বইয়ে আগুন ধরানোর আদর্শ তাপমাত্রা ৪৫১ ডিগ্রি ফারেনহাইট ।। প্রিয়ম মল্লিক

ডিসটোপিয়া ইউটোপিয়ার বিপরীত শব্দ। আমরা যে গ্রহে আছি তা অনেকটা ডিসটোপিয়ানই বলা যায়; কোথাও কম বা কোথাও বেশি। তবে অনেকদিন ধরে এর প্রক্রিয়াজাতকরণ চলছে। ডিসটোপিয়ান সোসাইটি পুরোপুরি স্থিতিশীল হয় যখন অমানবিক আচরণ তার সব বাঁধা অতিক্রম করে। মানুষ কতটা খারাপ ভাবতে পারে এবং সমাজে তা কীভাবে দিনদিন প্রতিষ্ঠিত হয় তার নমুনা পাওয়া যায় ডিসটোপিয়ান সোসাইটিতে।

থমাস মোর তার বইয়ে ইউটোপিয়া শব্দটির সাথে সবার পরিচয় করান। এর গ্রিক অর্থ দাঁড়ায়-‘নো প্লেস’। অর্থাৎ, এরকম জায়গা থাকা অসম্ভব।

ডিসটোপিয়ান সোসাইটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পন্থা আপনি ব্যবহার করতে পারেন- করপোরেট পন্থা, ব্যুরোক্র্যাটিক পন্থা, টেকনোলজিক্যাল পন্থা, ফিলসফিক্যাল/ধর্মীয় পন্থা। এগুলোর মধ্যে টেকনোলজিক্যাল পন্থায় সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তার কারণ অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ না; মানুষের বানানো টেকনোলজিক্যাল অবজেক্টই সমাজের, মানুষের নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়।

ফারেনহাইট ৪৫১ আমার দেখা প্রিয় ডিসটোপিয়ান সিনেমা। ডিসটোপিয়ান আরো অনেক সিনেমাই এর আগে দেখেছিলাম। জেনার দেখে তো কেউ সিনেমা দেখে না! ডিসটোপিয়ান সাহিত্য কিছু পড়া হয়েছিল বলে পরে বুঝতে পারলাম কোন সিনেমাগুলোতে এই সোসাইটি তৈরী করা হয়েছিল এবং হয়েছে।

আমার দেখা ডিসটোপিয়ান সিনেমাগুলো- City of Lost Children, A Clockwork Orange, হীরক রাজার দেশে, Children of Men, Looper, Mad Max, Mad Max Beyond Thunderdome, Mad Max Fury Road, The Matrix, Metropolis, Minority Report, Wall-E, Akira (Japanese Anime) |

ফারেনহাইট ৪৫১ বইটি অঙ্কুরোদগম করেছিলেন Ray Bradbury. পরে Francois Truffauta একে সিনেমায় রূপান্তরিত করেন। আবহ সঙ্গীত দিয়েছেন Bernard Herrman যিনি পরে Taxi Driver এ আবহ সঙ্গীত দেন। ভবিষ্যৎ আমেরিকান সোসাইটি দেখানো হয়েছে সিনেমাতে- যে সোসাইটিতে বই নিষিদ্ধ এবং ফায়ারম্যান নামক একধরণের ফোর্স রয়েছে যাদের কাজ হচ্ছে বই পোড়ানো।

সিনেমার শুরুতেই ফায়ারম্যানরা একজন আসামীর বাসায় যায় বইয়ের সন্ধানে। ফায়ারম্যানের গাড়ির সাইরেন শুনেই আসামী বাড়ির পিছন দিকে পালিয়ে যায়। আর ফায়ারম্যানরা বাড়িতে ঢুকে আসামীর সুচতুরভাবে বাড়ির রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে রাখা বইগুলো বের করে এবং পুড়িয়ে ফেলে (‘হীরক রাজার দেশে’ তেও এ ধরণের একটি দৃশ্য দেখতে পাবেন)।

বই লুকিয়ে রাখার কিছু অদ্ভুত কৌশল দেখানো হয় পুরো সিনেমা জুড়ে। যেহেতু ফায়ারম্যানরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তাই তারা জানে আসামী টোস্টারের ভিতর, না নকল টেলিভিশন সেটে লুকিয়ে রেখেছে তার মহামূল্যবান খনি-‘বই’।

ফারেনহাইটের লেখক এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি উপন্যাসে ম্যাককার্থি’র (Republican U.S Senator Joseph McCarthy) সময়কে কেন্দ্র করে কাহিনীর বীজ বপন করেছিলেন। সে সময় হাজার হাজার আমেরিকানদের উপর আক্রমাণাত্মক তদন্ত চালানো হয় যাদের বইয়ের সাথে যোগাযোগ ছিল। এবং হুমকি দেয়া হয় সব বই পুড়িয়ে ফেলা হবে।
সিনেমার দুটি প্রধান চরিত্র হলো Montag (একজন ফায়ারম্যান অফিসার) এবং Clarisse (স্কুল শিক্ষিকা) । এরা দুজন প্রতিবেশী। গাড়িতে এদের প্রথম পরিচয় হয়। সে সময়ের খণ্ড খণ্ড কিছু সংলাপ:

Clarisse : Are you an officer?

Montag : Oh, no, not yet.

                An officer has to- –  I’m going to be promoted soon.

Clarisse : Even with my eyes closed, I could tell what you do for a job.

Montag : Because of the smell of kerosene?

Clarisse : Huh.

Montag : Quite a scent, isn’t it?

               My wife doesn’t like it very much. She says it lingers.

                I don’t mind. I think of it as a…perfume.

Clarisse : Perfume?

Montag : Yes, a perfume, like any other.

(after skipped some dialogues)

Clarisse : Tell me, that number you all wear, what’s it mean?

Montag : Oh, Farenheit 451.

Clarisse : Why 451 rather than 813 or 121?

Montag : Farenheit 451 is the temparature at which…book paper catches fire and starts to burn.

(again skipped some dialogues)

Clarisse : Tell me, why do you burn books?

Montag : What?

                Well, it’s a job like any other. Good work with lot of variety.

                Monday, we burn Miller;

               Tuesday, Tolstoy;

               Wednesday, Walt Whitman;

               Friday, Faulkner; and

               Saturday and Sunday, Schopenhaur and Satre.

              “We burn them to ashes and then burn the ashes.
Montag এর সোসাইটিতে বেশিরভাগ মানুষ তার স্ত্রীর মত দিনের অর্ধেকটা সময় টেলিভিশন দেখে আর ঘুমের ঔষধ খেয়ে যাপন করে। একটা দৃশ্যে গাড়িতে দেখা যায় কিছু মানুষ একদিকে স্থির তাকিয়ে আছে এবং তাদের কর্মকাণ্ডে বিকৃত আচরণ শোভা পাচ্ছে এবং একই অপ্রকৃতিস্থ আচরণ দেখি আমি Montag এর স্ত্রীরও।

Montag একসময় দেখে যে তাদের সোসাইটির মধ্যেই কিছু লোক ফায়ারম্যানের নাগাল থেকে দূরে, এই ডিসটোপিয়ান সোসাইটি থেকে দূরে এক জায়গায় একটি সোসাইটি গড়ে তুলেছে যারা, সবাই পরিচিত Book People নামে। Montag আর আমি দেখলাম যে এই সোসাইটিতে সবাই তাদের নাম রেখেছে বইয়ের নাম দিয়ে। সংলাপের অংশবিশেষ-

: Are you interested in Plato’s Republic?

: Well, I’m Plato’s Republic.

: Now here’s Wuthering Heights by Emile Bronte.

  And here’s The Corsair by Byron.

  …Now that’s skinny fellow is Alice in Wonderland by Lewis Carroll….There’s Pilgrim’s Progress by John Bunyan….

: I’m Jean Paul Sartre’s The Jewish Question.

Delighted to meet you.

: I’m the Martian Chronicles by Ray Bradbury.

: The Pickwick Papers, Charles Dickens.

: I am the Prince by Machiavelli.

 As you can see you can’t judge a book by its cover (লোকটি Montag-কে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলে তার কারণ লোকটি যে কাপড় আর জুতা পরেছিল তা একইসাথে অনুজ্জ্বল, ছেড়া এবং পুরাতন।).

: I’m Jane Austen’s Pride and Prejudies.

: I’m Jane Austen’s Pride and Prejudies.

: Both of you the same book?
(এক ভাই আরেক ভাইকে দেখিয়ে বলে)

: My brother is volume one.

: My brother is volume is two.
এই সোসাইটিতে Montag – Book People দের মধ্যে একজনের সাথে পরিচিত হন যিনি তাকে এদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং বলেন যে এখানে তারাও বই পোড়ান (তবে তা পড়ে ফেলার আগে নয়), যাতে তা ফায়ারম্যানদের নাগালে না আসে। এই Book People রা প্রত্যেকেই একেকটি বই তাদের মাথায় ধারণ করেন এবং নিজেদেরকে জীবন্ত বই বলে দাবী করেন।

ডিসটোপিয়ান বেশিরভাগ সিনেমায় আমরা দেখতে পাই মানব জাতির বিনাশ, সর্বনাশ। কিন্তু এর মাঝেও মানুষ বেঁচে ওঠে, সকল প্রকার কষ্ট সে সহ্য করতে পারে। সব বাঁধা কাটিয়ে মানুষ পৃথিবীকে আবার আগের রূপরেখায় ফিরিয়ে আনে বা সমাজে স্থিরতা আনে।

আমাদের সিনেমার পরিচালকেরা প্রত্যেক সিনেমাতে দেখিয়েছেন একটাই বিষয়- মানুষ পৃথিবীকে যে অবস্থায় নিয়ে যাক না কেন, সে, সেই সমাজে অনায়াসে মানিয়ে নেবে আর পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করে জিতবেই- জেতাটা অবশ্যম্ভাবী।
আমরা ডার্ক ফিউচারের প্রতি আকৃষ্ট অনেক বেশি। আমরা কৌতুহলী প্রাণী, সমাজের রূপরেখা সবসময় বদলাতে পছন্দ করেছি। ইউটোপিয়ার পিছনে ছুটতে ছুটতে ডিসটোপিয়া এখন আমাদের পিছনে ছুটছে। প্রোপাগান্ডা, ড্রাগস সমাজকে খুশি রাখে। এর ফলে মানুষ নিজেদের হাজারো সমস্যা ভুলে থাকতে পারে। সমাজের অনেক মানুষই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন যে তারা ভয়ংকর সমাজে বসবাস করছেন এবং নিজেদের জীবন এর মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেন, চুপচাপ।



নতুন চোখে পথের পাঁচালী দেখা ।। রুহুল মাহফুজ জয়

শেয়ার