানী হৈয়া ওঠার পেছনে ব্যাঙ্কসির উপস্থিতিই মূখ্য বইলা মনে হয়। যখন জগৎসেরা কেউ একটা জায়গায় বিলং করেন, সেইখানে তার প্রভাব থাকবেই। এইটা না হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিকতা। ব্যাঙ্কসির আঁকা অনেক গ্রাফিতিই নষ্ট হৈয়া গেছে। কিন্তু শুরুর দিকের কয়েকটা গ্রাফিতি এখনো টিকে আছে। ফ্রগমোর স্ট্রিটে একটা সেক্সুয়াল হেলথ ক্লিনিকের দেয়ালে ‘Well Hung Lover’-এর কথা উল্লেখ করা যায়। একজন ল্যাংটা পুরুষ তার গোপনাঙ্গ এক হাতে ধৈরা আরেক হাত দিয়া জানালার শিক ধৈরা ঝুইলা আছে। উপরে জানলায় কোট পরা হাজব্যান্ড বাইনোকুলার নিয়া কাউরে খুঁজতেছে। পেছনে বিকিনি পরা বউ। ব্যাঙ্কসির শুরুর দিকে আঁকা আরেকটা বিখ্যাত গ্রাফিতি ‘Mild Mild West’ এখনো আছে। একটা টেডি বিয়ার পুলিশের দিকে পেট্রোল বোমা ছুঁইড়া মারতেছে। স্টোকস ক্রফটে ক্লিফটন সাসপেনসন ব্রিজের এই গ্রাফিতি এখনো শিল্পরসিকদের আকর্ষণ হৈয়া রইছে।
বৃটেন আর ব্রিস্টলের গ্রাফিতি নিয়া আলাপ পাড়লে ব্যাঙ্কসিরে নিয়া গ্যাজাইতে হবেই। উপায় নাই। কয়দিন আগে একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখতেছিলাম। ব্যাঙ্কসি অ্যান্ড দ্য রাইজ অব আউটল আর্ট (২০২০)। যে সিনামাটা মূলত আধুনিক গ্রাফিতির শুরু এবং এই একবিংশ শতাব্দীতে ‘গ্রাফিতি’ কিভাবে বেস্ট আর্ট মুভমেন্ট হৈয়া উঠলো, এই মুভমেন্টের পিছনে ব্যাঙ্কসির জাদুকরি প্রভাব নিয়া। যখন ব্যাপারটা গ্রাফিতি আর্টের, তখন অইখানে ম্যাডনেস থাকবেই। ব্যাঙ্কসি মানেই ম্যাডনেস। তীব্র পলিটিক্যাল এবং ডার্ক হিউমারের কারবারি। ওনার করা গ্রাফিতি সারা দুনিয়াতে কপি হইতেছে। আর ব্যাঙ্কসি নিজে পলিটিক্যালি এফেক্টেড জায়গাগুলাতে গিয়া হাজির হইছেন গত কয় বছরে, নিজের চিন্তা আর আর্টের ছাপ রাইখা আসছেন মোটামুটি সবখানেই। বা বলা যায়, ব্যাঙ্কসির সারা দুনিয়ার ফলোয়াররা— যারা নিজেরাও ব্যাঙ্কসি— পলিটিক্যালি এফেক্টেড জায়গাগুলায় গ্রাফিতি নিয়া হাজির হইতেছেন। নো ফিউচারসহ ব্যাঙ্কসির কয়েকটা কাজই বাংলাদেশে কপি হইছে। যারা কপি করছেন, তারা তো একেকজন মনে-মনে ব্যাঙ্কসি-ই। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের যে জায়গা (ওয়েস্ট ব্যাংক বা পশ্চিম তীর) দখল কইরা জোর কইরা দীর্ঘ আর উঁচা দেয়াল তুইলা দিছে, অইখানে গিয়া তিনি গ্রাফিতি আঁইকা আসছেন। একটা শান্তিময় পৃথিবীর বার্তা দিয়া আসছেন। তিনি সবসময়ই যুদ্ধ আর যুদ্ধবাজদের বিপক্ষে গিয়া কাজ কইরা যাইতেছেন। আমেরিকা-বৃটেনের ইরাক যুদ্ধরে ‘Wrong War’ বলা প্রথম আর্টিস্ট সম্ভবত ব্যাঙ্কসি। ব্যাঙ্কসিরে কী আমরা আর্টের চার্লি চ্যাপলিন বলবো? বলাই যায়! ২০০৩ সালে যাবতীয় সিকিউরিটি ফাঁকি দিয়া দুনিয়ার নামি সব মিউজিয়ামে সংরক্ষিত পপুলার চিত্রকর্ম বদলায়ে দিছিলেন। আর্টের ইতিহাসে এইটা মনে হয় সবচাইতে বড়ো আর্ট ভ্যান্ডালিজমের ঘটনা। গ্রাফিতি জিনিশটাই যে প্রতিষ্ঠিত আর্টের ধারণারে ভ্যান্ডালাইজ করা, অইটা তিনি আরেকটা পাগলামি দিয়া এস্টাবলিশ করছিলেন। ব্যাঙ্কসির সবচাইতে বিখ্যাত যে গ্রাফিতি (অনেক দেয়াল আর টি-শার্টে এর কপি দেখছি), ছোট্ট এক বালিকার হাত থিকা বেলুন উইড়া যাইতেছে, অইটারে নিলামে তোলা হয়। সাত মিলিয়ন ডলারে বেচাও হইয়া যায়। যখন ক্রেতারে দেওয়ার জন্যে অইটারে বের করে আনা হইতেছে, অর্ধেক বের হবার পর দেখা গেলো কাজটা নষ্ট হৈয়া গেছে! কিন্তু ফ্রেমের ভিতরে সব পারফেক্টই দেখা যাইতেছিল।
২০০৩-এ নিউইয়র্কে Turf War নামে ব্যাঙ্কসির আর্ট ওয়ার্কের একটা এক্সিবিশন হয়। অই এক্সিবিশনে হাতি এবং আরো কিছু প্রাণীর শরীরে গ্রাফিতি আঁকছিলেন তিনি। আর পরিত্যক্ত মালামাল ব্যবহার কইরা আর্টওয়ার্ক করছেন। অই এক্সিবশনে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিটসহ হলিউডের অনেক তারকাই আইছিলেন। আর এক্সবিশনটা নিয়া দর্শকের এতোই আগ্রহ ছিলো যে, একবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকায় হওয়া সবচাইতে পপুলার আর্ট এক্সিবিশন এখনো অব্দি অইটাই। এর আগেই অবশ্য দেশে একটা এক্সিবিশন করছিলেন। যেইখানে গরুর শরীরে আঁকাআঁকি করছিলেন। ২০০৯-এ জন্মভূমি ব্রিস্টলে ফিরে এসে কাঁপায়ে দিছিলেন ব্যাঙ্কসি ভার্সেস ব্রিস্টল মিউজিয়াম এক্সবিশন কইরা। মিউজিয়ামরে এক রাইতের মধ্যে বদলায়ে দিছিলেন। এবং ঐতিহাসিক জিনিসগুলার এমন সব রূপ দিছিলেন, যা আসলে অভূতপূর্ব (বিশ্বাস না হৈলে এই লিংকে গিয়া দেইখা আসেন https://www.bristolmuseums.org.uk/stories/banksy-bristol-museums/)!
সাম্প্রতিক সময়ে বৃটেনে ব্যাঙ্কসির সবচাইতে আলোচিত তিনটা কাজ নিয়া একটু বলি। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে, ক্রিসমাসের ঠিক আগে আগে বার্মিংহামের Vyse Street-এ তিনি একটা অসাধারণ কাজ করেন। রায়ান নামে একজন হোমলেস লোক, দেয়ালের লগে লাগানো একটা বেঞ্চে ঘুমান। একদিন রায়ান যখন ঘুমন্ত, রায়ানকে গ্রাফিতিটার চরিত্র বানায়ে সেই দেয়ালে আঁকেন ব্যাঙ্কসি। Christmas Reindeers নামে গ্রাফিতিটায় দেখা যায়, রায়ানকেসহ বেঞ্চিটাকে দুইটা হরিণ টাইনা নিয়া যাইতেছে। কই যাইতেছে? ঈশ্বরের নিকটে? গত বছর ব্রিস্টলে আঁকছেন Aachoo; হিজাব পরা এক বৃদ্ধা হাঁচি দিতেছেন, আর তাঁর হাত থিকা লাঠি আর পার্স ছিটকে পড়তেছে। প্যান্ডেমিক নিয়া আঁকা এই গ্রাফিতিটা অবশ্য আঁকার কিছুদিন পরেই বাড়ির মালিক মুইছা ফেলছেন। ব্রিস্টলেই সম্প্রতি আরেকটা গ্রাফিতি আঁকছেন তিনি। ইয়োহান ভারমিরের বিখ্যাত ছবি গার্ল উইদ অ্যা পার্ল ইয়ারিং-রে বদলায়ে নতুন রূপ দিছেন। মুক্তার দুলের অইখানে সিকিউরিটি অ্যালার্ম পরায়ে দিছেন। আর মাস্ক দিয়া ঠোঁট-মুখ ঢাইকা দিছেন। মূল ছবির এই বদলটুকুর জন্যেই এটা গ্রাফিতি আর বক্তব্যময় হয়ে উঠছে— যদিও এই ছবিতে কোনো টেক্সট নাই।
ব্রিস্টলের বাইরে ইংল্যান্ডে লন্ডন, চেল্টেনহ্যাম, লেস্টার, ম্যানচেস্টার, শেফিল্ড আর বার্মিংহামে প্রচুর স্ট্রিট আর্ট আর গ্রাফিতি দেখা যায়। অন্যান্য বৃটিশ নগরগুলার মধ্যে ওয়েলসের কার্ডিফ, নর্দান আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট আর স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিন ও গ্লাসগো গ্রাফিতির জন্যে বিখ্যাত।
লন্ডনে যখন প্রথম আসি, তখন অইভাবে গ্রাফিতি কিংবা স্ট্রিট আর্ট চোখে পড়ে নাই। অবশ্য অফিসের ডিউটিতে ক্রিকেট স্টেডিয়াম আর আপটন পার্কে ভাড়া নেওয়া রুমের মধ্যেই জীবন সীমাবদ্ধ ছিলো। তবে দ্বিতীয়বার আইসা চমকায়ে গেছিলাম। আমারে সেই আল্টিমেট চমকটা দিছিলো বাঙালি পাড়া ব্রিকলেইন। এক সময় ইস্ট লন্ডনের হার্ট আছিলো এই ব্রিকলেইন। দেশ ছাইড়া ইংল্যান্ডে চইলা আসছি। বেকার। সকালে বাইর হই আর কাজ খুঁজি। যেকোনো কাজ। শুনলাম ব্রিকলেইনে অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। মালিক বাঙালি (সিলেটি। ওনারা বাঙালির চাইতে এই পরিচয়টাই দিতে পছন্দ করেন।)। হোয়াইটচ্যাপেল থিকা ব্রিকলেইনের দিকে হাঁটি আর থমকায়া যাই। একটু পর-পরই দেখি, দেয়ালে কিছু না কিছু আঁকা। এসব দেখলে দাঁড়ায়ে যাওয়া আমার পুরান বদঅভ্যাস। ব্রিকলেইনে গিয়ে দেখি, অইখানে আরো বেশি স্ট্রিট আর্ট।
একটা গলির ভিতরে হঠাৎ চোখ গেলো। দেখি এক বৃদ্ধ মান্ধাতা আমলের একটা ক্যামেরা নিয়া ফটো তুলতাছে। তারে দেইখা গলিটায় আমিও গেলাম। ও মা! অইখানে অন্তত একশ আর্ট ওয়ার্ক। ছোট-ছোট পোস্টারে গ্রাফিতি, স্টেন্সিল করা গ্রাফিতি, স্প্রে-তে আঁকা গ্রাফিতি…আসলে কি নাই! তখন ব্রেক্সিট খুব হট ইস্যু। অইটা নিয়াই কয়েক রকমের গ্রাফিতি চোখে পড়ছে। ফেসবুক এবং জাকারবার্গকে নিয়ে করা একটা পোস্টার ছিলো এরকম: জাকারবার্গের হাসিমুখের একটা ছবি, ফেসবুকের লোগো আর টেক্সট ‘গো জাক ইয়োর ব্রেইনস আউট’। আরেকটা পোস্টারে রাণী এলিজাবেথের ছবির ওপরে লেখা ‘ফ্র্যাজাইল’। দ্য গডফাদার মুভির পোস্টার অনুকরণে একটা পোস্টারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি এবং তাতে টেক্সট ‘দ্য অডফাদার’। আমার আগ্রহ দেইখা লোকটা কইলো, পুরা এলাকা হাঁইটা দেখো। অনেক কিছু পাবা। অইদিন সারাদিন আমি ব্রিকলেইনের এক কিলোমিটারের মতন এলাকা ঘুরে-ঘুরে স্ট্রিট আর্ট আর গ্রাফিতি দেখছি। বাঙালি পাড়া হইলেও, বাঙালিদের এসব স্ট্রিট আর্ট আর গ্রাফিতি নিয়া কোনো আগ্রহ আছে বইলা মনে হয় নাই। হইতে পারে, এই আর্ট তাদের নৈমিত্তিক জীবনের সঙ্গী হৈয়া গেছে বইলাই বাড়তি কোনো আগ্রহ নাই। যখন কিছু আমাদের লাইফের অবিচ্ছেদ্য অংশ হৈয়া যায়, আমরা তার দিকে বাড়তি নজর দেই না। হ, জানি, আছেই তো। এরকম একটা মনোভাব কাজ করে। এইটা হিউম্যান ইন্সটিংক্ট।
ঘুরতে ঘুরতেই জানছি ব্রিস্টলে ১৯৮৯-এ গ্রেফতার হওয়া গ্রাফিতি আর্টিস্ট ইংকি ব্রিকলেইনেই থাকেন। এই আর্টিস্ট বিরাট প্রভাব রাখছেন অইখানে। এছাড়া ব্যাঙ্কসিও এখন লন্ডনে থাকেন। ব্রিকলেইনে নাকি তিনি মাঝেমাঝেই পায়ের ধুলি দিয়া যান। শুধু ব্রিকলেইন না, এই এলাকার আশেপাশে আরো ১৫টা স্ট্রিট আছে, যেগুলা স্ট্রিট আর্ট আর গ্রাফিতিতে ভর্তি। প্রতি সপ্তাহেই এসব এলাকার গ্রাফিতি আর স্ট্রিট আর্টগুলা চেইঞ্জ হয়। আর্টিস্টরা এতটাই অ্যাক্টিভ। দুই বছর হয় লন্ডনে থাকি। এখনো শোরডিচ রোডে যাইতে পারি নাই দেইখা আফসোস হয়। অইখানে একটা বার আছে— নাম ড্রাগনবার। অইখানে নাকি ব্যাঙ্কসি আর লন্ডনের গ্রাফিতি আর্টিস্টদের আনাগোনা। অই বারের আশপাশ তো বটেই, এলাকার প্রায় সব রাস্তায় আর্টওয়ার্ক আছে। লন্ডনের তিনটা জায়গায় গ্রাফিতি বৈধ—Alley Pally, Tufnell Park, Stockwell Skatepark. লন্ডনে মহামারির ধাক্কা কাটাইয়া জীবন স্বাভাবিক হবার পথে। আমি অপেক্ষা করতেছি এই জায়গাগুলায় কবে যামু! বহুদিন হৈলো ছকবন্দী একটা জীবনে আটকায়ে গেছি। অইখান থিকা বাইর হৈয়া মগজরে এলোমেলো কৈরা দিবার মনে লয়। গ্রাফিতি সেইটা ঘটাইতে সহযোগিতা করতে পারে। দেখার চোখ, ভাবার মগজরে থাপ্পর মাইরা নতুন কিছু দেখতে আর চিন্তা করতে ট্রিগার দিতে পারে।
গ্রাফিতি ইজ অ্যা হার্টবিট অব এভরি সোসাইটি। গ্রাফিতি আর্টিস্ট ও গবেষক স্কেইপ মার্টিনারের এই কথাটারে আমার বেহুদা কথা মনে হয় না। ছোটবেলায় দেখা আইজুদ্দিন, বড়বেলার সুবোধ কিংবা ব্রিটেনে দেখা গ্রাফিতিগুলারে দেইখা আমি লোকটার কথা বিশ্বাস কৈরা ফেলছি। সন্দেহ থাকার পরেও এই বিশ্বাসে ভুল হবার শঙ্কা কম। আর আগামীর আর্টরে মনে হয় গ্রাফিতি ফর্মটাই লিড দেবে। কেননা, এই আর্ট সবার জন্যে উন্মুক্ত। গ্যালারি লাগে না। গ্যালারির পেছনের আর্টিস্টগোষ্ঠীর রাজনীতিরেও এই আর্ট চোদে না।